Yunus • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ إِنَّ فِى ٱخْتِلَٰفِ ٱلَّيْلِ وَٱلنَّهَارِ وَمَا خَلَقَ ٱللَّهُ فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ لَءَايَٰتٍۢ لِّقَوْمٍۢ يَتَّقُونَ ﴾
“for, verily, in the alternating of night and day, and in all that God has created in the heavens and on earth there are messages indeed for people who are conscious of Him!”
৫-৬ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা সংবাদ দিচ্ছেন যে, তিনি তার ক্ষমতার পূর্ণতা এবং তার সাম্রাজ্যের বিরাটত্বের প্রমাণস্বরূপ বহু নিদর্শন সৃষ্টি করেছেন। সূর্যের কিরণ হতে বিচ্ছুরিত আলোকমালাকে তিনি তোমাদের জন্যে দীপ্তি বানিয়েছেন। আর চন্দ্রের কিরণকে তোমাদের জন্যে নূর বানিয়েছেন। সূর্যের কিরণ এক রকম এবং চন্দ্রের কিরণ অন্য রকম। একই আলো, অথচ দুটোর মধ্যে বিরাট পার্থক্য। একটির কিরণ অপরটির সঙ্গে মোটেই খাপ খায় না বা একটির কিরণের সাথে অপরটির কিরণ মিলিত হয় না। দিবসে সূর্যের রাজত্ব আর রাত্রে চন্দ্রের কর্তৃত্ব। দুটোই আসমানী আলোকবর্তিকা। কিন্তু আল্লাহ তাআলা সূর্যের মঞ্জিল নির্ধারণ করেননি, অথচ চন্দ্রের মঞ্জিল তিনি নির্ধারণ করেছেন। প্রথম তারিখের চাঁদ অতি ক্ষুদ্ররূপে প্রকাশিত হয়। তারপর ওর কিরণও বাড়ে এবং আয়তনও বেড়ে যায় ।শেষ পর্যন্ত ওটা পূর্ণতা প্রাপ্ত হয় এবং গোল বৃত্তের আকার ধারণ করে। এরপর আবার কমতে শুরু করে এবং পূর্ণ একমাস পর প্রথম অবস্থায় এসে যায়। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আমি চন্দ্রের জন্যে মঞ্জিলসমূহ নির্ণিত করে রেখেছি (এবং ওটা তা অতিক্রম করছে), এমন কি ওটা (অতিক্রম শেষে ক্ষীণ হয়ে) এইরূপ হয়ে যায়, যেন খেজুরের পুরাতন শাখা । সূর্যের সাধ্য নেই যে চন্দ্রকে গিয়ে ধরবে, আর না রাত্রি দিবসের পূর্বে আসতে পারবে; এবং উভয়ে এক একটি চক্রের মধ্যে সন্তরণ করছে। আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ “সূর্য ও চন্দ্রের নিজ নিজ হিসাব রয়েছে। এই আয়াতে কারীমায় বলা হয়েছে যে, সূর্যের মাধ্যমে দিনের পরিচয় পাওয়া যায়, আর চন্দ্রের আবর্তনের মাধ্যমে পাওয়া যায় মাস ও বছরের হিসাব। আল্লাহ এগুলো বৃথা সৃষ্টি করেননি। বরং জগত সৃষ্টি মহান আল্লাহর বিরাট নৈপুণ্যের পরিচয় বহন করে এবং এটা তার ব্যাপক ক্ষমতার যে স্পষ্ট প্রমাণ এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি আকাশ, পৃথিবী এবং এতদুভয়ের মধ্যে যা কিছু রয়েছে এগুলোকে বৃথা সৃষ্টি করিনি, এটা হচ্ছে কাফিরদের ধারণা, সুতরাং কাফিরদের জন্যে রয়েছে (জাহান্নামের আগুনের শাস্তি।” (৩৮:২৭) আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তবে কি তোমরা এই ধারণা করেছিলে যে, আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি। আর এটাও (ধারণা করেছিলে) যে, তোমাদেরকে আমার নিকট ফিরিয়ে আনা হবে না? অতএব আল্লাহ অতি উচ্চ মর্যাদাবান, তিনি প্রকৃত বাদশাহ, তিনি ছাড়া কেউই ইবাদতের যোগ্য নয়, তিনি মহান আরশের মালিক।” (২৩:১১৫-১১৬) আয়াতগুলোর ভাবার্থ হচ্ছে- আমি দলীল প্রমাণাদি খুলে খুলে বর্ণনা করছি যাতে অনুধাবনকারীরা অনুধাবন করতে পারে।(আরবী) এর ভাবার্থ এই যে, দিন গেলে রাত্রি আসে এবং রাত্রি গেলে দিনের আগমন ঘটে। একে অপরের উপর জয়যুক্ত হয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে না। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “রাত দিনের উপর ছেয়ে যায় এবং দিন রাতের উপর ছেয়ে যায়, কিন্তু এটা সম্ভব নয় যে, সূর্য চন্দ্রের সাথে টক্কর খায়।” মহান আল্লাহ বলেনঃ “সকাল হয়ে যায় এবং রাত্রি নির্বিঘ্নে অতিক্রান্ত হয়।আল্লাহ আসমান ও যমীনে যা কিছু সৃষ্টি করেছেন সেগুলো এটাই প্রমাণ করে যে, তার ক্ষমতা কতই না ব্যাপক। যেমন তিনি বলেনঃ “আকাশসমূহে ও পৃথিবীতে আল্লাহর কতই না নিদর্শন রয়েছে।” আর এক জায়গায় তিনি বলেনঃ “তুমি বলে দাও- তোমরা লক্ষ্য কর যে, আকাশসমূহে ও পৃথিবীতে কতই না নিদর্শন রয়েছে এবং যারা ঈমানদার নয় তাদেরকে সতর্ককারী নিদর্শনের কোনই অভাব নেই। আল্লাহ তা'আলা আরো বলেনঃ “তারা কি আকাশ ও পৃথিবীতে তাদের সামনে ও পিছনে দৃষ্টিপাত করে না?” আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ “নিঃসন্দেহে আসমানসমূহ ও যমীনের সৃজনে এবং পর্যায়ক্রমে দিবা ও রাত্রির গমনাগমনে নিদর্শনসমূহ রয়েছে জ্ঞানীদের জন্যে। আর এখানে বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “অবশ্যই নিদর্শনসমূহ রয়েছে ঐ লোকদের জন্যে যারা (আল্লাহর শাস্তির) ভয় করে।”