Faatir • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ وَهُمْ يَصْطَرِخُونَ فِيهَا رَبَّنَآ أَخْرِجْنَا نَعْمَلْ صَٰلِحًا غَيْرَ ٱلَّذِى كُنَّا نَعْمَلُ ۚ أَوَلَمْ نُعَمِّرْكُم مَّا يَتَذَكَّرُ فِيهِ مَن تَذَكَّرَ وَجَآءَكُمُ ٱلنَّذِيرُ ۖ فَذُوقُوا۟ فَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِن نَّصِيرٍ ﴾
“And in that [hell] they will cry aloud: “O our Sustainer! Cause us to come out [of this suffering]! We shall [henceforth] do good deeds, not such as we were wont to do [aforetime]!” [But We shall answer:] “Did We not grant you a life long enough so that whoever was willing to take thought could bethink himself? And [withal,] a warner had come unto you! Taste, then, [the fruit of your evil deeds]: for evildoers shall have none to succour them!””
৩৬-৩৭ নং আয়াতের তাফসীর: সৎ লোকদের বর্ণনা দেয়ার পর আল্লাহ্ তা'আলা এখন দুষ্ট ও পাপীদের বর্ণনা দিচ্ছেন। তারা জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে থাকবে। তাদের আর মৃত্যু হবে না। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “সেখানে তারা মরবেও না, বাঁচবেও না।” (২০:৭৪) সহীহ্ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যারা চিরস্থায়ী জাহান্নামী তাদের সেখানে মৃত্যুও হবে না এবং তারা সেখানে বেঁচেও থাকবে না (অর্থাৎ সুখময় জীবন লাভ করবে না)।” তারা বলবেঃ “হে জাহান্নামের দারোগা! আল্লাহকে বল যে, তিনি যেন আমাদের মৃত্যু ঘটিয়ে দেন। তখন উত্তর দেয়া হবেঃ “তোমাদেরকে তো এখানেই অবস্থান করতে হবে।” তারা মৃত্যুকেই নিজেদের জন্যে আরাম ও শান্তিদায়ক মনে করবে। কিন্তু মৃত্যু আসবেই না এবং তাদের শাস্তিও কম করা হবে না। যেমন অন্য জায়গায় আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “পাপীরা চিরকাল জাহান্নামের শাস্তির মধ্যে থাকবে, যে শাস্তি কখনো সরবেও না এবং কমও হবে না।” (৪৩:৭৪-৭৫)তারা সমস্ত কল্যাণ হতে নিরাশ হয়ে যাবে। যেমন এক জায়গায় ঘোষিত হয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “জাহান্নামের আগুন সদা-সর্বদা তেজ হতেই থাকবে।” (১৭:৯৭) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমরা আস্বাদ গ্রহণ কর, আমি তো তোমাদের শাস্তিই শুধু বৃদ্ধি করবো।” (৭৮:৩০) মহা প্রতাপান্বিত আল্লাহ্ বলেন:এই ভাবেই আমি প্রত্যেক অকৃজ্ঞকে শাস্তি দিয়ে থাকি। সেখানে তারা আর্তনাদ করে বলবেঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে নিষ্কৃতি দিন এবং দুনিয়ায় ফিরে যেতে দিন। এবার দুনিয়ায় গিয়ে আমরা সৎ কর্ম করবো এবং পূর্বে যা করতাম তা করবো না। কিন্তু আল্লাহ্ রাব্বল আলামীন খুবই ভাল জানেন যে, তারা দুনিয়ায় ফিরে গেলে আবার অবাধ্যাচরণই করবে। সুতরাং তাদের ঐ মনের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করা হবে না। অন্য স্থানে তাদের আকাঙ্ক্ষার জবাবে বলা হয়েছে ? তোমরা তো তারাই যে, যখন তোমাদের সম্মুখে আল্লাহর একত্রে বর্ণনা দেয়া হতো তখন তোমরা তা অস্বীকার করতে, তার সাথে শরীক স্থাপন করতে, তাতে তোমরা আনন্দ পেতে। কাজেই বেশ বুঝা যাচ্ছে যে, তোমাদেরকে যদি আবার দুনিয়ায় ফিরিয়ে দেয়া হয় তবে তোমরা তাই করবে যা করতে নিষেধ করা হতো।আল্লাহ্ তা'আলা তাদেরকে আরো বলবেনঃ তোমরা দুনিয়ায় বেশ দীর্ঘ জীবন লাভ করেছিলে। তোমরা এ দীর্ঘ সময়ে বহু কিছু করতে পারতে। যেমন কেউ সতেরো বছরের জীবন লাভ করলো। এই সতেরো বছরে সে বহু কিছু করতে পারে। হযরত কাতাদা (রঃ) বলেনঃ “জেনে রেখো যে, দীর্ঘ জীবন আল্লাহর পক্ষ হতে হুজ্জত হয়ে যায়। সুতরাং দীর্ঘ জীবন হতে আমাদের আল্লাহ্ তা'আলার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা উচিত। যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয় তখন কোন কোন লোকের বয়স শুধু আঠারো বছর ছিল।” অহাব ইবনে মুনাব্বাহ্ (রঃ) বলেন যে, (আরবী) আল্লাহ্ তা'আলার এই উক্তি দ্বারা বিশ বছর বয়স বুঝানো হয়েছে। হাসান (রঃ) বলেছেন চল্লিশ বছর। মাসরূক (রঃ) বলেন যে, চল্লিশ বছর বয়সে মানুষের সতর্ক হয়ে যাওয়া উচিত। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন যে, চল্লিশ বছর বয়স হলে আল্লাহর পক্ষ হতে বান্দার ওযর পেশ করার সুযোগ থাকে না। তাঁর থেকে ষাট বছরের কথাও বর্ণিত আছে। আর এটাই অধিকতর সঠিকও বটে, যেমন একটি হাদীসে রয়েছে। যদিও ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) হাদীসটির সনদের ব্যাপারে সমালোচনা করেছেন, কিন্তু তাঁর এ সমালোচনা ঠিক নয়। হযরত আলী (রাঃ) হতেও ষাট বছরই বর্ণিত আছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেন, কিয়ামতের দিন একটি ঘোষণা এও হবেঃ 'ষাট বছরে পদার্পণ করেছে এরূপ লোক কোথায়?' এটা ঐ বয়স যে সম্পর্কে আল্লাহ্ তা'আলা বলেছেনঃ “আমি কি তোমাদেরকে এতো দীর্ঘ জীবন দান করিনি যে, সতর্ক হতে চাইলে সতর্ক হতে পারতে?” (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু হাদীসটির সনদ সঠিক নয়। এসব ব্যাপারে আল্লাহই ভাল জানেন)হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ্ তা'আলা যে বান্দাকে এতোদিন জীবিত রেখেছেন যে, তার বয়স ষাট অথবা সত্তর বছরে পৌছে গেছে, আল্লাহর কাছে তার কোন ওযর চলবে না।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)এ কথা তিনি তিনবার বলেন।সহীহ্ বুখারীর কিতাবুর রিকাকে আছে যে, ঐ ব্যক্তির ওযর আল্লাহ্ কেটে দিয়েছেন যাকে তিনি দুনিয়ায় ষাট বছর পর্যন্ত রেখেছেন। এই হাদীসের অন্য সনদও রয়েছে। অন্য সনদ যদি নাও থাকতো তবুও ইমাম বুখারী (রঃ)-এর হাদীসটিকে তাঁর সহীহ্ গ্রন্থে আনয়নই ওর বিশুদ্ধতার জন্যে যথেষ্ট ছিল। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) এ কথা বলেন যে, হাদীসটির সনদের সত্যাসত্য যাচাই করা জরুরী। ইমাম বুখারী (রঃ)-এর হাদীসটিকে সহীহ বলার তুলনায় ওটার একটা যবের মূল্যের সমানও দাম নেই। এসব ব্যাপারে আল্লাহ্ তা'আলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।ডাক্তারদের মতে মানুষের স্বাভাবিক বয়সের সীমা হলো একশ’ বিশ বছর। ষাট বছর পর্যন্ত তো মানুষ যুবক রূপেই থাকে। তারপর তার রক্তের গরম কমতে থাকে এবং শেষে অচল বৃদ্ধ হয়ে যায়। সুতরাং আয়াতের এই বয়স উদ্দেশ্য হওয়াই সমীচীন। এ উম্মতের অধিকাংশের বয়স এটাই। এক হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমার উম্মতের বয়স ষাট হতে সত্তর বছর। এর চেয়ে বয়স বেশী হয় এরূপ লোকের সংখ্যা খুব কম।” (এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ) ও ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী (রঃ) এ হাদীসটি সম্পর্কে বলেন যে, এর আর কোন সনদ নেই। এটা বড়ই বিস্ময়কর ব্যাপার যে, ইমাম সাহেব কি করে এ কথা বলেছেন। এটা অন্য একটি সনদে ইবনে আবিদ দুনিয়া (রঃ) বর্ণনা করেছেন। স্বয়ং ইমাম তিরমিযী (রঃ) এ হাদীসটি অন্য সনদে তার জামে' কিতাবে কিতাবুল যুহদে বর্ণনা করেছেন)একটি দুর্বল হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমার উম্মতের মধ্যে সত্তর বছরের লোকও খুব হবে। অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে তাঁর উম্মতের বয়স সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ “তাদের বয়স পঞ্চাশ হতে ষাট বছর পর্যন্ত হবে। আবার জিজ্ঞেস করা হলোঃ “সত্তর বছর বয়স কারো হবে কি? তিনি জবাবে বলেনঃ “এটা খুব কম হবে। আল্লাহ তাদের উপর ও আশি বছর বয়সের লোকের উপর দয়া করুন!” (এটা বাযযার (রঃ) বর্ণনা করেছেন) সহীহ হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর বয়স তেষট্টি বছর ছিল। একটি উক্তি আছে যে, তার বয়স ষাট বছর হয়েছিল। এ কথাও বলা হয়েছে যে, তাঁর বয়স। পঁয়ষট্টি বছরে পৌঁছেছিল। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।মহান আল্লাহ বলেনঃ তোমাদের কাছে তো সতর্ককারীও এসেছিল। অর্থাৎ তোমাদের সাদা চুল দেখা দিয়েছিল, অথবা স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সঃ) এসেছিলেন। এই দ্বিতীয় উক্তিটি সঠিকতর। ইবনে যায়েদ (রঃ) (আরবী) অর্থাৎ প্রথম সতর্ককারীদের মধ্যে ইনি একজন সতর্ককারী। (৫৩:৫৬) সুতরাং বয়স দিয়ে, রাসূল পাঠিয়ে আল্লাহ তাআলা স্বীয় হুজ্জত পুরো করেছেন। যখন জাহান্নামীরা মত্যুর আকাক্ষা করবে তখন তাদেরকে জবাব দেয়া হবে। তোমাদের কাছে সত্য এসেছিল। অর্থাৎ আমি রাসূলদের তোমাদের কাছে সত্যসহ পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তোমরা স্বীকার করনি। অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি রাসূল প্রেরণ না করা পর্যন্ত শাস্তি প্রদান করিনি।”(১৭:১৫) অন্য জায়গায় আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যখনই তাতে (জাহান্নামে) কোন দলকে নিক্ষেপ করা হবে, তাদেরকে রক্ষীরা জিজ্ঞেস করবেঃ তোমাদের নিকট কি কোন সতর্ককারী আসেনি? তারা বলবেঃ অবশ্যই আমাদের নিকট সতর্ককারী এসেছিল, আমরা তাদেরকে মিথ্যাবাদী গণ্য করেছিলাম এবং বলেছিলামঃ আল্লাহ কিছুই অবতীর্ণ করেননি। তোমরা তো মহা বিভ্রান্তিতে রয়েছো। (৬৭:৮-৯)আল্লাহ তাআলা বলেনঃ সুতরাং তোমরা শাস্তি আস্বাদন কর। অর্থাৎ তোমরা যে নবীদের বিরুদ্ধাচরণ করেছিলে তার শাস্তির স্বাদ আজ গ্রহণ কর।এরপর প্রবল প্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই। আজ অর্থাৎ কিয়ামতের দিন তাদের সাহায্যের জন্যে কেউই এগিয়ে আসবে না। আর তাদের কেউই আযাব থেকে বাচার কোন পথ পাবে না এবং কেউ তাদেরকে আযাব থেকে রক্ষা করতেও পারবে না।