Al-Furqaan • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ ٱلَّذِى لَهُۥ مُلْكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ وَلَمْ يَتَّخِذْ وَلَدًۭا وَلَمْ يَكُن لَّهُۥ شَرِيكٌۭ فِى ٱلْمُلْكِ وَخَلَقَ كُلَّ شَىْءٍۢ فَقَدَّرَهُۥ تَقْدِيرًۭا ﴾
“He to whom the dominion over the heavens and the earth belongs, and who begets no offspring, and has no partner in His dominion: for it is He who creates every thing and determines its nature in accordance with [His own] design.”
১-২ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তা'আলা স্বীয় রহমত বা করুণার বর্ণনা দিচ্ছেন যাতে তার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব জনগণের উপর প্রকাশিত হয়। তাঁর এই করুণা এই যে, তিনি তার পবিত্র কালাম কুরআন কারীমকে স্বীয় বান্দা হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা (সঃ)-এর উপর অবতীর্ণ করেছেন।সূরায়ে কাহাফের শুরুতেও আল্লাহ তা'আলা স্বীয় প্রশংসা এই বিশেষণ দ্বারাই বর্ণনা করেছেন। এখানে তিনি নিজের সত্তাকে কল্যাণময় বলে বর্ণনা করেছেন।এখানে মহান আল্লাহ (আরবিক্রিয়া ব্যবহার করেছেন। এর দ্বারা বার বার বেশী বেশী করে অবতীর্ণ হওয়া প্রমাণিত হয়। যেমন তিনি অন্য জায়গায় বলেছেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “যে কিতাব তিনি অবতীর্ণ করেছেন তাঁর রাসূল (সঃ)-এর উপর এবং যে কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে ইতিপূর্বে।” (৪: ১৩৬) সুতরাং পূর্ববর্তী কিতাবগুলোকে (আরবি) এবং এই শেষ কিতাবকে (কুরআনকে) (আরবি) দ্বারা বর্ণনা করেছেন। এটা এ কারণেই যে, পূর্ববর্তী কিতাবগুলো এক সাথেই অবতীর্ণ হয়েছিল। আর কুরআন কারীম প্রয়োজন অনুপাতে অল্প অল্প করে অবতীর্ণ হতে থাকে। কখনো কয়েকটি আয়াত, কখনো কয়েকটি সূরা এবং কখনো কিছু আহকাম অবতীর্ণ হতে থাকে। এতে বড় এক নিপুণতা এই ছিল যে, লোকের উপর ওর প্রতি আমল কঠিন ও কষ্টকর না হয়। তারা যেন ওগুলো ভালভাবে মনে রাখতে পারে। আর মেনে নেয়ার জন্যে যেন তাদের অন্তর খুলে যায়। যেমন আল্লাহ তা'আলা এই সূরার মধ্যেই বলেনঃ “কাফিররা বলে- সমগ্র কুরআন তার নিকট একবারে অবতীর্ণ হলো না কেন? এভাবেই অবতীর্ণ করেছি তোমার হৃদয়কে ওটা দ্বারা মযবুত করবার জন্যে এবং ক্রমে ক্রমে স্পষ্টভাবে আবৃত্তি। করেছি। তারা তোমার নিকট এমন কোন সমস্যা উপস্থিত করেনি যার সঠিক সমাধান ও সুন্দর ব্যাখ্যা আমি তোমাকে দান করিনি।” এখানে এই আয়াতে এর নাম ফুরকান রাখার কারণ এই যে, এটা সত্য ও মিথ্যা এবং হিদায়াত ও গুমরাহীর মধ্যে পার্থক্যকারী। এর দ্বারা ভাল ও মন্দ এবং হালাল ও হারামের মধ্যে পার্থক্য নিরূপিত হয়।কুরআন কারীমের এই পবিত্র বিশেষণ বর্ণনা করার পর যার উপর কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে তাঁর পবিত্র গুণাবলীর বর্ণনা দেয়া হয়েছে যে, তিনি বিশিষ্টভাবে তাঁরই ইবাদতে লেগে থাকেন। তিনি আল্লাহর বিশিষ্ট বান্দা। এটাই হলো সবচেয়ে বড় গুণ। এজন্যেই বড় বড় নিয়ামতের বর্ণনার সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর এই বিশেষণেরই বর্ণনা দেয়া হয়েছে। যেমন মিরাজ সম্পৰ্কীয় ঘটনায় তিনি বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “পবিত্র ও মহিমময় তিনি যিনি তাঁর বান্দাকে রজনীযোগে ভ্রমণ করিয়েছিলেন।” (১৭: ১) অন্য জায়গায় দু'আর স্থলে বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “এবং যখন আল্লাহর বান্দা (হযরত মুহাম্মাদ সঃ) ইবাদতের জন্যে দাড়িয়ে যায়।” (৭২: ১৯) এই বিশেষণই কুরআন কারীমের অবতরণ এবং নবী (সঃ)-এর নিকট বুযর্গ ফেরেশতার আগমনের মর্যাদার বর্ণনার সময় বর্ণিত হয়েছে।এরপর ঘোষিত হচ্ছেঃ এই পবিত্র গ্রন্থ মুহাম্মাদ (সঃ)-এর উপর অবতীর্ণ করেছেন যাতে তিনি বিশ্বজগতের জন্যে সতর্ককারী হতে পারেন। এটা এমন একটি কিতাব যা সরাসরি হিকমত ও হিদায়াতে পূর্ণ। এই কিতাব বিশ্লেষিত মর্যাদা সম্পন্ন, স্পষ্টভাবে বর্ণিত ও সুদৃঢ়। বাতিল এর আশে পাশেও আসতে পারে না। এটা বিজ্ঞানময় ও প্রশংসিত আল্লাহর নিকট হতে অবতারিত। রাসূলুল্লাহ (সঃ) সারা দুনিয়ায় এর প্রচার চালিয়ে যান। তিনি প্রত্যেক লাল ও সাদাকে এবং দূরের ও কাছের লোকেদেরকে আল্লাহর শাস্তি হতে ভয় প্রদর্শন করেন। যারাই আকাশের নীচে ও পৃথিবীর উপরে রয়েছে তাদের সবারই তিনি রাসূল। যেমন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আমি সমস্ত লাল ও সাদা মানুষের নিকট রাসূলরূপে প্রেরিত হয়েছি।” তিনি আরো বলেনঃ “আমাকে এমন পাঁচটি জিনিস দেয়া হয়েছে যেগুলো আমার পূর্বে কোন নবীকে দেয়া হয়নি। ওগুলোর মধ্যে একটি এই যে, আমার পূর্ববর্তী এক একজন নবী নিজ নিজ কওমের নিকট প্রেরিত হতেন। কিন্তু আমি সারা দুনিয়ার জন্যে প্রেরিত হয়েছি। স্বয়ং কুরআন কারীমে ঘোষিত হয়েছেঃ(আরবি)অর্থাৎ “হে নবী (সঃ)! তুমি বলে দাও- হে লোক সকল! নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সবারই নিকট আল্লাহর রাসূল রূপে প্রেরিত হয়েছি।” (৭: ১৫৮) অর্থাৎ আমাকে রাসূলরূপে প্রেরণকারী এবং আমার উপর পবিত্র কিতাব অবতীর্ণকারী হলেন ঐ আল্লাহ যিনি আসমান ও যমীনের একক মালিক। তিনি যখন কোন কাজের ইচ্ছা করেন তখন শুধু বলেন- হও, আর তখনই তা হয়ে যায়। তিনিই মারেন, তিনিই জীবিত রাখেন। তাঁর কোন সন্তান নেই, কোন অংশীদার নেই। সবকিছুই তাঁরই সৃষ্ট। সবাই তাঁরই অধীনে লালিত পালিত। সবারই সৃষ্টিকর্তা, অধিকর্তা, রূযীদাতা, মা'বুদ এবং প্রতিপালক তিনিই। তিনিই প্রত্যেককে পরিমিত করেছেন যথাযথ অনুপাতে।