Al-Muminoon • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ فَتَعَٰلَى ٱللَّهُ ٱلْمَلِكُ ٱلْحَقُّ ۖ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ رَبُّ ٱلْعَرْشِ ٱلْكَرِيمِ ﴾
“[KNOW,] then, [that] God is sublimely exalted, the Ultimate Sovereign, the Ultimate Truth: there is no deity save Him, the Sustainer, in bountiful almightiness enthroned!”
১১২-১১৬ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা বলছেন যে, দুনিয়ার সামান্য কয়েকদিনের বয়সে এই। মুশরিক ও কাফিররা অন্যায় কার্যে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। যদি তারা মুমিন হয়ে সৎ কাজ করে থাকতো তবে আজ আল্লাহর সৎ বান্দাদের সাথে তাদের সৎ কার্যাবলীর প্রতিদান লাভ করতো। কিয়ামতের দিন তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবেঃ “তোমরা দুনিয়ায় কতদিন অবস্থান করেছিলে?” তারা উত্তরে বলবেঃ “খুবই অল্প সময় আমরা দুনিয়ায় অবস্থান করেছিলাম। ঐ সময়টুকু হবে এক দিন বা এক দিনের কিছু অংশ। গণনাকারীদের জিজ্ঞেস করলেই আমাদের কথার সত্যতা প্রমাণিত হয়ে যাবে।” তখন তাদেরকে বলা হবে যে, এ সময়টুকু বেশী বটে, কিন্তু আখিরাতের সময়ের তুলনায় নিঃসন্দেহে এটা অতি অল্প সময়। যদি তোমরা এটা জানতে তবে নশ্বর দুনিয়াকে কখনো অবিনশ্বর আখিরাতের উপর প্রাধান্য দিতে না আর খারাপ কাজ করে এই অল্প সময়ে আল্লাহ তা'আলাকে এতো অসন্তুষ্ট করতে না। এই সামান্য সময় যদি তোমরা ধৈর্যের সাথে আল্লাহর আনুগত্যের কাজে লেগে থাকতে তবে আজ পরম সুখে থাকতে। তোমাদের জন্যে থাকতো শুধু আনন্দ আর আনন্দ।রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যখন জান্নাতীদেরকে জান্নাতের মধ্যে এবং জাহান্নামীদেরকে জান্নামের মধ্যে প্রবেশ করানো হবে তখন আল্লাহ তা'আলা জান্নাতীদেরকে জিজ্ঞেস করবেন- “তোমরা দুনিয়ায় কতদিন অবস্থান করেছিলে? উত্তর তারা বলবে- এই তো একদিন বা একদিনের কিছু অংশ।' আল্লাহ তা'আলা তখন বলবেন- তবে তো তোমরা বড়ই ভাগ্যবান যে, এই অল্প সময়ের সৎ কার্যের বিনিময়ে এতো বেশী প্রতিদান প্রাপ্ত হয়েছে যে, তোমরা আমার রহমত, সন্তুষ্টি ও জান্নাত লাভ করেছে এবং এখানে চিরকাল অবস্থান করবে। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা জাহান্নামীদেরকে তাদের দুনিয়ার অবস্থানকাল জিজ্ঞেস করলে তারাও উত্তর দিবে যে, তারা এক দিন বা এক দিনের কিছু অংশ দুনিয়ায় অবস্থান করেছে। তখন তিনি তাদেরকে বলবেন- ‘তোমরা তো তোমাদের ব্যবসায়ে বড়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে! এটুকু সময়ের মধ্যে তোমরা আমার অসন্তুষ্টি, ক্রোধ ও জাহান্নাম ক্রয় করে নিয়েছে, যেখানে তোমরা চিরকাল অবস্থান করবে।মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ তোমরা কি মনে করেছে যে, আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি? তোমাদেরকে সৃষ্টি করার মধ্যে আমার কোন হিকমত নেই? তোমাদেরকে কি আমি শুধু খেল-তামাশার জন্যেই সৃষ্টি করেছি। যে, তোমরা শুধু লাফালাফি করে বেড়াবে? তোমরা পুরস্কার ও শাস্তির অধিকারী হবে না? তোমাদের এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। তোমাদেরকে আল্লাহর ইবাদত ও তাঁর নির্দেশ পালনের জন্যেই সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমরা কি এটা মনে করে নিশ্চিন্ত হয়ে গেছ যে, তোমাদেরকে আমার কাছে ফিরে আসতে হবে না? এটাও তোমাদের ভুল ধারণা। যেমন মহান আল্লাহ অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “মানুষ কি মনে করে যে, তাকে নিরর্থক ছেড়ে দেয়া হবে?” (৭৫:৩৬) আল্লাহর সত্তা এর বহু ঊর্ধ্বে যে, তিনি অযথা কোন কাজ করবেন, তিনি অনর্থক বানাবেন এবং ভেঙ্গে ফেলবেন। এই সত্য ও প্রকৃত সম্রাট এ সবকিছু থেকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র। তিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। সম্মানিত আরশের তিনি অধিপতি, যা ছাদের মত সমস্ত মাখলুককে ছেয়ে রয়েছে। ওটা খুবই ভাল, সুন্দর ও সুদৃশ্য। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমি তাতে উদগত করি সর্বপ্রকার কল্যাণকর উদ্ভিদ।” (২৬:৭)আমীরুল মুমিনীন হযরত উমার ইবনে আবদিল আযীয (রঃ) তাঁর শেষ ভাষণে আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা ও গুণকীর্তনের পর বলেনঃ “হে লোক সকল! তোমরা অনর্থক সৃষ্ট হওনি এবং তোমাদেরকে নিরর্থক ছেড়ে দেয়া হয়নি। মনে রেখো যে, ওয়াদার একটা দিন রয়েছে যেই দিন স্বয়ং আল্লাহ ফায়সালা করার জন্যে অবতীর্ণ হবেন। ঐ ব্যক্তি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, হতভাগ্য হয়েছে, বঞ্চিত হয়েছে এবং শূন্য হস্ত হয়ে গেছে যে আল্লাহর করুণা হতে দূর হয়ে গেছে এবং ঐ জান্নাতে প্রবেশ লাভে বঞ্চিত হয়েছে যার বিস্তৃতি সমস্ত যমীন ও আসমানের সমান। তোমাদের কি জানা নেই যে, কাল কিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তি আল্লাহর শাস্তি হতে রক্ষা পেয়ে যাবে যার অন্তরে আজ ঐ দিনের ভয় রয়েছে? আর যে এই নশ্বর দুনিয়াকে ঐ চিরস্থায়ী আখিরাতের উপর উৎসর্গ করে দিয়েছে? যে এই অল্পকে ঐ অধিক লাভের উদ্দেশ্যে দ্বিধাহীন চিত্তে ব্যয় করে দিচ্ছে? আর ঐ দিনের ভয়কে শান্তি ও নিরাপত্তায় পরিবর্তিত হওয়ার উপায় অবলম্বন করছে? তোমরা কি দেখো না যে, তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা ধ্বংস হয়ে গেছে এবং এখন তোমরা তাদের স্থলাভিষিক্ত হয়েছে, অনুরূপভাবে তোমরাদেরকেও নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে। এরপর পরবর্তীরা আসবে এবং শেষ পর্যন্ত এমন এক সময় এসে যাবে যখন সারা দুনিয়া কুঞ্চিত হয়ে ঐ খাইরুল ওয়াসীন আল্লাহর দরবারে হাযির হবে। হে জনমণ্ডলী! মনে রেখো যে, তোমরা রাত দিন নিজেদের মৃত্যুর নিকটবর্তী হতে রয়েছে এবং নিজেদের কবরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছ। তোমাদের ফল পাকতে রয়েছে, তোমাদের আশা শেষ হতে চলেছে, তোমাদের বয়স পূর্ণ হতে রয়েছে এবং তোমাদের আয়ু ফুরিয়ে যাচ্ছে। তোমাদের যমীনের গর্তে দাফন করে দেয়া হবে। যেখানে না আছে কোন বিছানা, না আছে কোন বালিশ। বন্ধুৰাৰ সব পৃথক হয়ে যাবে। হিসাব নিকাশ শুরু হবে। আমল সামনে এসে যাবে। যা ছেড়ে এসেছে তা অন্যদের হয়ে যাবে এবং যা আগে পাঠিয়েছে তা তোমার সামনে দেখতে পাবে। তোমরা পুণ্যের মুখাপেক্ষী হবে এবং পাপের শাস্তি ভোগ করবে। হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তার ওয়াদা সামনে আসার পূর্বে। মৃত্যুর পূর্বেই জবাবদিহি করার জন্যে প্রস্তুত হয়ে যাও।” এসব কথা বলার পর তিনি চাদর দ্বারা মুখ ঢেকে নিয়ে কাঁদতে শুরু করেন এবং জনগণও কান্নায় ফেটে পড়ে। (এটা ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)বর্ণিত আছে যে, জ্বিনে ধরা এক রুগ্ন ব্যক্তি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর নিকট আগমন করে। তখন তিনি(আরবি) সূরাটির শেষ পর্যন্ত আয়াতগুলো লোকটির কানের মধ্যে পাঠ করেন। সাথে সাথে লোকটি ভাল হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সামনে ঘটনাটি বর্ণনা করা হলে তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আব্দুল্লাহ (রাঃ)! তুমি তার কানের মধ্যে কি পাঠ করেছিলে?” তিনি উক্ত আয়াতগুলো পাঠের কথা বলে দিলে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বলেনঃ “তুমি এ আয়াতগুলো তার কানে পাঠ করে তাকে জ্বালিয়ে (পুড়িয়ে) দিয়েছে। আল্লাহর কসম! যদি কেউ এই আয়াতগুলো বিশ্বাসসহ কোন পাহাড়ের উপর পাঠ করে তবে ঐ পাহাড়টিও নিজের স্থান থেকে সরে যাবে।” (এটাও মুসনাদে ইবনে আবি হাতিমে বর্ণিত হয়েছে)হযরত ইবরাহীম ইবনে হারিস (রাঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (তাঁর পিতা) বলেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদেরকে এক সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রেরণ করেন এবং নির্দেশ দেন যে, আমরা যেন সকাল-সন্ধ্যায় (আরবি) এই আয়াতটি পাঠ করতে থাকি। তাঁর নির্দেশমত আমরা সকাল-সন্ধ্যায় এটা বরাবরই পাঠ করতে থাকি। “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যে, আমরা বিজয় লাভ করে গনীমতের মালসহ নিরাপদে ফিরে আসি।” (এটা আবু নঈম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমার উম্মতের জন্যে পানিতে নিমজ্জিত হওয়া থেকে নিরাপত্তা লাভের উপায় হলো এই যে, তারা যখন নৌকায় আরোহণ করবে তখন পাঠ করবেঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমি সত্য মালিকের নামে শুরু করছি। তারা আল্লাহকে তার সঠিক ও ন্যায্য মর্যাদা দেয়নি, অথচ কিয়ামতের দিন সমস্ত যমীন তার মুষ্টির মধ্যে থাকবে এবং আকাশমণ্ডলী তার দক্ষিণ হস্তে জড়ানো থাকবে, তিনি পবিত্র ও সমুন্নত ঐগুলো হতে যেগুলোকে তারা তাঁর শরীক করছে। আল্লাহর নামে এর গতি ও স্থিতি, আমার প্রতিপালক অবশ্যই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (মুসনাদে ইবনে আবি হাতিমে বর্ণিত হয়েছে)