Al-Baqara • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّٰلِحَٰتِ وَأَقَامُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُا۟ ٱلزَّكَوٰةَ لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ ﴾
“Verily, those who have attained to faith and do good works, and are constant in prayer, and dispense charity - they shall have their reward with their Sustainer, and no fear need they have, and neither shall they grieve.”
২৭৬-২৭৭ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তা'আলা বলেন যে, তিনি সুদকে সমূলে ধ্বংস করেন। অর্থাৎ হয় ওটাকেই সরাসরি নষ্ট করেন, না হয় ওর বরকত নষ্ট করে থাকেন। দুনিয়াতেও ওটা ধ্বংসের কারণ হয় এবং পরকালেও শাস্তির কারণ হয়। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি)অর্থাৎ “অপবিত্র ও পবিত্র সমান নয় যদিও অপবিত্রের আধিক্য তোমাকে বিস্ময়াভিভূত করে।” (৫:১০০) অন্য স্থানে রয়েছেঃ(আরবি)অর্থাৎ তিনি মলিনতাপূর্ণ জিনিসকে স্তরে স্তরে সাজিয়ে নরকে নিক্ষেপ করবেন।' (৮:৩৭) অন্যত্র রয়েছেঃ “তোমাদেরকে প্রদত্ত সুদ দ্বারা তোমরা যে তোমাদের মালকে বৃদ্ধি করতে চাচ্ছ তা আল্লাহর নিকট বাড়ে না। এই জন্যেই হযরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) বলেন যে, সুদ বেশী হলেও প্রকৃতপক্ষে তা কমেই যায়। (মুসনাদ-ই-আহমাদ) মুসনাদ-ই-আহমাদের অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, আমীরুল মু'মিনীন হযরত উমার ফারূক (রাঃ) মসজিদ হতে বেরিয়ে শস্য ছড়ানো দেখে জিজ্ঞেস করেনঃ ‘এই শস্য কোথা হতে এসেছে: জনগণ বলেনঃ ‘বিক্রির জন্যে এসেছে।' তিনি বলেনঃ “আল্লাহ এতে বরকত দান করুন।” জনগণ বলেনঃ হে আমীরুল মু'মিনীন! এই শস্য উচ্চ মূল্যে বিক্রির জন্যে পূর্ব হতেই জমা করে রেখেছিলো। তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ ‘কে জমা করে রেখেছিল: জনগণ বলেনঃ ‘একজন হচ্ছে হযরত উসমানের (রাঃ) ক্রীতদাস ফারূক এবং অপর জন হচ্ছে আপনার আযাদকৃত গোলাম।' তিনি উভয়কে ডাকিয়ে আনেন এবং বলেনঃ “তোমরা কেন এরূপ করেছিলে:' তারা বলেঃ আমরা আমাদের মাল দ্বারা ক্রয় করি এবং যখন ইচ্ছে হয় বিক্রি করি। তিনি বলেনঃ “জেনে রেখো, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মুখে শুনেছিঃ “যে ব্যক্তি মুসলমানদের মধ্যে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করার উদ্দেশ্যে খাদ্য শস্য জমা করে রাখে, তাকে আল্লাহ দরিদ্র করে দেবেন অথবা কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত করবেন। এই কথা শুনে হযরত ফারূক (রাঃ) বলেনঃ আমি আল্লাহ তাআলার নিকট তাওবা। করছি এবং আপনার নিকট অঙ্গীকার করছি যে, এই কাজ আর করবো না। কিন্তু হযরত উমারের (রাঃ) আযাদকৃত ক্রীতদাস পুনরায় একথাই বলেঃ আমি আমার মাল দিয়ে ক্রয় করছি এবং লাভ নিয়ে বিক্রি করছি, আবার ক্ষতি কি: হযরত ইয়াহইয়া (রঃ) বলেনঃ আমি তাকে কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত অবস্থায় ঘুরে বেড়াতে দেখেছি। সুনান-ই-ইবনে মাজাহয় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি মুসলমানদের মধ্যে উচ্চ মূল্যে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে খাদ্য শস্য বন্ধ করে রাখে, আল্লাহ তাকে দরিদ্র করবেন বা কুষ্ঠ রোগী করবেন।অতঃপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ তিনি দানকে বৃদ্ধি করে থাকেন।' ‘য়ূরবী’ শব্দটি অন্য পঠনে ঝুরাব্বীও রয়েছে। সহীহ বুখারী শরীফে রয়েছেঃ রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি তার উপার্জন দ্বারা একটি খেজুরও দান করে, আল্লাহ তা দক্ষিণ হস্তে গ্রহণ করেন, অতঃপর তোমাদের বাছুর পালনের মত তিনি তা পালন করেন এবং ওর পুণ্য পর্বত সম করে দেন; আর তিনি পবিত্র জিনিস ছাড়া অপবিত্র জিনিস গ্রহণ করেন না। অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, একটি খেজুরের পুণ্য উহুদ পাহাড়ের সমান হয়ে থাকে। অপর একটি বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ এক ঘাস খাবারে উহুদ পাহাড়ের সমান পুণ্য পাওয়া যায়। সুতরাং তোমরা দান-খয়রাত করতে থাকে। অতঃপর বলা হচ্ছেঃ “আল্লাহ কৃতঘ্ন পাপাচারীদেরকে ভালবাসেন না। ভাবার্থ এই যে, যারা দান-খয়রাত করে আল্লাহ তা'আলার বেশী দেয়ার প্রতিশ্রুতির উপর আস্থা রেখে ধৈর্য ধারণ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে দুনিয়ার মাল জমা করতে থাকে, জঘন্য ও শরীয়ত পরিপন্থী উপায়ে উপার্জন করে এবং বাতিল ও অন্যায়ভাবে জনগণের মাল ভক্ষণ করে তারা আল্লাহ তা'আলার শত্রু। এই কৃতঘ্ন ও পাপীদের প্রতি মহান আল্লাহর ভালবাসা নেই।অতঃপর আল্লাহ তা'আলার ঐ বান্দাদের প্রশংসা করা হচ্ছে যারা তাদের প্রভুর নির্দেশাবলী যথাযোগ্য পালন করে থাকে, সকার্যাবলী সম্পাদন করে, নামায সুপ্রতিষ্ঠিত রাখে ও যাকাত প্রদান করে, তারা কিয়ামতের ভয়াবহ পরিস্থিতি হতে নিরাপদ থাকবে। তাদের কোন ভয় ও চিন্তার কারণ থাকবে না। বরং পরম করুণাময় আল্লাহ তাদেরকে সেই দিন বড় বড় পুরস্কারে পুরস্কৃত করবেন।