Az-Zumar • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ أَفَمَن شَرَحَ ٱللَّهُ صَدْرَهُۥ لِلْإِسْلَٰمِ فَهُوَ عَلَىٰ نُورٍۢ مِّن رَّبِّهِۦ ۚ فَوَيْلٌۭ لِّلْقَٰسِيَةِ قُلُوبُهُم مِّن ذِكْرِ ٱللَّهِ ۚ أُو۟لَٰٓئِكَ فِى ضَلَٰلٍۢ مُّبِينٍ ﴾
“Could, then, one whose bosom God has opened wide with willingness towards self-surrender unto Him, so that he is illumined by a light [that flows] from his Sustainer, [be likened to the blind and deaf of heart]? Woe, then, unto those whose hearts are hardened against all remembrance of God! They are most obviously lost in error!”
২১-২২ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তাআলা খবর দিচ্ছেন যে, ভূ-পৃষ্ঠে যে পানি রয়েছে তা প্রকৃতপক্ষে আকাশ হতে অবতীর্ণ পানি। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি আসমান হতে পবিত্র পানি অবতীর্ণ করেছি।”(২৫:৪৮) এই পানি যমীন পান করে নেয় এবং ভিতরে ভিতরেই তা ছড়িয়ে পড়ে। অতঃপর প্রয়োজন হিসেবে আল্লাহ তা'আলা তা বের করেন এবং প্রস্রবণ প্রবাহিত হয়ে যায়। যে পানি যমীনের মালিন্যে লবণাক্ত হয়ে যায় তা লবণাক্তই থাকে। অনুরূপভাবে আকাশের পানি বরফের আকারে পাহাড়ের উপর জমে যায় যাকে পাহাড় শোষণ করে নেয়। অতঃপর ওর থেকে ঝরণা প্রবাহিত হয়। প্রস্রবণ ও ঝরণার পানি জমিতে যায় যার ফলে জমির ফসল সবুজ-শ্যামল হয়ে ওঠে যা বিভিন্ন রঙ এর, বিভিন্ন গন্ধের, বিভিন্ন স্বাদের এবং বিভিন্ন আকারের হয়ে থাকে। তারপর শেষ সময়ে ওর যৌবন বার্ধক্যে এবং শ্যামলতা হলুদে পরিণত হয়। এরপর শুষ্ক হয়ে যায় এবং পরিশেষে কেটে নেয়া হয়। এতে কি জ্ঞানীদের জন্যে শিক্ষা ও উপদেশ নেই? তারা এটুকুও বুঝে না যে, দুনিয়ার অবস্থাও অনুরূপ। আজ যে ব্যক্তি যুবক ও সুন্দররূপে পরিলক্ষিত হয়, কাল ঐ ব্যক্তিকেই বৃদ্ধ ও কদাকার রূপে দেখা যায়। আজ যে লোকটি নব যুবক ও বলবান, কালই ঐ লোকটি হয়ে পড়ে বৃদ্ধ, কুসতি ও দুর্বল। পরিশেষে সে মৃত্যুর শিকার হয়ে যায়। সুতরাং যারা জ্ঞানী তারাই পরিণামের কথা চিন্তা করে থাকে। উত্তম ঐ ব্যক্তি যার পরিণাম হয় উত্তম। অধিকাংশ জায়গায় পার্থিব জীবনের দৃষ্টান্ত বৃষ্টি দ্বারা উৎপাদিত শস্য ও ক্ষেত্রের সাথে দেয়া হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তাদের নিকট পেশ কর উপমা পার্থিব জীবনেরঃ এটা পানির ন্যায় যা বর্ষণ করি আকাশ হতে, যদ্বারা ভূমিজ উদ্ভিদ ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে উদগত হয়। অতঃপর তা বিশুষ্ক হয়ে এমন চূর্ণ-বিচূর্ণ হয় যে, বাতাস ওকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান।” (১৮:৪৫)।এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ আল্লাহ ইসলামের জন্যে যার বক্ষ উন্মুক্ত করে দিয়েছেন এবং যে তার প্রতিপালকের আলোকে আছে, সে কি তার সমান যে এরূপ নয়? অর্থাৎ যে সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে, আর যে সত্য হতে দূরে সরে আছে তারা কি কখনো সমান হতে পারে? যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যে মৃত ছিল, অতঃপর আমি তাকে জীবিত করেছি এবং তাকে নূর বা জ্যোতি দান করেছি, তার দ্বারা সে লোকদের মধ্যে চলাফেরা করছে, সে কি ঐ ব্যক্তির মত যে অন্ধকারের মধ্যে পরিবেষ্টিত রয়েছে এবং তার থেকে বের হওয়া তার জন্যে সম্ভবপর নয়?” (৬:১২৩) সুতরাং এখানেও আল্লাহ তা'আলা পরিণাম সম্পর্কে বলেনঃ দুর্ভোগ সেই কঠোর হৃদয় ব্যক্তিদের জন্যে যারা আল্লাহর স্মরণে পরাজুখ! তারা স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছে। অর্থাৎ যাদের অন্তর আল্লাহর যিকর দ্বারা নরম হয় না, আল্লাহর হুকুম মানবার জন্যে যারা প্রস্তুত হয় না, প্রতিপালকের সামনে যারা বিনয় প্রকাশ করে না, অন্তরকে কঠোর করে দেয়, তাদের জন্যে দুর্ভোগ! তারা প্রকাশ্যভাবে বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে।