Yunus • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ فَلَوْلَا كَانَتْ قَرْيَةٌ ءَامَنَتْ فَنَفَعَهَآ إِيمَٰنُهَآ إِلَّا قَوْمَ يُونُسَ لَمَّآ ءَامَنُوا۟ كَشَفْنَا عَنْهُمْ عَذَابَ ٱلْخِزْىِ فِى ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا وَمَتَّعْنَٰهُمْ إِلَىٰ حِينٍۢ ﴾
“For, alas, there has never yet been any community that attained to faith [in its entirety,] and thereupon benefited by its faith, except the people of Jonah. When they came to believe, We removed from them the suffering of disgrace [which otherwise would have befallen them even] in the life of this world, and allowed them to enjoy their life during the time allotted to them.”
আল্লাহ তাআলা বলেন, পূর্ববর্তী উম্মতদের কোন উম্মতেরই সমস্ত লোক ঈমান আনেনি, যাদের কাছে আমি নবী পাঠিয়েছিলাম। হে মুহাম্মাদ (সঃ)! তোমার পূর্বে যত নবী এসেছিল, সকলকেই মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হয়েছিল। যেমন আল্লাহ পাকের উক্তিঃ “আফসোস বান্দাদের উপর! তাদের কাছে কখনো এমন কোন রাসূল আসেনি যাকে তারা পি না করেছে।” আল্লাহ তা'আলা আর এক জায়গায় বলেছেনঃ “তাদের পূর্বে যাদের কাছেই কোন রাসূল এসেছে, তাকেই তারা যাদুকর অথবা পাগল বলেছে।” অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেনঃ “তোমার পূর্বে যে গ্রামেই আমি কোন রাসূল পাঠিয়েছি, সেখানকারই স্বচ্ছল লোকেরা বলেছে- আমরা তো আমাদের বাপ-দাদাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলবো।”সহীহ হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “নবীদেরকে আমার সামনে পেশ করা হয়। কোন নবীর সাথে ছিল বড় বড় উম্মতের দল। আবার কোন নবীর সাথে ছিল একটিমাত্র লোক, কোন নবীর সাথে ছিল দু’টি লোক এবং কোন নবীর সাথে একটি লোকও ছিল না।” অতঃপর তিনি মূসা (আঃ)-এর উম্মতের আধিক্যের বর্ণনা দেন। তারপর তিনি নিজের উম্মতের আধিক্যের বর্ণনা দেন, যারা পূর্ব ও পশ্চিমকে ঢেকে নিয়েছিল। মোটকথা ইউনুস (আঃ)-এর কওম ছাড়া কোন নবীরই কওমের সমস্ত লোক ঈমান আনেনি। ইউনুস (আঃ)-এর কওম ছিল নিনওয়া গ্রামের অধিবাসী। আল্লাহর আযাব দেখার পর ভয়ে তারা ঈমান এনেছিল। আল্লাহ তা'আলার আযাব হতে ভয় প্রদর্শন করে নবী ইউনুস (আঃ) নিজেও কওমের মধ্য হতে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তখন ঐ লোকগুলোর খুবই দুঃখ হলো। তারা আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করলো এবং অত্যন্ত কান্নাকাটি করলো। নিজেদের শিশু ও গৃহপালিত পশুগুলোকে নিয়ে মাঠের দিকে গেল এবং মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করলোঃ “হে আল্লাহ! আপনার নবী যে আযাবের খবর দিয়ে আমাদের মধ্য থেকে বেরিয়ে গেছেন তা দূর করে দিন। ঐ সময় আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি সদয় হন এবং যে আযাব সামনে এসে গিয়েছিল তা সরিয়ে নেন। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “ইউনুস (আঃ)-এর কওম যখন ঈমান আনলো, তখন পার্থিব জীবনে আগত আযাব আমি তাদের উপর থেকে সরিয়ে দিলাম এবং তাদের জীবনকাল পর্যন্ত ঐ আযাব থেকে তাদেরকে বাঁচিয়ে নিলাম।”ইউনুস (আঃ)-এর কওমের উপর থেকে শুধুমাত্র পার্থিব জীবনের আযাব সরেছিল কি পারলৌকিক আযাবও সরেছিল এ ব্যাপারে মুফাসসিরদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। কেউ কেউ বলেন যে, শুধুমাত্র পার্থিব জীবনের শাস্তি সরেছিল। কেননা, এই আয়াতে শুধু এর উপরই আলোকপাত করা হয়েছে। আবার অন্য কেউ কেউ বলেন যে, আল্লাহ তা'আলা বলেছেনঃ “আমি নবীকে এক লক্ষাধিক লোকের কাছে পাঠিয়েছিলাম। তারা ঈমান আনয়ন করে। তখন আমি একটা নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত তাদেরকে লাভবান করি।” এখানে ঈমান শব্দটি মুতলক বা সাধারণ। এখানে কোন কয়েদ বা বাধ্যবাধকতা নেই। আর মুতলক ঈমান তো পারলৌকিক শাস্তি থেকে মুক্তিদানকারী হয়ে থাকে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সর্বাধিক জ্ঞানের অধিকারী।কাতাদা (রঃ) এই আয়াতের তাফসীরে লিখেছেন যে, আযাব এসে যাওয়ার পর কোন কওম ঈমান আনলে তাকে ছেড়ে দেয়া হয় না। কিন্তু ইউনুস (আঃ) যখন নিজের কওমকে ছেড়ে চলে গেলেন এবং ললাকেরা বুঝতে পারলো যে, এখন আযাব থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না তখন তাদের অন্তরে তাওবার অনুভূতি জেগে উঠলো। তারা খারাপ কাপড় পরিধান করে নিজেদের অবস্থা খারাপ করে নিলো। অতঃপর তারা পশুগুলোর দল এবং শিশুদের দলকে পৃথক করলো। নিজেদের সাথে তারা পশুগুলোকে এবং শিশুদেরকে নিয়ে গেল। চল্লিশ দিন পর্যন্ত তারা কান্নাকাটি করলো। আল্লাহ তা'আলা তাদের আন্তরিকতাপূর্ণ নিয়ত এবং তাওবার বিশুদ্ধতা দেখে এসে যাওয়া শাস্তি তাদের উপর থেকে উঠিয়ে নিলেন। ইউনুস (আঃ)-এর কওম মুসিল অঞ্চলের নিনওয়া গ্রামের অধিবাসী ছিল। ইবনে মাসউদ (রাঃ) (আরবী) কে (আরবী) পড়েছেন। মোটকথা, শাস্তি তাদের মাথার উপর এমনভাবে ঘুরতে লাগলো, যেমনভাবে অন্ধকার রাত্রে মেঘখণ্ড ঘুরতে তাকে। ঐ লোকগুলো তাদের এক আলেমের কাছে গিয়ে বললোঃ “আমাদেরকে এমন একটি দুআ' লিখে দিন যার বরকতে আযাব সরে যায়।” ঐ আলেম নিম্নের দুআটি লিখে দেনঃ (আরবী) অর্থাৎ, “হে জীবিত! যখন কেউ জীবিত নেই। হে জীরিত! মৃতকে জীবিতকারী। হে জীবিত! আপনি ছাড়া অন্য কেউ উপাস্য নেই।” এর ফলে আযাব দূর হয়ে যায়। এ সমুদয় কাহিনী সূরায়ে সাফাতের মধ্যে ইনশাআল্লাহ বর্ণিত হবে।