Yaseen • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ فَسُبْحَٰنَ ٱلَّذِى بِيَدِهِۦ مَلَكُوتُ كُلِّ شَىْءٍۢ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ ﴾
“Limitless, then, in His glory is He in whose hand rests the mighty dominion over all things; and unto Him you all will be brought back!”
৮১-৮৩ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা নিজের ব্যাপক ও সীমাহীন ক্ষমতার বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তিনি আসমান এবং ওর সমস্ত জিনিস সৃষ্টি করেছেন এবং যমীনকে ও ওর মধ্যকার সমস্ত বস্তুকেও তিনি সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং যিনি এত বড় ক্ষমতার অধিকারী তিনি মানুষের মত ছোট মাখলুককে সৃষ্টি করতে অপারগ হবেন? এটা তো জ্ঞানেরও বিপরীত কথা। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “অবশ্যই আসমান ও যমীন সৃষ্টি করা মানুষ সৃষ্টি করা হতে বহুগুণে বড় ও কঠিন।” (৪০-৫৭) এখানেও তিনি বলেনঃ যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তিনি তাদের অনুরূপ সৃষ্টি করতে কি সমর্থ নন? আর এতে যখন তিনি পূর্ণ ক্ষমতাবান তখন অবশ্যই তিনি তাদেরকে তাদের মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত করতে সক্ষম। যিনি প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন, দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করা তার পক্ষে খুবই সহজ। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “তারা কি দেখে না যে, যে আল্লাহ আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে তিনি ক্লান্ত হননি, তিনি কি মৃতকে জীবিত করতে সক্ষম নন? হ্যা, নিশ্চয়ই তিনি প্রত্যেক বস্তুর উপর ক্ষমতাবান।” (৪৬:৩৩)।মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ হ্যা, তিনি নিশ্চয়ই মহাস্রষ্টা, সর্বজ্ঞ। তাঁর ব্যাপার শুধু এই যে, তিনি যখন কোন কিছুর ইচ্ছা করেন তখন শুধু ওকে বলেনঃ হও, ফলে ওটা হয়ে যায়। অর্থাৎ কোন কিছুর ব্যাপারে তিনি একবারই মাত্র নির্দেশ দেন, বারবার নির্দেশ দেয়ার ও তাগীদ করার কোন প্রয়োজনই তাঁর হয় না।হযরত আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “হে আমার বান্দারা! তোমরা সবাই পাপী, কিন্তু যাদেরকে আমি মাফ করি। সুতরাং তোমরা আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিবো। তোমাদের প্রত্যেকেই দরিদ্র, কিন্তু আমি যাদেরকে ধনবান করি। আমি বড় দানশীল এবং আমি বড় মর্যাদাবান। আমি যা ইচ্ছা করি তাই করে থাকি। আমার ইনআম বা পুরস্কারও একটা কালাম বা কথা এবং আমার আযাবও একটা কালাম। আমার ব্যাপার তো শুধু এই যে, যখন আমি কোন কিছুর ইচ্ছা করি তখন ওকে বলিঃ হও, ফলে তা হয়ে যায়।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)মহান আল্লাহ বলেনঃ অতএব মহান ও পবিত্র তিনি যার হাতে রয়েছে প্রত্যেক বিষয়ের সার্বভৌম ক্ষমতা। যেমন অন্য জায়গায় তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তুমি বল- তিনি কে যার হাতে প্রত্যেক জিনিসের সার্বভৌম ক্ষমতা রয়েছে?” (২৩:৮৮) আরো বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “মহামহিমান্বিত তিনি, সর্বময় কর্তৃত্ব যার করায়ত্ব।” (৬৭:১) সুতরাং (আরবী) ও (আরবী) একই অর্থ। যেমন (আরবী) ও (আরবী) এবং (আরবী) ও -এর অর্থ একই। কেউ কেউ বলেছেন যে, (আরবী) দ্বারা দেহের জগত এবং দ্বারা রূহের জগতকে বুঝানো হয়েছে। কিন্তু প্রথমটিই সঠিক উক্তি এবং জমহর মুফাসসিরদেরও উক্তি এটাই।হযরত হুযাইফা ইবনে ইয়ামান (রাঃ) বলেনঃ “একদা রাত্রে আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে (তাহাজ্জুদের নামাযে) দাঁড়িয়ে যাই। তিনি রাক'আতগুলোতে সাতটি লম্বা সূরা পাঠ করেন। (আরবী) বলে তিনি রুকূ' হতে মাথা উত্তোলন করেন এবং (আরবী) এ কালেমাগুলো পাঠ করেন। তাঁর রুকূ দাঁড়ানো অবস্থার মতই দীর্ঘ ছিল এবং সিজদাও ছিল রুকূ'র মতই দীর্ঘ। আমার তো পদদ্বয় ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম আবু দাউদ (রঃ), ইমাম তিরমিযী (রঃ) এবং ইমাম নাসাঈ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত হুযাইফা (রাঃ) হতেই বর্ণিত, তিনি বলেন যে, তিনি একদা রাত্রে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে নামায পড়তে দেখেন। তিনি (আরবী) পড়ে সূরায়ে বাকারা সম্পূর্ণ পাঠ করেন এবং এরপর রুকূ'তে যান। রুকূতেও তিনি প্রায় দাঁড়ানোর মতই বিলম্ব করেন এবং (আরবী) পড়তে থাকেন। তারপর তিনি রুকূ' হতে মাথা উঠান এবং প্রায় ঐ পরিমাণ সময় পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকেন এবং (আরবী) পড়তে থাকেন। তারপর সিজদায় যান এবং সিজদাতেও প্রায় দাঁড়ানো অবস্থার সমপরিমাণ সময় পর্যন্ত পড়ে থাকেন এবং সিজদায় তিনি (আরবী) পড়তে থাকেন। অতঃপর তিনি সিজদা হতে মস্তক উত্তোলন করেন। তাঁর অভ্যাস ছিল এই যে, দুই সিজদার মাঝে ঐ সময় পর্যন্ত বসে থাকতেন যে সময়টা তিনি সিজদায় কাটাতেন। ঐ সময় তিনি (আরবী) (হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করুন!) বলতেন। চার রাকআত নামায তিনি আদায় করেন। এই চার রাকআত নামাযে তিনি সূরায়ে বাকারা, সূরায়ে আলে ইমরান, সূরায়ে নিসা এবং সূরায়ে মায়েদাহ তিলাওয়াত করেন।” বর্ণনাকারী শু’বাহ (রাঃ)-এর সন্দেহ হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) সূরায়ে মায়েদাহ অথবা সূরায়ে আনআম পাঠ করেছেন।” (এ মসটি ইমাম আবু দাউদ (রঃ), ইমাম তিরমিযী (রঃ) এবং ইমাম নাসাঈ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আউফ ইবনে মালিক আশজায়ী (রাঃ) বলেনঃ “একদা রাত্রে আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে তাহাজ্জুদের নামায আদায় করি। তিনি সূরায়ে বাকারা তিলাওয়াত করেন। রহমতের বর্ণনা রয়েছে এরূপ প্রতিটি আয়াতে তিনি থেমে যেতেন এবং আল্লাহ তা'আলার নিকট রহমত প্রার্থনা করতেন। তারপর তিনি রুকূ' করেন এবং এটাও দাড়ানো অবস্থা অপেক্ষা কম সময়ের ছিল না। রুকূতে তিনি (আরবী) পাঠ করেন। এরপর তিনি সিজদা করেন এবং ওটাও প্রায় দাঁড়ানো অবস্থার সমপরিমাণই ছিল এবং সিজদাতেও তিনি ওটাই পাঠ করেন। তারপর দ্বিতীয় রাকআতে তিনি সূরায়ে আলে-ইমরান পড়েন। এভাবেই তিনি এক এক রাকআতে এক একটি সূরা তিলাওয়াত করেন।