Al-Baqara • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ وَمِنْ حَيْثُ خَرَجْتَ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ ٱلْمَسْجِدِ ٱلْحَرَامِ ۚ وَحَيْثُ مَا كُنتُمْ فَوَلُّوا۟ وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُۥ لِئَلَّا يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَيْكُمْ حُجَّةٌ إِلَّا ٱلَّذِينَ ظَلَمُوا۟ مِنْهُمْ فَلَا تَخْشَوْهُمْ وَٱخْشَوْنِى وَلِأُتِمَّ نِعْمَتِى عَلَيْكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ ﴾
“Hence, from wherever thou mayest come forth, turn thy face [in prayer] towards the Inviolable House of Worship; and wherever you all may be, turn your faces towards it, so that people should have no argument against you unless they are bent upon wrongdoing. And hold not them in awe, but stand in awe of Me, and [obey Me,] so that I might bestow upon you the full measure of My blessings., and that you might follow the right path.”
১৪৯-১৫০ নং আয়াতের তাফসীর এখন তিনবার নির্দেশ হচ্ছে যে, সারা জগতের মুসলমানকে নামাযের সময় মসজিদে হারামের দিকে মুখ করতে হবে। তিনবার বলে এই হুকুমের প্রতি বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে। কেননা, এই পরিবর্তনের নির্দেশ এই প্রথমবারই ঘটেছে। ইমাম ফাখরুদ্দীন রাযী (রঃ)-এর কারণ বর্ণনা করেছেন যে, প্রথম নির্দেশ তো ঐসব লোকদের জন্যে যারা কা'বা শরীফকে দেখতে পাচ্ছে। দ্বিতীয় নির্দেশ ওদের জন্যে যারা মক্কায় বাস করে বটে কিন্তু কা'বা তাদের সামনে নেই। তৃতীয় নির্দেশ মক্কার বাইরের লোকদের জন্য। কুরতুবী (রঃ) একটা কারণ এটাও বর্ণনা করেছেন যে, প্রথম নির্দেশ মক্কাবাসীদের জন্যে, দ্বিতীয় নির্দেশ শহর বাসীদের জন্যে এবং তৃতীয় নির্দেশ মুসাফিরদের জন্যে। কেউ কেউ বলেন যে, তিনটি নির্দেশের সম্পর্ক পূর্ব ও পরের রচনার সঙ্গে রয়েছে। প্রথম নির্দেশের মধ্যে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর প্রার্থনা ও তা কবুল হওয়ার বর্ণনা আছে। দ্বিতীয় নির্দেশের মধ্যে এই কথার বর্ণনা রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর চাহিদা আমাদের চাহিদারই অনুরূপ ছিল এবং সঠিক কাজও এটাই ছিল। তৃতীয় নির্দেশের মধ্যে ইয়াহুদীদের দলীলের উত্তর রয়েছে। কেননা তাদের গ্রন্থে প্রথম হতেই এটা বিদ্যমান ছিল যে, মুহাম্মদ (সঃ) -এর কিবলাহ হবে কা'বা শরীফ। সুতরাং এই নির্দেশের ফলে ঐ ভবিষ্যদ্বাণীও সত্যে পরিণত হয়। সাথে সাথে ঐ মুশরিকদের যুক্তিও শেষ হয়ে যায়। কেননা, তারা কাবাকে বরকতময় ও মর্যাদাপূর্ণ মনে করতো আর এখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর মনোযোগও ওরই দিকে হয়ে গেল। ইমাম রাযী (রঃ) প্রভৃতি মণীষী এখানে এই হুকুমকে বার বার আনার হিকমত বেশ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন।অতঃপর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ ‘যেন তোমাদের উপর আহলে কিতাবের যুক্তি ও বিতর্কের কোন অবকাশ না থাকে। তারা জানতো যে, এই উম্মতের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কাবার দিকে নামায পড়া। যখন তারা এই বৈশিষ্ট্য তাদের মধ্যে না পাবে তখন তাদের সন্দেহের অবকাশ থাকতে পারে। কিন্তু যখন তারা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে এই কিবলার দিকে ফিরতে দেখে নিলো তখন তাদের কোন প্রকারের সন্দেহ না থাকারই কথা। আর এটা একটা কারণ যে, যখন তারা মুসলমানদেরকে তাদের (ইয়াহুদীদের) কিবলাহুর দিকে নামায পড়তে দেখবে তখন তারা একটা অজুহাত দেখাবার সুযোগ পেয়ে যাবে। কিন্তু যখন মুসলমানের হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর কিবলাহর দিকে নামায পড়বে তখন সেই সুযোগ কাদের হাত ছাড়া হয়ে যাবে। হযরত আবু আলিয়া (রঃ) বলেনঃ ইয়াহূদীদের এই যুক্তি ছিল যে, আজ মুসলমানেরা আমাদের কিবলাহর দিকে ফিরেছে, কাল তারা আমাদের ধর্মও মেনে নেবে। কিন্তু যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) আল্লাহ তা'আলার নির্দেশক্রমে প্রকৃত কিবলাহ গ্রহণ করলেন, তাদের আশায় গুড়ে বালি পড়ে যায়।' তারপরে আল্লাহ তা'আলা বলেন যে, তাদের মধ্যে যারা ঝগড়াটে ও অত্যাচারী রয়েছে তারা ব্যতীত মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সমালোচনা করে বলতো যে, এই ব্যক্তি (মুহাম্মদ সঃ) মিল্লাতে ইবরাহীমের (আঃ) দাবী করছেন অথচ তাঁর কিবলার দিকে নামায পড়েন না, এখানে যেন তাদেরকেই উত্তর দেয়া হচ্ছে যে, এই নবী (সঃ) আল্লাহ তা'আলার নির্দেশের অনুসারী। তিনি স্বীয় পূর্ণ বিজ্ঞতা অনুসারে তাকে বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে নামায পড়ার নির্দেশ দেন, যা তিনি পালন করেন। অতঃপর তাঁকে হযরত ইবরাহীমের (আঃ) কিবলাহর দিকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন, যা তিনি সাগ্রহে পালন করেন। সুতরাং তিনি সর্বাবস্থায়ই আল্লাহ তাআলার নির্দেশাধীন। অতঃপর আল্লাহ পাক মুসলমানদেরকে লক্ষ্য করে বলেন যে, তারা যেন ঐসব অত্যাচারীর সন্দেহের মধ্যে পতিত না হয়। তারা যেন ঐ বিদ্রোহীদের বিদ্রোহকে ভয় না করে। তারা যেন ঐ যালিমদের অর্থহীন সমালোচনার প্রতি মোটেই দৃকপাত না করে। বরং তারা যেন একমাত্র আল্লাহ তা'আলাকেই ভয় করে। কিবলাহ পরিবর্তন করার মধ্যে এক মহৎ উদ্দেশ্য ছিল বাতিল পন্থীদের মুখ বন্ধ করা এবং আল্লাহ তা'আলার দ্বিতীয় উদ্দেশ্য ছিল মুসলমানদের উপর তাঁর নিয়ামত পূর্ণ করে দেয়া এবং কিবলাহ্র মত তাদের শরীয়তকেও পরিপূর্ণ করা। এর মধ্যে আর একটি রহস্য ছিল যে, যে কিবলাহ হতে পূর্ববর্তী উম্মতেরা ভ্রষ্ট হয়ে পড়েছিল মুসলমানেরা ওটা থেকে সরে না পড়ে। আল্লাহ তাআলা মুসলমানদেরকে এই কিবলাহ বিশেষভাবে দান করে সমস্ত উম্মতের উপর তাদের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব সাব্যস্ত করেন।