Al-Baqara • BN-TAFISR-FATHUL-MAJID
﴿ ٱللَّهُ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلْحَىُّ ٱلْقَيُّومُ ۚ لَا تَأْخُذُهُۥ سِنَةٌۭ وَلَا نَوْمٌۭ ۚ لَّهُۥ مَا فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِى ٱلْأَرْضِ ۗ مَن ذَا ٱلَّذِى يَشْفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذْنِهِۦ ۚ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَىْءٍۢ مِّنْ عِلْمِهِۦٓ إِلَّا بِمَا شَآءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ ۖ وَلَا يَـُٔودُهُۥ حِفْظُهُمَا ۚ وَهُوَ ٱلْعَلِىُّ ٱلْعَظِيمُ ﴾
“GOD - there is no deity save Him, the Ever-Living, the Self-Subsistent Fount of All Being. Neither slumber overtakes Him, nor sleep. His is all that is in the heavens and all that is on earth. Who is there that could intercede with Him, unless it be by His leave? He knows all that lies open before men and all that is hidden from them, whereas they cannot attain to aught of His knowledge save that which He wills [them to attain]. His eternal power overspreads the heavens and the earth, and their upholding wearies Him not. And he alone is truly exalted, tremendous.”
২৫৫ নং আয়াতের তাফসীর: এ আয়াতকে আয়াতুল কুরসী বলা হয়। এটাকে ইসমে আযমও বলা হয়। (তিরমিযী হা: ৩৪৭৮, আবূ দাঊদ হা: ১৪৬৯, হাসান) এ আয়াতের ফযীলাত সম্পর্কে অনেক সহীহ হাদীস রয়েছে। যেমন উবাই বিন কা‘ব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করা হল আল্লাহ তা‘আলার কিতাবে কোন্ আয়াত সবচেয়ে বড়? তিনি বললেন: আয়াতুল কুরসী। (সহীহ মুসলিম হা: ৮১০) যে ব্যক্তি সকাল বেলায় আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তানের অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকবে। আবার সন্ধ্যায় পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত শয়তানের অনিষ্ট থেকে মুক্ত থাকবে। (হাকিম ১/৫৬২, সহীহ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদীস থেকে জানা যায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যে ব্যক্তি রাতে ঘুমানোর পূর্বে আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে তার জন্য আল্লাহ তা‘আলার তরফ থেকে একজন রক্ষক নিযুক্ত থাকবে এবং ভোর পর্যন্ত তার নিকট কোন শয়তান আসতে পারবে না। (সহীহ বুখারী হা: ২৩১১, সহীহ মুসলিম হা: ১৪২৫) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: مَنْ قَرَأَ آيَةَ الْكُرْسِيِّ فِيْ دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ مِكْتُوْبَةٍ لَمْ يَمْنَعْهُ مِنْ دُخُوْلِ الْجَنَّةِ اِلَّا اَنْ يَمُوْتَ< যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয সালাতের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে তার জন্য জান্নাতে যেতে মৃত্যু ছাড়া কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। (সিলসিলা সহীহাহ হা: ৯৭২, মিশকাত হা: ৯৭৪, সহীহ) আয়াতুল কুরসীর এত ফযীলত ও মহত্ত্বের মূল কারণ হলো এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদ ও গুণাবলী বর্ণনা করা হয়েছে। শাব্দিক বিশ্লেষণ: কুরসী শব্দের অর্থ: চেয়ার, তবে এখানে কুরসী হল আল্লাহ তা‘আলার দু’টি পা রাখার জায়গা। (ইবনু খুযাইমাহ হা: ৭২, শাইখ আলবানী সহীহ বলেছেন) এছাড়াও কুরসী অর্থ আল্লাহ তা‘আলার শক্তি জ্ঞান বা আরশ বলে কেউ কেউ ব্যাখ্যা করেছেন যা সঠিক নয়। এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলার অনেকগুলো গুণাবলী বর্ণিত হয়েছে। যেমন তিনি একমাত্র মা‘বূদ। তিনি ছাড়া সত্যিকার কোন মা‘বূদ নেই। اَلْحَیُّ বা চিরঞ্জীব, এই গুণ একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার। এ গুণে আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কেউ গুণান্বিত নয়। আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া সবল প্রাণী মরণশীল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: (کُلُّ نَفْسٍ ذَا۬ئِقَةُ الْمَوْتِﺤ ثُمَّ اِلَیْنَا تُرْجَعُوْنَ) “প্রতিটি প্রাণ মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে; অতঃপর তোমরা আমারই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে।”(সূরা আনকাবূত ২৯:৫৭) সুতরাং যারা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে হায়াতুন নাবী বলে থাকে তাদের দাবী এ আয়াত খণ্ডন করে দিচ্ছে। الْقَیُّوْمُ তিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ। কোন কিছুর প্রতি মুখাপেক্ষী নয়। খাওয়া, পান করা, বিশ্রাম, বান্দার ইবাদত, দান-সদাকাহ ইত্যাদি থেকে অমুখাপেক্ষী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: (یٰٓاَیُّھَا النَّاسُ اَنْتُمُ الْفُقَرَا۬ئُ اِلَی اللہِﺆ وَاللہُ ھُوَ الْغَنِیُّ الْحَمِیْدُ) “হে মানুষ! তোমরা আল্লাহর মুখাপেক্ষী, আর আল্লাহ হলেন অভাবমুক্ত প্রশংসিত।”(সূরা ফাতির ৩৫:১৫) (لَا تَأْخُذُه۫ سِنَةٌ وَّلَا نَوْمٌ) আাল্লাহ তা‘আলা ঘুমান না এমনকি তন্দ্রাচ্ছন্নও হন না। এটা আল্লাহ তা‘আলার পরিপূর্ণতার গুণ। (مَنْ ذَا الَّذِيْ يَشْفَعُ عِنْدَه) শাফায়াত ও তার প্রকার এবং কারা কাদের জন্য শাফা‘আত করতে পারবে তা অত্র সূরার ৪৫-৪৭ নং আয়াতের তাফসীরে আলোচনা করা হয়েছে। তাঁর জ্ঞান সর্বত্র পরিব্যাপ্ত, সৃষ্টি জগত তা বেষ্টন করতে পারে না। তবে তিনি যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত। তার কুরসী আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী পরিব্যাপ্ত। এ আকাশ ও পৃথিবী পরিচালনা করতে তিনি ক্লান্ত হন না। তিনি সুউচ্চ ও সুমহান। আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়: ১. সকল ইবাদত পাওয়ার যোগ্য একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। ২. আল্লাহ তা‘আলা ঘুমান না এবং তন্দ্রাও তাকে স্পর্শ করতে পারে না। ৩. আল্লাহ তা‘আলার অনুমতি ছাড়া কেউ সুপারিশ করতে পারবে না। ৪. আল্লাহ তা‘আলা তাঁর জ্ঞান দ্বারা সবকিছু বেষ্টন করে আছেন। ৫. আল্লাহ তা‘আলার পা আছে- এ গুণ প্রমাণিত হল। ৬. আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করেন- এগুণ প্রমাণিত হল। ৭. আল্লাহ তা‘আলা স্ব-স্বত্তায় ওপরে আছেন- সর্বত্র বিরাজমান নন। ৮. আয়াতুল কুরসীর ফযীলত অবগত হলাম।