Yunus • BN-TAFISR-FATHUL-MAJID
﴿ وَإِذَا مَسَّ ٱلْإِنسَٰنَ ٱلضُّرُّ دَعَانَا لِجَنۢبِهِۦٓ أَوْ قَاعِدًا أَوْ قَآئِمًۭا فَلَمَّا كَشَفْنَا عَنْهُ ضُرَّهُۥ مَرَّ كَأَن لَّمْ يَدْعُنَآ إِلَىٰ ضُرٍّۢ مَّسَّهُۥ ۚ كَذَٰلِكَ زُيِّنَ لِلْمُسْرِفِينَ مَا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ ﴾
“For [thus it is:] when affliction befalls man, he cries out unto Us, whether he be lying on his side or sitting or standing; but as soon as We have freed him of his affliction, he goes on as though he had never invoked Us to save him from the affliction that befell him! Thus do their own doings seem goodly unto those who waste their own selves.”
১২ নং আয়াতের তাফসীর: অত্র আয়াতে অধিকাংশ মানুষের একটি চিরাচরিত অভ্যাস বর্ণনা করা হয়েছে যে, মানুষ যখন বিপদে পড়ে বা কোন দুঃখ-দুর্দশা তাকে স্পর্শ করে তখন সে খুব বিনয়ী হয়ে শুয়ে, বসে এবং দাঁড়িয়ে সর্বদা আল্লাহ তা‘আলাকে ডাকে। আর যখনই সে বিপদ থেকে মুক্ত হয় তখন সাথে সাথেই সে আল্লাহ তা‘আলাকে ভুলে যায়। এমনভাবে ভুলে যায় যেন ইতোপূর্বে তার কোন দুঃখ-কষ্ট বা বিপদাপদ ছিল না। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী: (وَإِذَا مَسَّ الْإِنْسَانَ ضُرٌّ دَعَا رَبَّه۫ مُنِيْبًا إِلَيْهِ ثُمَّ إِذَا خَوَّلَه۫ نِعْمَةً مِّنْهُ نَسِيَ مَا كَانَ يَدْعُوْآ إِلَيْهِ مِنْ قَبْلُ) “আর যখন মানুষের ওপর কোন বিপদ এসে পড়ে তখন সে তার প্রতিপালককে আহ্বান করতে থাকে একাগ্রচিত্তে তাঁর অভিমুখী হয়ে। পরে যখন তিনি তাকে নিজের পক্ষ থেকে নিয়ামত দান করেন তখন সে ভুলে যায় সে কথা যার জন্য পূর্বে তাঁকে আহ্বান করেছিল।” (সূরা যুমার ৩৯:৮) আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন: (فَإِذَا مَسَّ الْإِنْسَانَ ضُرٌّ دَعَانَا ز ثُمَّ إِذَا خَوَّلْنٰهُ نِعْمَةً مِّنَّا لا قَالَ إِنَّمَآ أُوْتِيْتُه۫ عَلٰي عِلْمٍ) “মানুষকে দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করলে সে আমাকে ডাকে, অতঃপর যখন আমি তার প্রতি অনুগ্রহ প্রদান করি আমার পক্ষ থেকে তখন সে বলে: আমাকে এটা দেয়া হয়েছে আমার জ্ঞানের বিনিময়ে।” (সূরা যুমার ৩৯:৪৯) এটা ছিল পূর্ববর্তী লোকদের অভ্যাস যে, তারা সুখের সময় যদিও মূর্তি পূজা করত কিন্তু বিপদের সময় তারা আল্লাহ তা‘আলাকেই ডাকত। যদিও তারা ছিল মুশরিক। কিন্তু বর্তমান যুগের লোকেরা সুখের সময় তো আল্লাহ তা‘আলাকে ডাকেই না বরং বিপদে পড়লেও তারা আল্লাহ তা‘আলার কাছে প্রার্থনা না করে চলে যায় ফকির বাবার মাজারে, বিভিন্ন কবরের কাছে অথচ আল্লাহ তা‘আলা এসমস্ত বদ আমল কোন অবস্থায় গ্রহণ করেন না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: কেউ এমন আমল করল যে, তাতে আমার সাথে অন্যকে শরীক করল, আমি তাকে ও তার আমলকে ছেড়ে দেই অর্থাৎ গ্রহণ করি না। (সহীহ মুসিলম হা: ৭৬৬৬) বিপদাপদে পড়লে আল্লাহ তা‘আলাকে ডাকতে হবে, আল্লাহ তা‘আলার কাছে চাইতে হবে। তিনিই সকল বিপদাপদ থেকে মুক্তি দিতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে বিপদ থেকে মুক্তি পাবার পর যেন আল্লাহ তা‘আলাকে ভুলে আবার অপরাধমূলক কাজে জড়িত না হই। আয়াত হতে শিক্ষনীয় বিষয়: ১. বিপদে ও সুখে সর্বাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলাকেই ডাকতে হবে। ২. আল্লাহ তা‘আলার সাথে অংশীদার স্থাপন করা যাবে না। ৩. যে মন্দ অভ্যাসের কথা বলা হয়েছে তা পরিবর্তন করতে হবে। ৪. বিপদে ধৈর্যহারা হওয়া যাবে না। ৫. বিপদ কেটে গেলে আল্লাহ তা‘আলার শুকরিয়া আদায় করতে হবে ইত্যাদি।