Al-Israa • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ وَجَعَلْنَا ٱلَّيْلَ وَٱلنَّهَارَ ءَايَتَيْنِ ۖ فَمَحَوْنَآ ءَايَةَ ٱلَّيْلِ وَجَعَلْنَآ ءَايَةَ ٱلنَّهَارِ مُبْصِرَةًۭ لِّتَبْتَغُوا۟ فَضْلًۭا مِّن رَّبِّكُمْ وَلِتَعْلَمُوا۟ عَدَدَ ٱلسِّنِينَ وَٱلْحِسَابَ ۚ وَكُلَّ شَىْءٍۢ فَصَّلْنَٰهُ تَفْصِيلًۭا ﴾
“And We have established the night and the day as two symbols; and thereupon We have effaced the symbol of night and set up [in its place] the light giving symbol of day, so that you might seek to obtain your Sustainer's bounty and be aware of the passing years and of the reckoning [that is bound to come]. For clearly, most clearly, have We spelt out everything!”
আল্লাহ তাআলা তাঁর বড় বড় ক্ষমতার নিদর্শনাবলীর মধ্য হতে দু'টি নিদর্শনের বর্ণনা দিচ্ছেন যে, দিবস ও রজনীকে তিনি ভিন্ন ভিন্ন রীতিতে সৃষ্টি করেছেন। রাত্রিকে সৃষ্টি করেছেন আরামের জন্যে এবং দিবসকে সৃষ্টি করেছেন জীবিকা অনুসন্ধানের জন্যে। মানুষ যেন ঐ সময় কাজকর্ম করতে পারে, শিল্পকার্য ও ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারে এবং ভূ-পৃষ্ঠে ভ্রমণ করতে পারে। আর পর্যায়ক্রমে দিবস ও রজনীর গমনাগমনের ফলে মানুষ সপ্তাহ, মাস ও বছরের গণনা জানতে পারে, যাতে লেন দেন, পারস্পরিক কার্যকলাপে, ঋণে, মেয়াদের এবং ইবাদতের কাজকর্মে সুবিধা হয়। যদি সময় একটাই থাকতো তবে বড়ই কঠিন হয়ে পড়তো। সত্যি কথা এই যে, আল্লাহ ইচ্ছা করলে শুধু রাতই রেখে দিতেন। কারো ক্ষমতা হতো না যে, সে দিন করতে পারে। আর যদি তিনি সর্বদা দিনই রেখে দিতেন তবে কার এমন ক্ষমতা ছিল যে, সে রাত্রি আনতে পারে? মহান আল্লাহর ক্ষমতার এই নিদর্শনগুলি শুনবার ও দেখবার যোগ্যই বটে। এটা একমাত্র তাঁরই রহমত যে, তিনি বিশ্রাম ও শান্তির জন্যে রাত্রি বানিয়েছেন এবং দিবসকে বানিয়েছেন জীবিকা অনুসন্ধানের জন্যে। এ দটি পর্যায়ক্রমে একে অপরের পরে আসতে রয়েছে, যাতে কত্তজ্ঞতা প্রকাশ ও উপদেশ গ্রহণের ইচ্ছা পোষণকারী সফলকাম হতে পারে। তাঁরই হাতে রয়েছে পর্যায়ক্রমে দিবস ও রজনীর গমনাগমন। তিনি রাত্রির পর্দা দিনের উপর এবং দিনের পর্দা রাত্রির উপর চড়িয়ে থাকেন। সূর্য ও চন্দ্র তাঁরই আয়ত্বাধীনে রয়েছে। প্রত্যেকেই নিজের নির্দিষ্ট সময়ের উপর চলতে রয়েছে। ঐ আল্লাহ পরাক্রমশালী ও চরম ক্ষমাশীল। তিনি আরামদায়ক বানিয়েছেন এবং সূর্য ও চন্দ্রকে নিজ নিজ কাজে নিযুক্ত রেখেছেন, এটা তারই নির্ধারিত পরিমাণ যিনি মহাপরাক্রান্ত, জ্ঞানময়। রাত্রিকে অন্ধকার ও চন্দ্রের প্রকাশের দ্বারা চেনা যায় এবং দিবসকে আলোক ও সূর্যোদয়ের দ্বারা জানা যায়। সূর্য ও চন্দ্র উভয়ই উজ্জ্বল ও আলোকময়। কিন্তু এ দুটির প্রতিও তিনি পূর্ণ লক্ষ্য রেখেছেন যেন প্রত্যেকটিকে চিনতে পারা যায়। সূর্যকে উজ্জ্বল ও চন্দ্রকে জ্যোতির্ময় তিনিই করেছেন। মনযিল সমূহ তিনিই নির্ধারণ করেছেন যাতে হিসাব ও বছর জানা যায়। আল্লাহ তাআলার এই সৃষ্টি সত্য (শেষ পর্যন্ত)। কুরআন কারীমে রয়েছেঃ “(হে নবী সঃ!) তারা তোমাকে চন্দ্রের (প্রাকৃতিক অবস্থা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করে, তুমি বলে দাও, এই চন্দ্র সময় নির্ধারক যন্ত্র বিশেষ, মানুষের জন্যে এবং হজ্জের জন্যে (শেষ পর্যন্ত)।”রাত্রির অন্ধকার সরে যায় এবং দিনের ঔজ্জ্বল্য এসে পড়ে। সূর্য দিনের লক্ষণ এবং চন্দ্র রাত্রির আলামত। আল্লাহ তাআলা চন্দ্রকে কিছু কালিমাযুক্ত করে সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং তিনি রাত্রির নিদর্শন চন্দ্রকে সূর্যের তুলনায় কিছুটা অস্পষ্ট আলো বিশিষ্ট করেছেন। তাতে তিনি এক প্রকারের কলংক লেপন করেছেন। ইবনুল কাওয়া (রঃ) আমীরুল মু'মিনীন হযরত আলীকে (রাঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ “চন্দ্রের মধ্যে এই কালিমা কিরূপ?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “এরই বর্ণনা নিম্নের আয়াতে রয়েছেঃ “আমি রাত্রির নিদর্শন অর্থাৎ চন্দ্রের মধ্যে অস্পষ্টতা নিক্ষেপ করেছি (অস্পষ্ট আলো বিশিষ্ট করেছি) এবং দিনের নিদর্শন অর্থাৎ সূর্যকে করেছি অধিকতর উজ্জ্বল, এটা চন্দ্র অপেক্ষা উজ্জ্বলতর এবং অনেক বড়। দিন ও রাত্রিকে আমি দু’টি নিদর্শনরূপে নির্ধারণ করেছি। তাঁর সৃষ্টিই এইরূপ।”