Saad • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ كِتَٰبٌ أَنزَلْنَٰهُ إِلَيْكَ مُبَٰرَكٌۭ لِّيَدَّبَّرُوٓا۟ ءَايَٰتِهِۦ وَلِيَتَذَكَّرَ أُو۟لُوا۟ ٱلْأَلْبَٰبِ ﴾
“[All this have We expounded in this] blessed divine writ which We have revealed unto thee, [O Muhammad,] so that men may ponder over its messages, and that those who are endowed with insight may take them to heart.”
২৭-২৯ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা সংবাদ দিচ্ছেন যে, সৃষ্টিকুলের সৃষ্টি বৃথা ও অনর্থক নয়। এগুলো সৃষ্টিকর্তার ইবাদতের জন্যে সৃষ্টি করা হয়েছে। অতঃপর এমন একদিন আসছে যেই দিন মান্যকারীদের মাথা উঁচু হবে এবং অমান্যকারীদের কঠিন শাস্তি দেয়া হবে।মহান আল্লাহ বলেনঃ কাফিরদের ধারণা এই যে, আমি তাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি। তাদের ধারণা আখিরাত ও পারলৌকিক জীবন কিছুই নয়। কিন্তু তাদের এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কিয়ামতের দিনটি তাদের জন্যে হবে বড়ই ভয়াবহ। কেননা, ঐ আগুনে তাদেরকে জ্বলতে হবে যে আগুনকে আল্লাহর ফেরেশতারা তাদের ফুক দ্বারা প্রজ্বলিত রেখেছেন। আল্লাহ তা'আলা ঈমানদার ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারী এবং আল্লাহভীরু ও অপরাধীকে এক জায়গায় রাখবেন এটা অসম্ভব। যদি কিয়ামতই না হতো তবে তো এদের উভয়ের ফলাফল একই হতো। কিন্তু এটা তো অবিচারমূলক কথা। কিয়ামত অবশ্যই হবে। সৎকর্মশীলরা জান্নাতে যাবে এবং পাপীরা যাবে জাহান্নামে। সুতরাং জ্ঞানের চাহিদাও এটাই যে, কিয়ামত সংঘটিত হোক। আমরা দেখি যে, একজন যালিম পাপী গর্বভরে আল্লাহ্ হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। দুনিয়ায় সে বেশ সুখে-শান্তিতে বাস করছে। ধন-মাল, সন্তান-সন্ততি, স্বচ্ছলতা, সুস্থতা ইত্যাদি সবই তার রয়েছে। পক্ষান্তরে একজন মুমিন আল্লাহভীরু, সৎ ও পবিত্র ব্যক্তি একটি পয়সার জন্যে হন্যে হয়ে ঘুরছে, সুখ-শান্তি তার ভাগ্যে জুটে না। তখন মহাবিজ্ঞ, মহাজ্ঞানী ও সুবিচারক আল্লাহর চাহিদা এটাই যে, এমন এক সময়ও আসবে যখন এই নেমকহারাম ও অকৃতজ্ঞকে তার দুষ্কর্মের পুরোপুরি প্রতিফল দেয়া হবে এবং ঐ ধৈর্যশীল, কৃতজ্ঞ ও অনুগত ব্যক্তিকেও তার সৎকর্মের পূর্ণ পুরস্কার দেয়া হবে। আর পরকাল এটাই। সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, এই জগতের পর আর একটি জগত অবশ্যই রয়েছে। এই পবিত্র শিক্ষা কুর'আন কারীম হতে লাভ করা যায় এবং এটাই মানুষের সৎপথের দিশারী, এজন্যেই এর পরেই বলা হয়েছেঃ এক কল্যাণময় কিতাব, এটা আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি যাতে মানুষ এর আয়াতসমূহ অনুধাবন করে এবং বোধশক্তি সম্পন্ন লোকেরা উপদেশ গ্রহণ করে।হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, যে ব্যক্তি কুরআনের শব্দগুলো মুখস্থ করেছে, কিন্তু কুরআনের উপর আমল করেনি এবং কুরআন সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণাও করেনি, তার কুরআনের শব্দগুলো মুখস্থ করাতে কোনই লাভ নেই। লোকেরা বলেঃ “আমরা কুর'আন সম্পূর্ণরূপে পড়েছি।” কিন্তু কুরআনের একটি উপদেশ এবং কুরআনের একটি হুকুমের নমুনা তাদের মধ্যে দেখা যায় না। এরূপ হওয়া মোটেই উচিত নয়। আসল জিনিস হলো চিন্তা-গবেষণা করা, শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ করা এবং আমল করা।