Al-Israa • BN-TAFISR-FATHUL-MAJID
﴿ مَّنِ ٱهْتَدَىٰ فَإِنَّمَا يَهْتَدِى لِنَفْسِهِۦ ۖ وَمَن ضَلَّ فَإِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيْهَا ۚ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌۭ وِزْرَ أُخْرَىٰ ۗ وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّىٰ نَبْعَثَ رَسُولًۭا ﴾
“Whoever chooses to follow the right path, follows it but for his own good; and whoever goes astray, goes but astray to his own hurt; and no bearer of burdens shall be made to bear another" burden. Moreover. We would never chastise [any community for the wrong they may do] ere We have sent an apostle [to them].”
১৫ নং আয়াতের তাফসীর: উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি সৎ পথের অনুসরণ করবে, তাঁর উত্তম প্রতিদান নিজেই ভোগ করবে। আর যে অসৎ পথের অনুসরণ করলে সে নিজেকেই পথভ্রষ্ট করল এবং জাহান্নামের দিকে ঠেলে দিল, এতে অন্য কেউ দায়ী নয়। নিজের পাপের বোঝা নিজেকেই বহন করতে হবে, অন্য কেউ বহন করবে না। এরূপ অনেক আয়াত রয়েছে, যেমন সূরা ফাতিরের ১৮ নং, সূরা আন‘আমের ১৬৪ নং এবং সূরা বাকারাহর ১৩৪ নং আয়াত। তবে যে নিজে পথভ্রষ্ট হয় এবং অন্যকেও ভ্রষ্ট করে সে তার নিজের ভ্রষ্টতার বোঝা বহন করবে এবং যাদেরকে ভ্রষ্ট করেছে তাদের গুনাহর বোঝাও (তাদের গুনাহর কোন কমতি না করেই) তাকে বহন করতে হবে। এ কথাও কুরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন: (لِيَحْمِلُوْآ أَوْزَارَهُمْ كَامِلَةً يَّوْمَ الْقِيٰمَةِ لا وَمِنْ أَوْزَارِ الَّذِيْنَ يُضِلُّوْنَهُمْ بِغَيْرِ عِلْمٍ ط أَلَا سَا۬ءَ مَا يَزِرُوْنَ) “ফলে কিয়ামত দিবসে তারা বহন করবে তাদের পাপভার পূর্ণ মাত্রায় এবং পাপভার তাদেরও যাদেরকে তারা অজ্ঞতাহেতু পথভ্রষ্ট করেছে। দেখ, তারা যা বহন করবে তা কত নিকৃষ্ট!” (সূরা নাহল ১৬:২৫) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: مَنْ دَعَا إِلَي هُدًي، كَانَ لَهُ مِنَ الْأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ، لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا، وَمَنْ دَعَا إِلَي ضَلَالَةٍ، كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الْإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ، لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا যে ব্যক্তি সৎ পথের দিকে মানুষকে আহ্বান করবে সে ব্যক্তি তেমন প্রতিদান পাবে যেমন প্রতিদান সে সৎপথের অনুসরণকারী পাবে, তাদের কারো প্রতিদান কম করা হবে না। আর যে ব্যক্তি কোন পথভ্রষ্টতার দিকে আহ্বান করবে সে ব্যক্তি তেমন গুনাহগার হবে যেমন গুনাহগার হবে সে ভ্রষ্টতার অনুসারী ব্যক্তি, তাদের কারো গুনাহ কমিয়ে দেয়া হবে না। (সহীহ মুসলিম হা: ২৬৭৪) অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা মানুষের প্রতি তাঁর একটি রহমতের বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তিনি রাসূল প্রেরণ করে সত্য-মিথ্যা ও শরীয়ত সম্পর্কে অবগত না করা পর্যন্ত কোন জাতিকে ধ্বংস করেন না। আল্লাহ তা‘আলার বাণী: (رُسُلاً مُّبَشِّرِيْنَ وَمُنْذِرِيْنَ لِئَلَّا يَكُوْنَ لِلنَّاسِ عَلَي اللّٰهِ حُجَّةٌۭ بَعْدَ الرُّسُلِ ط وَكَانَ اللّٰهُ عَزِيْزًا حَكِيْمًا) “সুসংবাদদাতা ও সাবধানকারী রাসূল প্রেরণ করেছি, যাতে রাসূল আসার পর আল্লাহর বিরুদ্ধে মানুষের কোন অভিযোগ না থাকে। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” (সূরা নিসা ৪:১৬৫) যারাই জাহান্নামে যাবে তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমাদের কাছে কি কোন রাসূল আগমন করেনি? সবাই স্বীকার করবে, যেমন আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন, (کُلَّمَآ اُلْقِیَ فِیْھَا فَوْجٌ سَاَلَھُمْ خَزَنَتُھَآ اَلَمْ یَاْتِکُمْ نَذِیْرٌﭗ قَالُوْا بَلٰی قَدْ جَا۬ءَنَا نَذِیْرٌﺃ فَکَذَّبْنَا وَقُلْنَا مَا نَزَّلَ اللہُ مِنْ شَیْءٍﺊ اِنْ اَنْتُمْ اِلَّا فِیْ ضَلٰلٍ کَبِیْرٍﭘ) “যখনই তাতে কোন দলকে নিক্ষেপ করা হবে, তখনই তাদেরকে জাহান্নামের রক্ষীরা জিজ্ঞেস করবেঃ তোমাদের নিকট কি কোন সতর্ককারী আসেনি? তারা উত্তরে বলবে: হ্যাঁ আমাদের নিকট সতর্ককারী এসেছিল, আমরা তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিলাম এবং বলেছিলাম: আল্লাহ কিছুই নাযিল করেনি, তোমরা তো মহা গুমরাহীতে রয়েছ।” (সূরা মুলক ৬৭:৮-৯) এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, রাসূল প্রেরণ ও কিতাব অবতরণ ছাড়া আল্লাহ তা‘আলা কোন জাতিকে আযাব দিবেন না। তবে যদি কোন্ জাতি বা কোন্ ব্যক্তির কাছে তাঁর বার্তা না পৌঁছে, সে ফায়সালা কিয়ামতের দিন তিনিই করবেন। সেখানে অবশ্যই কারো সাথে অবিচার করা হবে না। বধির, পাগল, নির্বোধ এবং দু’নাবীর মধ্যবর্তী যুগে মৃত্যুবরণকারী (যাদের কাছে দীনের দাওয়াত পৌঁছে নাই) ব্যক্তিদের ব্যাপারও। এদের ব্যাপারে কোন কোন বর্ণনায় এসেছে যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তাদের প্রতি ফেরেশতা প্রেরণ করবেন এবং ফেরেশতারা তাদেরকে বলবেন যে, জাহান্নামে প্রবেশ কর। অতএব তারা যদি আল্লাহ তা‘আলার এ নির্দেশ মেনে নিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করে তাহলে জাহান্নাম তাদের জন্য ফুল বাগান হয়ে যাবে। অন্যথায় তাদেরকে টানতে টানতে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (সহীহুল জামে হা: ৮৮১, ইবনু হিব্বান ৯/২২৬) মুসলিম শিশুরা জান্নাতে যাবে তবে কাফির-মুশরিকদের শিশুদের ব্যাপারে মতামত রয়েছে। কেউ বলেছেন, জান্নাতে যাবে; কেউ বলেছেন জাহান্নামে যাবে। ইমাম ইবনু কাসীর বলেন: হাশরের মাঠে তাদের পরীক্ষা করা হবে, যারা আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশের আনুগত্য করবে তারা জান্নাতে যাবে, আর যারা অবাধ্য হবে তারা জাহান্নামে যাবে। (ইবনু কাসীর) ইমাম বুখারী যে বর্ণনা নিয়ে এসেছেন তাতে বুঝা যায় কাফির-মুশরিকদের শিশুরাও জাহ্ন্নাামে যাবে। আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়: ১. প্রত্যেক মানুষ তার নিজের পাপ বহন করবে। কেউ কারো পাপ বহন করবে না, তবে অন্যকে পাপের দিকে আহ্বান করলে অনুসারী ব্যক্তির সমান পাপের ভার বহন করতে হবে। ২. আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে সতর্ক না করা পর্যন্ত শাস্তি দেন না। ৩. আল্লাহ তা‘আলার দয়া/রহমত নামে একটি সিফাত আছে তা জানা গেল।