Yusuf • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ وَلَقَدْ هَمَّتْ بِهِۦ ۖ وَهَمَّ بِهَا لَوْلَآ أَن رَّءَا بُرْهَٰنَ رَبِّهِۦ ۚ كَذَٰلِكَ لِنَصْرِفَ عَنْهُ ٱلسُّوٓءَ وَٱلْفَحْشَآءَ ۚ إِنَّهُۥ مِنْ عِبَادِنَا ٱلْمُخْلَصِينَ ﴾
“And, indeed, she desired him, and he desired her; [and he would have succumbed] had he not seen [in this temptation] an evidence of his Sustainer's truth: thus [We willed it to be] in order that We might avert from him all evil and all deeds of abomination -for, behold, he was truly one of Our servants.”
এই স্থানে গুরুজনদের বিভিন্ন উক্তি রয়েছে। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ), মুজাহিদ (রঃ), সাঈদ ইবনু জুবাইর (রঃ) এবং পূর্ববর্তী গুরুজনদের একটি দল হতে এ সম্পর্কে কিছু উক্তি বর্ণিত হয়েছে, যা ইবনু জারীর (রঃ) এবং আরো কেউ রিওয়াইয়াত করেছেন। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআ’লাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী। বলা হয়েছে যে, ঐ নারীর প্রতি হযরত ইউসুফের (আঃ) কামনা নফসের খট্কা ছাড়া আর কিছুই নয়।বাগাভীর (রঃ) হাদীসে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা'আলা (ফেরেশতাদেরকে) বলে থাকেনঃ ‘আমার বান্দা যখন কোন ভাল কাজের ইচ্ছা করে তখন তোমরা ওর জন্যে পুণ্য লিখে নাও। অতঃপর সে যদি ঐ আমল করে ফেলে তবে ওর দশ গুন পূণ্য লিখে ফেল। আর যদি কোন খারাপ কাজের ইচ্ছা করে এবং তা করে না ফেলে তবে ওর জন্যে পূণ্য লিখে নাও। কেননা, সে আমার (শাস্তির ভয়ের) কারণেই ওটা ছেড়ে দিয়েছে আর যদি সে ঐ কাজ করে বসে তবে তোমরা ঐ পরিমাণই পাপ লিখে নাও।” এই হাদীসের শব্দগুলি আরও কয়েক রকমের রয়েছে। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমেও এ হাদীসটি রয়েছে।একটি উক্তি এও রয়েছে যে, হযরত ইউসুফ (আঃ) তাকে (আযীযের স্ত্রীকে) মারার ইচ্ছা করেছিলেন। তাকে তিনি স্ত্রীরূপে গ্রহণ করার আকাঙ্খা করেছিলেন এরূপও একটি উক্তি আছে। একটি উক্তি রয়েছে যে, তিনি ইচ্ছা করতেন যদি না দলীল দেখতেন। কিন্তু দলীল দেখেছিলেন বলে ইচ্ছা করেন নাই। কিন্তু আরবী ভাষার দিক দিয়ে এই উক্তি সম্পর্কে সমালোচনার অবকাশ রয়েছে। ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) প্রমূখ গুরুজন এটা বর্ণনা করেছেন। এতো হলো হযরত ইউসুফের (আঃ) ইচ্ছা সম্পর্কীয় কথা। এখন যে দলীল তিনি দেখেছিলেন সে সম্পর্কে আলোচনা করা যাক। এ সম্পর্কেও কয়েকটি উক্তি রয়েছে। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ), সাঈদ (রঃ), মুজাহিদ (রঃ), সাঈদ ইবনু জুবাইর (রঃ), মুহাম্মদ ইবনু সীরীন (রঃ), হাসান (রঃ), কাতাদা’ (রঃ) আবু সালিহ (রঃ), যহ্হাক (রঃ), মুহাম্মদ ইবনু ইসহাক (রঃ) প্রভৃতি গুরুজন হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত ইউসুফ (আঃ) তাঁর পিতা হযরত ইয়াকুবের (আঃ) ছবি সামনে দেখতে পান, তিনি যেন স্বীয় অঙ্গুলী মুখে পুরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। অন্য রিওয়াইয়াতে রয়েছে যে, তিনি হযরত ইউসুফের (আঃ) বক্ষে হাত মারেন। আওফী (রঃ) হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত ইউসুফের (আঃ) সামনে তাঁর মনিবের (আযীযের) খেয়ালী ছবি প্রতিফলিত হয়েছিল।মুহাম্মদ ইবনু কা'ব আল কারাযী (রঃ) বলেন যে, হযরত ইউসুফ (আঃ) ঘরের ছাদের দিকে চক্ষু উঠিয়ে দেখেন যে, তাতে লিখিত রয়েছেঃ (আরবি)অর্থাৎ “সাবধান! ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না, নিশ্চয় এটা বড়ই নির্লজ্জতাপূর্ণ এবং আল্লাহর ক্রোধ উদ্রেককারী কাজ, আর এটা খুবই খারাপ পথ।” (এটা ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)কারাযী (রঃ) এও বলেন যে, হযরত ইউসুফ (আঃ) যে দলীল (বুরহান) দেখেছিলেন তা ছিল আল্লাহর কিতাবের তিনটি আয়াত। ঐ গুলি হচ্ছে: (আরবি)আবু হিলাল (রঃ) কারাযীর (রঃ) মতই উক্তি করেছেন। তবে তিনি (আরবি) এই চতুর্থ আয়াতটি অতিরিক্ত মিলিয়ে দিয়েছেন। ইমাম আওযায়ী (রঃ) বলেন যে, দেয়ালে তিনি আল্লাহর কিতাবের একটি আয়াত দেখেছিলেন যা তাঁকে ব্যভিচার হতে বিরত রেখেছিল। ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) বলেনঃ সঠিক কথা এই যে, হযরত ইউসুফ (আঃ) আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্য হতে কোন একটি নিদর্শন দেখেছিলেন যা তাকে কামনা চরিতার্থ করতে বাধা দিয়েছিল। সেটা হযরত ইয়াকুবের (আঃ) ছবিও হতে পারে, বাদশা’র ছবিও হতে পারে অথবা এটাও হতে পারে যে, তিনি লিখিত কিছু দেখেছিলেন যা তাঁকে দুষ্কর্ম থেকে বাধা দিয়েছিল। এমন কোন স্পষ্ট দলীল নেই যে, আমরা কোন নির্দিষ্ট জিনিষের সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারি। সুতরাং আমাদের জন্যে সঠিক পন্থা এটাই যে, আমরা এটাকে সাধারণের উপর ছেড়ে দেই, যেমন মহান আল্লাহর উক্তি সাধারণই রয়েছে। আল্লাহ পাক বলেনঃ “যেমন ভাবে আমি ইউসুফকে (আঃ) একটি দলীল দেখিয়ে দুষ্কর্ম থেকে ঐ সময় রক্ষা করেছি, তেমনিভাবে তার অন্যান্য কাজেও তাকে সাহায্য করতে থেকেছি এবং তাকে মন্দ ও নির্লজ্জতাপূর্ণ কাজ থেকে বাঁচিয়ে রেখেছি। সে তো ছিল আমার বিশুদ্ধচিত্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত। তার উপর আল্লাহ পাকের পক্ষ হতে দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক।