Faatir • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ وَمِنَ ٱلنَّاسِ وَٱلدَّوَآبِّ وَٱلْأَنْعَٰمِ مُخْتَلِفٌ أَلْوَٰنُهُۥ كَذَٰلِكَ ۗ إِنَّمَا يَخْشَى ٱللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ ٱلْعُلَمَٰٓؤُا۟ ۗ إِنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ غَفُورٌ ﴾
“and (as) there are in men, and in crawling beasts, and in cattle, too, many hues? Of all His servants, only such as are endowed with [innate] knowledge stand [truly] in awe of God: [for they alone comprehend that,] verily, God is almighty, much-forgiving.”
২৭-২৮ নং আয়াতের তাফসীর: প্রতিপালকের পরিপূর্ণ ক্ষমতার প্রতি লক্ষ্য করলে বিস্মিত হতে হয় যে, একই প্রকারের বস্তুর মধ্যে বিভিন্ন প্রকারের নমুনা চোখে পড়ে! আসমান হতে একই পানি বর্ষিত হয়, আর এই পানি হতে বিভিন্ন রং বেরং-এর ফল উৎপাদিত হয়। যেমন লাল, সবুজ, সাদা ইত্যাদি। এগুলোর প্রত্যেকটির স্বাদ পৃথক, গন্ধ পৃথক। যেমন অন্য আয়াতে আছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “কোথাও আঙ্গুর কোথাও খেজুর আবার কোথাও শস্য ইত্যাদি।” (১৩:৪)অনুরূপভাবে পাহাড়ের সৃষ্টিও বিভিন্ন প্রকারের। কোনটি সাদা, কোনটি লাল . এবং কোনটি কালো। কোনটিতে রাস্তা ও ঘাঁটি আছে, কোনটি দীর্ঘ এবং কোনটি অসমতল। এই প্রাণহীন জিনিসের পর এখন প্রাণীসমূহের প্রতি লক্ষ্য করা যাক।এদের মধ্যেও আল্লাহ তা'আলার বিভিন্ন প্রকারের কারিগরী দেখতে পাওয়া যায়। মানুষ, জানোয়ার এবং চতুষ্পদ জন্তুর প্রতি লক্ষ্য করলে তাদের বিভিন্ন প্রকার অসামঞ্জস্য দেখা যাবে। মানুষের মধ্যে বার্বার, হাবশী এবং তামাতিমরা সম্পূর্ণ কালো বর্ণের হয়ে থাকে। রোমীরা হয় অত্যন্ত সাদা বর্ণের, আরবীয় মধ্যম ধরনের এবং ভারতীয়রা তাদের কাছাকাছি। এজন্যেই আল্লাহ তা'আলা অন্য আয়াতে বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র, এতে জ্ঞানীদের জন্যে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে।” (৩০:২২) অনুরূপভাবে চতুষ্পদ জন্তু ও অন্যান্য প্রাণীর রং এবং রূপও পৃথক পৃথক। এমনকি একই প্রকারের জন্তুর মধ্যেও বিভিন্ন প্রকারের রং রয়েছে এবং আরো বিস্ময়ের বিষয় যে, একটি জন্তুরই দেহের রং বিভিন্ন হয়ে থাকে। সুবহানাল্লাহ্! সবচেয়ে উত্তম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কতই না কল্যাণময়! হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক নবী (সঃ)-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করেঃ “আপনার প্রতিপালক কি রং করে থাকেন?" উত্তরে নবী (সঃ) বলেনঃ “হ্যা, তিনি এমন রং করেন যা কখনো উঠে যায় না। যেমন লাল, হলদে, সাদা।” (এ হাদীসটি হাফিয আবু বকর আল বাযযার (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন। হাদীসটিকে মুসাল ও মাওকুফ বলা হয়েছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন)এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে যারা জ্ঞানী তারাই তাকে ভয় করে। কারণ তারা জানে ও বুঝে। প্রকৃতপক্ষে যে ব্যক্তি যত বেশী আল্লাহ সম্বন্ধে অবগত হবে ততই সে মহান, শক্তিশালী ও জ্ঞানী আল্লাহর প্রভাবে প্রভাবান্বিত হবে এবং তার অন্তরে তাঁর ভয় তত বেশী হবে। যে জানবে যে, আল্লাহ সর্বশক্তিমান সে পদে পদে তাঁকে ভয় করতে থাকবে। আল্লাহ সম্বন্ধে প্রকৃত জ্ঞান তার অন্তরে স্থান পাবে। সে তার সাথে কাউকেও শরীক করবে না। তাঁর কৃত হালালকে হালাল ও হারামকে হারাম জানবে। তার কথার প্রতি বিশ্বাস রাখবে এবং তার কথা রক্ষা করতে চেষ্টা করবে। তার সাথে সাক্ষাৎকে সে সত্য বলে মেনে নিবে। ভীতিও একটি শক্তি। আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে এ ভীতি পর্দা স্বরুপ দাঁড়িয়ে থাকে। আল্লাহর নাফরমানীর মাখঝানে এটা বাধা হয়ে যায়। হসান বসরী (রঃ) বলেন যে, আলেম তাকেই বলে যে আল্লাহকে না দেখেই তাকে ভয় করে এবং তাঁর সন্তুষ্টির কাজে আগ্রহ প্রকাশ করে ও তাঁর অসন্তুষ্টির কাজকে ঘৃণা করে এবং তা হতে বিরত থাকে। হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন যে, কথা বেশী বলার নাম ইলম নয়, বরং ইলম বলা হয় আল্লাহকে অধিক ভয় করাকে। ইমাম মালিক (রঃ)-এর উক্তি আছে যে, অধিক রিওয়াইয়াত করার নাম ইলম নয়, বরং ইলম একটা জ্যোতি যা আল্লাহ তা'আলা তাঁর বান্দার অন্তরে ঢেলে দেন। হযরত আহমাদ ইবনে সালেহ মিসরী (রঃ) বলেন যে, ইলম অধিক রিওয়াইয়াত করার নাম নয়, বরং ইলম তাকে বলে যার অনুসরণ আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে ফরয করা হয়েছে। অর্থাৎ কিতাব ও সুন্নাহ, যেগুলো সাহাবী ও ইমামদের মাধ্যমে পৌঁছেছে। যেগুলো রিওয়াইয়াত দ্বারাই আবার পৌঁছে থাকে। জ্যোতি বান্দার আগে আগে থাকে, সে তার দ্বারা ইলমকে ও তার মতলবকে বুঝে থাকে। বর্ণিত আছে যে, আলেম তিন প্রকারের রয়েছে। তারা হলোঃ আল্লাহ সম্পর্কে আলেম ও আল্লাহর আদেশ সম্পর্কে আলেম, আল্লাহ সম্পর্কে আলেম ও আল্লাহর আদেশ সম্পর্কে আলেম নয় এবং আল্লাহর আদেশ সম্পর্কে আলেম ও আল্লাহ সম্পর্কে আলেম নয়। সুতরাং আল্লাহ সম্পর্কে আলেম ও তার আদেশ সম্পর্কেও আলেম হলো ঐ ব্যক্তি যে আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর হুদূদ ও ফারায়েযকেও জানে। আলেম বিল্লাহ হলো ঐ ব্যক্তি যে আল্লাহকে ভয় করে বটে, কিন্তু তার হুদূদ ও ফারায়েযের জ্ঞান রাখে না। আর আলেম বিআমরিল্লাহ হলো ঐ ব্যক্তি যে আল্লাহর হুদূদ ও ফারায়েয সম্পর্কে জ্ঞান রাখে বটে, কিন্তু তার অন্তরে আল্লাহর ভয় থাকে না।