Ibrahim • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ وَبَرَزُوا۟ لِلَّهِ جَمِيعًۭا فَقَالَ ٱلضُّعَفَٰٓؤُا۟ لِلَّذِينَ ٱسْتَكْبَرُوٓا۟ إِنَّا كُنَّا لَكُمْ تَبَعًۭا فَهَلْ أَنتُم مُّغْنُونَ عَنَّا مِنْ عَذَابِ ٱللَّهِ مِن شَىْءٍۢ ۚ قَالُوا۟ لَوْ هَدَىٰنَا ٱللَّهُ لَهَدَيْنَٰكُمْ ۖ سَوَآءٌ عَلَيْنَآ أَجَزِعْنَآ أَمْ صَبَرْنَا مَا لَنَا مِن مَّحِيصٍۢ ﴾
“And all [mankind] will appear before God [on the Day of Judgment]; and then the weak will say unto those who had gloried in their arrogance: "Behold, We were but your followers: can you, then, relieve us of something of God's chastisement?" [And the others] will answer: "If God would but show us the way [to salvation], we would indeed guide you [towards it]. It is [now] all one, as far as we are concerned, whether we grieve impatiently or endure [our lot] with patience: there is no escape for us!"”
আল্লাহ তাআলা বলেন, পরিস্কার সমতল ভূমিতে ভাল ও মন্দ এবং পূণ্যবান ও পাপী সমস্ত মাখলুককে আল্লাহর সামনে একত্রিত করা হবে। এ সময় অধীনস্থ লোকেরা নৈতৃস্থানীয় লোকদেরকে, যারা তাদেরকে আল্লাহর ইবাদত এবং রাসূলের আনুগত্য হতে বিরত রাখতো, বলবেঃ “আমরা তোমাদের অনুগত ছিলাম। আমাদেরকে তোমরা যা হুকুম করতে তা আমরা মেনে চলতাম। সুতরাং আমাদেরকে তোমরা তো বহু কিছু আশা দিয়ে রেখেছিলে, আজ কি তাহলে আল্লাহর আযাব আমাদের থেকে সরাতে পারবে?” তাদের এই প্রশ্নের উত্তরে নেতা ও সর্দারগণ বলবেঃ “আমরা নিজেরাই তো সুপথ প্রাপ্ত ছিলাম না। কাজেই তোমাদেরকে আমরা পথ দেখাতাম কিরূপে? বস্তুতঃ আল্লাহর শাস্তির কথা আমাদের সবারই উপর বাস্তবায়িত হয়েছে। আমরা সবাই শাস্তিরযোগ্য হয়ে গেছি। অতএব, এখন আমরা ধৈর্য হারিয়ে ফেলি অথবা ধৈর্য ধারণ করি একই কথা। শাস্তি হতে রক্ষা পাওয়ার সমস্ত উপায় এখন হাতছাড়া হয়ে গেছে।”আবদুর রহমান ইবনু যায়েদ ইবনু আসলাম (রঃ) বলেন জাহান্নামবাসীরা একে অপরকে বলবেঃ “দেখো, এই জান্নাতবাসীরা জান্নাত লাভ করেছে এই কারণে যে, তারা মহামহিমান্বিত আল্লাহর সামনে অত্যন্ত কান্নাকাটি করেছে। এবং কাতর প্রার্থনা করেছে। সুতরাং এসো, আমরাও তাঁর সামনে খুবই কান্নাকাটি করি এবং আকুল আবেদন জানাই।” সুতরাং তারা কান্নায় ফেটে পড়বে এবং করজোড়ে নিবেদন করবে। কিন্তু সবই নিষ্ফল হয়ে যাবে। তখন আবার তারা পরস্পর বলাবলি করবেঃ “জান্নাতবাসীরা ধৈর্যধারণ করেছিল বলেই আজ তারা জান্নাত লাভ করেছে। অতএব, এসো, আমরাও আজ নীরবতা ও ধৈর্য অবলম্বন করি।” এভাবে তারা এমন ধৈর্য অবলম্বন করবে যা ইতিপূর্বে কখনো দেখা যায় নাই। কিন্তু এটাও বৃথা যাবে। তখন তারা বলবেঃ “হায়, হায়! সবরও বিফলে গেল এবং অনুনয় বিনয়ও কোন কাজে আসলো।” আমি বলিঃ প্রকাশ্য ব্যাপার তো এই যে, নেতা ও অনুগতদের এই কথাবার্তা হবে জাহান্নামে যাওয়ার পর। যেমন অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “যখন তারা জাহান্নামে ঝগড়া ও তর্কবিতর্কে লিপ্ত হবে, তখন দুর্বল লোকেরা অহংকারী লোকদের বলবেঃ “আমরা তো তোমাদের অনুগত ও হুকুমের বাধ্য ছিলাম, সুতরাং আজ তোমরা কি আমাদের উপর হতে জাহান্নামের শাস্তির কিছু অংশ সরাতে পারবে?” এ সময় অহংকারী লোকেরা বলবেঃ “আমরা সবাই তো জাহান্নামের মধ্যে রয়েছি! নিশ্চয় আল্লাহ বান্দাদের মধ্যে ফায়সালা করে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা আরো বলেছেনঃ “আল্লাহ বলবেনঃ তোমাদের পূর্বে যে জ্বিন ও মানব দলগত হয়েছে তাদের সাথে তোমরা অগ্নিতে প্রবেশ করো; যখনই কোন দল তাতে প্রবেশ করবে তখনই অপর দলকে তারা অভিসম্পাত করবে, এমনকি যখন সকলে তাতে একত্রিত হবে তখন তাদের পরবর্তীগণ পূর্ববর্তীদের সম্পর্কে বলবেঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! এরাই আমাদেরকে বিভ্রান্ত করেছিল; সুতরাং এদেরকে দ্বিগুণ। অগ্নিশাস্তি দিন! আল্লাহ বলবেনঃ প্রত্যেকের জন্যে দ্বিগুণ রয়েছে, কিন্তু তোমরা জ্ঞাত নও।” তাদের পূর্ববর্তীগণ পরবর্তীদেরকে বলবেঃ “আমাদের উপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই, সুতরাং তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের ফল ভোগ কর।” আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ “জাহান্নামীদের অধীনস্থরা বলবেঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আনুগত্য করেছিলাম আমাদের নেতাদের ও বড়দের, তারাই আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল; হে আমাদের প্রতিপালক! তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি প্রদান করুন এবং তাদের উপর বড় রকমের অভিসম্পাত নাযিল করুন।”হাশরের ময়দানে তাদের ঝগড়া ও তর্ক বিতর্কের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “হায়! তুমি যদি দেখতে যালিমদেরকে যখন তাদের প্রতিপালকের সামনে দণ্ডায়মান করা হবে তখন তারা পরস্পর বাদ প্রতিবাদ করতে থাকবে, যাদেরকে দুর্বল করা হতো তারা ক্ষমতাদপীদেরকে বলবেঃ “তোমরা না থাকলে আমরা অবশ্যই মুমিন হতাম।”যারা ক্ষমতাদপী ছিল তারা, যাদেরকে দুর্বল মনে করা হতো তাদেরকে বলবেঃ “তোমাদের কাছে সৎপথের দিশা আসবার পর আমরা কি তোমাদেরকে তা থেকে নিবৃত্ত করেছিলাম? বস্তুতঃ তোমরাই তো ছিলে অপরাধী।”যাদেরকে দুর্বল মনে করা হতো তারা ক্ষমতাদপীদেরকে বলবেঃ “প্রকৃতপক্ষে তোমরাই তো দিবারাত্র চক্রান্তে লিপ্ত ছিলে, আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলে যেন আমরা আল্লাহকে অমান্য করি এবং তাঁর শরীক স্থাপন করি; যখন তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে তখন তারা অনুতাপ গোপন রাখবে এবং আমি কাফিরদের গলদেশে শৃংখল পরিয়ে দিবো; তাদেরকে তারা যা করতো তারই প্রতিফল দেয়া হবে।”