An-Nisaa • BN-TAFISR-FATHUL-MAJID
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ أَطِيعُوا۟ ٱللَّهَ وَأَطِيعُوا۟ ٱلرَّسُولَ وَأُو۟لِى ٱلْأَمْرِ مِنكُمْ ۖ فَإِن تَنَٰزَعْتُمْ فِى شَىْءٍۢ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلْيَوْمِ ٱلْءَاخِرِ ۚ ذَٰلِكَ خَيْرٌۭ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا ﴾
“O you who have attained to faith! Pay heed unto God, and pay heed unto the Apostle and unto those from among you who have been entrusted with authority; and if you are at variance over any matter, refer it unto God and the Apostle, if you [truly] believe in God and the Last Day. This is the best [for you], and best in the end.”
৫৯ নং আয়াতের তাফসীর: শানে নুযূল: আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন এবং একজন আনসারীকে নেতৃত্ব দান করেন। ইবনু আব্বাসের বর্ণনায় রয়েছে: তিনি হলেন আবদুল্লাহ বিন হুযাফাহ (রাঃ)। যখন তারা বের হলেন, হঠাৎ তিনি সেনা বাহিনীর ওপর কোন বিষয়ে রাগান্বিত হন। অতঃপর তিনি বললেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি তোমাদেরকে আমার আনুগত্য করার নির্দেশ দেননি? তারা বলল হ্যাঁ। তিনি বললেন: তোমরা জ্বালানী কাঠ জমা কর, তারপর আগুন এনে কাঠগুলো জ্বালিয়ে দাও। অতঃপর নির্দেশ দিয়ে বললেন: আমি তোমাদেরকে এ আগুনে প্রবেশ করার নির্দেশ দিচ্ছি। তখন সেনারা তাতে প্রবেশ করার উপক্রম করল। এমন সময় একজন যুবক বললেন: আপনারা আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহ তা‘আলার রাসূলের কাছে আশ্রয় নিয়েছেন। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে কিছু না জানা পর্যন্ত তড়িঘড়ি করবেন না। তিনি যদি তাতে প্রবেশ করার নির্দেশ দেন তাহলে প্রবেশ করবেন। আলী (রাঃ) বলেন: সকলে রাসূলের নিকট ফিরে এসে ঘটনাটি বলল। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা যদি তাতে প্রবেশ করতে তাহলে কোনদিন তথা হতে বের হতে পারতে না। আনুগত্য কেবল সৎ কাজে। (সহীহ বুখারী হা: ৭১৪৫, ৪৫৮৪, সহীহ মুসলিম হা: ১৮৪০, ১৮৩৪) (وَاُولِی الْاَمْرِ مِنْکُمْ) (উলুল আমর) ‘যারা তোমাদের মধ্যে ক্ষমতার অধিকারী’ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: أُولُو الْأَمْرِ مِنْكُمْ হল: আলেম ও দীনদার ব্যক্তিবর্গ। তাফসীর মুয়াসসারে বলা হয়েছে: (أُولُو الْأَمْرِ مِنْكُمْ) উলুল আমর হল শাসক শ্রেণি। ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা ভাল জানেন। আয়াতে শাসক ও আলেম সকল প্রকার ক্ষমতাধর ব্যক্তি শামিল। (ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর) অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা নিজের আনুগত্য ও রাসূলের আনুগত্য করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং নেতা ও শাসকদেরও। আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় আনুগত্যের সাথে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আনুগত্য ওয়াজিব করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: (أَطِيْعُوا اللّٰهَ وَأَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَلَا تُبْطِلُوْآ أَعْمَالَكُمْ) “আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য কর। আর নিজেদের আমল নষ্ট কর না।”(সূরা মুহাম্মাদ ৪৭:৩৩) অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আনুগত্য স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাই আয়াতে أَطِيْعُوا (তোমরা আনুগত্য কর) শব্দটি আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উভয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন। কিন্তু (أُولُو الْأَمْرِ مِنْكُمْ) নেতা, শাসকের) পূর্বে ব্যবহার করেননি। তার মানে হল- নেতা বা শাসকের আনুগত্য আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর ন্যস্ত। যদি শাসক বা আলেমের নির্দেশ আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নির্দেশ মোতাবেক হয় তাহলে অবশ্যই আনুগত্য করতে হবে এবং এ আনুগত্য করা ওয়াজিব। কেননা এটা মূলত নেতার আনুগত্য নয়, আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য। আর যদি নেতা এমন আনুগত্যের দিকে আহ্বান করে বা নির্দেশ দেয় যা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নির্দেশের বিরুদ্ধে যেমন শানে নুযূলে জানলাম তাহলে নেতা কখনো আনুগত্যের পাত্র হবেন না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: لَا طَاعَةَ لِمَخْلُوقٍ فِي مَعْصِيَةِ الخَالِقِ খালেকের (আল্লাহ তা‘আলার) অবাধ্যে কোন মাখলুকের আনুগত্য নেই। (মিশকাত হা: ৩৬৯৬, সহীহ) অন্যত্র নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: একজন মুসলিম ব্যক্তির আবশ্যক হল নেতার আনুগত্য করবে এবং তার কথা শুনবে, সে ব্যক্তি নেতার নির্দেশ পছন্দ করুক আর অপছন্দ করুক। যদি নেতা আল্লাহ তা’আলার অবাধ্য কোন কাজের নির্দেশ না দেয়, যদি আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্য কোন কাজের নির্দেশ দেয় তাহলে তার অনুসরণ করা যাবে না এবং আনুগত্যও করা যাবে না। (সহীহ বুখারী হা: ৭১৪৪, সহীহ বুখারী কিতাবুল ইমারাহ হা: ৩৮) যদি কোন নেতা, শাসক, ইমাম, এবং আলেম-উলামাদের পথ নির্দেশনা ও তরিকা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের পথ নির্দেশনা ও তরিকা অনুযায়ী হয় তাহলে অবশ্যই মান্য করা আবশ্যক। অন্যথায় কখনো অনুসরণ করা যাবে না। এরপরেও আলেম বা শাসকের আনুগত্য করতে গিয়ে যদি কোন বিষয়ে বিবাদ দেখা দেয় তাহলে ফায়সালার প্রত্যাবর্তনস্থল কী হবে তারও দিক-নির্দেশনা আল্লাহ তা‘আলা প্রদান করেছেন। তা কোন ওয়ালী আওয়ালিয়া বুজুরগানে দীন বা মানব রচিত কিতাব নয়। তা হল আল্লাহ তা‘আলার কিতাব কুরআন ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহীহ হাদীস। যারা কোন বিষয়ে বিবাদ দেখা দিলে কুরআন ও সুন্নাহর দিকে ফিরে যাবে তারাই আল্লাহ তা‘আলা ও আখিরাতে বিশ্বাসী। যারা আল্লাহ তা‘আলা ও আখিরাতে বিশ্বাসী না তারা কোন বিষয়ে বিবাদ দেখা দিলে কুরআন সুন্নাহ বাদ দিয়ে এদিক-সেদিক দৌড়াবে। মীসাংসার জন্য কুরআন ও সুন্নাহর দিকে ফিরে যাওয়া পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম। সুতরাং প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির আবশ্যক হলো আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের আনুগত্য করবে, সেই সাথে নেতার আনুগত্য করবে যদি নেতা কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক নেতৃত্ব দেয়। অন্যথায় নেতা আনুগত্যের পাত্র হবে না। আর কোন বিষয়ে বিবাদ দেখা দিলে তার সমাধান নিব কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ থেকে মানব রচিত কোন বিধান বা মতামত থেকে নয়। আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়: ১. আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একচ্ছত্র আনুগত্য করা ওয়াজিব। ২. নেতার আনুগত্য আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আনুগত্যের ওপর নির্ভরশীল। ৩. ধর্মীয় সকল বিবাদের মীমাংসার প্রত্যাবর্তনস্থল একমাত্র কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ। ৪. যাদের বিবাদের মীমাংসা স্থল কুরআন ও সুন্নাহ তাদের পরিণতি শুভ।