slot qris slot gacor terbaru slot gacor terbaik slot dana link slot gacor slot deposit qris slot pulsa slot gacor situs slot gacor slot deposit qris
| uswah-academy
WhatsApp Book A Free Trial
القائمة

🕋 تفسير سورة الأعراف

(Al-Araf) • المصدر: BN-TAFISR-FATHUL-MAJID

وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكَ لَيَبْعَثَنَّ عَلَيْهِمْ إِلَىٰ يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ يَسُومُهُمْ سُوءَ الْعَذَابِ ۗ إِنَّ رَبَّكَ لَسَرِيعُ الْعِقَابِ ۖ وَإِنَّهُ لَغَفُورٌ رَحِيمٌ

📘 ১৬৭ নং আয়াতের তাফসীর: এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহূদীদের ব্যাপারে বলেছেন, অবশ্যই তিনি কিয়ামত পর্যন্ত এমন লোক প্রেরণ করবেন যারা ইয়াহূদীদেরকে তাদের নাফরমানী, আল্লাহ তা‘আলার নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করা এবং শরীয়তের অপব্যাখ্যা করার কারণে কিয়ামত পর্যন্ত কঠিন শাস্তি দিতে থাকবে। আলী বিন আবূ তালহা বলেন: এটা হল তাদের ওপর জিযিয়া, আর যারা তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেবে তারা হল মুহাম্মাদ (সাঃ) ও তাঁর উম্মাত। (তাফসীর তাবারী, হা: ১৫২৯৯) প্রমাণ: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মদীনা থেকে এসব ইয়াহূদীদেরকে বিতাড়িত করে দিয়েছিলেন এবং উমার (রাঃ) ও বিতাড়িত করে দিয়েছিলেন। আজও এ ইয়াহূদীরা যাযাবরের মত ঠিকানাহীন ঘুরে বেড়াত যদি ফিলিস্তিনের মুসলিমরা আশ্রয় না দিত। যা আল্লাহ তা‘আলা ভবিষ্যত বাণী করেছেন: (ضُرِبَتْ عَلَیْھِمُ الذِّلَّةُ اَیْنَمَا ثُقِفُوْٓا اِلَّا بِحَبْلٍ مِّنَ اللہِ وَحَبْلٍ مِّنَ النَّاسِ وَبَا۬ءُوْ بِغَضَبٍ مِّنَ اللہِ وَضُرِبَتْ عَلَیْھِمُ الْمَسْکَنَةُﺚ ذٰلِکَ بِاَنَّھُمْ کَانُوْا یَکْفُرُوْنَ بِاٰیٰتِ اللہِ وَیَقْتُلُوْنَ الْاَنْۭبِیَا۬ئَ بِغَیْرِ حَقٍّﺚ ذٰلِکَ بِمَا عَصَوْا وَّکَانُوْا یَعْتَدُوْنَ)‏ “আল্লাহ তা‘আলার প্রতিশ্র“তি ও মানুষের প্রতিশ্র“তির বাইরে যেখানেই তাদের পাওয়া গেছে সেখানেই তারা লাঞ্ছিত। এবং তারা আল্লাহ তা‘আলার ক্রোধে পতিত হয়েছে এবং তাদের ওপর দারিদ্র নিপতিত হয়েছে। এসব এজন্য যে, তারা আল্লাহ তা‘আলার আয়াতকে অস্বীকার করেছে এবং নাবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে। আর এ কারণেও যে, তার সীমালঙ্ঘন করেছে।” (সূরা আলি ইমরান ৩:১১২) নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা শাস্তি দানে দ্রুততর এবং তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু। আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়: ১. ইয়াহূদীদের ওপর কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলার অভিশাপ। ২. দুনিয়া ও পরকাল উভয় জগতে এদের লাঞ্ছনা।

وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ فَادْعُوهُ بِهَا ۖ وَذَرُوا الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَائِهِ ۚ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

📘 ১৮০ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা‘আলার সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে সেসব নাম দিয়ে তাঁকে ডাকার আহ্বান জানাচ্ছেন। আর যারা তাঁর নামে ইলহাদ করে তাদেরকে বর্জন করার নির্দেশ দিচ্ছেন। আল্লাহ তা‘আলার সকল নামই সুন্দর। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার প্রতিটি নামই পরিপূর্ণ গুণাবলীর ওপর প্রমাণ বহন করে। এজন্য তাঁর প্রতিটি নাম উত্তম ও সুন্দর। যেমন ‘আলীম’ অর্থাৎ সকল বিষয়ের ও জিনিসের ব্যাপারে তাঁর জ্ঞান পরিব্যাপ্ত, কোন জিনিস তাঁর জ্ঞানের বাইরে নয়। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলার নিরানব্বইটি নাম রয়েছে অর্থাৎ একশ; একটি ব্যতীত। যে ব্যক্তি তা গণনা করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আল্লাহ তা‘আলা বেজোড় তিনি বেজোড়কে ভালবাসেন। (সহীহ বুখারী হা: ৬৪১০, সহীহ মুসলিম হা: ২৬৭৭) গণনার অর্থ হল নামগুলোর প্রতি যথাযথ ঈমান আনা, এক একটি ইসলামের সাথে বরকতের জন্য পাঠ করা, তা মুখস্ত করা, তাঁর অর্থ বুঝা, সেসব গুণে গুণান্বিত হওয়া এবং কোন প্রকার বিকৃতি না করা। (মিরকাত ৫/৭১, মিশকাত) তবে এ নিরানব্বইটি নামের মধ্যে আল্লাহ তা‘আলার নাম সীমাবদ্ধ নয় বরং এ ছাড়াও আল্লাহ তা‘আলার অনেক নাম রয়েছে যা তিনি ছাড়া আর কেউ জানে না। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: হে আল্লাহ তা‘আলা! আমি তোমার প্রত্যেক ঐ নামের ওয়াসীলায় চাচ্ছি যদ্বারা তোমার নিজের নাম রেখেছ অথবা তোমার কোন মাখলুককে তা জানিয়েছ অথবা তোমার কিতাবে নাযিল করেছ অথবা যা নিজের কাছে গোপন রেখেছ। (আহমাদ ১/৩৯১, আহমাদ শাকের বলেন, সহীহ, ৫/পৃঃ ২৬৬) (وَذَرُوا الَّذِيْنَ يُلْحِدُوْنَ) ‘যারা তাঁর নাম বিকৃত করে তাদেরকে বর্জন কর’ - الحاد (ইলহাদ)-এর অর্থ হল একদিকে ঝুঁকে পড়া। দীনের মধ্যে ইলহাদ হল, বক্রপথ অবলম্বন করা বা ধর্মত্যাগী হওয়া। আল্লাহ তা‘আলার নামে ইলহাদ করা তিনভাবে হতে পারে- ১. আল্লাহ তা‘আলার নামের পরিবর্তন করা, যেমন মুশরিকরা করত। উদাহারণস্বরূপ আল্লাহ তা‘আলা থেকে লাত। আযীয থেকে উযযা ইত্যাদি। ২. আল্লাহ তা‘আলার নামে মনগড়া অতিরিক্ত সংযোজন করা যা তিনি আদেশ করেননি বা অপব্যাখ্যা করা। যেমন আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে বলেছেন: (يَدُ اللّٰهِ فَوْقَ أَيْدِيْهِمْ) “আল্লাহ তা‘আলার হাত তাদের হাতের ওপর।” এখানে বলা যে, আল্লাহ তা‘আলার কুদরতী হাত তাদের হাতের ওপর। ৩. তার নাম কম করে দেয়া। যেমন তাকে একটি নির্দিষ্ট নামেই ডাকা। (ফাতহুল কাদীর, ২/৩৪৪) সুতরাং কুরআন ও সহীহ হাদীসে আল্লাহ তা‘আলার যে সকল সিফাত বা গুণাবলী এসেছে তা কোন প্রকার পরিবর্তন পরিবর্ধন ও বিকৃতি না করে স্বস্থানে বহাল রেখে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়: ১. আল্লাহ তা‘আলার সুন্দর সুন্দর নামসমূহ হিফয ও আমল করার নামই গণনা করা, এর ফযীলত রয়েছে। ২. যারা আল্লাহ তা‘আলার নামে ইলহাদ করে তাদের বর্জন করা আবশ্যক। ৩. ইলহাদের অর্থ জানলাম।

يَا بَنِي آدَمَ قَدْ أَنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْآتِكُمْ وَرِيشًا ۖ وَلِبَاسُ التَّقْوَىٰ ذَٰلِكَ خَيْرٌ ۚ ذَٰلِكَ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ

📘 ২৬ নং আয়াতের তাফসীরঃ মানুষের ওপর আল্লাহ তা‘আলার অন্যতম অনুগ্রহ হল তিনি তাদের লজ্জাস্থান ঢাকার ও সৌন্দর্যের জন্য পোশাক দান করেছেন। ريشا হল সেই পোশাক যা সৌন্দর্য প্রকাশ ও বেশ ভষণের জন্য পরিধান করা হয়। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: ريش হল সম্পদ। (সহীহ বুখারী, অত্র আয়াতের তাফসীর) (وَلِبَاسُ التَّقْوٰي ذٰلِكَ خَيْرٌ) ‘আর তাক্বওয়ার পোষাক, এটাই সর্বোত্তম’ আয়াতের এ অংশের অর্থ কী তা নিয়ে অনেক মতামত পাওয়া যায়- ইকরামা (রহঃ) বলেন: মুত্তাকিরা কিয়ামতের দিন যা পরিধান করবে। ইবনু জুরাইজ বলেন: তা হল ঈমান। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: তাক্বওয়ার লিবাস; তা হল সৎ আমল। আল্লামা সা‘দী (রহঃ) বলেন: তা হল অন্তর ও রূহের সৌন্দর্য। (তাফসীর সা’দী: পৃঃ ২৮৪) সঠিক কথা হল আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশিত আমল বাস্তবায়ন করা এবং তাঁর নিষেধাজ্ঞা থেকে বিরত থাকা। এটাই মু’মিনের জন্য উত্তম পোশাক। (তাফসীর মুয়াসসার, পৃঃ ১৫৩) অতএব যে উদ্দ্যেশ্যে আল্লাহ তা‘আলা পোশাক দিলেন সে উদ্দেশ্য যেন কোনক্রমেই নষ্ট না করি এবং অশ্লিল ও বের্পদা হয়ে নিজেদেরকে পণ্যের মত প্রদর্শন করে না বেড়াই।

۞ يَا بَنِي آدَمَ خُذُوا زِينَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ وَكُلُوا وَاشْرَبُوا وَلَا تُسْرِفُوا ۚ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ

📘 ৩১ নং আয়াতের তাফসীর: শানে নুযূল: ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: জাহিলী যুগে জনৈক মহিলা উলঙ্গ অবস্থায় বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করছিল আর বলছিল: কে আমাকে উলঙ্গ অবস্থায় তাওয়াফ করতে সহযোগিতা করবে? তার লজ্জাস্থানে মাত্র এক টুকরা কাপড় রেখে বলছিল: الْيَوْمَ يَبْدُو بَعْضُهُ أَوْ كُلُّهُ فَمَا بَدَا مِنْهُ فَلاَ أُحِلُّهُ আজ কিছু বা সম্পূর্ণ উলঙ্গ হবে, যা কিছু প্রকাশ পাবে তা ঢাকব না, তখন এ আয়াত নাযিল হয়। (সহীহ মুসলিম হা: ৩০২৬) অন্য বর্ণনায় রয়েছে: জাহিলী যুগের মহিলারা উলঙ্গ অবস্থায় তাওয়াফ করত, তবে হুমস ব্যতীত। হুমস হল কুরাইশ ও তাদের সন্তানাদি। এরা উলঙ্গ অবস্থায় তাওয়াফ করত না, বরং তাদের পুরুষেরা তাওয়াফ করতে আগত পুরুষদের জন্য কাপড় দিত, আর মহিলারা আগত মহিলাদের কাপড় দিত। হুমস- তারা মুযদালেফায় যেত না, সব মানুষ আ‘রাফাতে অবস্থান করত। (সহীহ মুসলিম হা: ১২১৯) আল্লাহ তা‘আলা মুশরিকদের মনগড়া বিধানের প্রতিবাদ করে মানব জাতির জন্য বিধান দিলেন যেন প্রত্যেকে সালাতের সময় সৌন্দর্য গ্রহণ তথা ভাল পোশাক পরিধান করে। বিশেষ করে জুমু‘আর দিন ও ঈদের দিন। সুগন্ধি ব্যবহার সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত। আর মিসওয়াক করা তার পরিপূর্ণতা। সর্বোত্তম পোশাক হল সাদা পোশাক। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: তোমরা সাদা পোশাক পরিধান কর, কেননা পোশাকের মাঝে সাদা পোশাক উত্তম এবং এর দ্বারা মৃতদের কাফন দাও। (আবূ দাঊদ হা: ৪০৬১, তিরমিযী হা: ৯৯৪, সহীহ) مَسْجِدٍ মাসজিদ বলতে সালাতের সময়কে বুঝানো হয়েছে। (وكُلُوْا وَاشْرَبُوْا وَلَا تُسْرِفُوْا) ‘খাও এবং পান কর’ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: যত ইচ্ছা খাও এবং যত ইচ্ছা পরিধান কর। তবে অপচয় ও অহংকার করলে তুমি ভুল করবে। (সহীহ বুখারী, পোশাক অধ্যায়) অন্য বর্ণনায় তিনি বলেন: আল্লাহ তা‘আলা খাওয়া ও পান করা হালাল করেছেন যদি তাতে অপচয় ও অহংকার না হয়। (তাবারী ১২/৩৯৪, হা: ১৪৫২৯) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: তোমরা খাও, পান কর এবং দান কর, তবে অহংকার করে নয় ও অপচয় করে নয়। কারণ আল্লাহ তা‘আলা নেয়ামতের ব্যবহার বান্দার কাছ থেকে দেখতে চান। (ইবনু মাযাহ হা: ৩৬০৫, হাসান) সুতরাং অপচয় সকল ক্ষেত্রে অপছন্দনীয়, এ জন্যই বলা হয়েছে; “অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই” (সূরা ইসরা ১৭:২৭)। অপচয় দু’ভাবে হতে পারে; নষ্ট করার মাধ্যমে এবং অতিরিক্ত ব্যয় করার মাধ্যমে। তাই এ থেকে আমাদের সতর্ক থাকা উচিত। আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়: ১. সালাতের জন্য সাধ্যপক্ষে ভাল পোশাক পরিধান করা কর্তব্য। সেই সাথে সুগন্ধি ব্যবহার ও মিসওয়াক করা মুস্তাহাব। ২. অপচয় করা হারাম। এ থেকে আমাদের অবশ্যই বেঁচে থাকতে হবে।

إِنَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَىٰ عَلَى الْعَرْشِ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ يَطْلُبُهُ حَثِيثًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُومَ مُسَخَّرَاتٍ بِأَمْرِهِ ۗ أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ ۗ تَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ

📘 ৫৪ নং আয়াতের তাফসীর: অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রুবুবিয়্যাহ ও অবস্থান সম্পর্কে অবহিত করেছেন। তিনি ছয়দিনে আকাশসমূহ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। এ ছয় দিন হল রবিবার, সোমবার, মঙ্গলবার, বুধবার, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার। শুক্রবারে আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করেছেন। শনিবার সম্পর্কে বলা হয় এ দিনে কোন কিছু সৃষ্টি করেননি। এ জন্যই এ দিনকে يوم السبت বা শনিবার বলা হয়। سبت অর্থ ছিন্ন করা। অর্থাৎ এ দিনে সৃষ্টির কাজ ছিন্ন বা শেষ ছিল। (তাফসীর ইবনু কাসীর , সা‘দী, অত্র আয়াতের তাফসীর) তবে শনিবার সৃষ্টি সূচনা করেছেন বলেও বর্ণনা পাওয়া যায়। (সহীহ মুসলিম হা: ৭২৩১) এ সম্পর্কে ইমাম ইবনু জারীর (রহঃ) তিনটি মত বর্ণনা করেছেন। (১) তাওরাতধারীরা বলে: রবিবারে সৃষ্টির কাজ শুরু করা হয়েছে, (২) ইঞ্জিলধারীরা বলে: সোমবারে শুরু করা হয়েছে। (৩) আর আমরা মুসলিমরা বলি, আল্লাহ তা‘আলা শনিবার সৃষ্টির কাজ শুরু করেছেন। কাজ শেষ করেছেন শুক্রবারে। তবে এ দিনগুলো কি দুনিয়ার দিনের সমান সময়বিশিষ্ট, না অন্য কিছু? এ সম্পর্কে ইবনু আব্বাস, মুজাহিদ ও কা‘ব আল আহবার (রহঃ) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা যে ছয়দিনে আকাশ-জমিন সৃষ্টি করেছেন তার একদিন দুনিয়ার এক হাজার দিনের সমান যা আমরা গণনা করে থাকি। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল, ইবনু জারীর (রহঃ)-সহ অনেকে এ মত সমর্থন করেছেন। তবে অধিকাংশ আলেম বলেন: আল্লাহ তা‘আলা যে ছয়দিনে আকাশ-জমিন সৃষ্টি করেছেন তা দুনিয়ার যেটুকু সময় নিয়ে আমরা দিন গণনা করি তারই সমান, এক হাজার দিনের সমান নয়। ছয় দিনে আকাশ-জমিন সৃষ্টির হিকমত কী? কারণ আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করতঃ কুন (হয়ে যাও) বললেই তো হয়ে যায়। এ প্রশ্নের জবাব হল- এর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদেরকে যে কোন কাজ সহনশীলতা ও ধীর-স্থিরতার সাথে সম্পন্ন করা শিক্ষা দিচ্ছেন। (ফাতহুল মাজীদ ফী তাফসীরে সূরাতুল হাদীদ, ড. আওজ মুহাম্মাদ ইউসুফ, আজহার বিশ্ববিদ্যালয়) (ثُمَّ اسْتَوٰي عَلَي الْعَرْشِ) ‘অতঃপর তিনি আরশের ওপর সমুন্নত হলেন।’ আল্লাহ তা‘আলার অবস্থান সম্পর্কে এরূপ আরও ৭টি আয়াত রয়েছে। সূরা ইউনুস ৩, সূরা রাদ ২, ত্বা-হা- ৫, ফুরকান ৫৯, সিজদাহর ৪-৫ এবং হাদীদের ৪ নং আয়াতে উল্লেখ রয়েছে। এ সাতটি আয়াতেই الْعَرْشُ ‘আরশ’ শব্দের পরে عَلَي বা উপরে অব্যয়টি ব্যবহার করা হয়েছে যার অর্থ হল আরশের ওপর। اسْتَوَي শব্দটি ৪টি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে বলে সালাফদের থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়: (১) صَعِدَ (২) اِرْتَفَعَ (৩) عَلَا এ তিনটির অর্থ একই তথা উপরে উঠা (৪) اِسْتَقَرَّ এর অর্থ ভিন্ন। আরবি ভাষাবিদগণ এ বিষয়ে একমত যে, যখন اسْتَوَي শব্দটি عَلَي অব্যয়যোগে ব্যবহার হবে তখন এর অর্থ একটাই হবে- তা হল উপরে উঠা। (শরহুল আকীদাহ ওয়াসিতিয়্যা পৃঃ ২৩৭) আল্লাহ তা‘আলা আরশের ওপর রয়েছেন- এ ব্যাপারে অনেক সহীহ হাদীস রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল: সাহাবী মু‘আবিয়াহ বিন হাকাম আস সুলামী (রাঃ) যখন রাসূল (সাঃ) এর কাছে তাঁর দাসীকে আযাদ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করলেন তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, তাকে আমার কাছে নিয়ে এসো। মু‘আবিয়াহ বিন হাকাম (রাঃ) বলছেন; আমি সেই দাসীকে নিয়ে আসলাম। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সেই দাসীটিকে লক্ষ করে বললেন: أين الله؟ قالت: في السماء، قال: من أنا؟ قالت: أنت رسول الله، قال: أعتقها، فإنها مؤمنة অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা কোথায়? দাসী বলল: আকাশের উপর। তিনি (সাঃ) আবার বললেন: আমি কে? দাসী বলল: আপনি আল্লাহর রাসূল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন: তাকে আযাদ করে দাও, সে মু’মিনা নারী। (সহীহ মুসলিম হা: ২২২৭) এ সকল আয়াত ও হাদীসের আলোকে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের এটাই আকীদাহ, আল্লাহ তা‘আলা স্বস্বত্ত্বায় আরশের ওপর আছেন; সেখান থেকে তিনি সবকিছু দেখছেন, শুনছেন, জানছেন। তিনি সর্বত্র বিরাজমান নন। তিনি তাঁর শ্রবণ, দর্শন ও জ্ঞানের দিক দিয়ে আমাদের সাথে রয়েছেন। কিন্তু আরশের ওপর কিভাবে আছেন তা আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল (সাঃ) আমাদের জানাননি; তাই আমরা জানি না। এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা নিষেধ। ইমাম মালিক (রহঃ)-কে যখন জিজ্ঞাসা করা হল, আল্লাহ তা‘আলা আরশে কিভাবে আছেন? তিনি জবাবে বললেন: আল্লাহ তা‘আলা আরশের উপরে আছেন তা জানা কথা। কিন্তু কিভাবে আছেন তা অজ্ঞাত, এ ব্যাপারে ঈমান রাখা ওয়াজিব এবং প্রশ্ন করা বিদআত। আল্লাহ তা‘আলা আরশের ওপর রয়েছেন- এ কথা যারা মানতে পারে না তারা বিভিন্ন যুক্তি-প্রমাণ পেশ করে থাকে। সালাফগণ তাদের যথার্থ উত্তর দিয়ে আল্লাহ তা‘আলার আরশের ওপর অবস্থান সম্পর্কে কুরআন ও সুন্নাহ যেভাবে সংবাদ দিয়েছে সেভাবে প্রমাণিত করেছেন। আল্লাহ তা‘আলার আরশের হাকীকত ও ধরন তিনি ছাড়া কেউ জানে না। (يَطْلُبُه حَثِيْثًا) ‘তাদের একে অন্যকে দ্রুতগতিতে অনুসরণ করে’- حثيثا এর অর্থ হল: অতি দ্রুত গতিতে। অর্থাৎ একটির পর দ্বিতীয়টি দ্রুত চলে আসে। দিনের আলো এলে রাতের অন্ধকার সঙ্গে সঙ্গেই নিঃশেষ হয়ে যায় এবং রাত এলে দিনের আলোও নিভে যায়। চন্দ্র-সূর্য তারকারাজি সব কিছুই আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশের অধীন। তিনি যেভাবে পরিচালনা করেন সেভাবেই হয়। এসব আল্লাহ তা‘আলার বড় বড় মাখলুক, এসব জিনিস দ্বারা তাকে চেনা যায়। আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়: ১. সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। ২. আল্লাহ তা‘আলা স্বস্বত্ত্বায় আরশের ওপর আছেন, সর্বত্র বিরাজমান নন। সবকিছুই আল্লাহ তা‘আলার আজ্ঞাধীন।