Al-Baqara • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ وَلَا تَنكِحُوا۟ ٱلْمُشْرِكَٰتِ حَتَّىٰ يُؤْمِنَّ ۚ وَلَأَمَةٌۭ مُّؤْمِنَةٌ خَيْرٌۭ مِّن مُّشْرِكَةٍۢ وَلَوْ أَعْجَبَتْكُمْ ۗ وَلَا تُنكِحُوا۟ ٱلْمُشْرِكِينَ حَتَّىٰ يُؤْمِنُوا۟ ۚ وَلَعَبْدٌۭ مُّؤْمِنٌ خَيْرٌۭ مِّن مُّشْرِكٍۢ وَلَوْ أَعْجَبَكُمْ ۗ أُو۟لَٰٓئِكَ يَدْعُونَ إِلَى ٱلنَّارِ ۖ وَٱللَّهُ يَدْعُوٓا۟ إِلَى ٱلْجَنَّةِ وَٱلْمَغْفِرَةِ بِإِذْنِهِۦ ۖ وَيُبَيِّنُ ءَايَٰتِهِۦ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ ﴾
“AND DO NOT marry women who ascribe divinity to aught beside God ere they attain to [true] belief: for any believing bondwoman [of God] is certainly better than a woman who ascribes divinity to aught beside God, even though she please you greatly. And do not give your women in marriage to men who ascribe divinity to aught beside God ere they attain to [true] belief: for- any believing bondman [of God] is certainly better than a man who ascribes divinity to aught beside God, even though he please you greatly. [Such as] these invite unto the fire, whereas God invites unto paradise, and unto [the achievement of] forgiveness by His leave; and He makes clear His messages unto mankind, so that they might bear them in mind.”
এখানে অংশীবাদিনী মহিলাদেরকে বিয়ে করার অবৈধতার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। আয়াতটি সাধারণ বলে প্রত্যেক মুশরিকা মহিলাকে বিয়ে করার নিষিদ্ধতা প্রমাণিত হলেও অন্য জায়গায় রয়েছে: “তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের খোদাভীরু মহিলাগণকেও মোহর দিয়ে বিয়ে করা ততামাদের জন্যে বৈধ-যারা ব্যভিচার থেকে বিরত থাকে।” হযরত ইবনে আব্বাসেরও (রাঃ) উক্তি এটাই যে, ঐ মুশরিকা মহিলাগণ হতে কিতাবীদের মহিলাগণ বিশিষ্টা। মুজাহিদ (রঃ), ইকরামা (রঃ), সাঈদ বিন যুবাইর (রঃ), মাকল (রঃ), হাসান বিন সাবিত (রঃ), যহহাক (রঃ) কাতাদাহ (রঃ), যায়েদ বিন আসলাম (রঃ) এবং রাবী' বিন আনাসেরও (রঃ) উক্তি এটাই। কেউ কেউ বলেন যে, এই আয়াতটি শুধুমাত্র মূর্তিপূজক মুশরিকা নারীদের জন্যেই অবতীর্ণ হয়েছে। তাফসীর-ই-ইবনে জারীরের মধ্যে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) কয়েক প্রকারের নারীকে বিয়ে করার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। হিজরতকারিনী ও বিশ্বাসিনী নারীদেরকে ছাড়া অন্যান্য ঐসমস্ত মেয়েকে বিয়ে করার অবৈধতা ঘোষণা করেছেন যারা অন্য ধর্মের অনুসারিনী।কুরআন কারীমের অন্য জায়গায় রয়েছে (আরবি) অর্থাৎ “যে ব্যক্তি ঈমানের প্রতি অস্বীকৃতি জানিয়েছে তার আমল বিনষ্ট হয়ে গেছে।' (৫:৫) একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, হযরত তালহা বিন উবাইদুল্লাহ (রাঃ) একজন ইয়াহূদী মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন। এবং হযরত হুযাইফা বিন ইয়ামান (রাঃ) একজন খ্রীষ্টান নারীকে বিয়ে করেছিলেন। হযরত উমার (রাঃ) এতে অত্যন্ত রাগান্বিত হন। এমনকি তিনি যেন তাদেরকে চাবুক মারতে উদ্যত হন। ঐ দুই মহান ব্যক্তি তখন বলেনঃ “হে আমিরুল মু'মেনীন! আপনি আমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হবেন না। আমরা তাদেরকে তালাক দিচ্ছি।” তখন হযরত উমার (রাঃ) বলেনঃ “তালাক দেয়া যদি হালাল হয় তবে বিয়েও হালাল হওয়া উচিত। আমি তাদেরকে তোমাদের নিকট হতে ছিনিয়ে নেবো এবং অত্যন্ত অপমানের সাথে তাদেরকে পৃথক করে দেবো।” কিন্তু এই হাদীসটি অত্যন্ত গরীব এবং হযরত উমার (রাঃ) হতে সম্পূর্ণরূপেই গরীব। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) কিতাবী মহিলাদেরকে বিয়ে করার বৈধতার উপর ইজমা নকল করেছেন এবং হযরত উমারের (রাঃ) এই হাদীস সম্বন্ধে লিখেছেন যে, এটা শুধু রাজনৈতিক যৌক্তিকতার ভিত্তিতে ছিল যেন মানুষ মুসলিম নারীগণের প্রতি অনাগ্রহী না হয় কিংবা অন্য কোন দূরদর্শিতা এই নির্দেশের মধ্যে নিহিত ছিল। যেহেতু একটি বর্ণনায় এও রয়েছে যে, হযরত হুযাইফা (রাঃ) যখন এই নির্দেশনামা প্রাপ্ত হন তখন তিনি উত্তরে লিখেন : “আপনি কি এটাকে হারাম বলেন: মুসলমানদের খলীফা হযরত উমার ফারুক (রাঃ), বলেনঃ “আমি হারাম তো বলি না। কিন্তু আমার ভয় যে, তোমরা মুসলমান নারীদেরকে বিয়ে কর না কেন:" এই বর্ণনাটির ইসনাদও বিশুদ্ধ। অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, হযরত উমার ফারূক (রাঃ) বলেছেনঃ “মুসলমান পুরুষ খ্রীস্টান মহিলাকে বিয়ে করতে পারে, কিন্তু মুসলমান মহিলার সাথে খ্রষ্টান পুরুষের বিয়ে হতে পারে না।" এই বর্ণনাটির সনদ প্রথম বর্ণনাটি হতে সঠিকতর।তাফসীর-ই-ইবনে জারীরের মধ্যে একটি মারফু হাদীস ইসনাদসহ বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমরা আহলে কিতাবের নারীদেরকে বিয়ে করতে পারি কিন্তু আমাদের নারীদেরকে আহলে কিতাবের পুরুষ লোকেরা বিয়ে করতে পারে না। কিন্তু এর সনদে কিছুটা দুর্বলতা থাকলেও উম্মতের ইজমা এর উপরেই রয়েছে। ইবনে আবি হাতিমের বর্ণনায় রয়েছে যে, হযরত উমার ফারূক (রাঃ) আহলে কিতাবের বিয়েকে অপছন্দ করতঃ এই আয়াতটি পাঠ করেন। ইমাম বুখারী (রঃ) হ্যরত উমারের (রাঃ) এই উক্তিও নকল করেছেনঃ ‘কোন মহিলা বলে যে, হযরত ঈসা (আঃ) তার প্রভু, এই শিরক অপেক্ষা বড় শিরক আমি জানি না।' হযরত ইমাম আহমাদকে (রঃ) এই আয়াতের ভাবার্থ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ “এর দ্বারা আরবের ঐ মুশরিক মহিলাদেরকে বুঝানো হয়েছে যারা মূর্তি পূজা করতো।"অতঃপর ইরশাদ হচ্ছে-বিশ্বাসিনী মহিলা অংশীবাদিনী মহিলা হতে উত্তম। এই ঘোষণাটি হযরত আবদুল্লাহ বিন রাওয়াহা (রাঃ)-এর সম্বন্ধে অবতীর্ণ হয়। তাঁর কৃষ্ণ বর্ণের একটি দাসী ছিল। একদা ক্রোধান্বিত হয়ে তিনি তাকে একটি চড় বসিয়ে দেন। অতঃপর তিনি সন্ত্রস্ত হয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট উপস্থিত হন এবং ঘটনাটি বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তার ধ্যান ধারণা কি।" তিনি বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! সে রোযা রাখে, নামায পড়ে, ভালভাবে অযু করে, আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করে এবং আপনার প্রেরিতত্বের সাক্ষ্য প্রদান করে।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন বলেনঃ “হে আবু আব্দিল্লাহ! তবে তো সে মুসলমান। তিনি তখন বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! সেই আল্লাহর শপথ, যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন। আমি তাকে মুক্ত করে দেবো। শুধু তাই নয়, আমি তাকে বিয়েও করে নেবো।” সুতরাং তিনি তাই করেন। এতে কতকগুলো মুসলমান তাঁকে বিদ্রুপ করেন। তারা চাচ্ছিলেন যে, মুশরিক মহিলার সাথে তার বিয়ে দিয়ে দেবেন এবং নিজেদের নারীদের বিয়েও মুশরিকদের সাথে দেবেন। তাহলে বংশ মর্যাদা বজায় থাকবে। তখন এই ঘোষণা দেয়া হয় যে, মুশরিকা আযাদ মহিলা হতে মুসলমান দাসী বহুগুণে শ্রেষ্ঠ। অনুরূপভাবে মুশরিক আযাদ পুরুষ হতে মুসলমান দাস বহুগুণে উত্তম। তাফসীর-ই-আবদ বিন হামীদ গ্রন্থে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “নারীদের শুধুমাত্র সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তাদেরকে বিয়ে করো না। হতে পারে যে, তাদের সৌন্দর্য তাদের মধ্যে অহংকার উৎপাদন করবে। নারীদেরকে তাদের সম্পদের উপরে বিয়ে করো না। তাদের সম্পদ তাদেরকে অবাধ্য করে তুলবে এ সম্ভাবনা রয়েছে। বিয়ে করলে ধর্মপরায়ণতা দেখ। কালো-কুৎসিতা দাসীও যদি ধর্মপরায়ণা হয় তবে সে বহুগুণে উত্তম।” কিন্তু এই হাদীসটির বর্ণনাকারীদের মধ্যে আফরেকী দুর্বল। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের মধ্যে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “চারটি জিনিস দেখে নারীদেরকে বিয়ে করা হয়। প্রথম মাল, দ্বিতীয় বংশ, তৃতীয় সৌন্দর্য এবং চতুর্থ ধর্মপরায়ণতা। তোমরা ধর্মপরায়ণতাই অনুসন্ধান কর।” সহীহ মুসলিম শরীফে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “সম্পূর্ণ দুনিয়াটাই একটা সম্পদ বিশেষ। দুনিয়ার সম্পদসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম সম্পদ হচ্ছে সতী নারী।” অতঃপর নির্দেশ দেয়া হচ্ছে : মুশরিক পুরুষদের সাথে মুসলমান নারীদের বিয়ে দিও না। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছে (আরবি) অর্থাৎ কাফির মহিলারা মুসলমান পুরুষদের জন্যে বৈধ নয় এবং মুসলমান পুরুষেরা কাফির মহিলাদের জন্যে বৈধ নয়। (৬০:১০) এর পরে বলা হয়েছে-মু'মিন পুরুষ যদি কাফ্রী ও ক্রীতদাসও হয় তথাপি সে স্বাধীন কাফির নেতা হতে উত্তম। ঐসব লোকের সাথে মেলামেশা, তাদের সাহচর্য, দুনিয়ার। প্রতি ভালবাসা এবং দুনিয়াকে আখেরাতের উপর প্রাধান্য দেয়া শিক্ষা দেয়। এর পরিণাম হচ্ছে দোযখে অবস্থান। আর আল্লাহ তা'আলার অনুগত বান্দাদের অনুসরণ, তাঁর নির্দেশ পালন বেহেশতের পথে চালিত করে এবং পাপ মোচনের কারণ হয়ে থাকে। মানুষকে উপদেশ ও শিক্ষা দেয়ার জন্যে আল্লাহ তাআলা তাঁর আয়াতসমূহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে থাকেন।