An-Nisaa • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ مَّا يَفْعَلُ ٱللَّهُ بِعَذَابِكُمْ إِن شَكَرْتُمْ وَءَامَنتُمْ ۚ وَكَانَ ٱللَّهُ شَاكِرًا عَلِيمًۭا ﴾
“Why would God cause you to suffer [for your past sins] if you are grateful and attain to belief - seeing that God is always responsive to gratitude, all-knowing?”
১৪৪-১৪৭ নং আয়াতের তাফসীর: কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে, তাদের প্রতি আন্তরিক ভালবাসা রাখতে, তাদের সাথে সর্বদা উঠাবসা করতে, মুসলমানদের গুপ্তকথা তাদের নিকট প্রকাশ করতে এবং তাদের সাথে গোপন সম্পর্ক বজায় রাখতে আল্লাহ তা'আলা মুসলমানদেরকে নিষেধ করছেন। অন্য আয়াতে আছে (আরবী) অর্থাৎ 'মুমিনগণ যেন মুমিনদেরকে ছেড়ে কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে, আর যে ব্যক্তি এরূপ করে সে আল্লাহ তা'আলার নিকট কোন মঙ্গলের অধিকারী নয়। হঁ্যা, তবে যদি আত্মরক্ষার জন্যে বাহ্যিক ভালবাসা রাখ সেটা অন্য কথা এবং আল্লাহ তোমাদেরকে নিজ হতে ভয় প্রদর্শন করছেন।' (৩:২৮) অর্থাৎ তোমরা যদি তাঁর অবাধ্য হও তবে তোমাদের তাঁর হতে ভীত হওয়া উচিত। মুসনাদ-ই-ইবনে আবি হাতিমে' হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ কুরআন কারীমের মধ্যে যেখানেই এরূপ ইবাদতের মধ্যে (আরবী) শব্দ রয়েছে তথায় তার ভাবার্থ হচ্ছে দলীল। অর্থাৎ তোমরা যদি মুমিনদেরকে ছেড়ে কাফিরদেরকে তোমাদের অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ কর তবে তোমাদের ঐ কাজ তোমাদের উপর ঐ বিষয়ের দলীল হয়ে যাবে যে আল্লাহ তা'আলা তোমাদেরকে শাস্তি প্রদান করবেন। পূর্বযুগীয় কয়েকজন মুফাসৃসির এ আয়াতের এ তাফসীরই করেছেন।এরপর আল্লাহ তা'আলা মুনাফিকদের পরিণাম বর্ণনা করেছেন যে, তারা তাদের কঠিন কুফরীর কারণে জাহান্নামের একেবারে নিম্নস্তরে প্রবেশ করবে। (আরবী) শব্দটি হচ্ছে (আরবী) শব্দের বিপরীত। জান্নাতের দরজা রয়েছে একটির উপর আরেকটি। পক্ষান্তরে জাহান্নামের দারক’ রয়েছে একটির নীচে অপরটি। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন যে, মুনাফিকদেরকে আগুনের বাক্সে পুরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে এবং তারা ওর মধ্যে জ্বলতে পুড়তে থাকবে। হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন যে, এ বাক্সটি হবে লোহার, যাতে আগুন দেয়া মাত্রই আগুন হয়ে যাবে এবং তার চার দিক সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকবে। কেউ এমন হবে না যে তাকে কোন প্রকারের সাহায্য করতে পারে বা তাকে জাহান্নাম হতে বের করতে পারে অথবা শাস্তি কিছু কম করাতে পারে। তবে হ্যা, তাদের মধ্যে যারা তাওবা করবে, লজ্জিত হবে এবং ঐ পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে, অতঃপর সংশোধিত হয়ে যাবে, একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সকার্য সম্পাদন করবে, রিয়াকে আন্তরিকতার সাথে পরিহার করবে এবং আল্লাহ তা'আলার দ্বীনকে দৃঢ়রূপে ধারণ করবে, তিনি তাদের তাওবা কবুল করবেন, তাদেরকে খাঁটি মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত করবেন এবং উত্তম পুণ্যের অধিকারী করবেন। মুসনাদ-ই-ইবনে আবি হাতিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা তোমাদের দ্বীনকে খাটি কর তবে অল্প আমলই তোমাদের জন্যে যথেষ্ট হবে।এরপর ইরশাদ হচ্ছে-‘আল্লাহ তা'আলা হচ্ছেন বেনিয়ায, তিনি বান্দাদেরকে শাস্তি দিতে চান না। হ্যাঁ, তবে যদি সে সম্পূর্ণ নির্ভয়ে পাপ কার্য করতে থাকে তবে অবশ্যই শাস্তি প্রাপ্ত হবে। তাই আল্লাহ তা'আলা বলেন-“যদি তোমরা তোমাদের আমল সুন্দর করে নাও এবং আল্লাহর উপর ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর উপর অন্তরের সাথে বিশ্বাস স্থাপন কর তবে কোন কারণ নেই যে, আল্লাহ তা'আলা তোমাদেরকে শাস্তি প্রদান করবেন। তিনিতো ছোট ছোট পুণ্যের বেশ মর্যাদা দিয়ে থাকেন। যে তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি তাকে সম্মান দিয়ে থাকেন। তিনি পূর্ণ ও সঠিক জ্ঞানের অধিকারী। কার আমল যে খাটি ও গ্রহণযোগ্য তা তিনি ভালই জানেন। কার অন্তরে যে দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে এবং কার অন্তর যে ঈমান শূন্য তিনি সেটাও জানেন। সুতরাং তিনি তাদেরকে পূর্ণ প্রতিদান প্রদান করবেন।