An-Nisaa • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ وَلَا تَتَمَنَّوْا۟ مَا فَضَّلَ ٱللَّهُ بِهِۦ بَعْضَكُمْ عَلَىٰ بَعْضٍۢ ۚ لِّلرِّجَالِ نَصِيبٌۭ مِّمَّا ٱكْتَسَبُوا۟ ۖ وَلِلنِّسَآءِ نَصِيبٌۭ مِّمَّا ٱكْتَسَبْنَ ۚ وَسْـَٔلُوا۟ ٱللَّهَ مِن فَضْلِهِۦٓ ۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِكُلِّ شَىْءٍ عَلِيمًۭا ﴾
“Hence, do not covet the bounties which God has bestowed more abundantly on some of you than on others. Men shall have a benefit from what they earn, and women shall have a benefit from what they earn. Ask, therefore, God [to give you] out of His bounty: behold, God has indeed full knowledge of everything.”
হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) একবার রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলেছিলেন- “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! পুরুষ লোকেরা জিহাদে অংশগ্রহণ করে থাকে, আর আমরা নারীরা এ পুণ্য হতে বঞ্চিত থাকি। অনুরূপভাবে মীরাসও আমরা পুরুষদের তুলনায় অর্ধেক পেয়ে থাকি। সে সময় এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (জামেউত তিরমিযী) অন্য বর্ণনায় রয়েছে যে, এর পরে আবার (৩:১৯৫) (আরবী)-এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। অন্য একটি বর্ণনায় আছে যে, নারীরা নিম্নরূপ আকাঙ্খ পোষণ করেছিলঃ ‘আমরা যদি পুরুষ হতাম তবে তো আমরাও জিহাদে অংশগ্রহণ করতাম।' আরও একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, একটি স্ত্রীলোক নবী (সঃ)-এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে বলেছিলেন, “দেখুনতো একজন পুরুষ দু'জন স্ত্রীর সমান অংশ পেয়ে থাকে, দু’জন নারীর সাক্ষ্য একজন পুরুষের সমান মনে করা হয়, তাছাড়া আমলের ব্যাপারেও এরূপ যে, পুরুষের জন্যে একটি পুণ্য এবং নারীর জন্যে অর্ধপুণ্য।' তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়।সুদ্দী (রঃ) বলেন, পুরুষ লোকেরা বলেছিল, আমরা যখন দ্বিগুণ অংশের মালিক তখন আমরা দ্বিগুণ পুণ্যের অধিকারী হবো না কেন? আর ঐ দিকে স্ত্রীলোকেরা বলেছিল, “আমাদের উপর তো জিহাদ ফরযই নয় তবে আমরা শাহাদাতের পুণ্য লাভ করবো না কেন?' এতে আল্লাহ তা'আলা উভয়কেই বাধা দেন এবং বলেন-“তোমরা আমার অনুগ্রহ যাঞা করতে থাক।হযরত ইবনে আববাস (রাঃ) এর ভাবার্থ বর্ণনা করেছেন-“মানুষ যেন এ আশা পোষণ না করে যে, যদি অমুক ব্যক্তির মাল ও সন্তান আমার হতো। এর উপর এ হাদীস দ্বারা কোন অসুবিধা সৃষ্টি হতে পারে না যাতে রয়েছে যে, ঈর্ষার যোগ্য মাত্র দু’জন। এক ঐ ধনী ব্যক্তি যে স্বীয় মাল আল্লাহর পথে বিলিয়ে দেয়, আর অন্য ব্যক্তি বলে, 'যদি আমারও মাল থাকতো তবে আমিও এরূপ ভাবে তা আল্লাহ তা'আলার পথে খরচ করতে থাকতাম। অতএব দু' ব্যক্তিই পুণ্য লাভের ব্যাপারে সমান। কেননা এটা নিষিদ্ধ নয়। অর্থাৎ এরূপ পুণ্য লাভের লোভ দুষণীয় নয়। এখানে এরূপ জিনিস এরূপ পুণ্য লাভের উদ্দেশ্যে লাভ করার আকাঙ্খা রয়েছে যা প্রশংসনীয়। আর ওখানে অপরের জিনিস নিজের অধিকারে নিয়ে নেয়ার নিয়ত রয়েছে যা সব সময়ই নিন্দনীয়। সুতরাং এরূপভাবে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক অনুগ্রহ যাঞা করা নিষিদ্ধ।অতঃপর আল্লাহ তা'আলা বলেন, প্রত্যেককেই তার কার্যের প্রতিদান দেয়া হবে। ভাল কার্যের প্রতিদান ভাল এবং মন্দ কার্যের প্রতিদান মন্দ হবে। আবার ভাবার্থ এও হতে পারে যে, সকলকেই তাদের হক অনুযায়ী উত্তরাধিকার প্রদান করা হবে।অতঃপর ইরশাদ হচ্ছে-‘আমার নিকট আমার অনুগ্রহ যাজ্ঞা করতে থাক, পরস্পর একে অপরের ফযীলত চাওয়া অনর্থক হবে। হ্যা, তবে আমার নিকট যদি আমার অনুগ্রহ যাজ্ঞা কর তবে আমি কৃপণ নই, বরং আমি দাতা, সুতরাং আমি দান করবো এবং অনেক কিছুই দান করবো।'রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “হে জনমণ্ডলী! আল্লাহ তাআলার নিকট তাঁর অনুগ্রহ যাজ্ঞা কর। তার নিকট চাওয়া তিনি খুব পছন্দ করেন। জেনে রেখো যে, সবচেয়ে বড় ইবাদত হচ্ছে প্রশস্ততা ও করুণার জন্যে অপেক্ষা করা এবং তার প্রতি আশা রাখা। অন্য বর্ণনায় রয়েছে যে, এরূপ আশা পোষণকারীকে আল্লাহ তা'আলা পছন্দ করেন। আল্লাহ হচ্ছেন মহাজ্ঞানী। কে পাওয়ার যোগ্য এবং কে দারিদ্রের যোগ্য, কে পারলৌকিক নিআমতের দাবীদার, আর কে তথায় লাঞ্ছিত হওয়ার যোগ্য তা তিনিই খুব ভাল জানেন। তাকে তিনি তার আসবাব ও মাধ্যম জোগাড় করে দেন এবং তার জন্যে তা সহজ করে দেন।