Al-Israa • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ وَقُلِ ٱلْحَمْدُ لِلَّهِ ٱلَّذِى لَمْ يَتَّخِذْ وَلَدًۭا وَلَمْ يَكُن لَّهُۥ شَرِيكٌۭ فِى ٱلْمُلْكِ وَلَمْ يَكُن لَّهُۥ وَلِىٌّۭ مِّنَ ٱلذُّلِّ ۖ وَكَبِّرْهُ تَكْبِيرًۢا ﴾
“and say: "All praise is due to God, who begets no offspring, and has no partner in His dominion, and has no weakness, and therefore no need of any aid" -and [thus] extol His limitless greatness.”
১১০-১১১ নং আয়াতের তাফসীর কাফিররা আল্লাহ তাআলার করুণার বিশেষণে অস্বীকারকারী ছিল। তার একটি গুণবাচক নাম যে রহমান তা তারা মানতো না বা বুঝতো না। তখন আল্লাহ তাআলা নিজের জন্যে এটা সাব্যস্ত করছেন এবং বলছেনঃ এটা নয় যে, তাঁর নাম শুধু আল্লাহই হবে এবং শুধু রহমানই হবে, অন্য কিছু হবে না। বরং এ ছাড়াও তার আরো বহু উত্তম ও সুন্দর নাম রয়েছে। যে পবিত্র নামের মাধ্যমেই ইচ্ছা তাঁর কাছে প্রার্থনা কর। সূরায়ে হাশরের শেষেও তিনি তাঁর অনেক নাম বর্ণনা করেছেন।একজন মুশরিক রাসূলুল্লাহকে (সঃ) সিজদার অবস্থায় (আরবি) ও (আরবি) বলতে শুনে বলে ওঠেঃ “এই একত্ববাদীকে দেখো, দুই খোদাকে ডাকছে!” ঐ সময় এই আয়াত অবতীর্ণ হয়।এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ নামাযে স্বর খুব উচ্চও করো না এবং খুব ক্ষীণও করো না। এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) মক্কায় গোপনীয়ভাবে ছিলেন। যখন তিনি সাহাবীদেরকে নামায পড়াতেন এবং তাতে উচ্চ শব্দে কিরআত পড়তেন তখন মুশরিকরা কুরআনকে, আল্লাহকে এবং রাসূলকে (সঃ) গালি দিতো। তাই, উচ্চ শব্দে কিরআত পড়তে নিষেধ করলেন। এরপর বললেনঃ এতো ক্ষীণ স্বরেও পড়ো না যে, তোমার সাথীরাও শুনতে পায় না। বরং এ দুয়ের মধ্যপথ অবলম্বন কর। অতঃপর যখন তিনি হিজরত করে মদীনায় আসলেন, তখন এই বিপদ কেটে গেল। তখন যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই কিরআত পাঠের অধিকার থাকলো। যেখানে কুরআন পাঠ করা হতো সেখান থেকে মুশরিকরা পালিয়ে যেতো কেউ শুনবার ইচ্ছা করলে লুকিয়ে ও নিজেকে বাঁচিয়ে শুনে নিতো। কিন্তু মুশরিকরা জানতে পারলে তাকে কঠিন শাস্তি দিতো। এখন খুব জোরে পড়লে মুশরিকদের গালির ভয় এবং খুবই আস্তে পড়লে যারা লুকিয়ে শুনতে চায় তারা বঞ্চিত থেকে যায়। তাই, মধ্যপথ অবলম্বন করার নির্দেশ দেয়া হয়। মোট কথা, নামাযের কিরআতের ব্যাপারে এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। বর্ণিত আছে যে, হযরত আবু বকর (রাঃ) নামাযে কিরআত খুব ক্ষীণস্বরে পাঠ করতেন। তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ “আমি আমার প্রতিপালকের সাথে সলা-পরামর্শ করে থাকি। তিনি আমার প্রয়োজনের খবর রাখেন।” তখন তাঁকে বলা হয়ঃ “এটা খুব উত্তম।” আর হযরত উমার (রাঃ) নামাযে কিরআত উচ্চ স্বরে পড়তেন। তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ “আমি শয়তানকে তাড়াই ও ঘুমন্তকে জাগ্রত করি।” তাঁকেও বলা হলোঃ “এটা খুব ভাল।” কিন্তু যখন এই আয়াতটি অবতীর্ণ হলো তখন হযরত, আবু বকর (রাঃ) স্বর কিছু উঁচু করেন এবং হযরত উমার (রাঃ) স্বর কিছু ক্ষীণ করেন।হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এই আয়াতটি দুআ’র ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। অনুরূপভাবে সুফইয়ান ছাওরী (রঃ), মালিক (রঃ) হতে, তিনি হিশাম (রঃ) হতে, তিনি উরওয়া (রাঃ) হতে, তিনি তাঁর পিতা হতে এবং তিনি হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, এই আয়াতটি দুআ’র ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। হযরত মুজাহিদ (রঃ), হযরত সাঈদ ইবনু যুবাইর (রঃ), হযরত আবু আইয়া (রঃ), হযরত মাকহুল (রঃ) এবং হযরত উরওয়া ইবনু যুবাইরেরও (রঃ) এটাই উক্তি।বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখনই সালাম ফিরাতেন তখনই একজন বেদুঈন বলতোঃ “হে আল্লাহ! আমাকে উট দান করুন!” তখন এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। অন্য একটি উক্তি এও আছে যে, এই আয়াতটি তাশাহহুদের সম্পর্কে নাযিল হয়। এও একটি উক্তি আছে যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ রিয়াকারী আমল করো না এবং আমল ছেড়েও দিয়ো না। আর এটাও করো না যে, উচ্চস্বরে পড়ার সময় ভাল করে পড়বে এবং ক্ষীণস্বরে পড়ার সময় মন্দ করে পড়বে।আহলে কিতাব ক্ষীণ স্বরে তাদের কিতাব পাঠ করতো এবং এরই মাঝে কোন কোন বাক্য উচ্চ স্বরে পড়তো। তখন সবাই মিলিতভাবে চীৎকার ও গোলমাল করতো। তখন তাদের সাথে সাদৃশ্য রাখতে নিষেধ করে দেয়া হয় আর অন্য লোক যেমন ক্ষীণ স্বরে পড়তো তার থেকেও বাধা দেয়া হয়। অতঃপর হযরত জিবরাঈল (আঃ) এসে মধ্যপথ বাতলিয়ে দেন, যা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সুন্নাত বলে ঘোষণা দেন।এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “তোমরা এমনভাবে আল্লাহর প্রশংসা কর, যাতে তাঁর সমস্তগুণ ও পবিত্রতা বিদ্যমান থাকে। এইভাবে তার প্রশংসা ও গুণকীর্তণ করতে হবে, যে, তাঁর সমস্ত নাম উত্তম ও সুন্দর, তিনি সম্পূর্ণরূপে ত্রুটিমুক্ত, তাঁর সন্তান নেই, তার কোন অংশীদার নেই, তিনি এক ও একক। তিনি অভাবমুক্ত তাঁর পিতা মাতা নেই ও সন্তানও নেই, তাঁর সমকক্ষও কেউ নেই। তিনি এমন তুচ্ছ নন যে, তিনি কারো সাহায্যের মুখাপেক্ষী। তাঁর কোন পরামর্শদাতারও প্রয়োজন নেই। বরং সমস্ত কিছুর সৃষ্টিকর্তা ও মালিক একমাত্র তিনিই। তিনি সবারই উপর পূর্ণক্ষমতাবান এবং তিনিই সবার ব্যবস্থাপক। তিনি সৃষ্টজীবের উপর যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারেন। তিনি এক ও অংশী বিহীন। তিনি কারো সাথে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করেন না এবং তিনি কারো সাহায্যেরও আশাধারী নন। তোমরা সব সময় তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব, বড়ত্ব, পবিত্রতা ও বুযর্গী বর্ণনা করতে থাকো। আর মুশরিকরা তার উপর যে অপবাদ লেপন করে তার থেকে তিনি যে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র তা তোমরা ঘোষণা করে দাও। ইয়াহুদী ও খৃষ্টানরা তো বলতো যে, আল্লাহর সন্তান রয়েছে। (নাউযুবিল্লাহ)। আর মুশরিকরা বলতোঃ (আরবি) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমরা আপনার কাছে হাযির আছি, আপনার কোন অংশীদার নেই, শুধু একজন অংশীদার রয়েছে, তারও মালিক আপনিই।” সে যা কিছুর মালিক তারও মালিক আপনিই।” সাবী’ মাজুসীরা বলতোঃ “যদি আল্লাহর ওয়ালীরা না থাকতো তবে তিনি একাই সমস্ত ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করতে পারতেন না (নাঊযুবিল্লাহ)।” ঐ সময় এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। এর দ্বারা বাতিলপন্থীদের সমস্ত দাবী খণ্ডন করা হয়েছে।নবী (সঃ) তাঁর বাড়ীর ছোট বড় সকলকেও এই আয়াতটি শিখাতেন। তিনি এই আয়াতটির নাম রেখেছিলেন (আরবি) অর্থাৎ সম্মানিত আয়াত।কোন কোন হাদীসে আছে যে, যে বাড়ীতে রাত্রে এই আয়াত পাঠ করা হয় সেই বাড়ীতে কোন বিপদ আসতে এবং চুরি হতে পারে না।হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেনঃ “আমি একদা রাসূলুল্লাহর (সঃ) সাথে বের হই। আমার হাতখানা তাঁর হাতের মধ্যে অথবা তাঁর হাতখানা আমার হাতের মধ্যে ছিল। পথে চলতে চলতে একটি লোককে তিনি অত্যন্ত দুরাবস্থায় দেখতে পান। তাকে তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমার অবস্থা এমন কেন?” উত্তরে লোকটি বলেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! রোগ-শোক ও ক্ষয়-ক্ষতি আমার এই দূরাবস্থা ঘটিয়েছে। তিনি তখন তাকে বললেনঃ “আমি তোমাকে এমন কিছু অযীফা শিখিয়ে দেবো কি যার ফলে তোমার রোগ-শোক ও দুঃখদৈন্য সব দূর হয়ে যাবে?” উত্তরে লোকটি বললোঃ হা, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! অবশ্যই বলুন। এতে বদর ও উহুদ যুদ্ধে আপনার সাথে হাযির হতে না পারার সমস্ত দুঃখ আমার দূর হয়ে যাবে।” তার একথায় নবী (সঃ) হেসে ওঠেন এবং বলেনঃ “বদরী ও উহুদী সাহাবীদের মর্যাদা তুমি কবে লাভ করবে? তুমি তো তাদের তুলনায় সম্পূর্ণ শূন্যহস্ত ও পুঁজিহীন?” তখন আমি (আবূ হুরাইরা (রাঃ) বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! তাকে যেতে দিন! বরং আমাকে ঐ অযীফাটি শিখিয়ে দিন। তিনি বললেনঃ তুমি নিম্নের দুআটি পাঠ করবেঃ (আরবি) অর্থাৎ আমি ঐ চিরঞ্জীবের ভরসা করছি যিনি মৃত্যু বরণ করেন না। সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি সন্তান গ্রহণ করেন নাই।” আমি তখন এই অযীফা পাঠ করতে শুরু করে দিই কয়েকদিন অতিবাহিত হতেই আমার অবস্থা সুন্দর হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাকে দেখে বললেনঃ “হে আবু হুরাইরা (রাঃ) ! তোমার অবস্থা কিরূপ?” আমি উত্তরে বলিঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনি আমাকে যে অযীফা শিখিয়ে দিয়েছিলেন তা আমি পাঠ করার কারণে আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে বরকত লাভ করেছি। (এই হাদীসটির সনদ দুর্বল এবং এর মতনেও ‘নাকারাত' বা অস্বীকৃতি রয়েছে।হাফিয আবু ইয়ালা (রঃ) এটাকে নিজের কিতাবে আনয়ন করেছেন। এ সব ব্যাপারে একমাত্র আল্লাহ তাআলার সঠিক জ্ঞান রয়েছে)