An-Nahl • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ إِن تَحْرِصْ عَلَىٰ هُدَىٰهُمْ فَإِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهْدِى مَن يُضِلُّ ۖ وَمَا لَهُم مِّن نَّٰصِرِينَ ﴾
“[As for those who are bent on denying the truth-] though thou be ever so eager to show them the right way, [know that,] verily, God does not bestow His guidance upon any whom He judges to have gone astray; and such shall have none to succour them [on Resurrection Day].”
৩৫-৩৭ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তাআলা মুশরিকদের উল্টো বুঝের খবর দিচ্ছেন যে, তারা পাপ করছে, শিরক করছে, হালালকে হারাম করছে, যেমন জানোয়ারগুলিকে তাদের দেবতাদের নামে যবেহ করা এবং তারা তকদীরকে হুজ্জত বানিয়ে নিচ্ছে, আর বলছেঃ “যদি আল্লাহ আমাদের বড়দের এই কাজ অপছন্দ করতেন তবে তখনই তিনি আমাদেরকে শাস্তি দিতেন?’ মহান আল্লাহ তাদেরকে জবাব দিচ্ছেনঃ “এটা আমার বিধান নয়। আমি তোমাদের এই কাজকে কঠিনভাবে অপছন্দ করি। আর আমি যে এটা অপছন্দ করি তা আমি আমার সত্য নবীদের মাধ্যমে প্রকাশ করে থাকি। তারা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে তোমাদেরকে এসব কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছে। প্রত্যেক গ্রামে-গঞ্জে এবং প্রত্যেক দলে ও গোত্রে আমি নবী পাঠিয়েছি। সবাই তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। আমার বান্দাদের মধ্যে আমার আহকামের তাবলীগ তারা পুরোপুরি ওষ্পষ্টভাবে করেছে। সকলকেই তারা বলেছেঃ “তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ছাড়া অন্য কারো উপাসনা করো না।”সর্বপ্রথম যখন যমীনে শিরকের উদ্ভব হয় তখন আল্লাহ তাআলা হযরত নহকে (আঃ) নুবওয়াত দান করে প্রেরণ করেন। আর সর্বশেষ হযরত মুহাম্মদকে (সঃ) “খাতেমুল মুরসালীন’ ও রাহমাতুল লিলআ’লামীন’ উপাধি দিয়ে নবী বানিয়ে দেন, যার দাওয়াত ছিল যমীনের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত সমস্ত দানব ও মানবের জন্যে। সমস্ত নবীরই কথা একই ছিল। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “হে নবী (সঃ)! তোমার পূর্বে আমি যত নবী পাঠিয়েছিলাম তাদের সবারই কাছে ওয়াহী করে ছিলামঃ আমি ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই। সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদত কর।” (২১:২৫) অন্যত্রে তিনি বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “হে নবী (সঃ)! তোমার পূর্ববর্তী নবীদেরকে জিজ্ঞেস করঃ আমি কি রহমান (আল্লাহ) ছাড়া অন্যান্য মাবুদদেরকে নির্ধারণ করেছিলাম যাদের তারা ইবাদত করছে?” (৪৩:৪৫) এখানেও আল্লাহ তাআলা বলেন, প্রত্যেক উম্মতের রাসূলের দাওয়াত ছিল তাওহীদের শিক্ষা দান এবং শিকহতে অসন্তুষ্টি প্রকাশ। সুতরাং মুশরিকরা কি করে নিজেদের শিরকের উপর আল্লাহর সম্মতির দলীল আনয়ন সমীচীন মনে করছে? আল্লাহ তাআলার চাহিদা তাঁর শরীয়তের মাধ্যমে অবগত হওয়া যায়, আর তা হচ্ছে প্রথম থেকেই শিরকের মূলোৎপাটন ও তাওহীদের দৃঢ়তা আনয়ন। সমস্ত রাসূলের ভাষায় তিনি এই পয়গামই প্রেরণ করেছেন। হ্যা, তবে তাদেরকে শিরকের উপর ছেড়ে দেয়া। অন্য কথা। এটা গৃহীত দলীল হতে পারে না। আল্লাহ তাআ'লা তো জাহান্নাম ও জাহান্নামীদেরকেও সৃষ্টি করেছেন। শয়তান এবং কাফিরদের এ জন্যেই সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনি স্বীয় বান্দাদের কুফরীর উপর কখনোই সন্তুষ্ট নন। এর মধ্যেও তার পূর্ণ নিপুণতা ও হুজ্জত নিহিত রয়েছে।এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ “রাসূলদের মাধ্যমে সতর্ককরণের পর কাফির ও মুশরিকদের উপর পার্থিব শাস্তিও এসেছে। কেউ কেউ পথ ভ্রষ্টতার উপরই রয়ে গেছে। হে মুমিনগণ! তোমরা ভূ-পৃষ্ঠে ভ্রমণ করে রাসূলদের বিরুদ্ধাচরণকারী এবং আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপনকারীদের পরিণাম দেখে নাও। অতীতের ঘটনাবলী যাদের জানা আছে তাদেরকে জিজ্ঞেস করে তোমরা জেনে নাও যে, আল্লাহর আযাব কিভাবে মুশরিকদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এই সময়ের কাফিরদের জন্য ঐ সময়ের কাফিরদের মধ্যে দৃষ্টান্ত ও উপদেশ বিদ্যমান রয়েছে। এরপর আল্লাহ তাআলা স্বীয় রাসূলকে (সঃ) বলছেনঃ “হে রাসূল (সঃ)! তুমি এই কাফিরদেরকে হিদায়াত করার জন্যে আগ্রহী হচ্ছে বটে, কিন্তু এটা নিষ্ফল হবে। কেননা, আল্লাহ তাদের পথভ্রষ্টতার কারণে তাদেরকে স্বীয় রহমত হতে দূর করে দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আল্লাহ যাকে পরীক্ষায় ফেলার ইচ্ছা করেন, তার জন্যে তুমি আল্লাহ হতে কিছুই করার অধিকারী (অর্থাৎ তুমি তার কিছুই উপকার করতে পার না)” (৫:৪১) হযরত নূহ (আঃ) স্বীয় কওমকে বলেছিলেনঃ “আল্লাহ যদি তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করার ইচ্ছা করেন তবে আমার উপদেশ তোমাদের কোন উপকারে আসবে না।”এখানেও মহান আল্লাহ বলেনঃ “তুমি তাদেরকে পথ প্রদর্শন করতে আগ্রহী হলেও আল্লাহ যাকে বিভ্রান্ত করেছেন, তাকে তিনি সৃৎপথে পরিচালিত করবেন না।” যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ “যাদেরকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করেন তাদেরকে হিদায়াত দানকারী কেউ নেই এবং তিনি তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় বিভ্রান্তের ন্যায় ঘুরে বেড়াতে ছেড়ে দেন।” আর এক জায়গায় বলেনঃ “হে নবী (সঃ)! যাদের উপর তোমার প্রতিপালকের কথা বাস্তবায়িত হয়েছে তারা ঈমান আনবে না। যদিও তাদের কাছে সমস্ত নিদর্শন চলে আসে, যে পর্যন্ত না তারা বেদনাদায়ক শাস্তি অবলোকন করে।”আল্লাহপাকের উক্তিঃ (আরবি) নিশ্চয় আল্লাহ, অর্থাৎ তাঁর শান ও তাঁর আদেশ। কেননা, তিনি যা চান তাই হয় এবং যা চান না তা হয় না। তাই, তিনি বলেন, যাকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন, কে এমন আছে যে, আল্লাহর পরে তাকে পথ দেখাতে পারে? অর্থাৎ কেউ নেই।(আরবি) ‘তাদের কোন সাহায্যকারীও নেই' অর্থাৎ সেই দিন তাদের এমন কোন সাহায্যকারী থাকবে না, যে তাকে আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচাতে পারে। সৃষ্টি এবং হুকুম একমাত্র তাঁরই। তিনিই হলেন বিশ্ব প্রতিপালক। তিনি কল্যাণময়।