Hud • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ فَقَالَ ٱلْمَلَأُ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ مِن قَوْمِهِۦ مَا نَرَىٰكَ إِلَّا بَشَرًۭا مِّثْلَنَا وَمَا نَرَىٰكَ ٱتَّبَعَكَ إِلَّا ٱلَّذِينَ هُمْ أَرَاذِلُنَا بَادِىَ ٱلرَّأْىِ وَمَا نَرَىٰ لَكُمْ عَلَيْنَا مِن فَضْلٍۭ بَلْ نَظُنُّكُمْ كَٰذِبِينَ ﴾
“But the great ones among his people, who refused to acknowledge the truth, answered: "We do not see in thee anything but a mortal man like ourselves; and we do not see that any follow thee save those who are quite obviously the most abject among us; and we do not see that you could be in any way superior to us: on the contrary, we think that you are liars!"”
২৫-২৭ নং আয়াতের তাফসীর এখানে আল্লাহ তাআ’লা হযরত নূহের (আঃ) সম্পর্কে সংবাদ দিচ্ছেন। সর্বপ্রথম ভূ-পৃষ্ঠে মুশরিকদেরকে মূর্তি পূজা হতে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে যাঁকে তাদের কাছে রাসূলরূপে প্রেরণ করা হয়েছিল তিনিই ছিলেন হযরত নূহ (আঃ)। তিনি তাঁর কওমের কাছে এসে বলেনঃ “তোমরা যদি গায়রুল্লাহর ইবাদত পরিত্যাগ না কর তবে আল্লাহর শাস্তি তোমাদের উপর পতিত হবে। দেখো, তোমরা শুধু আল্লাহ তাআ’লার ইবাদত করতে থাকো। যদি তোমরা এর বিরুদ্ধাচরণ কর তবে আমি তোমাদের উপর কিয়ামতের দিনের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির আশঙ্কা করছি।” তাঁর এ কথার উত্তরে তাঁর কওমের নেতৃস্থানীয় কাফিররা তাকে বললো: “হে নূহ (আঃ)! তুমি কোন ফেরেশতা তো নও। তুমি তো আমাদের মতোই একজন মানুষ। সুতরাং এটা কিরূপে সম্ভব যে, আমাদের সবকে বাদ দিয়ে তোমার মতো শুধু একজন লোকের কাছে আল্লাহর ওয়াহী আসবে? আর আমরা তো স্বচক্ষে দেখছি যে, ইতর শ্রেণীর লোকেরাই শুধু তোমার দলে যোগ দিচ্ছে। কোন ভদ্র ও সম্ভ্রান্ত লোক তোমার দলভুক্ত নয়। যারা তোমার দলে যোগ দিচ্ছে তারা কিছু না বুঝেসুঝে তোমার মজলিসে উঠাবসা করছে। এবং তোমার কথায় ‘হাঁ’ বলে দিচ্ছে। তা ছাড়া আমরা লক্ষ্য করছি যে, এই নতুন ধর্ম তোমাদের কোন উপকারেই আসছে না। না এর ফলে তোমাদের আর্থিক কোন উন্নতি হচ্ছে, না চরিত্র ও সৃষ্টির দিক দিয়ে তোমরা আমাদের ওপর কোন মর্যাদা লাভ করছ। বরং আমাদের ধারণায় তোমরা সব মিথ্যাবাদী, তুমি আমাদেরকে যে ওয়াদা দিচ্ছ যে, ভাল কাজ করলে এবং আল্লাহর উপাসনায় লেগে থাকলে পরকালে উত্তম বিনিময় লাভ করা যাবে, আমাদের ধারণায় এ সব কিছুই মিথ্যা। হযরত নূহের (আঃ) উপর কাফিরদের এটাই ছিল আপত্তি। কিন্তু এটা তাদের অজ্ঞতা ও নির্বুদ্ধিতারই পরিচায়ক। যদি নিম্ন শ্রেণীর লোকেরাই হক ও সত্যকে কবুল করে নেয় তবে কি সত্যের মর্যাদা কমে যাবে? সত্য সত্যই থাকবে, তা গ্রহণকারী বড় লোকই হোক বা ছোট লোকই হোক। বরং সত্য কথা তো এটাই যে, সত্যের অনুসরণকারীরাই হচ্ছে ভদ্র লোক। হোক না তারা দরিদ্র ও মিসকীন। পক্ষান্তরে সত্য থেকে যারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তারাই হচ্ছে ইতর ও অভদ্র। হোক না তারা সম্পদশালী ও শাসকগোষ্ঠী। হা, সত্য ঘটনা এটাই যে, প্রথমে দরিদ্র ও মিসকীন লোকেরাই সত্যের ডাকে সাড়া দিয়ে থাকে। আর সম্পদশালী ও নেতৃস্থানীয় লোকেরা এর বিরোধিতা করে। আল্লাহ তাআ’লা স্বীয় পাক কালামে বলেনঃ “(হে নবী (সঃ)! এইরূপই তোমার পূর্বে যে কোন বস্তী বা এলাকাতেই আমি রাসূল পাঠিয়েছি, সেই বস্তীর বড় ও নেতৃস্থানীয় লোকেরা বলেছে আমাদের পূর্ব পুরুষদেরকে আমরা এই দ্বীনের উপরই পেয়েছি এবং আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণকারী।” রোমক সম্রাট হিরাক্লিয়াস যখন আবু সুফিয়ানকে জিজ্ঞাস করেনঃ “নুবওয়াতের দাবিদার লোকটির অনুসরণ করছে সম্ভ্রান্ত লোকেরা, না দরিদ্র ও দুর্বল লোকেরা?” উত্তরে তিনি বলেন যে, দুর্বল ও দরিদ্র লোকেরাই তাঁর অনুসরণ করছে। এর উপর হিরাক্লিয়াস মন্তব্য করেন যে, রাসূলদের অনুসারী এরূপ লোকেরাই হয়ে থাকে। সত্যকে তাড়াতাড়ি কবুল করলে কোন দোষ নেই। সত্য স্পষ্ট প্রতীয়মান হওয়ার পর তা গ্রহণ করার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনার প্রয়োজনই বা কি? বরং প্রত্যেক বুদ্ধিমানের কাজ তো এটাই হওয়া উচিত যে, সে সর্বাগ্রে ও তাড়াতাড়ি হককে কবুল করে নেবে। এ ব্যাপারে বিলম্ব করা মুখতা ও নির্বুদ্ধিতাই বটে। আল্লাহ তাআ’লার প্রত্যেক নবীই খুবই স্পষ্ট ও খোলাখুলী দলিল প্রমাণাদি নিয়ে আগমন করেছিলেন। হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যাকেই আমি ইসলামের দিকে আহবান করেছি সে-ই ঐ ব্যাপারে কিছু না কিছু সঙ্কোচ বোধ করেছে। শুধু আবু বকর (রাঃ) ছিলেন এর ব্যতিক্রম। তিনি এই ব্যাপারে মোটেই কোন সঙ্কোচ বোধ করেননি।” অর্থাৎ হযরত আবু বকর (রাঃ) ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে কোনই সন্দেহ পোষণ করেননি। বরং ইসলামের দাওয়াত পাওয়া মাত্রই তিনি তা কবুল করে নিয়েছিলেন। কারণ, তিনি সুস্পষ্ট বিষয় অবলোকন করেছিলেন। তাই তিনি তাড়াতাড়ি তা গ্রহণ করেছিলেন।(আরবি) আমাদের উপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্বও আমরা দেখছিনা। অর্থাৎ হযরত নূহের (আঃ) কওমের তাঁর উপর তৃতীয় আপত্তি এই ছিল যে, তারা তাদের মতে তাঁর মধ্যে কোন শ্রেষ্ঠত্ব দেখতে পাচ্ছে না। এটাও তাদের অন্ধত্বের কারণেই ছিল। তারা সত্যের অবলোকন হতে ছিল সম্পূর্ণ অন্ধ। সুতরাং তারা সত্যকে দেখতেও পাচ্ছিল না এবং শুনতেও পাচ্ছিল না। বরং তারা অজ্ঞতার অন্ধকারের মধ্যে উদ্ভান্ত হয়ে ফিরছিল। তারা হচ্ছে অপবাদদানকারী, মিথ্যাবাদী এবং ইতর লোক। পরকালে তারাই হবে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।