Al-Baqara • BN-TAFISR-FATHUL-MAJID
﴿ وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَٰٓئِكَةِ ٱسْجُدُوا۟ لِءَادَمَ فَسَجَدُوٓا۟ إِلَّآ إِبْلِيسَ أَبَىٰ وَٱسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ ٱلْكَٰفِرِينَ ﴾
“And when We told the angels, "Prostrate yourselves before Adam!" -they all prostrated themselves, save Iblis, who refused and gloried in his arrogance: and thus he became one of those who deny the truth.”
৩৪ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদের আদম (আঃ)-কে যে সিজদাহ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তা ছিল আদম (আঃ)-এর সম্মান ও মর্যাদাস্বরূপ এবং আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতস্বরূপ। সকলেই সিজদাহ করল ইবলিস ব্যতীত। সে অমান্য করল এবং অহঙ্কার করল। (তাফসীর সা‘দী, অত্র আয়াতের তাফসীর) ইবলিসের অমান্য ও অহঙ্কারের কারণ অন্যত্র উল্লেখ করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: (قَالَ مَا مَنَعَکَ اَلَّا تَسْجُدَ اِذْ اَمَرْتُکَﺚ قَالَ اَنَا خَیْرٌ مِّنْھُﺆ خَلَقْتَنِیْ مِنْ نَّارٍ وَّخَلَقْتَھ۫ مِنْ طِیْنٍ) “তিনি বললেন, ‘আমি যখন তোমাকে আদেশ দিলাম তখন কী তোমাকে তা থেকে বিরত রাখল যে, তুমি সিজদাহ করবে না?’সে বলল, ‘আমি তার চেয়ে উত্তম; তুমি আমাকে অগ্নি দ্বারা সৃষ্টি করেছ এবং তাকে কর্দম দ্বারা সৃষ্টি করেছ।”(সূরা আ‘রাফ ৭:১২) সুতরাং আল্লাহ তা‘আলার কোন নির্দেশকে অমান্য করা শয়তানের কাজ ও অহঙ্কারের বহিঃপ্রকাশ। এমনকি কেউ তাচ্ছিল্য ও অহঙ্কার করে আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশকে অমান্য করলে মু’মিন থাকবে না। তাই একজন মু’মিন যখন জানতে পারবে এটা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের নির্দেশ তখন সে তা মাথা পেতে মেনে নেবে, চাই সেটা তার যুক্তি ও ইচ্ছানুযায়ী হোক আর না হোক। বরং যুক্তি দাঁড় করে কুরআন ও সুন্নাহর নির্দেশ বর্জন করা ইবলিসের অনসুরণ এবং জাহান্নামে যাওয়ার কাজ। ফেরেশতা কর্তৃক আদম (আঃ)-কে সিজদাহ করার ব্যাপারে মুফাসসিরদের বক্তব্য: ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: ফেরেশতাগণ আদম (আঃ)-কে সিজদাহ করেছিল আর এটা ছিল মূলত আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য (কারণ আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ দিয়েছেন)। হাসান বসরী (রহঃ) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা আদমকে যে সম্মান দান করেছেন সে প্রদত্ত সম্মান স্বরূপ সিজদাহ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এটাই ছিল আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য। কাতাদাহ (রহঃ)ও এরূপ বলেছেন। ইবরাহীম আল মুজানী (রহঃ) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা আদমকে কাবার ন্যায় করেছিলেন। অর্থাৎ আদমকে সামনে রেখে আল্লাহ তা‘আলাকেই সিজদাহ দেয়া। কেউ কেউ বলেছেন: এ সিজদাহটি ছিল সালাম ও সম্মানস্বরূপ। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন: (وَرَفَعَ اَبَوَیْھِ عَلَی الْعَرْشِ وَخَرُّوْا لَھ۫ سُجَّدًاﺆ وَقَالَ یٰٓاَبَتِ ھٰذَا تَاْوِیْلُ رُءْیَایَ مِنْ قَبْلُﺑ قَدْ جَعَلَھَا رَبِّیْ حَقًّا) “এবং ইউসুফ তার মাতা-পিতাকে উচ্চাসনে বসাল এবং তারা সকলে তার সম্মানে সিজ্দায় লুটিয়ে পড়ল। সে বলল, ‘হে আমার পিতা! এটাই আমার পূর্বেকার স্বপ্নের ব্যাখ্যা; আমার প্রতিপালক সেটা সত্যে পরিণত করেছেন।”(সূরা ইউসূফ ১২:১০০) এরূপ সিজদাহ পূর্ববর্তী উম্মাতের মাঝে শরীয়তসম্মত ছিল, কিন্তু আমাদের শরীয়তে এটা নিষিদ্ধ। মু‘আয (রাঃ) বলেন: আমি সিরিয়াবাসীকে তাদের নেতৃবর্গ ও আলেমদের সামনে সিজদাহ করতে দেখেছিলাম। কাজেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললাম: হে আল্লাহর রাসূল আপনি সিজদাহ পাবার বেশি হকদার। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: لَوْ كُنْتُ آمُرُ بَشَرًا أَنْ يَسْجُدَ لِبَشَرٍ لأَمَرْتُ النِّسَاءَ أَنْ يَسْجُدْنَ لأَزْوَاجِهِنِّ আমি যদি কোন মানুষের জন্য সিজদাহ করার নির্দেশ প্রদান করতাম, তাহলে স্ত্রীদেরকে নির্দেশ প্রদান করতাম যে, তারা যেন তাদের স্বামীদেরকে সিজদাহ করে। (মু‘জামুল কাবীর: ৩৭৩) অতএব ইসলামী শরীয়তে কোন মানুষকে সিজদাহ দেয়ার বিধান নেই। সম্মানী সিজদাহ বা রূপক সিজদাহ সবই হারাম। অতএব কোন সম্রাট, পীর, বুজুর্গ ও আলেম মুর্শিদকেও সিজদাহ দেয়া হারাম ও শির্ক। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ প্রদান করেছেন আদমকে সিজদাহ দেয়ার জন্য তাঁর সম্মান ও মর্যাদাস্বরূপ। এটাই হল নির্দেশের বাস্তবায়ন। অধিকাংশ মুফাসসিরগণের মতামত এরূপ। (তাফসীর ইবনে কাসীর,অত্র আয়াতের তাফসীর) আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়: ১. ফেরেশতারা আদম (আঃ)-কে সিজদাহ করেছিল তাঁর সম্মান ও মর্যাদাস্বরূপ। যা পালন করা ছিল আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত। ২. অহঙ্কার করে আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ বর্জন করা শয়তানের কাজ। যা একজন মু’মিনকে ঈমানের গণ্ডি থেকে বের করে দেয়। ৩. আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশকে কোন প্রকার যুক্তি দিয়ে বর্জন করা যাবে না। শরীয়ত যুক্তি দিয়ে চলে না, উক্তি দিয়ে চলে।