An-Nisaa • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّٰلِحَٰتِ سَنُدْخِلُهُمْ جَنَّٰتٍۢ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا ٱلْأَنْهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدًۭا ۖ لَّهُمْ فِيهَآ أَزْوَٰجٌۭ مُّطَهَّرَةٌۭ ۖ وَنُدْخِلُهُمْ ظِلًّۭا ظَلِيلًا ﴾
“But those who attain to faith and do righteous deeds We shall bring into gardens through which running waters flow, therein to abide beyond the count of time; there shall they have spouses pure: and [thus] We shall bring them unto happiness abounding.”
৫৬-৫৭ নং আয়াতের তাফসীর: যারা আল্লাহর নির্দেশাবলী অস্বীকার করে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর বিরুদ্ধে জনগণকে বিদ্রোহী করে তোলে, এখানে তাদেরই শাস্তি ও মন্দ পরিণামের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। তাদেরকে জাহান্নামের মধ্যে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া হবে এবং সেই আগুন তাদেরকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে নেবে এবং তাদের শরীরের সূক্ষ্ম ললাম পর্যন্ত জ্বালিয়ে দেবে। শুধু এটাই নয়, বরং এ শাস্তি হবে তাদের জন্যে চিরস্থায়ী। একটি চামড়া পুড়ে গেলে আবার নতুন চামড়া লাগিয়ে দেয়া হবে, যা হবে সাদা কাগজের মত। এক একজন কাফিরের শত শত চামড়া হবে এবং প্রত্যেক চামড়ার উপর নানা প্রকার পৃথক পৃথক শাস্তি হবে। এক এক দিনে সত্তর হাজারবার চামড়া পরিবর্তন করা হবে। অর্থাৎ ঐ লোকগুলোকে বলা হবে‘পুনরায় তোমরা ফিরে এসো’ তখন এগুলো পুনরায় ফিরে আসবে।হযরত উমার (রাঃ)-এর সামনে এ আয়াতটি পাঠ করা হলে তিনি পাঠককে দ্বিতীয়বার পাঠ করে শুনাতে বলেন। পাঠক দ্বিতীয়বার পাঠ করেন। হযরত মু'আয ইবনে জাবাল (রাঃ) তাঁকে বলেনঃ আমি আপনাকে এর তাফসীর শুনাচ্ছি। এক এক ঘন্টায় একশবার করে পরিবর্তন করা হবে।' হযরত উমার (রাঃ) তখন বলেনঃ “আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট হতে এরূপই শুনেছি। (তাফসীর-ই-ইবনে মিরদুওয়াই প্রভৃতি)।অন্য বর্ণনায় রয়েছে যে, সে সময় হযরত কা'ব (রাঃ) বলেছিলেনঃ ‘এ আয়াতের তাফসীর আমার মনে আছে। আমি এটা আমার ইসলাম গ্রহণের পূর্বে পাঠ করেছিলাম। তখন হযরত উমার (রাঃ) বলেনঃ “আচ্ছা বলতো। যদি এটা ঐরূপই হয় যেরূপ আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে শুনেছি তবে তো আমি তা মেনে নেবো, নচেৎ ওর প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপ করবো না। তখন হযরত কা'ব (রাঃ) বলেনঃ ‘এক ঘন্টায় একশ বিশ বার। এটা শুনে হযরত উমার (রাঃ) বলেনঃ ‘আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে এ রকমই শুনেছি।হযরত রাবী ইবনে আনাস (রাঃ) বলেনঃ “পূর্ববর্তী গ্রন্থে লিখা রয়েছে যে, তাদের চামড়া হবে চল্লিশ হাত ও পঁচাত্তর হাত। আর তাদের পেট এত বড় হবে যে, তাতে পর্বত রাখলেও ধরে যাবে। যখন ঐ চামড়াগুলো আগুনে পুড়ে যাবে তখন অন্য চামড়া এসে যাবে। অন্য হাদীসে এর চেয়েও বেশী রয়েছে।মুসনাদ-ই-আহমাদে রয়েছে, হযরত ইবনে উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেনঃ জাহান্নামে জাহান্নামবাসীকে এত বড় করা হবে যে, তার কানের লতি ও স্কন্ধের মধ্যবর্তী স্থানের দূরত্ব হবে সাতশ বছরের পথ। তার চামড়া হবে সত্তরগজ পুরু এবং দাত হতে উহুদ পাহাড়ের মত। আবার চামড়া হতে ভাবার্থ পোষাকও নেয়া হয়েছে। কিন্তু এটা দুর্বল এবং প্রকাশ্য শব্দের বিপরীত।এরপর সৎ লোকদের পরিণামের কথা বর্ণনা করা হচ্ছে যে, তারা আদন। জান্নাতে অবস্থান করবে যার নিম্নদেশে স্রোতস্বিনীসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে। তাদের ইচ্ছেমত নদীগুলো প্রবাহিত হবে। স্বীয় অট্টালিকায়, বাগানে, পথে মোটকথা যেখানেই তার মন চাইবে সেখানেই নদীগুলো বইতে থাকবে। সবচেয়ে বড় মজার কথা এই যে, এসব নিয়ামত হবে চিরস্থায়ী। এগুলো না নষ্ট হবে, না কিছু হ্রাস পাবে, না ধ্বংস হবে না শেষ হবে এবং না ফিরিয়ে নেয়া হবে। আরও থাকবে তাদের জন্যে সুন্দরী হুরগণ, যারা হবে হায়েয-নেফাস, ময়লা, দুর্গন্ধ এবং অন্যান্য জঘন্য বিশেষণ হতে সম্পূর্ণ পবিত্র। আর তাদের জন্যে হবে সুদূর প্রসারিত গাছের ছায়া, যা হবে অত্যন্ত আরামদায়ক ও মনোমুগ্ধকর। তাফসীর-ই-ইবনে জারীরে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ ‘জান্নাতে এমন একটি বৃক্ষ থাকবে যার ছায়ায় একজন আরোহী একশ বছর পর্যন্ত চলতে থাকবে তবুও তার ছায়া শেষ হবে। ওটা হচ্ছে শাজারাতুল খুলদ’ (চিরস্থায়ী বৃক্ষ)।