Al-Ahzaab • BN-TAFISR-FATHUL-MAJID
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ إِذَا نَكَحْتُمُ ٱلْمُؤْمِنَٰتِ ثُمَّ طَلَّقْتُمُوهُنَّ مِن قَبْلِ أَن تَمَسُّوهُنَّ فَمَا لَكُمْ عَلَيْهِنَّ مِنْ عِدَّةٍۢ تَعْتَدُّونَهَا ۖ فَمَتِّعُوهُنَّ وَسَرِّحُوهُنَّ سَرَاحًۭا جَمِيلًۭا ﴾
“O YOU who have attained to faith! If you marry believing women and then divorce them ere you have touched them, you have no reason to expect, and to calculate, any waiting period on their part: hence, make [at once] provision for them, and release them in a becoming manner.”
৪৯ নং আয়াতের তাফসীর: পূর্বে যায়েদ কর্তৃক যায়নাবকে তালাক দেয়ার ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। যায়েদ ও যায়নাবের দৈহিক মিলন হয়েছিল। যায়নাবের ইদ্দত শেষ হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বিবাহের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এ আয়াতে বিবাহোত্তর দৈহিক মিলনের পূর্বে তালাক দিলে স্ত্রীর বিধান কী হবে সে কথাই আলোচনা করা হয়েছে। বিবাহোত্তর দৈহিক মিলনের পূর্বে স্ত্রীকে তালাক দিলে তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর ইদ্দত পালন করতে হবে না। সূরা বাকারার ২২৮ নং আয়াতে যে শ্রেণির তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর ইদ্দত পালনের কথা বলা হয়েছে তা থেকে এ শ্রেণির নারী ভিন্ন। যা এ আয়াত থেকে স্পষ্টই বুঝা যায়। এমতাবস্থায় সে চাইলে কোন প্রকার ইদ্দত ছাড়াই অন্য স্বামীর নিকট বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে। তবে যদি বিবাহের পর দৈহিক মিলনের পূর্বে স্বামী মারা যায় তাহলে ঐ স্ত্রীকে চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করতেই হবে। আল্লাহ তা‘আলার বাণী: (وَالَّذِيْنَ يُتَوَفَّوْنَ مِنْكُمْ وَيَذَرُوْنَ أَزْوَاجًا يَّتَرَبَّصْنَ بِأَنْفُسِهِنَّ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَّعَشْرًا) “আর তোমাদের মধ্যে স্ত্রী রেখে যারা মারা যায় তাদের স্ত্রীরা চার মাস দশ দিন অপেক্ষা করবে।” (সূরা বাকরাহ ২:২৩৪) এক্ষেত্রে আরো একটি বিধান হল যে, বিবাহের পর স্ত্রীকে যদি দৈহিক মিলনের পূর্বে তালাক দেয় তাহলে স্ত্রী তার নির্ধারিত মাহরের অর্ধেক পাবে। আল্লাহ তা‘আলার বাণী: (وَإِنْ طَلَّقْتُمُوْهُنَّ مِنْ قَبْلِ أَنْ تَمَسُّوْهُنَّ وَقَدْ فَرَضْتُمْ لَهُنَّ فَرِيْضَةً فَنِصْفُ مَا فَرَضْتُمْ إِلَّآ أَنْ يَّعْفُوْنَ أَوْ يَعْفُوَ الَّذِيْ بِيَدِه۪ عُقْدَةُ النِّكَاحِ) “আর যদি তোমরা তাদের মাহর ধার্য করার পর তাদেরকে স্পর্শ করার পূর্বে তালাক দিয়ে দাও তবে যা নির্ধারণ করেছ তার অর্ধেক (স্ত্রী) পাবে। তবে যদি তারা ক্ষমা করে অথবা যার হাতে বিয়ের বন্ধন সে ক্ষমা করে।” (সূরা বাকরাহ ২:২৩৭) আর যদি মাহর নির্ধারণ না থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে সাধ্যানুসারে তাদেরকে কিছু অর্থ সামগ্রী দিয়ে দিবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: (لَا جُنَاحَ عَلَیْکُمْ اِنْ طَلَّقْتُمُ النِّسَا۬ئَ مَا لَمْ تَمَسُّوْھُنَّ اَوْ تَفْرِضُوْا لَھُنَّ فَرِیْضَةًﺊ وَّمَتِّعُوْھُنَّﺆ عَلَی الْمُوْسِعِ قَدَرُھ۫ وَعَلَی الْمُقْتِرِ قَدَرُھ۫ﺆ مَتَاعًۭا بِالْمَعْرُوْفِﺆ حَقًّا عَلَی الْمُحْسِنِیْنَﰻ) “তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের স্পর্শ করার আগে এবং তাদের জন্য মাহর ধার্য করার আেেগ যদি তালাক দিয়ে দাও, তবে তাতে তোমাদের কোন গুনাহ নেই। তোমরা তাদের কিছু খরচ দেবে, ধনীরা তাদের সাধ্যমত দেবে এবং গরীবরাও তাদের সাধ্য অনুযায়ী দেবে। ন্যায়সঙ্গতভাবে খরচ প্রদান করা সৎ কর্মশীলদের ওপর দায়িত্ব।” (সূরা বাকারাহ ২:২৩৬) হাদীসে এসেছে, সাহল বিন সা‘দ ও আবী উসাইদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাইমুনাহ বিনতে শারাহীল -কে বিবাহ করলেন। অতঃপর সে যখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসল তখন তিনি তার দিকে হাত বাড়ালেন। কিন্তু সে যেন এটা অপছন্দ করল। তখন তিনি আবূ উসাইদ (রাঃ)-কে হুকুম করলেন যে, তার বিদায়ের সামান তৈরী করে দেয়া হোক এবং মূল্যবান দু‘খানা কাপড় তাকে পরিয়ে দেয়া হোক। (সহীহ বুখারী হা: ৫২৫৬-৭) কোন প্রকার কষ্ট না দিয়ে, ইজ্জত ও সম্মানের সাথে কিছু দিয়ে বিদায় করে দেয়াটাই হচ্ছে সৌজন্যর সাথে বিদায় করে দেয়া। আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়: ১. দৈহিক মিলনের পূর্বে স্ত্রীকে তালাক দিলে স্ত্রীকে কোন ইদ্দত পালন করতে হবে না, তবে যদি স্বামী মারা যায় তাহলে চার মাস দশদিন তাকে ইদ্দত পালন করতে হবে। ২. দৈহিক মিলনের পূর্বে তালাক দিলে স্ত্রী নির্ধারিত মাহরের অর্ধেক পাবে। আর যদি মাহর নির্ধারিত না হয় তাহলে সাধ্যানুসারে যতটুকু সম্ভব ততটুকু দিয়ে দেবে।