Ash-Shura • BN-TAFISR-FATHUL-MAJID
﴿ فَلِذَٰلِكَ فَٱدْعُ ۖ وَٱسْتَقِمْ كَمَآ أُمِرْتَ ۖ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَآءَهُمْ ۖ وَقُلْ ءَامَنتُ بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ مِن كِتَٰبٍۢ ۖ وَأُمِرْتُ لِأَعْدِلَ بَيْنَكُمُ ۖ ٱللَّهُ رَبُّنَا وَرَبُّكُمْ ۖ لَنَآ أَعْمَٰلُنَا وَلَكُمْ أَعْمَٰلُكُمْ ۖ لَا حُجَّةَ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ ۖ ٱللَّهُ يَجْمَعُ بَيْنَنَا ۖ وَإِلَيْهِ ٱلْمَصِيرُ ﴾
“Because of this, then, summon [all mankind], and pursue the right course, as thou hast been bidden [by God]; and do not follow their likes and dislikes, but say: “I believe in whatever revelation God has bestowed from on high; and I am bidden to bring about equity in your mutual views. God is our Sustainer as well as your Sustainer. To us shall be accounted our deeds, and to you, your deeds. Let there be no contention between us and you: God will bring us all together - for with Him is all journeys’ end.””
১৫ নম্বর আয়াতের তাফসীর : এটি এমন একটি মর্যাদাসম্পন্ন আয়াত, যেখানে আল্লাহ তা‘আলা পৃথক পৃথকভাবে দশটি হুকুম বা বিধান বর্ণনা করেছেন- আয়াতুল কুরসী ব্যতীত পবিত্র কুরআনে এরূপ আয়াত আর নেই। বিধানগুলো হলো। প্রথম বিধান : (فَلِذٰلِكَ فَادْعُ) অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নির্দেশ দিয়েছেন যে, হে নাবী! তোমার প্রতি যা ওয়াহী করা হয়েছে তারই দিকে সমস্ত মানব জাতিকে দা‘ওয়াত দাও। তারা যেন এরই ওপর আমল করে। অর্থাৎ মানব জাতির ওপর দায়িত্ব হলো অন্যকে সঠিক দীনের দা‘ওয়াত দেয়া; কোন দল, তরীকা বা মতাদর্শের দিকে নয়। দ্বিতীয় বিধান : (وَاسْتَقِمْ كَمَآ أُمِرْتَ) অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা যে সঠিক দীনের কথা বলেছেন সে দীনের ওপর নিজেকে অটল-অবিচল রাখা, সে পথ থেকে বিচ্যুত না হওয়া। তৃতীয় বিধান : (وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَا۬ءَهُمْ) অর্থাৎ কাফির-মুশরিকরা যেভাবে তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ‘ইবাদত করে সেগুলো থেকে নিজে বেঁচে থাকা এবং অন্যকেও বাঁচিয়ে রাখা। চতুর্থ বিধান : (اٰمَنْتُ بِمَآ أَنْزَلَ اللّٰهُ مِنْ كِتٰبٍ) অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা যে কিতাবসমূহ অবতীর্ণ করেছেন সেগুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। এমনটি যেন না হয় যেমনটি ইয়াহূদীরা করত, তারা কিতাবের এক অংশের প্রতি ঈমান আনত আর অন্য অংশের প্রতি কুফরী করত। পঞ্চম বিধান : (وَأُمِرْتُ لِأَعْدِلَ بَيْنَكُمُ) অর্থাৎ “আমি তোমাদের মধ্যে ইনসাফ করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি” মানুষের মধ্যে ন্যায় বিচার কায়েম করতে হবে। কোনভাবেই কোন প্রকার অন্যায় বিচার-ফায়সালা করা যাবে না। ষষ্ঠ বিধান : (اَللّٰهُ رَبُّنَا وَرَبُّكُمْ) অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিযিকদাতা একমাত্র আল্লাহ। তিনি সকলের রব- এ কথা স্বীকার করা। সপ্তম বিধান : (لَنَآ أَعْمَالُنَا وَلَكُمْ أَعْمَالُكُمْ) অর্থাৎ কাফির-মুশরিকদের সাথে কোন প্রকার সম্পর্ক না রাখা, সর্বপ্রকার সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা। আর প্রত্যেকের কৃতকর্মের ফল তাকেই ভোগ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : (وَإِنْ كَذَّبُوْكَ فَقُلْ لِّيْ عَمَلِيْ وَلَكُمْ عَمَلُكُمْ ج أَنْتُمْ بَرِيْ۬ئُوْنَ مِمَّآ أَعْمَلُ وَأَنَا بَرِيْ۬ءٌ مِّمَّا تَعْمَلُوْنَ) “এবং তারা যদি তোমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে তবে তুমি বল : ‘আমার কর্ম (কর্মফল) আমার এবং তোমাদের কর্ম (কর্মফল) তোমাদের জন্য। আমি যা করি সে বিষয়ে তোমরা দায়মুক্ত এবং তোমরা যা কর সে বিষয়ে আমিও দায়মুক্ত।’’ (সূরা ইউনুস ১০ : ৪১) সুদ্দী (রহঃ) বলেন : এ বিধান মক্কায় ছিল, আর মদীনায় জিহাদের আয়াতগুলো অবতীর্ণ হওয়ার মাধ্যমে তা রহিত হয়ে যায়। কেননা জিহাদের সারমর্ম হল যারা উপদেশ ও অনুরোধে প্রভাবিত হবে না তাদেরকে যুদ্ধের মাধ্যমে পরাভূত করতে হবে। তাদেরকে তাদের অবস্থার ওপর ছেড়ে দিলে হবে না। তবে সঠিক কথা হল, রহিত হয়নি বরং দলীলের মাধ্যমে সত্য প্রমাণিত হওয়ার পর সত্য বর্জন করলে তাদের সাথে কোন সম্পর্ক থাকবে না। অষ্টম বিধান : (لَا حُجَّةَ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ) অর্থাৎ কাফির-মুশরিকদেরকে এ কথা স্পষ্টভাবে বলে দেয়া যে, সত্য স্পষ্ট হয়ে যাবার পর আমাদের মধ্যে এবং তোমাদের মধ্যে কোন প্রকার ঝগড়া-বিবাদ, তর্ক-বিতর্কের প্রয়োজন নেই। ৯ম বিধান : (اَللّٰهُ يَجْمَعُ بَيْنَنَا) অর্থাৎ কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা সকলকে একত্রিত করবেন এ বিশ্বাস পোষণ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : (قُلْ يَجْمَعُ بَيْنَنَا رَبُّنَا ثُمَّ يَفْتَحُ بَيْنَنَا بِالْحَقِّ ط وَهُوَ الْفَتَّاحُ الْعَلِيْمُ) “বল, আমাদের প্রতিপালক আমাদেরকে একত্রিত করবেন, অতঃপর তিনি আমাদের মধ্যে বিচার করবেন সঠিকভাবে, আর তিনিই শ্রেষ্ঠ ফায়সালাকারী, সর্বজ্ঞ।” (সূরা সাবা ৩৪ : ২৬) ১০ম বিধান : (وَإِلَيْهِ الْمَصِيْرُ) অর্থাৎ সকলের মৃত্যুর পর প্রত্যাবর্তন তাঁরই নিকট- বিশ্বাস পোষণ করা। আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় : ১. আল্লাহ তা‘আলার পথে অটল থাকতে হবে এবং মানুষকে তাঁর পথে ডাকতে হবে। ২. প্রবৃত্তির অনুসরণ করা যাবে না। ৩. ন্যায় বিচার করতে হবে, কোন প্রকার জুলুম করা যাবে না।