🕋 تفسير سورة التوبة
(At-Tawbah) • المصدر: BN-TAFISR-FATHUL-MAJID
۞ وَمَا كَانَ الْمُؤْمِنُونَ لِيَنْفِرُوا كَافَّةً ۚ فَلَوْلَا نَفَرَ مِنْ كُلِّ فِرْقَةٍ مِنْهُمْ طَائِفَةٌ لِيَتَفَقَّهُوا فِي الدِّينِ وَلِيُنْذِرُوا قَوْمَهُمْ إِذَا رَجَعُوا إِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يَحْذَرُونَ
📘 ১২২ নং আয়াতের তাফসীর:
কোন কোন মুফাসসিরগণ বলেন: জিহাদের আদেশের সাথে এ আয়াতের সম্পর্ক রয়েছে। উদ্দেশ্য হল, যখন পূর্ববর্তী আয়াতসমূহে জিহাদ থেকে পিছিয়ে থাকা ব্যক্তিদের জন্য কঠিন শাস্তির কথা বর্ণনা করা হয়েছে, তখন সাহাবীগণ সতর্ক হয়ে গেলেন এবং যখনই জিহাদের ডাক আসত তখনই সকলেই তাতে শরীক হওয়ার চেষ্টা করতেন। এ আয়াতে তাদেরকে আদেশ দেয়া হয়েছে যে, সমস্ত জিহাদ এমন নয় যে, তাতে সকলকে শরীক হওয়া জরুরী। বরং একদলের শরীক হলেই যথেষ্ট হবে। তাদের একদল জিহাদ করবে অন্য দল ইলম অর্জন করবে।
দ্বিতীয় ব্যাখ্যা হল: জিহাদের আয়াতের সাথে এ আয়াতের কোন সম্পর্ক নেই। বরং এতে দীনের জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব ও তার প্রতি উদ্বুুদ্ধ করা হয়েছে এবং তার পদ্ধতির কথা বর্ণিত হয়েছে। অর্থাৎ প্রত্যেক গোত্র বা জামা‘আত থেকে কিছু মানুষ দীনি শিক্ষা অর্জনের জন্য আপন বাড়ি-ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসবে এবং ফিরে এসে স্বগোত্রের লোকেদের ভীতি প্রদর্শন করবে। মূলত আয়াতটি ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন ফরয হওয়ার প্রমাণ বহন করে। কারণ আয়াতের অর্থ হল: নাবী (সাঃ) সকল যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেননি, সুতরাং তাঁকে রেখে সবাই জিহাদে বের হয়ে যাবে এটা তাদের জন্য সংগত নয়, বরং এক দল মু’মিন তাঁর সাথে থেকে যাবে। তারা দীনী শিক্ষা গ্রহণ করবে। মুজাহিদরা ফিরে আসলে তাদের সব শিক্ষা দেবে যা নাবী (সাঃ) থেকে তারা শিখেছে। তবে তা ফরযে কিফায়াহ, ফরযে আইন নয়।
ধর্মীয় জ্ঞানার্জন দু’প্রকার:
১. ফরযে আইন: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির ওপর (ধর্মীয়) জ্ঞানার্জন ফরয। (সহীহুল জামে হা: ৩৯১৩) যেমন আল্লাহ তা‘আলা সম্পর্কে জানা, রাসূল মুহাম্মাদ (সাঃ) সম্পর্কে জানা এবং দীন সম্পর্কে জানা।
২. ফরযে কিফায়াহ: তা হল ধর্মের ব্যাপারে গভীর জ্ঞানার্জন করা। এ প্রকার জ্ঞানার্জন করা অনেক ফযীলতের কাজ। নাবী (সাঃ) বলেন: যে ব্যক্তি এমন পথে চলে যে পথে জ্ঞানার্জন করা যায় আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন। ফেরেশতারা ঐ ব্যক্তির প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে তাদের ডানা বিছিয়ে দেয়। একজন জ্ঞানী ব্যক্তির জন্য আকাশ-জমিনে যারা আছে এমনকি সমুদ্রের মাছ পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। ইবাদতকারীর ওপর আলেমের ফযীলত তেমন সকল তারকার ওপর পূর্ণিমার চাঁদের ফযীলত যেমন। আলেমরাই নাবীদের ওয়ারিশ, নাবীরা কোন টাকা পয়সার ওয়ারিশ বানিয়ে যাননি, তারা কেবল জ্ঞানের ওয়ারিশ বানিয়ে গেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করবে সে একটা পরিপূর্ণ অংশ গ্রহণ করল। (তিরমিযী হা: ২৬৮২, আবূ দাঊদ হা: ৩৬৪১, সহীহ)
সুতরাং প্রত্যেক মু’মিন জিহাদে বের হয়ে যাবে এমন নয়, বরং তাদের একদল দীনের গভীর জ্ঞান অর্জন করবে। তাছাড়া ফরয জ্ঞান তো সকলকে অর্জন করতেই হবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. জিহাদ ফরযে কিফায়াহ। তাই সকল মু’মিনের জিহাদে বের হওয়া আবশ্যক নয়, মুসলিম নেতা যখন সকলকে জিহাদে শরীক হতে বলবেন বা অমুসলিমরা যদি মুসলিমদের দেশে আক্রমন করে তাহলে সকলের ওপর আবশ্যক হয়ে যায়।
২. যে জ্ঞান অর্জন না করলে ইবাদত পালন করতে পারবে না তা অর্জন করা ওয়াজিব।
৩. দীনের গভীর জ্ঞানার্জন করা ফযীলতের কাজ।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قَاتِلُوا الَّذِينَ يَلُونَكُمْ مِنَ الْكُفَّارِ وَلْيَجِدُوا فِيكُمْ غِلْظَةً ۚ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ
📘 ১২৩ নং আয়াতের তাফসীর:
এ আয়াতে কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার এক গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক নিয়ম বর্ণনা করা হয়েছে। তা হল, কাফিরদের মধ্যে যারা তোমাদের নিকটবর্তী প্রথমে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবে। যেমন নাবী (সাঃ) প্রথমে আরব উপদ্বীপে বসবাসকারী মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করেছেন করেছেন যারা তাঁর নিকটতম লোক ছিলেন।
(وَلْيَجِدُوْا فِيْكُمْ غِلْظَةً)
‘তারা যেন তোমাদের মধ্যে কঠোরতা দেখতে পায়’ অর্থাৎ কাফিররা যেন তোমাদের মনকে কঠোর পায়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللّٰهِ ط وَالَّذِيْنَ مَعَه۫ أَشِدَّا۬ءُ عَلَي الْكُفَّارِ رُحَمَا۬ءُ بَيْنَهُمْ)
“মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল। যারা তাঁর সাথে আছে তারা কাফিরদের ওপর কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে সহানুভূতিশীল, কোমল।” (সূরা ফাতহ ৪৮:২৯)
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(أَذِلَّةٍ عَلَي الْمُؤْمِنِيْنَ أَعِزَّةٍ عَلَي الْكٰفِرِيْنَ)
“তারা মু’মিনদের প্রতি কোমল ও কাফিরদের প্রতি কঠোর হবে।”(সূরা মায়িদাহ ৫:৫৪)
সুতরাং মু’মিনরা কাফিরদের বিরুদ্ধে কঠোর হবে। তাদের রীতি-নীতি বর্জনে এবং তাদের বিরুদ্ধে জিহাদে কোনক্রমেই তাদের প্রতি নরম মনোভাব দেখানো যাবে না।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলার দীন প্রতিষ্ঠা ও ফেতনা দূরীভূত না হওয়া পর্যন্ত জিহাদ করা ওয়াজিব।
২. নিকটবর্তী কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদ শুরু করা শরীয়তের নির্দেশ।
৩. আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সাহায্য দ্বারা মু’মিন-মুত্তাকীদের সাথে রয়েছেন।
إِنَّمَا النَّسِيءُ زِيَادَةٌ فِي الْكُفْرِ ۖ يُضَلُّ بِهِ الَّذِينَ كَفَرُوا يُحِلُّونَهُ عَامًا وَيُحَرِّمُونَهُ عَامًا لِيُوَاطِئُوا عِدَّةَ مَا حَرَّمَ اللَّهُ فَيُحِلُّوا مَا حَرَّمَ اللَّهُ ۚ زُيِّنَ لَهُمْ سُوءُ أَعْمَالِهِمْ ۗ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ
📘 ৩৭ নং আয়াতের তাফসীর:
এখানে আল্লাহ তা‘আলা মুশরিকদেরকে ভর্ৎসনা করেছেন। কারণ তারা খারাপ চিন্তাধারা দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার শরীয়াতে হস্তক্ষেপ করত। অশ্লীল প্রবৃত্তি দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার বিধানকে পরিবর্তন করত এবং আল্লাহ তা‘আলা যা হালাল করেছেন তা হারাম আর যা হারাম করেছেন তা হালাল করে নিত। প্রাক ইসলামী যুগে মুশরিকরা তাদের সুবিধার্থে মুহাররাম মাসকে সফর মাসে নিয়ে যেত। ফলে মুহাররাম মাসকে হালাল মনে করে লুণ্ঠন, হত্যা ও লুটপাট চালাত।
النَّسِیْ۬ ئُ হারাম মাসের যে কোন সময়ে যুদ্ধ-বিগ্রহ ও হত্যা হালাল করে নেয়ার জন্য মুশরিকরা মনগড়া যে অপকৌশল গ্রহণ করত তাকেই ‘নাসী’ বলা হয়। এর দ্বারা তাদের কুফরী ও পথভ্রষ্টতা আরো বৃদ্ধি পায়। কারণ:
১. এসব নিজেদের তৈরি করা, যা আল্লাহ তা‘আলার নির্ধারিত শরীয়তের বহির্ভূত।
২. তারা হালালকে হারাম ও হারামকে হালাল বানিয়ে নিয়েছে।
৩. পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করে দীনের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলার বান্দাদের ধোঁকা দিচ্ছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. হারামকে হালাল করার জন্য শরীয়তে অপকৌশল গ্রহণ করা হারাম।
২. শয়তান কাফিরদের কাছে খারাপ আমল সুশোভিত করে দিয়েছে।
৩. নিজেদের সুবিধা হাসিলের জন্য ইসলামী শরীয়তে হস্তক্ষেপ করা কুফরী কাজ।
۞ إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ ۖ فَرِيضَةً مِنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
📘 ৬০ নং আয়াতের তাফসীর:
এ আয়াতে সদাক্বাহ তথা যাকাতের সম্পদ ব্যয় করার খাত উল্লেখ করা হয়েছে।
যাকাতের সম্পদ আট শ্রেণির সকলের মাঝে বণ্টন করতে হবে, না কোন একশ্রেণিকে দিলেই হবে? এ ব্যাপারে বিভিন্ন মতামত পাওয়া গেলেও সঠিক কথা হল যখন যেথায় বেশি প্রয়োজন হবে তখন সে খাতেই ব্যয় করা উত্তম।
আটটি খাতের সংক্ষিপ্ত বিবরণ:
১. ফকীর: ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: সদাক্বাহ ধনী ও সুস্থ সবল লোকের জন্য হালাল নয়। (আবূ দাঊদ হা: ১৬৩৪, তিরমিযী হা: ৬৫২, সনদ সহীহ)
দুজন লোক রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে সাদাকার মাল চাইল। তিনি (সাঃ) তখন তাদের আপাদমস্তক লক্ষ করে বুঝতে পারলেন যে, তারা সুস্থ ও সবল লোক। তিনি (সাঃ) তাদেরকে বললেন: তোমরা চাইলে আমি দিতে পারি। কিন্তু জেনে রেখ! ধনী, শক্তিশালী উপার্জনে সক্ষম ব্যক্তির জন্য এতে কোন অংশ নেই। (আবূ দাঊদ হা: ১৬৩৩, নাসাঈ হা: ২৫৯৭, সনদ সহীহ)
ফকীর কারা এ হাদীস দ্বারা সুস্পষ্ট হয়ে গেল। অতএব যারা উপার্জনে অক্ষম বা সর্বহারা তারাই ফকীর বলে গণ্য হবে।
২. মিসকীন: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: মিসকীন সেই ব্যক্তি নয় যে এক লোকমা বা দু’ লোকমা, একটি খেজুর, দুটি খেজুরের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে চেয়ে বেড়ায়। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) ! তাহলে মিসকীন কে? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন: যার কাছে এমন কিছু নেই যার দ্বারা সে অমুখাপেক্ষী হতে পারে, যার এমন অবস্থা প্রকাশ পায় না যা দেখে তাকে সদাক্বাহ দেয়া হবে এবং মানুষের কাছেও চায় না। (সহীহ বুখারী হা: ১৪৭৯)
হাদীস দ্বারা বুঝ গেল যারা ফকীর থেকে একটু স্বচ্ছল তারাই মিসকীন।
৩. তহসীলদার বা যাকাত সংগ্রহকারী: এ থেকে উদ্দেশ্য সরকারের সে সব কর্মচারী যারা যাকাত ও সদাক্বাহ আদায় ও বণ্টন এবং হিসাব-নিকাশের কাজে নিয়োজিত থাকে। (পারিশ্রমিক ও বেতন স্বরূপ এদেরকে যাকাতের মাল থেকে দেয়া যাবে।)
৪. যাদের মনকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করা আবশ্যক: প্রথমতঃ সে কাফির যে ইসলামের প্রতি অনুরাগী হয়। এমন ব্যক্তিকে সাহায্য করলে আশা করা যায় যে, সে ইসলাম কবূল করবে। দ্বিতীয়তঃ সে সকল নওমুসলিম যাকে ইসলামে দৃঢ় থাকার জন্য সাহায্য করা হয়। তৃতীয়তঃ সে লোকও এতে শামিল যাকে সাহায্য করলে আশা করা যায় যে, সে নিজের এলাকার লোকেদেরকে মুসলিমদের ওপর হামলা করা থেকে বিরত রাখবে এবং অনুরূপভাবে সে নিজের নিকটতম মুসলিমদেরকে রক্ষা করবে। আবূ সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: নাবী (সাঃ)-এর কাছে কিছু জিনিস প্রেরণ করা হল। এরপর তিনি সেগুলো চারজনের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন। আর বললেন: তাদেরকে (এর দ্বারা) ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করছি। ...........হাদীসের শেষ পর্যন্ত। (সহীহ বুখারী হা: ৪৬৬৭)
৫. দাসমুক্তি: নাবী (সাঃ) বলেন: তিন প্রকার লোকেদের সাহায্য করা আল্লাহ তা‘আলার ওপর আবশ্যক। ১. ঐ যোদ্ধা যে আল্লাহ তা‘আলার পথে জিহাদ করে। ২. ঐ চুক্তিবদ্ধ দাস, যে তার চুক্তির টাকা আদায়ের ইচ্ছা করে। এরূপ চুক্তিবদ্ধ দাস যাকাতের সম্পদের হকদার। ৩. ঐ ব্যক্তি যে বিবাহ করতে চায় পবিত্র থাকার জন্য। (তিরমিযী হা: ১৬৫৫, নাসাঈ হা: ৩১২০, সনদ সহীহ)
৬. ঋণগ্রস্ত লোক:
প্রথমত: ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি দ্বারা উদ্দেশ্য যে ব্যক্তি নিজ পরিবারের খরচাদি এবং জীবনের প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করতে লোকেদের কাছে ঋণ গ্রহণ করেছে। আর তার কাছে এমন কোন স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি নেই যা বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে পারে। দ্বিতীয়ত: এমন যামিনদার ব্যক্তি যে কারো যামিন হয়েছে, অতঃপর যামানতের টাকা তার আসল যিম্মাদার আদায় করতে না পারায় তার ঘাড়ে এসে পড়েছে। তৃতীয়ত: যার ফসলাদি দুর্যোগ এসে ধ্বংস করে দিয়েছে বা বাণিজ্য ও শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত এবং নিঃস্ব হয়েছে ফলে সে ঋণগ্রস্ত হয়ে গেছে।
৭. আল্লাহর পথ: অর্থাৎ যারা আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় জিহাদ করে তাদের সরঞ্জাম, অস্ত্রশস্ত্র ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় বাবদ এবং মুজাহিদদের ব্যয় বাবদ। অন্য একটি হাদীসে হাজ্জ ও উমরাকে ফী সাবীলিল্লাহ’র অন্তর্ভুক্ত বলা হয়েছে।
কতক আলিম বলেন: ইসলামী দাওয়াত ও তাবলীগের কাজও ফী সাবিলিল্লাহর অন্তর্ভুক্ত। কারণ এতেও জিহাদের মতই আল্লাহ তা‘আলার কালেমাকে উঁচু করা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে।
৮. মুসাফির: যদি কোন মুসাফির বৈধ সফরে সাহায্যের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়ে- অথচ সে তার এলাকায় প্রচুর সম্পদের অধিকারী সে ব্যক্তি প্রয়োজন মিটানোর জন্য যাকাতের হকদার।
তবে যার ব্যয় বহন করা ওয়াজিব তাকে যাকাত দেয়া যাবে না। যেমন পিতা-মাতা, স্ত্রী ও সন্তান। যদি রাষ্ট্র প্রধান ছেলে যাকাতের সম্পদ থেকে পিতাকে দেয় তাহলে তা বৈধ। অনুরূপ স্ত্রী তার সম্পদ থেকে স্বামীকে যাকাত দিতে পারে যদি স্বামী যাকাত পাওয়ার যোগ্য হয়। যেমন আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদের স্ত্রী যায়নাব রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে এসে বললেন: আমি আমার স্বামীকে যাকাত দিতে চাই এটা কি সঠিক হবে? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন: হ্যাঁ। এতে তোমার দু’টি প্রতিদান রয়েছে, এক. যাকাত প্রদানের জন্য, দুই. আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য। (সহীহ বুখারী হা: ১৪৬৬, সহীহ মুসলিম হা: ১০০০)
যাকাতের নিসাব:
১. স্বর্ণ, রোপ্য ও নগদ টাকার যাকাত: কারো মালিকানায় বিশ দিনার অর্থাৎ সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়াান্ন ভরি রোপ্য বা তার সমপরিমাণ নগদ টাকা থাকলে এবং এক বছর পূর্ণ হলে চল্লিশ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ শতকরা আড়াই টাকা হিসেবে যাকাত দিতে হবে।
২. ব্যবসার মালের যাকাত: ব্যবসার মালপত্রের দাম নিসাব পরিমাণ হলে এবং পূর্ণ এক বছর থাকলে শতকরা আড়াই টাকা হারে যাকাত দিতে হবে।
৩. গৃহপালিত পশুর যাকাত: গৃহপালিত পশুর যাকাত ফরয হওয়ার জন্য শর্ত হল এমন পশু হওয়া যা সারা বছর এমনি মাঠে চড়ে বেড়ায় তা দেখা শুনা করতে তেমন কোন খরচ হয় না।
ক. উট: সর্বনিম্ন পরিমাণ হল ৫ হতে ৯টি, এতে যাকাত দিতে হবে একটি ছাগল।
খ. গরু বা মহিষ: সর্বনিম্ন পরিমাণ হল ৩০ হতে ৩৯টি, এতে যাকাত দিতে হবে এক বছরের একটি বাচ্চা গরু।
গ. ছাগল বা ভেড়া: সর্বনিম্ন পরিমাণ হল ৪০ হতে ১২০টি, এতে যাকাত দিতে হবে একটি ছাগল। সর্বক্ষেত্রে শর্ত হল এক বছর পূর্ণ হতে হবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. যাকাত ব্যয়ের খাত জানতে পারলাম।
২. যাকাতের প্রকৃত হকদার কারা তাও অবগত হলাম।
৩. যাকাতের নিসাব জানতে পারলাম।