Yunus • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ فَمَآ ءَامَنَ لِمُوسَىٰٓ إِلَّا ذُرِّيَّةٌۭ مِّن قَوْمِهِۦ عَلَىٰ خَوْفٍۢ مِّن فِرْعَوْنَ وَمَلَإِي۟هِمْ أَن يَفْتِنَهُمْ ۚ وَإِنَّ فِرْعَوْنَ لَعَالٍۢ فِى ٱلْأَرْضِ وَإِنَّهُۥ لَمِنَ ٱلْمُسْرِفِينَ ﴾
“But none save a few of his people declared their faith in Moses, [while others held back] for fear of Pharaoh and their great ones, lest they persecute them: for, verily, Pharaoh was mighty on earth and was, verily, of those who are given to excesses.”
আল্লাহ তা'আলা খবর দিচ্ছেন যে, মূসা (আঃ) যখন সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী পেশ করলেন, তখন ফিরআউনের কওম ও তার স্বগোত্রীয় লোকদের মধ্যে খুব কম সংখ্যক লোকই তার উপর ঈমান আনলো। ঈমান আনয়নকারী নবযুবকদের এই ভয় ছিল যে, জোরপূর্বক তাদেরকে পুনরায় কুফরীর দিকে ফিরিয়ে নেয়া হবে। কেননা, ফিরআউন ছিল বড়ই দাম্ভিক, ধূর্ত ও উদ্ধত। তার শান-শওকত ও দবদবা ছিল খুই বেশী। তার কওম তাকে অত্যধিক ভয় করতো। বানী ইসরাঈল ছাড়া অন্যান্যদের মধ্য থেকে শুধু ফিরআউনের স্ত্রী, ফিরআউনের বংশধরের মধ্য হতে অন্য একটি লোক, তার কোষাধ্যক্ষ এবং তার স্ত্রী, এই অল্প সংখ্যক লোক ঈমান এনেছিল। ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, (আরবী) দ্বারা মূসা। (আঃ)-এর বানী ইসরাঈলকে বুঝানো হয়েছে। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, (আরবী) দ্বারা ঐ লোকদের সন্তানাদি উদ্দেশ্য যাদের কাছে মূসা (আঃ)-কে প্রেরণ করা হয়েছিল এবং তাদের এই সন্তানদেরকে ছেড়ে তারা বহু যুগ পূর্বে মারা গিয়েছিল। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) মুজাহিদ (রঃ)-এর অভিমত পছন্দ করে বলেন যে, (আরবী) দ্বারা ফিরআউনের কওম নয়, বরং মূসা (আঃ)-এর কওমের বানী ইসরাঈলকে বুঝানো হয়েছে। কেননা (আরবী) বা সর্বনাম যখন কারো দিকে প্রত্যাবর্তিত হয় তখন তা নিকটতরের দিকেই প্রত্যাবর্তিত হয়ে থাকে। এখানে নিকটতর হচ্ছে (আরবী) শব্দটি, (আরবী) শব্দটি নয়। আর এ ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ রয়েছে। কেননা, (আরবী) শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে নবযুবক লোকেরা। আর তারা ছিল বানী ইসরাঈলের অন্তর্ভুক্ত। প্রসিদ্ধ উক্তি এই যে, বানী ইসরাঈলের সবাই তো মূসা (আঃ)-এর উপর ঈমান আনয়ন করেছিল এবং তাদেরকে সুসংবাদও দেয়া হয়েছিল। তারা মূসা (আঃ)-এর গুণাবলী সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিফহাল ছিল। পবিত্র গ্রন্থাবলী হতে তারা এই সুসংবাদ প্রাপ্ত হয়েছিল যে, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ফিরআউনের বন্দীত্ব থেকে মুক্তিদান করবেন এবং তার উপর তাদেরকে করবেন জয়যুক্ত। আর এ কারণেই ফিরআউন যখন এ খবর জানতে পারলো তখন থেকে সে খুব সতর্কতা অবলম্বন করতে লাগলো। মূসা (আঃ) যখন তার কাছে প্রচারক হয়ে আসলেন তখন সে বানী ইসরাঈলের উপর যুলুম করতে শুরু করে। তখন তারা মূসা (আঃ)-কে বলেঃ “হে মূসা (আঃ)! আপনার আগমনের পূর্বেও আমাদের উপর অত্যাচার করা হয়েছে এবং আপনার আগমনের পরেও আমরা অত্যাচারিত হচ্ছি।” মূসা (আঃ) তাদেরকে বললেনঃ “কিছুদিন সবর কর। অল্পদিনের মধ্যেই আল্লাহ তা'আলা তোমাদের শত্রুদেরকে ধ্বংস করবেন। তারপর তিনি তোমাদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন এবং তোমরা কি আমল কর তা তিনি দেখবেন।" কথা যখন এটাই তখন (আরবী) দ্বারা মূসা (আঃ)-এর কওম অর্থাৎ বানী ইসরাঈলকে ছাড়া আর কি উদ্দেশ্য হতে পারে? বানী ইসরাঈল ফিরআউনকে এবং নিজেদের কওমের কোন কোন লোককেও ভয় করতো যে, তারা তাদেরকে পুনরায় কাফির করে দেবে। বানী ইসরাঈলের মধ্যে কারূন ছাড়া অন্য কেউ এরূপ ছিল না যাকে তারা ভয় করতো। কারূন মূসা (আঃ)-এরই কওমের লোক ছিল। কিন্তু সে বিদ্রোহী হয়ে ফিরআউনের দলে মিলে গিয়েছিল।এখন (আরবী)-এর সর্বনামটি বানী ইসরাঈলের দিকে ফিরেছে। কিন্তু যারা বলেন যে, এই সর্বনামটি ফিরআউন ও তার প্রধানদের দিকে ফিরেছে, কেননা, তার প্রধানরাও তারই অনুসারী ছিল, অথবা ফিরআউনের পূর্বে (আরবী) শব্দটি উহ্য রয়েছে, এ জন্যে সর্বনামটি বহুবচন আনা হয়েছে এবং (আরবী) এর স্থলে (আরবী) টি বসানো হয়েছে, অর্থাৎ (আরবী) শব্দের স্থলে (আরবী) শব্দটি বসিয়ে দেয়া হয়েছে, এটা কিয়াস হতে খুবই দূরের কথা। যদিও ইবনে জারীর (রঃ) এ দুটো কথাই লিখেছেন। এসব বর্ণনা এটাই প্রমাণ করে যে, বানী ইসরাঈলের সবাই মুমিন ছিল।