Hud • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ ۞ مَثَلُ ٱلْفَرِيقَيْنِ كَٱلْأَعْمَىٰ وَٱلْأَصَمِّ وَٱلْبَصِيرِ وَٱلسَّمِيعِ ۚ هَلْ يَسْتَوِيَانِ مَثَلًا ۚ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ ﴾
“These two kinds of man may be likened to the blind and deaf and the seeing and hearing. Can these two be deemed alike in [their] nature? ` Will you not, then, keep this in mind?”
২৩-২৪ নং আয়াতের তাফসীর দুষ্ট ও হতভাগ্যদের অবস্থা বর্ণনা করার পর আল্লাহ তা'আলা এখানে সৎ ভাগ্যবানদের অবস্থার বর্ণনা দিচ্ছেন। তারা হচ্ছে ঐ সব লোক যারা ঈমান এনেছে ও ভাল কাজ করেছে। সুতরাং তাদের অন্তরগুলিও মু'মিন হয়েছে এবং অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলিও কথা ও কাজের দিক দিয়ে আনুগত্য বজায় রাখা ও নিকৃষ্ট কাজগুলিকে পরিহার করার মাধ্যমে সৎ কার্যাবলী সম্পাদন করেছে। এরই মাধ্যমে তারা এমন বেহেশতের উত্তরাধিকারী হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে উঁচু উঁচু প্রকোষ্ঠ, সারি সারি সাজানো আসনসমূহ, ঝুঁকে পড়া ফলসমূহ, সুসজ্জিত গালিচাসমূহ, উত্তম স্বভাব সম্পন্ন রূপসীগণ, বিভিন্ন প্রকারের সুস্বাদু ফল, মনের চাহিদা মতো আহাৰ্যবস্তু, সুপেয় পানীয় এবং সর্বোপরি যমীন ও আসমানের সৃষ্টিকর্তার দর্শন। এসব নিয়ামতরাশি তারা চিরদিনের জন্যে ভোগ করবে। সেখানে তাদের মৃত্যু হবে না, বার্ধক্য আসবেনা, রোগ হবে না, পায়খানা-প্রস্রাবের প্রয়োজন হবে না, মুখে থুথু উঠবে না এবং নাকে শ্লেষ্মও দেখা দেবে না। তাদের দেহ হতে যে ঘাম বের হবে তা হবে মেশকে আম্বারের মত সুগন্ধময়।পূর্বে বর্ণিত হতভাগ্য কাফির এবং এখানে বর্ণিত খোদাভীরু মু’মিনের দৃষ্টান্ত ঠিক এমন দু’ব্যক্তির মত, যাদের একজন অন্ধ ও বধির এবং অপরজন দেখতে পায় এবং শুনতেও পায়। সুতরাং কাফির দুনিয়ায় সত্যকে দেখা হতে অন্ধ এবং আখেরাতেও সে কল্যাণের পথ দেখতে পাবেনা। দুনিয়ায় সে সত্যের দলিল প্রমাণাদি শ্রবণ করা থেকে বধির, উপকার দানকারী কথা তারা শুনেই না। তাদের মধ্যে কল্যাণের কিছু জানলে অবশ্যই আল্লাহ তাদেরকে শুনিয়ে দিতেন। পক্ষান্তরে মু’মিন হয় তীক্ষ্ণবুদ্ধি সম্পন্ন, জ্ঞানী, আলিম ও বুদ্ধিমান। সে ভাল মন্দ বুঝে এবং এ দু’য়ের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। সুতরাং সে ভাল ও সত্যকে গ্রহণ করে এবং মন্দ ও বাতিল পরিত্যাগ করে। সে দলিল প্রমাণাদি শ্রবণ করে এবং এর মধ্যে ও সন্দেহের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। সুতরাং সে বাতিল থেকে বেঁচে থাকে এবং সত্যকে মান্য করে। কাজেই ঐ ব্যক্তি ও এই ব্যক্তি কি সমান হতে পারে? বড়ই আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে, এর পরেও তোমরা বিপরীতধর্মী। এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না। আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “দুযখের অধিবাসী ও বেহেশতের অধিবাসীরা পরস্পর সমান নয়, যারা বেহেশতের অধিবাসী তারাই সফলকাম।” (৫৯: ২০)আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ “অন্ধ ও চক্ষুষ্মন সমান নয়। অন্ধকার ও আলোকও (সমান) নয়। আর ছায়া ও সূর্য কিরণও (সমান) নয়। (অর্থাৎ কাফির ও মু’মিন সমান নয়)। জীবিত এবং মৃত ব্যক্তি সমান হতে পারে না। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা শুনিয়ে থাকেন, আর যেহেতু কাফিররা মৃত বলে সাব্যস্ত হলো, কাজেই হে মুহাম্মদ (সঃ)! তুমি কবরে সমাহিত লোকদেরকে শুনাতে সক্ষম নও। (এরা যদি না মানে, তবে তুমি চিন্তিত হবে না) তুমি তো শুধু ভয় প্রদর্শনকারী। আমিই তোমাকে সত্য (ধর্ম) সহ সুসংবাদ দাতা ও ভয় প্রদর্শকরূপে প্রেরণ করেছি; আর কোন সম্প্রদায় এমন ছিল না যে, তাদের মধ্যে কোন ভয় প্রদর্শনকারী (নবী) অতীত হয় নাই।”