Ar-Room • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ وَمِنْ ءَايَٰتِهِۦٓ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَٰجًۭا لِّتَسْكُنُوٓا۟ إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةًۭ وَرَحْمَةً ۚ إِنَّ فِى ذَٰلِكَ لَءَايَٰتٍۢ لِّقَوْمٍۢ يَتَفَكَّرُونَ ﴾
“And among His wonders is this: He creates for you mates out of your own kind. so that you might incline towards them, and He engenders love and tenderness between you: in this, behold, there are messages indeed for people who think!”
২০-২১ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তা'আলা বলেন যে, তাঁর ক্ষমতার নিদর্শন অনেক রয়েছে। নিদর্শনগুলোর মধ্যে একটি নিদর্শন এই যে, তিনি মানব জাতির পিতা হযরত আদম (আঃ)-কে মৃত্তিকা দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। আর সমগ্র মানব জাতিকে তিনি সৃষ্টি করেছেন একবিন্দু অপবিত্র পানি (বীর্য) দ্বারা। অতঃপর মানুষকে তিনি খুবই সুদর্শন করে তুলেছেন। শুক্রকে তিনি জমাট রক্তে, অতঃপর গোশতে পরিণত করেছেন ও তার উপর অস্থি তৈরী করেছেন। আর অস্থিগুলোকে তিনি গোশতের আবরণ দিয়ে ঢেকে দিয়েছেন। তারপর তিনি তাতে রূহ ফুকে দিয়েছেন। এরপর নাসিকা, কর্ণ, চক্ষু সৃষ্টি করেছেন এবং মায়ের পেট হতে নিরাপদে বের করে এনেছেন। অতঃপর দুর্বলতা দূর করে দিয়ে সবলতা প্রদান করেছেন। দিন দিন শক্তিকে আরো মযবূত করেছেন। বেশ ক্ষমতাবান করে গড়ে তুলেছেন। আয়ু দান করেছেন এবং নড়াচড়া করার ও আরামের শক্তি দিয়েছেন। নানা প্রকার উপকরণ ও শারীরিক কলকজা দান করেছেন। তাদেরকে তিনি আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা করেছেন। এখান থেকে সেখানে এবং সেখান থেকে এখানে আসার শক্তি যুগিয়েছেন।সাগরের পানিতে, মাটির উপরে ঘুরে বেড়াবার জন্যে নানা প্রকার। আরোহণযোগ্য যন্ত্র ও জন্তুর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। বিদ্যা, বুদ্ধি, চিন্তাশক্তি, প্রচেষ্টা চালাবার ক্ষমতা, ধ্যান, গবেষণা ইত্যাদির জন্যে মস্তিষ্ক দান করেছেন। তিনি পার্থিব কাজ কারবার বুঝবার ক্ষমতা দিয়েছেন। আখিরাতে পরিত্রাণ লাভের জ্ঞান দান করেছেন এবং আমল শিখিয়েছেন। পবিত্রময় ঐ আল্লাহ যিনি মানব জাতিকে প্রত্যেক কাজের অনুমান করার শক্তি দিয়েছেন, প্রত্যেককে এক এক মর্যাদায় রেখেছেন। দৈহিক গঠন ও আকৃতি, কথাবার্তা, ধনী-নির্ধন, জ্ঞানী-অজ্ঞান, ভাল-মন্দ নির্বাচন শক্তি, দয়া-দাক্ষিণ্য, দানশীলতা ও কার্পণ্য ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়ে প্রত্যেককে পৃথক পৃথক করেছেন। যাতে প্রত্যেকে মহান প্রতিপালকের বহু নিদর্শন নিজের মধ্যে ও অন্যের মধ্যে প্রত্যক্ষভাবে দেখে নিতে পারে।হযরত আবূ মূসা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা'আলা সমগ্র পৃথিবী হতে এক মুষ্টি মাটি নিয়ে তা দিয়ে হযরত আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করেছেন। অতএব পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের মাটির রঙ এর ন্যায় মানুষের রঙ হয়ে থাকে। কেউ সাদা, কেউ কালো, কেউ লাল, কেউ অত্যন্ত খারাপ স্বভাবের, কেউ অত্যন্ত ভাল স্বভাবের, কেউ খুব মিশুক, কেউ বদমেজাযী ইত্যাদি নানা প্রকারের হয়ে থাকে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম আবু দাউদ (রঃ) ও ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী (রঃ) হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন)এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে এও রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য হতে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের সঙ্গিনীদেরকে যাতে তোমরা তাদের নিকট শান্তি পাও এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ “আল্লাহ তিনিই যিনি তোমাদেরকে একই নফস হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তা থেকেই তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে সে তার কাছে শান্তি পায়।”আল্লাহ তাআলা হযরত আদম (আঃ)-এর বাম দিকের ক্ষুদ্র বক্ষাস্থি হতে হযরত হাওয়া (আঃ)-কে সৃষ্টি করেছেন। অতএব এটা চিন্তার বিষয় যে, যদি মহান আল্লাহ মানুষের সঙ্গিনী মানুষ হতে সৃষ্টি না করে অন্য প্রাণী হতে সৃষ্টি করতেন তবে মানুষ এখন যেমন স্ত্রী নিয়ে প্রেম-প্রীতি ও ভালবাসা লাভ করে থাকে তা কখনো লাভ করতে পারতো না। প্রেম ও ভালবাসা শুধুমাত্র একই প্রকারের মৌলিক বস্তু হতে লাভ করা সম্ভব। আল্লাহ পাক স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। স্বামী তো ভালবাসার কারণেই স্ত্রীর দেখা শোনা করে থাকে, তার প্রতি দয়া করে এবং তাকে সদা খেয়ালে রাখে। কারণ তার থেকে তার সন্তান জন্মেছে। তাদের দেখা শোনা তাদের উভয়ের মেলামেশার উপর নির্ভরশীল। মোটকথা, আল্লাহ তা'আলা তাদের মধ্যে অনেক কারণ এনে দিয়েছেন যার ফলে তাদের মধ্যে প্রেম-প্রীতি দৃঢ় হয়েছে। এ কারণেই মানুষ নিজ নিজ জীবন-সঙ্গিনী নিয়ে আরাম ও সুখে জীবন যাপন করছে। এগুলোও রাম্বুল আলামীনের একটা মেহেরবানী এবং তাঁর সার্বভৌম ক্ষমতার একটা বড় নিদর্শন। সামান্য চিন্তা করলেই এ মহান কীর্তি-কলাপ মানুষের চরম জ্ঞানের মূল দেশে পৌঁছে যায়।