Hud • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ وَأُتْبِعُوا۟ فِى هَٰذِهِۦ لَعْنَةًۭ وَيَوْمَ ٱلْقِيَٰمَةِ ۚ بِئْسَ ٱلرِّفْدُ ٱلْمَرْفُودُ ﴾
“seeing that they were pursued by [God's] rejection in this [world], and [shall be finally overtaken by it] on the Day of Resurrection; [and] vile was the gift which they were given!”
৯৬-৯৯ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তাআ’লা খবর দিচ্ছেন যে, তিনি কিবতী কওমের বাদশাহ্ ফিরআউন এবং তার প্রধানবর্গের নিকট স্বীয় রাসূল হযরত মূসাকে (আঃ) নিদর্শনসমূহ ও সুস্পষ্ট দলীল প্রমাণাদিসহ প্রেরণ করেন। কিন্তু কিবতীরা ফিরআউনের আনুগত্য পরিত্যাগ করলো না। তারা তারই ভ্রান্ত নীতির পিছনে পড়ে রইলো। এই দুনিয়ায় যেমন তারা ফিরআউনের আনুগত্য পরিত্যাগ করলো না বরং তাকে নেতা মেনেই চললো, অনুরূপভাবে কিয়ামতের দিনও তারা তারই পিছনে থাকবে এবং সে তাদের সবাইকে নেতৃত্ব দিয়ে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। আর তাকে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে। যেমন আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “ফির'আউন সেই রাসূলের কথা অমান্য করলো, সুতরাং আমি তাকে কঠোরভাবে পাকড়াও করলাম।” (৭৩:১৬) আল্লাহপাক আরো বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “সে অবিশ্বাস করলো এবং কথা মানলো না। অনন্তর সে পৃথক হয়ে (মূসার (আঃ) বিরুদ্ধে) প্রচেষ্টা চালাতে লাগলো। অতঃপর সে (লোকদের) সমবেত করলো, তৎপর সে উচ্চৈঃ স্বরে আহ্বান করলো। অতঃপর বললো: আমি তোমাদের শ্রেষ্ঠ প্রতিপালক। অনন্তর আল্লাহ তাকে আখেরাতের ও দুনিয়ার আযাবে পাকড়াও করলেন। নিশ্চয় এতে সেই ব্যক্তির জন্যে বড় শিক্ষণীয় রয়েছে যে (আল্লাহকে) ভয় করে। (৭৯:২১-২৬)আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ ‘কিয়ামতের দিন সে (ফিরআউন) নিজ সম্প্রদায়ের আগে আগে থাকবে। অতঃপর তাদেরকে দুযখে উপণীত করে দেবে, আর তা অতি নিকৃষ্ট স্থান হবে যাতে তারা উপণীত হবে।অনুরূপভাবে অসৎ লোকদের অনুসারীদেরকেও কিয়ামতের দিন জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করানো হবে। যেমন আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “প্রত্যেকের জন্যেই দ্বিগুণ শাস্তি, কিন্তু তোমরা জান না।” (৭:৩৮) এবার আল্লাহ তাআ’লা কাফিরদের ব্যাপারে সংবাদ দিচ্ছেন যে, জাহান্নামে তারা বলবেঃ (আরবি)অর্থাৎ “হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আমাদের নেতৃবৃন্দ এবং আমাদের মাতব্বরদের কথা মান্য করেছিলাম, সুতরাং তারা আমাদেরকে (সোজা) পথ হতে বিভ্রান্ত করেছিল। হে আমাদের রব! তাদেরকে আপনি দ্বিগুণ শাস্তি প্রদান করুন এবং তাদের প্রতি লা’নত বর্ষণ করুন গুরুতর ভাবে। (৩৩:৬৭-৬৮)হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “ (কিয়ামতের দিন) ইমরুল কায়েস অজ্ঞতার যুগের কবিদের পতাকা বহন করবে এবং তাদেরকে নিয়ে সে জাহান্নামের দিকে যাবে।” (এই হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় ‘মসনাদ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন) জাহান্নামের শাস্তির উপর এটা আরো অতিরিক্ত শাস্তি যে, জাহান্নামীরা ইহকালে এবং পরকালে উভয় স্থানেই চিরস্থায়ী লা’নতের শিকার হবে। এটা আলী ইবনু আবি তালহা হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। অনুরূপ ভাবে যহ্হাক (রঃ) এবং কাতাদা’ (রঃ) বলেছেন যে, (আরবি) দ্বারা দুনিয়া এবং আখেরাতের লা'নতকেই বুঝানো হয়েছে। এটা আল্লাহ পাকের নিম্নের উক্তির মতইঃ (আরবি)অর্থাৎ “আমি তাদেরকে এমন নেতা বানিয়ে ছিলাম যারা (লোকদেরকে) দুযখের প্রতি আহ্বান করছিল এবং কিয়ামত দিবসে তাদের কেউ সহায় হবে না। আর পৃথিবীতেও আমি তাদের পশ্চাতে লা'নত লাগিয়ে দিয়েছি, আর কিয়ামত দিবসেও তারা দুর্দশাগ্রস্ত লোকদের অন্তর্ভূক্ত থাকবে।” (২৮:৪১)আল্লাহ তাআ’লা আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তাদেরকে (প্রত্যহ) সকালে ও সন্ধায় অগ্নির সম্মুখে আনয়ন করা হয়, আর যেই দিন কিয়ামত কায়েম হবে (সেই দিন আদেশ করা হবে যে,) ফিরআউনী লোকদেরকে কঠোরতর আযাবে দাখিল কর।” (৪০:৪৬)