slot qris slot gacor terbaru slot gacor terbaik slot dana link slot gacor slot deposit qris slot pulsa slot gacor situs slot gacor slot deposit qris slot qris bokep indo
| uswah-academy
WhatsApp Book A Free Trial
القائمة

🕋 تفسير سورة الشورى

(Ash-Shura) • المصدر: BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ حم

📘 Please check ayah 42:6 for complete tafsir.

وَمَا اخْتَلَفْتُمْ فِيهِ مِنْ شَيْءٍ فَحُكْمُهُ إِلَى اللَّهِ ۚ ذَٰلِكُمُ اللَّهُ رَبِّي عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْهِ أُنِيبُ

📘 Please check ayah 42:12 for complete tafsir.

فَاطِرُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ جَعَلَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا وَمِنَ الْأَنْعَامِ أَزْوَاجًا ۖ يَذْرَؤُكُمْ فِيهِ ۚ لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ ۖ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ

📘 Please check ayah 42:12 for complete tafsir.

لَهُ مَقَالِيدُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَقْدِرُ ۚ إِنَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ

📘 ৯-১২ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তাআলা মুশরিকদের শিরকপূর্ণ কাজের নিন্দে করছেন যে, তারা শরীক বিহীন আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করছে এবং অন্যদের উপাসনায় লিপ্ত রয়েছে। তিনি বলছেন যে, সত্য ও সঠিক অভিভাবক এবং প্রকৃত কর্মসম্পাদনকারী তো আল্লাহ। মৃতকে জীবিত করা, এ বিশেষণ তো একমাত্র তাঁরই। প্রত্যেক জিনিসের উপর ক্ষমতাবান একমাত্র তিনিই। সর্বগুণের অধিকারী। হলেন তিনি, সুতরাং তিনি ছাড়া অন্য কেউ ইবাদতের যোগ্য কি করে হতে পারে?এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ তোমরা যে বিষয়েই মতভেদ কর না কেন, ওর মীমাংসা তো আল্লাহরই নিকট। অর্থাৎ দ্বীন ও দুনিয়ার সমুদয় মতভেদের ফায়সালার জিনিস তো হলো আল্লাহর কিতাব এবং রাসূল (সঃ)-এর সুন্নাত। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমরা কোন বিষয়ে মতবিরোধ করলে তা তোমরা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সঃ)-এর দিকে ফিরিয়ে দাও।”(৪:৫৯)মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ হে নবী (সঃ)! তুমি বলে দাও- ইনিই আল্লাহ, আমার প্রতিপালক, আমি নির্ভর করি তাঁরই উপর এবং আমি তাঁরই অভিমুখী। সব সময় আমি তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করি। আসমান, যমীন এবং এতোদুভয়ের মধ্যস্থিত সমস্ত সৃষ্টির সৃষ্টিকর্তা তিনি।মহান আল্লাহ বলেনঃ তোমরা আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহের প্রতি লক্ষ্য কর যে, তিনি তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং আনআমের (গরু, ছাগল, ভেড়া, উট ইত্যাদির) মধ্য হতে সৃষ্টি করেছেন আনআমের জোড়া এবং এগুলো আটটি। এই ভাবে তিনি বংশ বিস্তার করেন। যুগ ও শতাব্দী অতীত হয়ে যাচ্ছে এবং মহান আল্লাহর সৃষ্টিকার্য এভাবেই চলতে আছে। এদিকে মানব সৃষ্টি এবং ওদিকে জীবজন্তু সৃষ্টি। বাগাভী (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হলোঃ তিনি গর্ভাশয়ে সৃষ্টি করেন, কেউ বলেন যে, পেটের মধ্যে সৃষ্টি করেন এবং কেউ বলেন যে, এই পন্থায় তিনি বংশ বিস্তার করেন। হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা বংশ বিস্তারই উদ্দেশ্য। কেউ কেউ বলেন যে, এখানে (আরবী) ব্যবহৃত হয়েছে (আরবী)-এর অর্থে। অর্থাৎ পুরুষ ও নারীর জোড়ার মাধ্যমে তিনি মানব বংশ। বিস্তার করছেন এবং সৃষ্টি করতে রয়েছেন। সত্য কথা এই যে, তাঁর মত সৃষ্টিকর্তা আর কেউ নেই। তিনি এক। তিনি বেপরোয়া, অভাবমুক্ত এবং অতুলনীয়। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। আকাশ ও পৃথিবীর চাবি তাঁরই নিকট। সূরায়ে যুমারে এর তাফসীর গত হয়েছে। উদ্দেশ্য এই যে, সারা জগতের ব্যবস্থাপক, অধিকর্তা এবং হুকুমদাতা তিনিই। তিনি এক ও অংশীবিহীন। তিনি যার প্রতি ইচ্ছা তার রিযক বর্ধিত করেন অথবা সংকুচিত করেন। তাঁর কোন কাজ হিকমত শূন্য নয়। কোন অবস্থাতেই তিনি কারো উপর যুলুমকারী নন। তার প্রশস্ত জ্ঞান সমস্ত সৃষ্টজীবকে পরিবেষ্টন করে রয়েছে।

۞ شَرَعَ لَكُمْ مِنَ الدِّينِ مَا وَصَّىٰ بِهِ نُوحًا وَالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَىٰ وَعِيسَىٰ ۖ أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ ۚ كَبُرَ عَلَى الْمُشْرِكِينَ مَا تَدْعُوهُمْ إِلَيْهِ ۚ اللَّهُ يَجْتَبِي إِلَيْهِ مَنْ يَشَاءُ وَيَهْدِي إِلَيْهِ مَنْ يُنِيبُ

📘 Please check ayah 42:14 for complete tafsir.

وَمَا تَفَرَّقُوا إِلَّا مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْعِلْمُ بَغْيًا بَيْنَهُمْ ۚ وَلَوْلَا كَلِمَةٌ سَبَقَتْ مِنْ رَبِّكَ إِلَىٰ أَجَلٍ مُسَمًّى لَقُضِيَ بَيْنَهُمْ ۚ وَإِنَّ الَّذِينَ أُورِثُوا الْكِتَابَ مِنْ بَعْدِهِمْ لَفِي شَكٍّ مِنْهُ مُرِيبٍ

📘 ১৩-১৪ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা এই উম্মতের উপর যে নিয়ামত দান করেছেন, এখানে মহান আল্লাহ তারই বর্ণনা দিচ্ছেন। মহান আল্লাহ বলেনঃ আল্লাহ তোমাদের জন্যে যে দ্বীন ও শরীয়ত নির্ধারণ করেছেন তা ওটাই যা হযরত আদম (আঃ)-এর পরে দুনিয়ার সর্বপ্রথম রাসূল হযরত নূহ (আঃ) এবং সর্বশেষ রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-এর মধ্যবর্তী স্থির প্রতিজ্ঞ নবীদের (আঃ) ছিল। এখানে যে পাঁচজন নবী (আঃ)-এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাঁদেরই নাম উল্লেখ করা হয়েছে সূরায়ে আহযাবেও। সেখানে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “স্মরণ কর, যখন আমি নবীদের নিকট হতে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম এবং তোমার নিকট হতেও এবং নূহ (আঃ), ইবরাহীম (আঃ), মূসা (আঃ) মরিয়ম তনয় ঈসা (আঃ)-এর নিকট হতে, তাদের নিকট হতে গ্রহণ করেছিলাম দৃঢ় অঙ্গীকার।”(৩৩:৭) ঐ দ্বীন, যা সমস্ত নবীর মধ্যে মিলিতভাবে ছিল তা হলো এক আল্লাহর ইবাদত। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমার পূর্বে আমি যতজন রাসূল পাঠিয়েছিলাম তাদের সবারই কাছে এই অহী করেছিলামঃ আমি ছাড়া কোন মা'বুদ নেই, সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদত কর।"(২১:২৫) হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমরা নবীরা পরস্পর বৈমাত্রেয় ভাই-এর মত। আমাদের সবারই একই দ্বীন।” যেমন বৈমাত্রেয় ভাইদের পিতা একজনই। মোটকথা, শরীয়তের আহকামে যদিও আংশিক পার্থক্য রয়েছে, কিন্তু মৌলিক নীতি হিসেবে দ্বীন একই। আর তা হলো মহামহিমান্বিত আল্লাহর একত্ববাদ। মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমাদের প্রত্যেকের জন্যে আমি শরীয়ত ও পথ করে দিয়েছি।”(৫:৪৮)।এখানে এই অহীর ব্যাখ্যা এভাবে দেয়া হয়েছেঃ “তোমরা দ্বীনকে কায়েম রেখো, দলবদ্ধ হয়ে একত্রিতভাবে বাস কর এবং মতানৈক্য সৃষ্টি করে পৃথক পৃথক হয়ে যেয়ো না। তাওহীদের এই ডাক মুশরিকদের নিকট অপছন্দনীয়। সত্য কথা এই যে, হিদায়াত আল্লাহর হাতে। যে হিদায়াত লাভের যোগ্য হয় সে তার প্রতিপালকের দিকে ফিরে যায় এবং মহান আল্লাহ তার হাত ধরে তাকে হিদায়াতের পথে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়ে দেন। পক্ষান্তরে যে নিজেই মন্দ পথ অবলম্বন করে এবং সঠিক ও সরল পথকে ছেড়ে দেয়, আল্লাহও তখন তার মাথায় পথভ্রষ্টতা লিখে দেন। যখন তার কাছে সত্য এসে যায়, হুজ্জত কায়েম হয়ে যায়, তখন পারস্পরিক হঠকারিতার ভিত্তিতে পরস্পরের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হয়।মহান আল্লাহ বলেনঃ হে নবী (সঃ)! যদি এক নির্ধারিত কাল পর্যন্ত অবকাশ সম্পর্কে তোমার প্রতিপালকের পূর্ব সিদ্ধান্ত না থাকতো তবে তাদের বিষয়ে এখনই ফায়সালা হয়ে যেতো এবং তাদের উপর এই দুনিয়াতেই শাস্তি আপতিত হতো।এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ তাদের পর যারা কিতাবের উত্তরাধিকারী। হয়েছে তারা কুরআন সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর সন্দেহে রয়েছে। তারা তাদের পূর্ববর্তীদের অন্ধ অনুসারী। দলীল প্রমাণাদির ভিত্তিতে তাদের ঈমান নেই। বরং তারা অন্ধভাবে তাদের পূর্ববর্তীদের অনুসরণ করছে যারা সত্যের প্রতি অবিশ্বাসী ছিল।

فَلِذَٰلِكَ فَادْعُ ۖ وَاسْتَقِمْ كَمَا أُمِرْتَ ۖ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ ۖ وَقُلْ آمَنْتُ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ مِنْ كِتَابٍ ۖ وَأُمِرْتُ لِأَعْدِلَ بَيْنَكُمُ ۖ اللَّهُ رَبُّنَا وَرَبُّكُمْ ۖ لَنَا أَعْمَالُنَا وَلَكُمْ أَعْمَالُكُمْ ۖ لَا حُجَّةَ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ ۖ اللَّهُ يَجْمَعُ بَيْنَنَا ۖ وَإِلَيْهِ الْمَصِيرُ

📘 কুরআন কারীমের এই আয়াতের মধ্যে দশটি স্বতন্ত্র কালেমা রয়েছে যেগুলোর প্রত্যেকটির হুকুম পৃথক পৃথক। আয়াতুল কুরসী ছাড়া এ ধরনের আয়াত কুরআন কারীমের মধ্যে আর পাওয়া যায় না। প্রথম হুকুম তো এই হচ্ছেঃ হে নবী (সঃ)! তোমার উপর অহী অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং অনুরূপ অহী তোমার পূর্ববর্তী নবীদের (আঃ) উপরও হতো। তোমার জন্যে যে শরীয়ত নির্ধারণ করা হয়েছে, তুমি সমস্ত মানুষকে ওরই দাওয়াত দাও। প্রত্যেককে ওরই দিকে আহ্বান কর এবং ওকে মানাবার এবং ছাড়াবার চেষ্টায় লেগে থাকো। দ্বিতীয় হুকুমঃ আল্লাহ তা'আলার ইবাদত ও একত্ববাদের উপর তুমি নিজে প্রতিষ্ঠিত থাকো এবং তোমার অনুসারীদেরকে ওর উপর প্রতিষ্ঠিত রাখো। তৃতীয় হুকুমঃ মুশরিকরা যে মতভেদ সৃষ্টি করে রেখেছে, মিথ্যারোপ ও অবিশ্বাস করা যে তাদের অভ্যাস, গায়রুল্লাহর ইবাদত করাই যে তাদের নীতি, সাবধান! কখনো তোমরা তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না এবং তাদের একটা কথাও স্বীকার করো না। চতুর্থ হুকুমঃ প্রকাশ্যভাবে তোমার এই আকীদার কথা প্রচার করতে থাকো, তা এই যে, তুমি বলে দাও- আল্লাহ যেসব কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, সবগুলোর উপরই আমি ঈমান রাখি। আমার এই কাজ নয় যে, কোনটি মানবো এবং কোনটি মানবো না, একটিকে গ্রহণ করবো ও অপরটিকে ছেড়ে দিবো। পঞ্চম হুকুমঃ তুমি বলে দাও আমি আদিষ্ট হয়েছি। তোমাদের মধ্যে ন্যায় বিচার করতে। ষষ্ঠ হুকুমঃ তুমি বল, সত্য মা'বুদ একমাত্র আল্লাহ। তিনি আমাদেরও প্রতিপালক এবং তোমাদেরও প্রতিপালক। তিনি সবারই পালনকর্তা ও আহারদাতা। খুশী মনে কেউ কেউ তার দিকে ঝুঁকে না পড়লেও প্রকৃতপক্ষে সবকিছুই তার সামনে ঝুঁকে রয়েছে এবং সিজদায় পড়ে আছে। সপ্তম হুকুমঃ তুমি বলে দাও আমাদের আমল আমাদের সাথে এবং তোমাদের আমল তোমাদের সাথে। আমাদের ও তোমাদের মধ্যে কোনই সম্পর্ক নেই। যেমন অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে নবী (সঃ)! যদি তারা তোমাকে অবিশ্বাস করে তবে তুমি তাদেরকে বলে দাও আমার জন্যে আমার কর্ম এবং তোমাদের জন্যে তোমাদের কর্ম। আমি যে কর্ম করি তা হতে তোমরা দায়িত্বমুক্ত এবং তোমরা যে কর্ম কর তা হতে আমিও দায়িত্বমুক্ত।”(১০:৪১) অষ্টম হুকুমঃ তুমি বলে দাওআমাদের ও তোমাদের মধ্যে কোন ঝগড়া-বিবাদ নেই, নেই কোন তর্ক-বিতর্কের প্রয়োজন। হযরত সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, এ হুকুম মক্কায় ছিল। মদীনায় আগমনের পর জিহাদের হুকুম নাযিল হয়। খুব সম্ভব এটাই ঠিক। কেননা এটা মক্কী আয়াত: আর জিহাদের আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয় মদীনায় হিজরতের পর। নবম হুকুমঃ বলে দাও- কিয়ামতের দিন আল্লাহ সকলকেই একত্রিত করবেন। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “তুমি বলে দাও আমাদের প্রতিপালক আমাদেরকে একত্রিত করবেন, অতঃপর সত্যের সাথে আমাদের মধ্যে ফায়সালা করবেন, তিনিই ফায়সালাকারী এবং সর্বজ্ঞ।”(৩৪:২৬) দশম হুকুমঃ বল- প্রত্যাবর্তন তারই নিকট।

وَالَّذِينَ يُحَاجُّونَ فِي اللَّهِ مِنْ بَعْدِ مَا اسْتُجِيبَ لَهُ حُجَّتُهُمْ دَاحِضَةٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَعَلَيْهِمْ غَضَبٌ وَلَهُمْ عَذَابٌ شَدِيدٌ

📘 Please check ayah 42:18 for complete tafsir.

اللَّهُ الَّذِي أَنْزَلَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ وَالْمِيزَانَ ۗ وَمَا يُدْرِيكَ لَعَلَّ السَّاعَةَ قَرِيبٌ

📘 Please check ayah 42:18 for complete tafsir.

يَسْتَعْجِلُ بِهَا الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِهَا ۖ وَالَّذِينَ آمَنُوا مُشْفِقُونَ مِنْهَا وَيَعْلَمُونَ أَنَّهَا الْحَقُّ ۗ أَلَا إِنَّ الَّذِينَ يُمَارُونَ فِي السَّاعَةِ لَفِي ضَلَالٍ بَعِيدٍ

📘 ১৬-১৮ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তাআলা ঐ লোকদেরকে ভয় প্রদর্শন করছেন যারা মুমিনদের সাথে বাজে যুক্তি-তর্কে লিপ্ত হয় এবং তাদেরকে হিদায়াত হতে বিভ্রান্ত করার ইচ্ছা করে এবং আল্লাহর দ্বীনে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে। তাদের যুক্তি-তর্ক মিথ্যা ও অসার। তারা আল্লাহ তা'আলার ক্রোধের পাত্র। কিয়ামতের দিন তাদের জন্যে রয়েছে কঠিন শাস্তি। তাদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হওয়া অসম্ভব। তা এই যে, মুসলমানরা পুনরায় অজ্ঞতার দিকে ফিরে যাবে। অনুরূপভাবে ইয়াহুদী ও খৃষ্টানরাও বাজে তর্ক করতো এবং মুসলমানদেরকে বলতোঃ “আমাদের দ্বীন তোমাদের দ্বীন অপেক্ষা উত্তম, আমাদের নবী তোমাদের নবীর পূর্বে এসেছিলেন, আমরা তোমাদের চেয়ে উত্তম এবং আমরা আল্লাহ তাআলার নিকট তোমাদের চেয়ে প্রিয়। তারা এগুলো মিথ্যা বলেছিল। মহান আল্লাহ বলেনঃ আল্লাহই অবতীর্ণ করেছেন সত্যসহ কিতাব। অর্থাৎ তার নিকট হতে তাঁর নবীদের উপর অবতারিত কিতাবসমূহ। আর তিনি অবতীর্ণ করেছেন তুলাদণ্ড। তাহলে আদল ও ইনসাফ। আল্লাহ তাআলার এই উক্তিটি তাঁর নিম্নের উক্তির মতঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি আমার রাসূলদেরকে প্রকাশ্য দলীল প্রমাণাদিসহ প্রেরণ করেছি এবং তাদের সাথে অবতীর্ণ করেছি কিতাব ও তুলাদণ্ড, যাতে মানুষ ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে।”(৫৭:২৫) আর এক জায়গায় আছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “তিনি আকাশকে করেছেন সমুন্নত এবং স্থাপন করেছেন মানদণ্ড, যাতে তোমরা ভারসাম্য লংঘন না কর। ওজনের ন্যায্য মান প্রতিষ্ঠিত কর এবং ওজনে কম দিয়ো না।”(৫৫:৭-৯)এরপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ তুমি কি জান যে, কিয়ামত খুবই আসন্ন?’ এতে ভয় ও লোভ উভয়ই রয়েছে। আর এর দ্বারা দুনিয়ার প্রতি অনাসক্ত করাও উদ্দেশ্য। অতঃপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ যারা এটাকে (কিয়ামতকে) বিশ্বাস করে না তারাই এটা ত্বরান্বিত করতে চায় এবং বলে যে, কিয়ামত কেন আসে না? তারা আরো বলেঃ “যদি সত্যবাদী হও তবে কিয়ামত সংঘটিত কর।” কেননা, তাদের মতে কিয়ামত সংঘটিত হওয়া অসম্ভব। অপরপক্ষে মুমিনরা এর কথা শুনে কেঁপে ওঠে। কেননা, তাদের দৃঢ় বিশ্বাস আছে যে, বিচার দিবসের আগমন সুনিশ্চিত। তারা এই কিয়ামতকে ভয় করে এমন কর্ম করতে থাকে যা তাদের ঐদিনে কাজে লাগবে। মুতাওয়াতিরের পর্যায়ে পড়ে এরূপ একটি বিশুদ্ধ হাদীসে আছে যে, একটি লোক রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে উচ্চস্বরে ডাক দিয়ে বলেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! কিয়ামত কখন হবে?” এটা সফরের ঘটনা। লোকটি রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে কিছু দূরে ছিল। তিনি উত্তরে বলেনঃ “হ্যা, হঁ্যা, কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে, তুমি এর জন্যে কি প্রস্তুতি গ্রহণ করেছো তাই বল?” সে জবাব দিলোঃ “আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সঃ)-এর মহব্বত।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “তুমি তাদের সঙ্গেই থাকবে যাদেরকে তুমি মহব্বত কর।” আর একটি হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “প্রত্যেক ব্যক্তি তার সঙ্গেই থাকবে যাকে সে মহব্বত করে।" এ হাদীসটি অবশ্যই মুতাওয়াতির। মোটকথা, রাসূলুল্লাহ (সঃ) ঐ লোকটির প্রশ্নের জবাবে কিয়ামতের সময় নির্দিষ্ট করে বলেননি, বরং তাকে কিয়ামতের জন্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে বলেন। সুতরাং কিয়ামতের সময়ের জ্ঞান আল্লাহ ছাড়া আর কারো নেই।এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ কিয়ামত সম্পর্কে যারা বাক-বিতণ্ডা করে তারা ঘোর বিভ্রান্তিতে রয়েছে। অর্থাৎ কিয়ামতের ব্যাপারে যে ব্যক্তি তর্ক-বিতর্ক করে, ওকে অস্বীকার করে এবং ওটা সংঘটিত হওয়াকে অসম্ভব বলে বিশ্বাস রাখে সে নিরেট মূর্খ। তার সঠিক বোধশক্তি মোটেই নেই। সরল-সোজা পথ হতে সে বহু দূরে সরে পড়েছে। এটা বড়ই বিস্ময়কর ব্যাপার যে, তারা যমীন ও আসমানের প্রথম সৃষ্টিকর্তাকে স্বীকার করছে, অথচ মানুষের মৃত্যুর পর তাদেরকে পুনরায় যে তিনি জীবন দান করতে সক্ষম এটা স্বীকার করছে না। যিনি একবার বিনা নমুনায় সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি দ্বিতীয়বার কি সৃষ্টি করতে সক্ষম হবেন না? অথচ তখন তো পূর্বের কিছু কিছু অংশ কোন না কোন আকারে অবশ্যই থাকবে! এটাকে কেন্দ্র করে পুনরায় সৃষ্টি করা কি তাঁর পক্ষে কঠিন? স্থির জ্ঞানও এটা মেনে নেয় যে, তখন সৃষ্টি করা তো আরো সহজ।

اللَّهُ لَطِيفٌ بِعِبَادِهِ يَرْزُقُ مَنْ يَشَاءُ ۖ وَهُوَ الْقَوِيُّ الْعَزِيزُ

📘 Please check ayah 42:22 for complete tafsir.

عسق

📘 Please check ayah 42:6 for complete tafsir.

مَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الْآخِرَةِ نَزِدْ لَهُ فِي حَرْثِهِ ۖ وَمَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الدُّنْيَا نُؤْتِهِ مِنْهَا وَمَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ نَصِيبٍ

📘 Please check ayah 42:22 for complete tafsir.

أَمْ لَهُمْ شُرَكَاءُ شَرَعُوا لَهُمْ مِنَ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَنْ بِهِ اللَّهُ ۚ وَلَوْلَا كَلِمَةُ الْفَصْلِ لَقُضِيَ بَيْنَهُمْ ۗ وَإِنَّ الظَّالِمِينَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ

📘 Please check ayah 42:22 for complete tafsir.

تَرَى الظَّالِمِينَ مُشْفِقِينَ مِمَّا كَسَبُوا وَهُوَ وَاقِعٌ بِهِمْ ۗ وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فِي رَوْضَاتِ الْجَنَّاتِ ۖ لَهُمْ مَا يَشَاءُونَ عِنْدَ رَبِّهِمْ ۚ ذَٰلِكَ هُوَ الْفَضْلُ الْكَبِيرُ

📘 ১৯-২২ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তাআলা বলছেন যে, তিনি স্বীয় বান্দাদের প্রতি বড়ই দয়ালু। তিনি একজনকে অপরজনের মাধ্যমে রিযক পৌঁছিয়ে থাকেন। একজনও এমন নেই যাকে তিনি ভুলে যান। সৎ ও অসৎ সবাই তাঁর নিকট হতে আহার্য পেয়ে থাকে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণকারী সকলের জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহরই; তিনি তাদের স্থায়ী ও অস্থায়ী অবস্থিতি সম্পর্কে অবহিত; সুস্পষ্ট কিতাবে সব কিছুই আছে।”(১১:৬)তিনি যার জন্যে ইচ্ছা করেন প্রশস্ত ও অপরিমিত জীবিকা নির্ধারণ করে থাকেন। তিনি প্রবল পরাক্রমশালী। কেউই তাঁর উপর বিজয়ী হতে পারে না। এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ যে কেউ আখিরাতের আমলের প্রতি মনোযোগী হয়, আমি স্বয়ং তাকে সাহায্য করি এবং তাকে শক্তি সামর্থ্য দান করি। তার পুণ্য আমি বৃদ্ধি করতে থাকি। কারো পুণ্য দশগুণ, কারো সাতশ’ গুণ এবং কারো আরো বেশী বৃদ্ধি করে দিই। মোটকথা, আখিরাতের চাহিদা যার অন্তরে থাকে, আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে তাকে ভাল কাজ করার তাওফীক দান করা হয়। পক্ষান্তরে, যার সমুদয় চেষ্টা দুনিয়া লাভের জন্যে হয় এবং আখিরাতের প্রতি যে মোটেই মনোযোগ দেয় না, সে উভয় জগতেই ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। খুব সম্ভব যে, শত চেষ্টা সত্ত্বেও সে দুনিয়া লাভে বঞ্চিত হবে। মন্দ নিয়তের কারণে পরকাল তো পূর্বেই নষ্ট হয়ে গেছে, এখন দুনিয়াও সে লাভ করতে পারলো না। সুতরাং উভয় জগতকেই সে নষ্ট করে দিলো। আর যদি দুনিয়ার সুখ কিছু ভোগও করে তাতেই বা কি হলো? অন্য জায়গায় যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “কেউ আশু সুখ-সম্ভোগ কামনা করলে আমি যাকে যা ইচ্ছা এখানেই সত্বর দিয়ে থাকি; পরে তার জন্যে জাহান্নাম নির্ধারিত করি যেখানে সে প্রবেশ করবে নিন্দিত ও অনুগ্রহ হতে দূরীকৃত অবস্থায়। যারা মুমিন হয়ে পরলোক কামনা করে এবং ওর জন্যে যথাযথ চেষ্টা করে তাদেরই চেষ্টা স্বীকৃত হয়ে থাকে। তোমার প্রতিপালক তাঁর দান দ্বারা এদেরকে আর ওদেরকে সাহায্য করেন এবং তোমার প্রতিপালকের দান অবারিত। লক্ষ্য কর, আমি কিভাবে তাদের একদলকে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলাম, আখিরাত তো নিশ্চয়ই মর্যাদায় মহত্তর ও গুণে শ্রেষ্ঠতর।”(১৭:১৮-২১)।হযরত উবাই ইবনে কাব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “এই উম্মতকে শ্রেষ্ঠত্ব, উচ্চতা, সাহায্য এবং রাজত্বের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি পরকালের কাজ করবে দুনিয়া (লাভের) জন্য, পরকালে সে কিছুই লাভ করবে না।” (এ হাদীসটি হ্যরত সাওরী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ এই মুশরিকরা তো আল্লাহর দ্বীনের অনুসরণ করে না, বরং তারা জ্বিন, শয়তান ও মানবদেরকে নিজেদের পূজনীয় হিসেবে মেনে নিয়েছে। ওরা যে আহকাম এদেরকে বাতলিয়ে দেয় এগুলোর সমষ্টিকেই এরা দ্বীন মনে করে। ওরা যেগুলোকে হারাম বা হালাল বলে, এরা সেগুলোকেই হারাম বা হালাল মনে করে থাকে। তাদের ইবাদতের পন্থা এদেরই আবিষ্কৃত। মোটকথা, এই জ্বিন ও মানুষ যেটাকে শরীয়ত বলেছে সেটাকেই এই মুশরিকরা শরীয়ত বলে মেনে নিয়েছে। যেমন অজ্ঞতার যুগে তারা কতকগুলো জন্তুকে নিজেরাই হারাম করে নিয়েছিল। যেমন কোন কোন জন্তুর কান কেটে নিয়ে তারা ওটাকে তাদের বাতিল দেবতাদের নামে ছেড়ে দিতো। দাগ দিয়ে তারা ষাঁড় ছেড়ে দিতো এবং মাদীর বাচ্চাকে গর্ভাবস্থাতেই ঐ দেবতাদের নামে রেখে দিতো। যে উষ্ট্রীর তারা দশটি বাচ্চা লাভ করতো ওটাকেও তাদের নামে ছেড়ে দিতো। অতঃপর ওগুলোকে সম্মানিত মনে করে নিজেদের উপর হারাম করে নিতো। আর কতকগুলো জিনিসকে নিজেরাই হালাল করে নিতো। যেমন মৃত, রক্ত, জুয়া ইত্যাদি। সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি আমর ইবনে লুহাই ইবনে কামআহকে দেখি যে, সে নিজের নাড়িভূড়ি জাহান্নামের মধ্যে টানতে রয়েছে।” সে ঐ ব্যক্তি যে সর্বপ্রথম গায়রুল্লাহর নামে জন্তু ছেড়ে দেয়ার প্রথা চালু করেছিল। সে ছিল খুযাআ’র বাদশাহদের একজন। সেই সর্বপ্রথম এসব কাজের সূচনা করেছিল। সেই কুরায়েশদেরকে প্রতিমা পূজায় উদ্বুদ্ধ করেছিল। আল্লাহ তা'আলা তার প্রতি অভিসম্পাত নাযিল করুন! প্রবল প্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ ফায়সালার ঘোষণা না থাকলে এদের বিষয়ে তো সিদ্ধান্ত হয়েই যেতো। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা যদি এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করে থাকতেন যে, তিনি পাপীদেরকে কিয়ামত পর্যন্ত অবকাশ দিবেন, তবে তৎক্ষণাৎ তাদের প্রতি তার শাস্তি আপতিত হতো। নিশ্চয়ই এই যালিমদেরকে কিয়ামতের দিন কঠিন বেদনাদায়ক শাস্তি ভোগ করতে হবে।প্রবল পরাক্রান্ত আল্লাহ বলেনঃ তুমি এই যালিমদেরকে তাদের কৃতকর্মের জন্যে ভীত-সন্ত্রস্ত দেখবে। আর এটাই তাদের উপর আপতিত হবে। সেদিন এমন কেউ থাকবে না যে তাদেরকে এই শাস্তি হতে রক্ষা করতে পারে। সেদিন তারা তাদের কৃতকর্মের শাস্তি আস্বাদন করবেই। পক্ষান্তরে, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তারা থাকবে জান্নাতের মনোরম স্থানে। তারা সেথায় চরম সুখে অবস্থান করবে। সেখানে তাদের মোটেই কোন দুঃখ কষ্ট হবে না। তারা যা কিছু চাইবে তাই তাদের প্রতিপালকের নিকট পাবে। তারা এমন সুখ ভোগ করবে যা কল্পনাও করা যায় না।হযরত আবু তায়বাহ (রঃ) বলেন যে, জান্নাতীদের মাথার উপর মেঘমালা আনয়ন করা হবে এবং তাদেরকে বলা হবেঃ “তোমরা এই মেঘমালা হতে কি বর্ষণ কামনা কর?” তারা তখন যে জিনিসের বর্ষণ কামনা করবে তা-ই তাদের উপর বর্ষিত হবে। এমনকি তারা বলবেঃ “আমাদের উপর সমবয়স্কা উদভিন্ন যৌবনা তরুণী বর্ষিত হোক।” তখন তাদের উপর তা-ই বর্ষিত হবে। এজন্যেই মহান আল্লাহ বলেনঃ এটাই তো মহা অনুগ্রহ। পূর্ণ সফলতা এটাই।

ذَٰلِكَ الَّذِي يُبَشِّرُ اللَّهُ عِبَادَهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ ۗ قُلْ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَىٰ ۗ وَمَنْ يَقْتَرِفْ حَسَنَةً نَزِدْ لَهُ فِيهَا حُسْنًا ۚ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ شَكُورٌ

📘 Please check ayah 42:24 for complete tafsir.

أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ كَذِبًا ۖ فَإِنْ يَشَإِ اللَّهُ يَخْتِمْ عَلَىٰ قَلْبِكَ ۗ وَيَمْحُ اللَّهُ الْبَاطِلَ وَيُحِقُّ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ ۚ إِنَّهُ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ

📘 ২৩-২৪ নং আয়াতের তাফসীর: উপরের আয়াতগুলোতে মহান আল্লাহ জান্নাতের নিয়ামতরাশির বর্ণনা দেয়ার পর এখানে বলেনঃ আল্লাহ এই সু-সংবাদ তাঁর ঐ বান্দাদেরকে দেন যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে। অতঃপর তিনি স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলেনঃ এই কুরায়েশ মুশরিকদেরকে বলে দাও আমি এই তাবলীগের কাজে এবং তোমাদের মঙ্গল কামনার বিনিময়ে তোমাদের কাছে তো কিছুই চাচ্ছি না। আমি তোমাদের কাছে। শুধু এটুকুই চাই যে, আত্মীয়তার সম্পর্কের প্রতি লক্ষ্য রেখে আমাকে আমার প্রতিপালকের বাণী জনগণের নিকট পৌছাতে দাও এবং আমাকে কষ্ট দেয়া হতে বিরত থাকো। এটুকু করলেই আমি খুশী হবো। সহীহ বুখারীতে রয়েছে যে, হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে এ আয়াতের তাফসীর জিজ্ঞেস করা হলে হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর (রঃ) বলেনঃ “এর দ্বারা আলে মুহাম্মাদ (সঃ)-এর আত্মীয়তা বুঝানো হয়েছে।” তখন হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) তাকে বলেন, তুমি খুব তাড়াতাড়ি করেছে। জেনে রেখো যে, কুরায়েশের যতগুলো গোত্র ছিল সবারই সাথে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। তাহলে ভাবার্থ হবেঃ “তোমরা ঐ আত্মীয়তার সম্পর্কের প্রতি লক্ষ্য রাখো যা আমার ও তোমাদের মধ্যে রয়েছে।” হযরত মুজাহিদ (রঃ), হযরত ইকরামা (রঃ), হযরত কাতাদা (রঃ), হযরত সুদ্দী (রঃ), হযরত আবূ মালিক (রঃ), হযরত আবদুর রহমান (রঃ) প্রমুখ গুরুজনও এই আয়াতের এই তাফসীরই করেছেন।হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) মুশরিক কুরায়েশদেরকে বলেনঃ “আমি তোমাদের কাছে কোন বিনিময় চাচ্ছি না, আমি তোমাদের কাছে শুধু এটুকু কামনা করি যে, তোমরা ঐ আত্মীয়তার প্রতি লক্ষ্য করবে যা আমার এবং তোমাদের মধ্যে রয়েছে। তোমাদের উপর আমার আত্মীয়তার যে অধিকার রয়েছে তা আদায় কর।” (এ হাদীসটি হাফিয আবুল কাসিম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আমি তোমাদের কাছে যে দলীল প্রমাণাদি পেশ করছি এবং তোমাদেরকে যে হিদায়াতের পথ প্রদর্শন করছি এর বিনিময়ে আমি তোমাদের কাছে কিছুই চাচ্ছি না, শুধু এটুকুই কামনা করি যে, তোমরা আল্লাহকে চাইতে থাকে এবং তার আনুগত্যের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভ কর।” (এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমাদ (রঃ))হযরত হাসান বসরী (রঃ) হতেও এই তাফসীরই বর্ণিত আছে। এটা হলো দ্বিতীয় উক্তি। রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর প্রথম উক্তি হলো কুরায়েশদেরকে নিজের আত্মীয়তার সম্পর্ক স্মরণ করিয়ে দেয়া। তৃতীয় উক্তি, যা হযরত সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রঃ)-এর রিওয়াইয়াতে রয়েছে তা হলোঃ “তোমরা আমার আত্মীয়তার প্রতি লক্ষ্য রেখে আমার সাথে সৎ ব্যবহার কর।”আবুদ দায়লাম (রঃ) বলেন যে, হযরত হুসাইন ইবনে আলী (রাঃ)-কে বন্দী করে এনে যখন দামেশকের প্রাসাদে রাখা হয় তখন একজন সিরিয়াবাসী তাকে বলেঃ “সমুদয় প্রশংসা আল্লাহর যে, তিনি আপনাকে হত্যা ও ধ্বংস সাধনের ব্যবস্থা করে ক্রমবর্ধমান হাঙ্গামার সমাপ্তি ঘটিয়েছেন। তখন তিনি বলেনঃ “তুমি কি কুরআন পড়েছো?” সে উত্তরে বলেঃ “কুরআন আবার পড়িনি?" তিনি আবার প্রশ্ন করেনঃ (আরবী) যুক্ত সূরাগুলো পড়নি কি? সে জবাব দেয়ঃ “গোটা কুরআন যখন পড়েছি তখন (আরবী) যুক্ত সূরাগুলো কেন পড়বো না?” তিনি বললেনঃ “তাহলে তুমি কি নিম্নের আয়াতটি পড়নি?” (আরবী) অর্থাৎ “আমি এর বিনিময়ে তোমাদের নিকট হতে আত্মীয়ের সৌহার্দ্য ব্যতীত অন্য কোন প্রতিদান চাই না।” সে তখন বললোঃ “তাহলে তারা কি তোমরাই?” তিনি জবাব দিলেনঃ “হ্যা।”হযরত আমর ইবনে শুআ'য়েব (রাঃ)-কে এ আয়াতের তাফসীর জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ “এর দ্বারা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর আত্মীয়তা বুঝানো হয়েছে।”হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, আনসারগণ বলেনঃ “আমরা (ইসলামের জন্যে) এই কাজ করেছি, ঐ কাজ করেছি। তারা যেন এটা গর্ব করে বলেন। তখন হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) অথবা হযরত আব (রাঃ) তাদেরকে বলেনঃ “আমরা তোমাদের চেয়ে উত্তম।” রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট এ সংবাদ পৌঁছলে তিনি আনসারদের মজলিসে এসে বলেনঃ “হে আনসারের দল! তোমরা লাঞ্ছিত অবস্থায় ছিলে না, অতঃপর আল্লাহ তা'আলা আমার কারণে তোমাদেরকে সম্মানিত করেন?" তারা উত্তরে বলেনঃ “নিশ্চয়ই আপনি সত্য কথা বলেছেন। তিনি আবার বলেনঃ “তোমরা কি পথভ্রষ্ট ছিলে না, অতঃপর আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদেরকে হিদায়াত দান করেন?” উত্তরে তাঁরা এবারও বলেনঃ “হ্যা, অবশ্যই আপনি সত্য বলছেন।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁদেরকে বললেনঃ “তোমরা কেন আমাকে আমার প্রতি তোমাদের অনুগ্রহের কথা বলছো না?” তারা জবাব দিলেনঃ “আমরা কি বলবো?” তিনি বললেন, তোমরা আমাকে বলঃ “আপনার কওম কি আপনাকে বের করে দেয়নি, অতঃপর আমরা আপনাকে আশ্রয় দিয়েছি? তারা কি আপনাকে অবিশ্বাস করেনি, অতঃপর আমরা আপনার সত্যতা স্বীকার করেছি? তারা কি আপনাকে নীচু করতে চায়নি, অতঃপর আমরা আপনাকে সাহায্য করেছি?” অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ (সঃ) আরো বহু কথা বললেন। শেষ পর্যন্ত আনসারগণ তাঁদের হাঁটুর উপর ঝুঁকে পড়েন এবং বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমাদের সন্তান-সন্ততি এবং যা কিছু আমাদের আছে সবই আল্লাহর এবং তাঁর রাসূল (সঃ)-এর। তখন ... (আরবী)-এ আয়াত অবতীর্ণ হয়।ইমাম ইবনে আবি হাতিমও (রঃ) এটা প্রায় অনুরূপভাবে দুর্বল সনদে বর্ণনা করেছেন। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমেও এ হাদীসটি রয়েছে। এতে আছে যে, এ ঘটনাটি হুনায়েনের যুদ্ধের যুদ্ধলব্ধ মাল বন্টনের সময় ঘটেছিল। ঐ সময় এ আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার কথা তাতে উল্লেখ করা হয়নি। এ আয়াতটি মদীনায় অবতীর্ণ হওয়ার ব্যাপারেও চিন্তা-ভাবনার অবকাশ রয়েছে। কেননা, এটা মক্কী সূরার আয়াত। আবার যে ঘটনাটি হাদীসে উল্লিখিত হয়েছে ঐ ঘটনা এবং এই আয়াতটির মধ্যে তেমন কোন সম্বন্ধ নেই।একটি রিওয়াইয়াতে রয়েছে যে, জনগণ জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! যাঁদের সঙ্গে মহব্বত রাখার নির্দেশ আমাদেরকে এ আয়াতে দেয়া হয়েছে। তাঁরা কারা?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “হযরত ফাতিমা (রাঃ) এবং তার সন্তান-সন্ততি।” কিন্তু এর সনদ দুর্বল। এর বর্ণনাকারী অস্পষ্ট এবং অপরিচিত। আবার তার উস্তাদ একজন শীআহ যার উপর মোটেই আস্থা রাখা যায় না। তার নাম হুসাইন ইবনে আশকার। এরূপ লোক হতে বর্ণিত এই ধরনের হাদীস কি করে মেনে নেয়া যেতে পারে? আবার এ আয়াতটি মদীনায় অবতীর্ণ হওয়া তো অবিশ্বাস্য কথা। এটা তো মক্কী আয়াত। আর মক্কা শরীফে হযরত ফাতিমা (রাঃ)-এর বিবাহই হয়নি। সুতরাং সন্তান হয় কি করে? হযরত আলী (রাঃ)-এর। সঙ্গে তার বিবাহ তো হয় বদর যুদ্ধের পর হিজরী ৪র্থ সনে। সুতরাং এর সঠিক তাফসীর ওটাই যেটা মুফাসসিরুল কুরআন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) তাফসীর করেছেন এবং যা ইমাম বুখারী (রঃ) উল্লেখ করেছেন। আমরা আহলে বায়েতের শুভাকাক্ষা অস্বীকার করি না। আমরা বিশ্বাস করি যে, তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করা এবং তাঁদের মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রাখা একান্ত কর্তব্য। সারা বিশ্বে তাঁদের অপেক্ষা বেশী পাক-সাফ পরিবার আর একটিও নেই। বংশ মর্যাদায় ও আত্মশুদ্ধিতে নিঃসন্দেহে তারা সবারই ঊর্ধ্বে রয়েছেন। বিশেষ করে যাঁরা সুন্নাতে রাসূল (সঃ)-এর অনুসারী। পূর্ব যুগীয় মনীষীদের রীতিনীতি এটাই ছিল। তাঁরা হলেন হযরত আব্বাস (রাঃ) এবং তাঁর বংশধর এবং হযরত আলী (রাঃ) ও তার বংশধর। আল্লাহ তা'আলা তাঁদের সবারই প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন!সহীহ হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় ভাষণে বলেছেনঃ “আমি তোমাদের মধ্যে দু'টি জিনিস ছেড়ে যাচ্ছি, তাহলো আল্লাহর কিতাব এবং আমার সন্তান-সন্ততি। এ দুটো পৃথক হবে না যে পর্যন্ত না হাউযের উপর আমার পার্শ্বে এসে পড়ে।”একদা হযরত আব্বাস ইবনে আবদিল মুত্তালিব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট অভিযোগ করে বলেনঃ “কুরায়েশরা যখন পরস্পর মিলিত হয় তখন হাসিমুখে মিলিত হয়, কিন্তু তারা আমাদের সাথে যখন মিলিত হয় তখন খুশী মনে মিলিত হয় না। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) খুবই দুঃখিত হন এবং বলেনঃ “যার অধিকারে আমার প্রাণ রয়েছে তার শপথ! কারো অন্তরে ঈমান প্রবেশ করতে পারে না যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাদের সাথে মহব্বত বা ভালবাসা রাখবে।অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, হযরত আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “কুরায়েশরা পরস্পর কথা বলতে বলতে আমাদেরকে দেখেই নীবর হয়ে যায়।” একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কপাল মুবারক ক্রোধে কুঞ্চিত হয়ে যায় এবং তিনি বলেনঃ “আল্লাহর কসম! কোন মুসলমানের অন্তরে ঈমান স্থান লাভ করতে পারে না যে পর্যন্ত না সে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এবং আমার আত্মীয়তার সম্পর্কের কারণে তোমাদের সাথে মহব্বত রাখবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)হযরত ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত আবূ বকর (রাঃ) বলেনঃ “মুহাম্মাদ (সঃ)-এর আহলে বায়েতের ব্যাপারে তোমরা তাঁর প্রতি লক্ষ্য রাখবে।” (এটা ইমাম বুখারী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)সহীহ হাদীসে এসেছে যে, হযরত আবু বকর (রাঃ) হযরত আলী (রাঃ)-কে বলেনঃ আল্লাহর কসম! আমার নিকট আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর আত্মীয়দের সাথে উত্তম ব্যবহার করা আমার নিজের আত্মীয়দের সাথে উত্তম ব্যবহার করা অপেক্ষা বেশী প্রিয়।”হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) হযরত আব্বাস (রাঃ)-কে বলেনঃ “আল্লাহর কসম! আপনার ইসলাম গ্রহণ আমার কাছে আমার পিতা খাত্তাবের ইসলাম গ্রহণের চেয়েও ভাল বোধ হয়েছে। কেননা, আপনার ইসলাম গ্রহণ আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর নিকট খাত্তাবের ইসলাম গ্রহণ অপেক্ষা বেশী প্রিয় ছিল।” নবী ও রাসূলদের (আঃ) পরে যে দু’জন মনীষী সমগ্র মানব জাতির মধ্যে সর্বাপেক্ষা অধিক শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী, তারা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর আত্মীয়দের ও আহলে বায়েতের সাথে যে উত্তম ব্যবহার করেছিলেন, সমস্ত মুসলমানের কর্তব্য হবে তাঁদের সাথে ঐ রূপ উত্তম ব্যবহার করা। আল্লাহ তা'আলা এ দু' খলীফা, আহলে বায়েত এবং সমস্ত সাহাবীর প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন এবং তাঁদের সকলকে সন্তুষ্ট রাখুন। আবু হাইয়ান তামীমী (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত ইয়াযীদ ইবনে হাইয়ান (রঃ), হযরত হুসাইন ইবনে মাইরা (রঃ) এবং হযরত উমার ইবনে মুসলিম (রঃ) হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রাঃ)-এর নিকট গমন করেন। তারা তাঁর নিকট বসে পড়েন। হযরত হুসাইন (রঃ) বলেনঃ “হে যায়েদ (রাঃ)! আপনি তো বড় বড় কল্যাণ ও বরকত লাভ করেছেন। আপনি আল্লাহর রাসূল (সঃ)-কে স্বচক্ষে দেখেছেন, তাঁর কথা নিজের কানে শুনেছেন, তাঁর সাথে থেকে জিহাদ করেছেন এবং তার পিছনে নামায পড়েছেন। সত্য কথা তো এই যে, আপনি বড় বড় ফযীলত লাভে সক্ষম হয়েছেন! মেহেরবানী করে আমাদেরকে কোন হাদীস শুনিয়ে দিন।” হযরত যায়েদ (রাঃ) তখন বলেনঃ “হে আমার ভ্রাতুস্পুত্র। আমার বয়স বেশী হয়ে গেছে। আল্লাহর রাসূল (সঃ) বহু পূর্বে বিদায়:গ্রহণ করেছেন। বহু কথা আমি বিস্মৃতও হয়ে গেছি। এখন একটি কথা এই যে, আমি যা বলছি তা শুনো এবং মেনে নাও। নাহলে আমাকে অযথা কষ্ট দিয়ে না।” অতঃপর তিনি বলতে শুরু করলেনঃ মক্কা ও মদীনার মাঝে ‘খুম' নামক একটি পানির জায়গায় দাড়িয়ে একদা আল্লাহর নবী (সঃ) আমাদের সামনে ভাষণ দেন। আল্লাহ তা'আলার হামদ ও সানার পর বলেনঃ “হে লোক সকল! আমি একজন মানুষ। এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই যে, এখনই হয়তো আমার কাছে আমার প্রতিপালকের দূত আসবেন এবং আমি তার কথা মেনে নিবো। জেনে রেখো যে, আমি তোমাদের কাছে দু'টি জিনিস ছেড়ে যাচ্ছি। একটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব, যাতে নূর ও হিদায়াত রয়েছে। তোমরা আল্লাহর কিতাবকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে থাকবে। এভাবে তিনি এর প্রতি খুবই উৎসাহ প্রদান করলেন এবং বহু কিছুর গুরুত্বারোপ করলেন। অতঃপর বললেনঃ “আমার আহলে বায়েত, আমার আহলে বায়েতের ব্যাপারে তোমাদেরকে আমি আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।” একথা শুনে হযরত হুসাইন (রঃ) হযরত যায়েদ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ “আহলে বায়েত কারী? তাঁর স্ত্রীগণও কি তাঁর আহলে বায়েতের অন্তর্ভুক্ত?” হযরত যায়েদ (রাঃ) উত্তরে বললেনঃ “তার স্ত্রীগণ তাঁর আহলে বায়েতের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু তাঁর (প্রকৃত) আহলে বায়েত হলেন তাঁরা যাদের উপর সাদকা হারাম।” হযরত হুসাইন (রঃ) পুনরায় জিজ্ঞেস করলেনঃ “তারা কারা? জবাবে হযরত যায়েদ (রাঃ) বললেনঃ “তারা হলেন হযরত আলী (রাঃ)-এর বংশধর, হযরত আকীল (রাঃ)-এর বংশধর, হযরত জাফর (রাঃ)-এর বংশধর এবং হযরত আব্বাস (রাঃ)-এর বংশধর।” হযরত হুসাইন (রঃ) আবার প্রশ্ন করলেনঃ “এঁদের সবারই উপর কি সাদকা হারাম?” তিনি জবাব দিলেনঃ হ্যাঁ।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম মুসলিম (রঃ) এবং ইমাম নাসাঈ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি তোমাদের নিকট এমন জিনিস ছেড়ে যাচ্ছি যে, যদি তোমরা তা দৃঢ়ভাবে ধারণ কর তবে তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। একটি অপরটি অপেক্ষা বেশী মর্যাদাসম্পন্ন। তা হলো আল্লাহর কিতাব, যা আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে একটি লটকানো রঞ্জু, যা আসমান হতে যমীন পর্যন্ত এসেছে। আর দ্বিতীয় জিনিস হলো আমার সন্তান-সন্ততি, আমার আহলে বায়েত। এ দুটি পৃথক হবে না যে পর্যন্ত না দু’টি হাউযে কাওসারের উপর আমার কাছে আসবে। দেখো, কিভাবে তোমরা আমার পরে তাদের মধ্যে আমার স্থলাভিষিক্ত কর।” (এ হাদীসটি ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন। তিনি এটাকে হাসান গারীব বলেছেন)হযরত জাবির ইবনে আবদিল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বিদায় হজ্বে আরাফার দিন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে তাঁর কাসওয়া নাম্নী উষ্ট্রীর উপর আরোহিত অবস্থায় ভাষণ দিতে শুনেছেনঃ “হে লোক সকল! আমি তোমাদের মধ্যে এমন জিনিস ছেড়ে যাচ্ছি যে, যদি তোমরা তা ধারণ করে থাকো তবে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। তা হলো আল্লাহর কিতাব এবং আমার সন্তান-সন্ততি, আমার আহলে বায়েত।” (এ হাদীসটিও ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন। এটাকেও তিনি হাসান গারীব বলেছেন)হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা'আলার নিয়ামতরাশিকে সামনে রেখে তোমরা তাঁর সাথে মহব্বত রাখো, আল্লাহর সাথে মহব্বতের কারণে আমার সাথে মহব্বত রাখো এবং আমার সাথে মহব্বতের কারণে আমার আহলে বায়েতের সাথে মহব্বত রাখো।” (এ হাদীসটিও ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং তিনি এটাকেও হাসান গারীব বলেছেন) এ বিষয়ের আরো হাদীস আমরা (আরবী) অর্থাৎ “হে নবী পরিবার! আল্লাহ তো শুধু চান তোমাদের হতে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।”(৩৩:৩৩) এই আয়াতের তাফসীরে আনয়ন করেছি। সুতরাং এখানে পুনরাবৃত্তি নিষ্প্রয়োজন। প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা আল্লাহ তা'আলারই প্রাপ্য।একদা হযরত আবু যার (রাঃ) বায়তুল্লাহ শরীফের দরযার শিকল ধরে থাকা অবস্থায় বলেনঃ “হে লোক সকল! যারা আমাকে চিনে তারা তো চিনেই, আর যারা আমাকে চিনে না তারা জেনে রাখুক যে, আমার নাম আবু যার (রাঃ)। তোমরা শুনে নাও যে, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ “তোমাদের মধ্যে আমার আহলে বায়েতের দৃষ্টান্ত হচ্ছে হযরত নূহ (আঃ)-এর নৌকার ন্যায়। যারা ঐ নৌকায় আরোহণ করেছিল তারা পরিত্রাণ পেয়েছিল, আর যারা ঐ নৌকায় আরোহণ করেনি তারা ডুবে গিয়ে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।” (এ হাদীসটি হাফিয আবু ইয়ালা (রঃ) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এ হাদীসটি দুর্বল)মহান আল্লাহ বলেনঃ যে উত্তম কাজ করে আমি তার জন্যে এতে কল্যাণ বর্ধিত করি অর্থাৎ প্রতিদান ও পুরস্কার বৃদ্ধি করি। যেমন মহান আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আল্লাহ অণু পরিমাণও যুলুম করেন না এবং অণু পরিমাণ পুণ্যকার্য হলেও আল্লাহ ওকে দ্বিগুণ করেন এবং আল্লাহ তাঁর নিকট হতে মহা পুরস্কার প্রদান করেন।”(৪:৪০)কোন কোন গুরুজন বলেন যে, পুণ্যের পুরস্কার হলো ওর পরে পুণ্যকর্ম এবং মন্দকার্যের বিনিময় হলো ওর পরে মন্দকার্য।মহান আল্লাহ বলেনঃ আল্লাহ ক্ষমাশীল, গুণগ্রাহী। তিনি পুণ্য কর্মের মর্যাদা দিয়ে থাকেন এবং ওটা বৃদ্ধি করে দেন।এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ তারা কি বলে যে, সে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা উদ্ভাবন করেছে? অর্থাৎ এই মূখ কাফিররা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলতো ? “তুমি এই কুরআন নিজেই রচনা করে আল্লাহর নামে চালিয়ে দিচ্ছ।" মহান আল্লাহ তাদের এ কথার উত্তরে স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলেনঃ “এটা কখনো নয়। যদি তাই হতো তবে আল্লাহ ইচ্ছা করলে তোমার হৃদয় মোহর করে দিতেন।” যেমন মহা প্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “সে যদি আমার নামে কিছু রচনা করে চালাতে চেষ্টা করতো, তবে অবশ্যই আমি তার দক্ষিণ হস্ত ধরে ফেলতাম এবং কেটে দিতাম তার জীবন ধমনী। অতঃপর তোমাদের মধ্যে এমন কেউই নেই, যে তাকে রক্ষা করতে পারে।”(৬৯:৪৪-৪৭) অর্থাৎ যদি হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) আল্লাহর কালামের মধ্যে কিছু বৃদ্ধি করতেন তবে আল্লাহ তাআলা তার প্রতিশোধ এমনভাবে গ্রহণ করতেন যে, কেউ তাকে রক্ষা করতে পারতো না। এর পরবর্তী বাক্য ... (আরবী) এটা (আরবী)-এর উপর (আরবী) বা সংযোগ হয়নি, বরং এটা (আরবী) এবং (আরবী) হওয়ার কারণেই (আরবী) হয়েছে, (আরবী)-এর উপর সংযোগ নয় যে, (আরবী) বা জযম বিশিষ্ট হবে। (আরবী) টির লিখায় না আসা, এটা শুধু ইমামের (আরবী)-এর আনুকূল্যের কারণে হয়েছে। (আরবী)-এর মধ্যে (আরবী) টি লিখাতে এসেছে এবং (আরবী)-এর মধ্যে (আরবী) টি লিখিত হয়েছে। হ্যা, তবে এর পরবর্তী বাক্য (আরবী)-এর সংযোগ (আরবী)-এর উপর হয়েছে। অর্থাৎ তিনি নিজ বাণী দ্বারা সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন। অর্থাৎ দলীল প্রমাণ বর্ণনা করে এবং যুক্তি তর্ক পেশ করে তিনি সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন। অন্তরে যা আছে সে বিষয়ে তিনি তো সবিশেষ অবহিত। অর্থাৎ অন্তরের গোপন কথা তার কাছে প্রকাশমান।

وَهُوَ الَّذِي يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهِ وَيَعْفُو عَنِ السَّيِّئَاتِ وَيَعْلَمُ مَا تَفْعَلُونَ

📘 Please check ayah 42:28 for complete tafsir.

وَيَسْتَجِيبُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَيَزِيدُهُمْ مِنْ فَضْلِهِ ۚ وَالْكَافِرُونَ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيدٌ

📘 Please check ayah 42:28 for complete tafsir.

۞ وَلَوْ بَسَطَ اللَّهُ الرِّزْقَ لِعِبَادِهِ لَبَغَوْا فِي الْأَرْضِ وَلَٰكِنْ يُنَزِّلُ بِقَدَرٍ مَا يَشَاءُ ۚ إِنَّهُ بِعِبَادِهِ خَبِيرٌ بَصِيرٌ

📘 Please check ayah 42:28 for complete tafsir.

وَهُوَ الَّذِي يُنَزِّلُ الْغَيْثَ مِنْ بَعْدِ مَا قَنَطُوا وَيَنْشُرُ رَحْمَتَهُ ۚ وَهُوَ الْوَلِيُّ الْحَمِيدُ

📘 ২৫-২৮ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা স্বীয় অনুগ্রহ এবং দয়ার বর্ণনা দিচ্ছেন যে, বান্দা যত বড়ই পাপী হোক না কেন, যখন সে তার অসৎ ও পাপ কার্য হতে বিরত থাকে এবং আন্তরিকতার সাথে তাঁর দিকে ঝুঁকে পড়ে ও বিশুদ্ধ অন্তরে তাওবা করে তখন তিনি স্বীয় দয়া ও করুণা দ্বারা তাকে ঢেকে নেন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন ও স্বীয় অনুগ্রহ তার অবস্থার অনুরূপ করে দেন। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “যে ব্যক্তি মন্দকর্ম করে অথবা নিজের উপর যুলুম করে, অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, দয়ালু পায়।”(৪:১১০)হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা'আলা স্বীয় বান্দার তাওবায় ঐ ব্যক্তির চেয়েও বেশী খুশী হন যার উষ্ট্ৰীটি মরু প্রান্তরে হারিয়ে গেছে, যার উপর তার পানাহারের জিনিসও রয়েছে। লোকটি উস্ত্রীর খোঁজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে একটি গাছের নীচে বসে পড়লো এবং নিজের জীবনের আশাও ত্যাগ করলো। উস্ত্রী হতে সে সম্পূর্ণ নিরাশ হয়ে পড়লো। এমতাবস্থায় হঠাৎ সে দেখে যে, উষ্ট্ৰীটি তার পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। সে তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়ালো এবং ওর লাগাম ধরে নিলো এবং সে এতো বেশী খুশী হলো যে, আত্মভোলা হয়ে বলে ফেললোঃ “হে আল্লাহ! আপনি আমার বান্দা এবং আমি আপনার প্রতিপালক। অত্যাধিক খুশীর কারণেই সে এরূপ ভুল করলো।” (এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “বান্দা তাওবা করলে আল্লাহ এতো বেশী খুশী হন যে, ঐ লোকটিও এরূপ খুশী হয় না যে এমন জায়গায় তার হারানো জন্তুটি পেয়েছে যেখানে পানির অভাবে) পিপাসায় তার জীবন ধ্বংস হয়ে যাবার সে আশংকা করছিল।” হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলোঃ “যদি কোন লোক কোন নারীর সাথে অবৈধ কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে তবে সে তাকে বিয়ে করতে পারে কি?উত্তরে তিনি বলেনঃ “এতে কোন দোষ নেই (অর্থাৎ সে তাকে বিয়ে করতে পারে)।” অতঃপর তিনি ... (আরবী)-এ আয়াতটি পাঠ করেন। (এটা ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) ও ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)মহান আল্লাহ বলেনঃ “তিনি পাপ মোচন করেন।” অর্থাৎ তিনি ভবিষ্যতের জন্য তাওবা কবুল করেন এবং অতীতের পাপরাশি ক্ষমা করে দেন।আল্লাহ তাআলার উক্তিঃ “তোমরা যা কর তা তিনি জানেন।' অর্থাৎ তিনি তোমাদের কথা ও কাজ সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিফহাল। তথাপি যে তার দিকে ঝুঁকে পড়ে তার তাওবা তিনি কবুল করে থাকেন। আল্লাহ পাক বলেনঃ “তিনি মুমিন ও সৎকর্মশীলদের আহ্বানে সাড়া দেন। অর্থাৎ তারা নিজেদের জন্যে আহ্বান করুক অথবা অন্যদের জন্যে প্রার্থনা করুক, তিনি তাদের প্রার্থনা কবুল করে থাকেন।বর্ণিত আছে যে, হযরত মুআয (রাঃ) সিরিয়ায় অবস্থানরত তার মুজাহিদ সঙ্গীদের মধ্যে ভাষণ দেনঃ “তোমরা ঈমানদার, সুতরাং তোমরা জান্নাতী। তোমরা যে এই রোমক ও পারসিকদেরকে বন্দী করে রেখেছো, এরাও যে জান্নাতে চলে যেতে পারে এতেও বিস্ময়ের কিছুই নেই। কেননা, যখন তাদের মধ্যে কেউ তোমাদের কোন কাজ করে দেয় তখন তোমরা বলে থাকোঃ “আল্লাহ তোমার প্রতি দয়া করুন! তুমি খুব ভাল কাজ করেছে। আল্লাহ তোমাকে বরকত দান করুন, সত্যি তুমি খুব কল্যাণকর কাজ করেছে। আর আল্লাহ তা'আলা তো বলেছেনঃ “তিনি মুমিন ও সৎকর্মশীলদের আহ্বানে সাড়া দেন এবং তাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ বর্ধিত করেন। ভাবার্থ এই যে, আল্লাহ তা'আলা মুমিনদের দু'আ কবূল করে থাকেন।(আরবী)-এই আয়াতের তাফসীর করা হয়েছেঃ যারা কথা মেনে নেয় ও ওর অনুসরণ করে। যেমন আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলার উক্তিঃ (আরবী) অর্থাৎ “যারা শুনে, মানে ও অনুসরণ করে তাদের প্রার্থনা আল্লাহ কবূল করেন। এবং মৃতদেরকে তিনি পুনরুত্থিত করবেন।”(৬:৩৬) হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ (আরবী) আল্লাহ পাকের এই উক্তির তাৎপর্য হচ্ছেঃ তাদের এমন ব্যক্তির পক্ষে সুপারিশ কবুল করে নেয়া যার উপর জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে গেছে। যে দুনিয়ায় তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করেছে। (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত ইবরাহীম নখঈ (রঃ) এ আয়াতের তাফসীরে বলেনঃ তারা তাদের ভাইদের জন্যে সুপারিশ করবে। আর তারা আরো বেশী অনুগ্রহ লাভ করবে’ এর তাফসীর হলোঃ তাদের ভাইদের ভাইদের জন্যেও তাদেরকে সুপারিশ করার অনুমতি দেয়া হবে। মুমিনদের এই মর্যাদার বর্ণনা দেয়ার পর মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহ কাফিরদের দুরবস্থার বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তাদের জন্যে রয়েছে কঠিন শাস্তি।এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে জীবনোপকরণে প্রাচুর্য দিলে তারা পৃথিবীতে অবশ্যই বিপর্যয় সৃষ্টি করতো। অর্থাৎ মানুষকে আল্লাহ তাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত জীবনোপকরণ দান করলে তারা ধরাকে সরা জ্ঞান করে বসতো এবং ঔদ্ধত্য ও হঠকারিতা প্রকাশ করতে শুরু করে দিতো এবং ভূ-পৃষ্ঠে বিশৃংখলা, অশান্তি ও অরাজকতা সৃষ্টি করতো। এজন্যেই হযরত কাতাদা (রঃ)-এর দর্শনপূর্ণ উক্তি হলোঃ “জীবনোপকরণ এটুকুই উত্তম যাতে ঔদ্ধত্য ও হঠকারিতা প্রকাশ না পায়। এই বিষয়ের পূর্ণ হাদীস যে, “আমি তোমাদের উপর পার্থিব জগতের সুদৃশ্য ও বাহ্যড়ম্বরকেই ভয় করি” পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। মহান আল্লাহর উক্তিঃ কিন্তু তিনি তাঁর ইচ্ছামত পরিমাণেই (জীবনোপকরণ) দিয়ে থাকেন। তিনি তাঁর বান্দাদেরকে সম্যক জানেন ও দেখেন। অর্থাৎ তিনি বান্দাকে ঐ পরিমাণ রিযক দিয়ে থাকেন যা গ্রহণের তার মধ্যে যোগ্যতা রয়েছে। কে ধনী হওয়ার উপযুক্ত এবং কে দরিদ্র হওয়ার যোগ্য এ জ্ঞান তারই আছে। যেমন হাদীসে কুদসীতে রয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আমার এমন বান্দাও রয়েছে যে, তার মধ্যে ধনশ্বৈর্যের যোগ্যতা রয়েছে, যদি আমি তাকে দরিদ্র বানিয়ে দিই তবে তার দ্বীনও নষ্ট হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে, আমার এমন বান্দাও রয়েছে যে, সে দরিদ্র হওয়ারই যোগ্য। তাকে যদি আমি ধনী করে দিই তবে তার দ্বীন যেন আমি নষ্ট করে দিলাম।এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ “তারা যখন হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে তখনই তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন ও তাঁর করুণা বিস্তার করেন। অর্থাৎ মানুষ যখন রহমতের বৃষ্টির জন্যে অপেক্ষা করতে করতে শেষে নিরাশ হয়ে পড়ে এরূপ পূর্ণ প্রয়োজন এবং কঠিন বিপদের সময় আল্লাহ তা'আলা স্বীয় রহমতের বৃষ্টি বর্ষণ করে থাকেন। ফলে তাদের নৈরাশ্যও দূর হয়ে যায় এবং অনাবৃষ্টির বিপদ হতে তারা মুক্ত হয়। সাধারণভাবে আল্লাহর রহমত ছড়িয়ে পড়ে। একটি লোক হযরত উমার ইবনে খাত্তাবা (রাঃ)-কে বলেঃ “হে আমীরুল মুমিনীন! বৃষ্টি-বর্ষণ বন্ধ হয়েছে এবং জনগণ নিরাশ হয়ে পড়েছে (এখন উপায় কিঃ)” উত্তরে হযরত উমার (রাঃ) বললেনঃ “যাও, ইনশাআল্লাহ বৃষ্টি অবশ্যই বর্ষিত হবে।” অতঃপর তিনি ...(আরবী)-এই আয়াতটি তিলাওয়াত করেন।মহান আল্লাহর উক্তিঃ “তিনিই তো অভিভাবক, প্রশংসাৰ্হ।' অর্থাৎ সৃষ্টজীবের ব্যবস্থাপনা তাঁরই হাতে। তাঁর সমুদয় কাজ প্রশংসার যোগ্য। মানুষের কিসে মঙ্গল আছে তা তিনি ভালই জানেন। তাঁর কাজ কল্যাণ ও উপকার শূন্য নয়।

وَمِنْ آيَاتِهِ خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَثَّ فِيهِمَا مِنْ دَابَّةٍ ۚ وَهُوَ عَلَىٰ جَمْعِهِمْ إِذَا يَشَاءُ قَدِيرٌ

📘 Please check ayah 42:31 for complete tafsir.

كَذَٰلِكَ يُوحِي إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكَ اللَّهُ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

📘 Please check ayah 42:6 for complete tafsir.

وَمَا أَصَابَكُمْ مِنْ مُصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَنْ كَثِيرٍ

📘 Please check ayah 42:31 for complete tafsir.

وَمَا أَنْتُمْ بِمُعْجِزِينَ فِي الْأَرْضِ ۖ وَمَا لَكُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ مِنْ وَلِيٍّ وَلَا نَصِيرٍ

📘 ২৯-৩১ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা স্বীয় শ্রেষ্ঠত্ব, ক্ষমতা ও আধিপত্যের বর্ণনা দিচ্ছেন যে, আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তিনিই এবং এতোদুভয়ের মধ্যে যত কিছু ছড়িয়ে রয়েছে সবই তিনি সৃষ্টি করেছেন। ফেরেশতা, মানব, দানব এবং বিভিন্ন প্রকারের প্রাণী, যেগুলো প্রান্তে প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে, কিয়ামতের দিন তিনি এসবকে একই ময়দানে একত্রিত করবেন, সেদিন তিনি তাদের মধ্যে ন্যায়ের সাথে ফায়সালা করবেন।মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “তোমাদের যে বিপদ-আপদ ঘটে তা তো তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল। অর্থাৎ হে লোক সকল! তোমাদের উপর যে বিপদ-আপদ আপতিত হয় তা প্রকৃতপক্ষে তোমাদের কৃত পাপকার্যের প্রতিফল। তবে আল্লাহ এমন ক্ষমাশীল ও দয়ালু যে, তিনি তোমাদের বহু অপরাধ ক্ষমা করে দেন। যদি তিনি তোমাদেরকে তোমাদের কৃতকর্মের কারণে পাকড়াও করতেন তবে ভূ-পৃষ্ঠে তোমাদের কেউ চলাফেরা করতে পারতো না।সহীহ হাদীসে এসেছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! মুমিনের উপর যে কষ্ট ও বিপদ-আপদ আপতিত হয় ওর কারণে তার অপরাধ ক্ষমা করে দেয়া হয়, এমনকি একটি কাঁটা ফুটলেও (এর বিনিময়ে গুনাহ মাফ করা হয়)।”হযরত আবু কালাবাহ (রঃ) বলেন যে, যখন (আরবী) (অর্থাৎ কেউ অণু পরিমাণ সৎ কর্ম করলে তা দেখবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎ কর্ম করলে তাও দেখবে) (৯৯:৭-৮) এই আয়াত অবতীর্ণ হয় তখন হযরত আবু বকর (রাঃ) আহার করছিলেন। এ আয়াত শুনে তিনি খাদ্য হতে হাত উঠিয়ে নেন এবং বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! প্রত্যেক ভাল ও মন্দের প্রতিফল দেয়া হবে?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “জেনে রেখো যে, স্বভাব বিরুদ্ধ যা কিছু হয় তাই হলো মন্দ কর্মের প্রতিফল এবং সমস্ত পুণ্য আল্লাহর নিকট জমা থাকে।” (এটা ইমাম ইবনে জারীর (রাঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আবু ইদরীস (রঃ) বলেন যে, এই আয়াতে এই বিষয়টিই বর্ণিত হয়েছে। হযরত আলী (রাঃ) বলেন, এসো, আমি তোমাদেরকে শ্রেষ্ঠতম আয়াত এবং হাদীসও শুনাচ্ছি। আয়াতটি হলোঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমাদের যে বিপদ-আপদ ঘটে তা তো তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল এবং তোমাদের অনেক অপরাধ তিনি মার্জনা করে দেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমার সামনে এ আয়াতটি তিলাওয়াত করে আমাকে বলেনঃ “হে আলী (রাঃ)! আমি তোমাকে এর তাফসীর বলছি। মানুষের কৃতকর্মের ফলে তাদের উপর যে বিপদ-আপদ আপতিত হয়, আল্লাহ তা'আলার ধৈর্য ও সহনশীলতা এর বহু ঊর্ধে যে, পরকালে আবার তিনি এর কারণে শাস্তি দান করবেন। বহু অপরাধ তিনি ক্ষমা করে দেন। বান্দার উপর যার এতো বড় দয়া তার দ্বারা এটা কখনো সম্ভব নয় যে, যে অপরাধ তিনি ক্ষমা করে দিয়েছেন ওটার জন্যে আবার পরকালে পাকড়াও করবেন।” (ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে (রঃ) এটা বর্ণনা করেছেন)মুসনাদে ইবনে আবি হাতিমেও এই রিওয়াইয়াতটিই হযরত আলী (রাঃ) হতেই বর্ণিত আছে। তাতে এও রয়েছে যে, আবু জাহফা (রঃ) যখন হযরত আলী (রাঃ)-এর নিকট গমন করেন তখন তিনি তাঁকে বলেনঃ “তোমাকে আমি এমন একটি হাদীস শুনাচ্ছি যা মনে রাখা প্রত্যেক মুমিনের অবশ্য কর্তব্য।” তারপর তিনি এ আয়াতের তাফসীর শুনিয়ে দেন।হযরত মুআবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে, তিনি বলতে শুনেছেন:“মুমিনের দেহে যে কষ্ট পৌছে, ঐ কারণে আল্লাহ তাআলা তার গুনাহ মাফ করে দেন।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “(মুমিন) বান্দার গুনাহ্ যখন বেশী হয়ে যায় এবং ঐ গুনাহকে মিটিয়ে দেয়ার মত কোন জিনিস তার কাছে থাকে না তখন আল্লাহ তা'আলা তাকে দুঃখ-কষ্টে ফেলে দেন এবং ওটাই তার গুনাহ্ মাফের কারণ হয়ে যায়।” (ইমাম আহমাদই (রঃ) এ হাদীসটিও বর্ণনা করেছেন)হযরত হাসান বসরী (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, ... (আরবী)-এই আয়াতটি যখন অবতীর্ণ হয় তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “যার হাতে মুহাম্মাদ (সঃ)-এর প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! লাঠির সামান্য খোঁচা, হাড়ের সামান্য আঘাত, এমন কি পা পিছলিয়ে যাওয়া ইত্যাদিও কোন পাপের কারণে ঘটে থাকে। আর এমনিতেই আল্লাহ তা'আলা বহু গুনাহ মাফ করে দেন।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত হাসান (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একবার হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রাঃ)-এর দেহে রোগ দেখা দেয়। খবর পেয়ে জনগণ তাঁকে দেখতে যান। হযরত হাসান (রঃ) তাঁকে এ অবস্থায় বলেনঃ “আপনার এ অবস্থা দেখে আমরা বড়ই মর্মাহত হয়েছি। তার একথা শুনে হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রাঃ) তাকে বলেনঃ “এরূপ কথা বলো না। তোমরা যা দেখছো এসব হচ্ছে পাপ মোচনের মাধ্যম। আর এমনিতেই আল্লাহ বহু গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন।” অতঃপর তিনি ...(আরবী)-এ আয়াতটিই পাঠ করেন। (এটা ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)আবুল বিলাদ (রঃ) আ’লা ইবনে বদর (রঃ)-কে বলেনঃ “কুরআন কারীমে তো ... (আরবী)-এ আয়াতটি রয়েছে, আর আমি এই অপ্রাপ্ত বয়সেই অন্ধ হয়ে গেছি (এর কারণ কি?)” উত্তরে হযরত আ’লা ইবনে বদর (রঃ) বলেনঃ “এটা তোমার পিতা-মাতার পাপের বিনিময়।”হযরত যহহাক (রঃ) বলেনঃ “যে ব্যক্তি কুরআন মুখস্থ করে ভুলে যায়, নিশ্চয়ই এটা তার পাপের কারণে হয়। এছাড়া আর কোনই কারণ নেই।” অতঃপর তিনি ... (আরবী)-এ আয়াতটি পাঠ করে বলেনঃ “বল তো, এর চেয়ে বড় বিপদ আর কি হতে পারে যে, মানুষ আল্লাহর কালাম মুখস্থ করে ভুলে যাবে?”

وَمِنْ آيَاتِهِ الْجَوَارِ فِي الْبَحْرِ كَالْأَعْلَامِ

📘 Please check ayah 42:35 for complete tafsir.

إِنْ يَشَأْ يُسْكِنِ الرِّيحَ فَيَظْلَلْنَ رَوَاكِدَ عَلَىٰ ظَهْرِهِ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِكُلِّ صَبَّارٍ شَكُورٍ

📘 Please check ayah 42:35 for complete tafsir.

أَوْ يُوبِقْهُنَّ بِمَا كَسَبُوا وَيَعْفُ عَنْ كَثِيرٍ

📘 Please check ayah 42:35 for complete tafsir.

وَيَعْلَمَ الَّذِينَ يُجَادِلُونَ فِي آيَاتِنَا مَا لَهُمْ مِنْ مَحِيصٍ

📘 ৩২-৩৫ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা স্বীয় ক্ষমতার নিদর্শন স্বীয় মাখলুকের কাছে রাখছেন যে, তিনি সমুদ্রকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। যাতে নৌযানসমূহ তাতে যখন তখন চলাফেরা করতে পারে। সমুদ্রে বড় বড় নৌযানগুলোকে যমীনের বড় বড় পাহাড়ের মত দেখায়। যে বায়ু নৌযানগুলোকে এদিক হতে ওদিকে নিয়ে যায় তা তার অধিকারভুক্ত। তিনি ইচ্ছা করলে ঐ বায়ুকে স্তব্ধ করে দিতে পারেন, ফলে নৌযানসমূহ নিশ্চল হয়ে পড়বে সমুদ্র পৃষ্ঠে। প্রত্যেক ঐ ব্যক্তির জন্যে এতে নিদর্শন রয়েছে যে দুঃখে ধৈর্যধারণ ও সুখে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে অভ্যস্ত। সে এসব নিদর্শন দেখে আল্লাহ তা'আলার ব্যাপক ও অসীম ক্ষমতা ও আধিপত্য জানতে ও বুঝতে পারে। যেমন মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহ বায়ুকে স্তব্ধ করে দিয়ে নৌযানসমূহকে নিশ্চল করে দিতে পারেন, অনুরূপভাবে পর্বত সদৃশ নৌযানগুলোকে ক্ষণেকের মধ্যে সমুদ্রে ডুবিয়ে দিতে পারেন। তিনি ইচ্ছা করলে নৌযানের আরোহীদের পাপের কারণে ঐগুলোকে বিধ্বস্ত করে দিতে পারেন। অনেককে তিনি ক্ষমা করে থাকেন। যদি সমস্ত গুনাহর উপর তিনি পাকড়াও করতেন তবে নৌযানের সমস্ত আরোহীকে সোজাসুজি সমুদ্রে ডুবিয়ে দিতেন। কিন্তু তার সীমাহীন রহমত তাদেরকে সমুদ্রের এপার হতে ওপারে নিয়ে যায়। তাফসীরকারগণ এও বলেছেন যে, তিনি ইচ্ছা করলে বায়ুকে প্রতিকূলভাবে প্রবাহিত করতে পারেন, ফলে নৌযানগুলো আর সোজাভাবে চলতেই পারবে না, বরং এদিক ওদিক চলে যাবে। মাঝি-মাল্লারা তখন আর নৌযানগুলোর ভারসাম্য রক্ষা করতে পারবে না। যেদিকে যাওয়ার দরকার সেদিকে না গিয়ে নৌকা অন্যদিকে চলে যাবে। ফলে যাত্রীরা হতবুদ্ধি হয়ে পড়বে এবং শেষ পর্যন্ত ধ্বংসের মুখে পতিত হবে। মোটকথা, যদি আল্লাহ তা'আলা বায়ুকে স্তব্ধ করে দেন তবে তো নৌকা নিশ্চল হয়ে পড়বে, আবার যদি বায়ুকে এলোপাতাড়িভাবে প্রবাহিত করেন তাহলেও যাত্রীদের সমূহ ক্ষতি হবে। কিন্তু মহান আল্লাহর এটা বড়ই দয়া ও করুণা যে, তিনি শান্ত ও অনুকূল বায়ু প্রবাহিত করেন, ফলে আদম সন্তানরা অতি সহজে ও নিরাপদে নৌকাযোগে সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করে নিজেদের গন্তব্যস্থলে পৌছে যায়। বৃষ্টির অবস্থাও এইরূপ যে, যদি মোটেই বর্ষিত না হয় তবে যমীন শুকিয়ে যাবে এবং কোন ফসল উৎপন্ন হবে না। ফলে মানুষ দুর্ভিক্ষের কবলে পতিত হবে। আর যদি অতিমাত্রায় বর্ষিত হয়, তবে মানুষ বন্যার কবলে পতিত হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু আল্লাহ তা'আলা কত বড় মেহেরবান যে, যে শহরে ও যে যমীনে বেশী বৃষ্টির প্রয়োজন সেখানে তিনি বেশী বৃষ্টি বর্ষণ করেন। এবং যেখানে বৃষ্টির প্রয়োজন কম সেখানে কমই বর্ষণ করেন।এরপর মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ বলেনঃ যারা আমার নিদর্শন সম্বন্ধে বিতর্ক করে তাদের জেনে রাখা উচিত যে তারা আমার ক্ষমতার বাইরে নয়। আমি যদি তাদেরকে শাস্তি দেয়ার ইচ্ছা করি তবে তাদের কোন নিষ্কৃতি নেই। সবাই আমার ক্ষমতা ও ইচ্ছার অধীনে রয়েছে।

فَمَا أُوتِيتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَمَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَمَا عِنْدَ اللَّهِ خَيْرٌ وَأَبْقَىٰ لِلَّذِينَ آمَنُوا وَعَلَىٰ رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ

📘 Please check ayah 42:39 for complete tafsir.

وَالَّذِينَ يَجْتَنِبُونَ كَبَائِرَ الْإِثْمِ وَالْفَوَاحِشَ وَإِذَا مَا غَضِبُوا هُمْ يَغْفِرُونَ

📘 Please check ayah 42:39 for complete tafsir.

وَالَّذِينَ اسْتَجَابُوا لِرَبِّهِمْ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَأَمْرُهُمْ شُورَىٰ بَيْنَهُمْ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ

📘 Please check ayah 42:39 for complete tafsir.

وَالَّذِينَ إِذَا أَصَابَهُمُ الْبَغْيُ هُمْ يَنْتَصِرُونَ

📘 ৩৬-৩৯ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা দুনিয়ার অসারতা, তুচ্ছতা এবং নশ্বরতার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন যে, এটা জমা করে কেউ যেন গর্বে ফুলে না উঠে। কেননা, এটাতো ক্ষণস্থায়ী। বরং মানুষের আখিরাতের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া উচিত। সকর্ম করে পুণ্য সঞ্চয় করা তাদের একান্ত কর্তব্য। কেননা, এটাই হচ্ছে চিরস্থায়ী। সুতরাং অস্থায়ীকে স্থায়ীর উপর এবং স্বল্পতাকে আধিক্যের উপর প্রাধান্য দেয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়।অতঃপর মহান আল্লাহ এই পুণ্য লাভ করার পন্থা বলে দিচ্ছেন যে, ঈমান দৃঢ় হতে হবে, যাতে পার্থিব সুখ-সম্ভোগকে পরিত্যাগ করার উপর ধৈর্যধারণ করা যেতে পারে। আল্লাহ তা'আলার উপর পূর্ণ নির্ভরশীল হতে হবে যাতে ধৈর্যধারণে তাঁর নিকট হতে সাহায্য লাভ করা যায় এবং তাঁর আহকাম পালন করা এবং অবাধ্যচিরণ হতে বিরত থাকা সহজ হয়। আর যাতে কবীরা গুনাহ ও নির্লজ্জতা পূর্ণ কাজ হতে দূরে থাকা যায়। এই বাক্যের তাফসীর সূরায়ে আ'রাফে গত হয়েছে। ক্রোধকে সম্বরণ করতে হবে, যাতে ক্রোধের অবস্থাতেও সচ্চরিত্রতা এবং ক্ষমাপরায়ণতার অভ্যাস পরিত্যক্ত না হয়। যেমন সহীহ হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) নিজের প্রতিশোধ কারো নিকট হতে কখনো গ্রহণ করেননি। হ্যা, তবে আল্লাহর আহকামের বেইজ্জতী হলে সেটা অন্য কথা। অন্য হাদীসে এসেছে যে, কঠিন ক্রোধের সময়েও রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর পবিত্র মুখ হতে নিম্নের কথাগুলো ছাড়া আর কিছুই বের হতো নাঃ “তার কি হয়েছে? তার হাত ধূলায় ধূসরিত হোক।”ইবরাহীম (রঃ) বলেন যে, মুমিনরা লাঞ্ছিত হওয়া পছন্দ করতেন না বটে, কিন্তু আবার শত্রুদের উপর ক্ষমতা লাভ করলে প্রতিশোধ গ্রহণ করতেন না, বরং ক্ষমা করে দিতেন। মহান আল্লাহ বলেনঃ (মুমিনদের আরো বিশেষণ এই যে,) তারা তাদের প্রতিপালকের আহ্বানে সাড়া দেয়, রাসূল (সঃ)-এর আনুগত্য করে, তার আদেশ ও নিষেধ মেনে চলে, নামায কায়েম করে যা হলো সবচেয়ে বড় ইবাদত এবং নিজেদের মধ্যে পরামর্শের মাধ্যমে নিজেদের কর্ম সম্পাদন করে। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “কাজে কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ কর।”(৩:১৫৯) এ জন্যেই রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর অভ্যাস ছিল যে, তিনি যুদ্ধ ইত্যাদির ক্ষেত্রে সাহাবীদের (রাঃ) সাথে পরামর্শ করতেন যাতে তাদের মন আনন্দিত হয়। এর ভিত্তিতেই আমীরুল মুমিনীন হযরত উমার (রাঃ) আহত হওয়ার পর মৃত্যুর সম্মুখীন হলে ছয়জন লোককে নির্ধারণ করেন, যেন তারা পরস্পর পরামর্শ করে তার মৃত্যুর পরে কোন একজনকে খলীফা মনোনীত করেন। ঐ ছয় ব্যক্তি হলেনঃ হযরত উসমান (রাঃ), হযরত আলী (রাঃ), হযরত তালহা (রাঃ), হযরত যুবায়ের (রাঃ), হযরত সা'দ (রাঃ) এবং হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রাঃ)। সুতরাং তারা সর্বসম্মতিক্রমে হযরত উসমান (রাঃ)-কে খলীফা মনোনীত করেন।এরপর আল্লাহ তা'আলা মুমিনদের আর একটি বিশেষণ বর্ণনা করছেন যে, তারা যেমন আল্লাহর হক আদায় করেন, অনুরূপভাবে মানুষের হক আদায় করার। ব্যাপারেও তারা কার্পণ্য করেন না। তাঁদের সম্পদ হতে তারা দরিদ্র ও অভাবীদেরকেও কিছু প্রদান করেন এবং শ্রেণীমত নিজেদের সাধ্যানুযায়ী প্রত্যেকের সাথে সদ্ব্যবহার ও ইহসান করে থাকেন। তবে তারা এমন দুর্বল ও কাপুরুষ নন যে, যালিমদের হতে প্রতিশোধ গ্রহণ করেন না, বরং তাঁরা অত্যাচারিত হলে পুরোপুরিভাবে প্রতিশোধ গ্রহণ করে থাকেন। এভাবে তারা অত্যাচারিতদেরকে অত্যাচারীদের অত্যাচার হতে রক্ষা করেন। এতদসত্ত্বেও কিন্তু অনেক সময় ক্ষমতা লাভের পরেও তারা ক্ষমা করে থাকেন। যেমন হযরত ইউসুফ (আঃ) তাঁর ভাইদেরকে বলেছিলেনঃ(আরবী) অর্থাৎ “আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করুন!”(১২:৯২) আর যেমন রাসূলুল্লাহ (সঃ) ঐ আশিজন কাফিরকে ক্ষমা করে দেন যারা হুদাবিয়ার সন্ধির বছর সুযোগ খুঁজে চুপচাপ মুসলিম সেনাবাহিনীতে ঢুকে পড়েছিল। যখন তাদেরকে গ্রেফতার করে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সামনে পেশ করা হয় তখন তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়ে ছেড়ে দেন। আর যেমন তিনি গাওরাস ইবনে হারিস নামক লোকটিকেও ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। সে ছিল ঐ ব্যক্তি যে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিদ্রিত অবস্থায় তাঁর তরবারীখানা হাতে উঠিয়ে নেয় এবং তাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সঃ) জেগে উঠেন এবং তরবারীখানা তার হাতে দেখে তাকে এক ধমক দেন। সাথে সাথে ঐ তরবারী তার হাত হতে পড়ে যায় এবং তিনি তা উঠিয়ে নেন। ঐ অপরাধী তখন গ্রীবা নীচু করে তার সামনে দাড়িয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাহাবীদেরকে (রাঃ) ডেকে তাদেরকে এ দৃশ্য প্রদর্শন করেন এবং ঘটনাটিও বর্ণনা করেন। অতঃপর তাকে ক্ষমা করে দিয়ে ছেড়ে দেন। অনুরূপভাবে লাবীদ ইবনে আসম যখন তার উপর যাদু করে তখন তা জানা এবং প্রতিশোধ গ্রহণের ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তিনি তাকে মাফ করে দেন। এভাবেই যে ইয়াহূদীনী তাঁকে বিষ পানে হত্যা করার ইচ্ছা করেছিল তার থেকেও তিনি প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। তার নাম ছিল যয়নব। সে মারাহাব নামক ইয়াহদীর ভগ্নী ছিল। যে ইয়াহূদীকে হযরত মাহমূদ ইবনে সালমা (রাঃ) খায়বারের যুদ্ধে হত্যা করেছিলেন। ঐ ইয়াহুদিনী বকরীর কাঁধের গোশতে বিষ মাখিয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সামনে পেশ করেছিল। স্বয়ং কাঁধের গোশতই নিজের বিষ মিশ্রিত হওয়ার কথা তাঁর নিকট প্রকাশ করেছিল। মহিলাটিকে তিনি ডেকে পাঠিয়ে এটা জিজ্ঞেস করলে সে তা স্বীকার করে। তাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে সে বলেঃ “আমি মনে করেছিলাম যে, যদি আপনি সত্যই আল্লাহর নবী হন তবে এটা আপনার কোনই ক্ষতি করতে পারবে না। আর যদি আপনি আপনার দাবীতে মিথ্যাবাদী হন তবে আপনার (আধিপত্য) হতে আমরা আরাম পাবো।” এটা জানতে পারা এবং তার উপর ক্ষমতা লাভের পরেও তিনি তাকে ক্ষমা করে দিয়ে ছেড়ে দেন। পরে অবশ্য তাকে হত্যা করা হয়েছিল। কেননা, ঐ বিষ মিশ্রিত খাদ্য খেয়েই হযরত বিশর ইবনে বারা (রাঃ) মারা গিয়েছিলেন। ফলে কিসাস হিসেবে ঐ মহিলাটিকেও হত্যা করা হয়েছিল। এ সম্পৰ্কীয় আরো বহু আসার ও হাদীস রয়েছে। এসব ব্যাপারে মহান আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।

لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۖ وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ

📘 Please check ayah 42:6 for complete tafsir.

وَجَزَاءُ سَيِّئَةٍ سَيِّئَةٌ مِثْلُهَا ۖ فَمَنْ عَفَا وَأَصْلَحَ فَأَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ ۚ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِينَ

📘 Please check ayah 42:43 for complete tafsir.

وَلَمَنِ انْتَصَرَ بَعْدَ ظُلْمِهِ فَأُولَٰئِكَ مَا عَلَيْهِمْ مِنْ سَبِيلٍ

📘 Please check ayah 42:43 for complete tafsir.

إِنَّمَا السَّبِيلُ عَلَى الَّذِينَ يَظْلِمُونَ النَّاسَ وَيَبْغُونَ فِي الْأَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ ۚ أُولَٰئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ

📘 Please check ayah 42:43 for complete tafsir.

وَلَمَنْ صَبَرَ وَغَفَرَ إِنَّ ذَٰلِكَ لَمِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ

📘 ৪০-৪৩ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ ‘মন্দের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ।' যেমন অন্য জায়গায় বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যে কেউ তোমাদেরকে আক্রমণ করবে তোমরাও তাকে অনুরূপ আক্রমণ করবে।”(২:১৯৪) এর দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, প্রতিশোধ গ্রহণ করা জায়েয। কিন্তু ক্ষমা করে দেয়াই হচ্ছে ফযীলতের কাজ। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যখমের কিসাস বা প্রতিশোধ রয়েছে। তবে যে ব্যক্তি মাফ করে দিবে ওটা তার জন্যে তার গুনাহ মাফের কারণ হবে।”(৫:৪৫) আর এখানে বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যে ক্ষমা করে দেয় ও আপোষ-নিষ্পত্তি করে তার পুরস্কার আল্লাহর নিকট আছে।” হাদীসে আছেঃ “ক্ষমা করে দেয়ার কারণে আল্লাহ তা'আলা বান্দার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন।”এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “তিনি যালিমদেরকে পছন্দ করেন না। অর্থাৎ প্রতিশোধ গ্রহণের ব্যাপারে যে সীমালংঘন করে তাকে আল্লাহ তাআলা ভালবাসেন না। সে আল্লাহর শত্রু। মন্দের সূচনা তার পক্ষ হতেই হলো এটা মনে করা হবে।অতঃপর মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘অত্যাচারিত হবার পর যারা প্রতিবিধান করে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না।'হযরত ইবনে আউন (রঃ) বলেনঃ “আমি (আরবী) শব্দটির তাফসীর জানবার আকাঙ্ক্ষা করছিলাম। আমাকে আলী ইবনে যায়েদ ইবনে জাদআন (রঃ) তাঁর মাতা উম্মে মুহাম্মাদ (রাঃ)-এর বরাত দিয়ে বলেন, যিনি হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট যাতায়াত করতেন, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একদা হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট গমন করেন। ঐ সময় হযরত যয়নব (রাঃ) তথায় উপস্থিত ছিলেন। এটা কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর জানা ছিল না। তিনি আয়েশা (রাঃ)-এর দিকে হাত বাড়ালে হযরত আয়েশা (রাঃ) ইঙ্গিতে হযরত যয়নবের উপস্থিতির কথা তাঁকে জানিয়ে দেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর হাত টেনে নেন। হযরত যয়নব (রাঃ) তখন হযরত আয়েশা (রাঃ)-কে গালমন্দ দিতে শুরু করেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিষেধ সত্ত্বেও তিনি চুপ হলেন না। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত আয়েশা (রাঃ)-কে অনুমতি দিলেন যে, তিনি যেন হযরত যয়নব (রাঃ)-এর কথার উত্তর দেন। হযরত আয়েশা (রাঃ) যখন তাঁকে উত্তর দিতে শুরু করলেন তখন হযরত যয়নব (রাঃ) তাকে আর পেরে উঠলেন না। সুতরাং তিনি সরাসরি হযরত আলী (রাঃ)-এর নিকট গমন করে তাঁকে বলেনঃ “হযরত আয়েশা (রাঃ) আপনার সম্পর্কে এরূপ এরূপ কথা বলেছেন এবং এরূপ এরূপ করেছেন।” একথা শুনে হযরত ফাতেমা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট আগমন করেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বললেনঃ “কা’বার প্রতিপালকের শপথ! তোমার আব্বার (অর্থাৎ আমার) হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর প্রতি ভালবাসা রয়েছে। তিনি তৎক্ষণাৎ ফিরে যান এবং হযরত আলী (রাঃ)-এর নিকট সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করেন। অতঃপর হযরত আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট গমন করে তাঁর সাথে আলাপ আলোচনা করেন। এ ঘটনাটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) এভাবে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এর বর্ণনাকারী তার রিওয়াইয়াতে প্রায়ই অস্বীকার্য হাদীসগুলো আনয়ন করে থাকেন এবং এই রিওয়াইয়াতটিও মুনকার বা অস্বীকার্য।ইমাম নাসাঈ (রঃ) এবং ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ) ঘটনাটি এভাবে আনয়ন করেছেন যে, হযরত যয়নব (রাঃ) ক্রোধান্বিতা অবস্থায় পূর্বে কোন খবর না দিয়েই হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর ঘরে আগমন করেন। অতঃপর তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে হযরত আয়েশা (রাঃ) সম্পর্কে কিছু বলেন। তারপর হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর সাথে ঝগড়া করতে শুরু করেন। কিন্তু হযরত আয়েশা (রাঃ) চুপ থাকেন। হযরত যয়নব (রাঃ)-এর বক্তব্য শেষ হলে রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত আয়েশা (রাঃ)-কে প্রতিশোধ গ্রহণ করতে বলেন। হযরত আয়েশা (রাঃ) জবাব দিতে শুরু করলে হযরত যয়নব (রাঃ)-এর মুখের থুথু শুকিয়ে যায়। তিনি হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর কথার জবাব দিতে পারলেন না। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর চেহারা মুবারক হতে দুঃখের চিহ্ন দূর হয়ে গেল। মোটকথা (আরবী)-এর অর্থ হলো অত্যাচারিত ব্যক্তির অত্যাচারী ব্যক্তি হতে প্রতিশোধ গ্রহণ করা। বাযযার (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, যালিমের বিরুদ্ধে যে বদদু'আ করলো সে প্রতিশোধ নিয়ে নিলো। এ হাদীসটিই ইমাম তিরমিযীও (রঃ) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এর বর্ণনাকারী সম্পর্কে সমালোচনা রয়েছে।এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ ‘শুধু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অবলম্বন করা হবে যারা মানুষের উপর যুলুম করে এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহাচরণ করে বেড়ায়। সহীহ হাদীসে এসেছে যে, গালিদাতা দুই ব্যক্তির (পাপের) বোঝা প্রথম গালিদাতার উপর পড়বে যে পর্যন্ত না অত্যাচারিত ব্যক্তি প্রতিশোধ গ্রহণে সীমালংঘন করে।প্রবল পরাক্রান্ত আল্লাহ বলেনঃ “এরূপ অন্যায়ভাবে বিদ্রোহাচরণকারী ব্যক্তির জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি।' অর্থাৎ কিয়ামতের দিন এরূপ ব্যক্তি কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে।হযরত মুহাম্মাদ ইবনে ওয়াসি (রঃ) বলেন, একবার আমি মক্কার পথে যাত্রা শুরু করি। দেখি খন্দক বা পরিখার উপর সেতু নির্মিত রয়েছে। আমি ওখানেই রয়েছি এমন সময় আমাকে গ্রেফতার করা হয় এবং বসরার আমীর মারওয়ান ইবনে মাহলাবের নিকট পৌঁছিয়ে দেয়া হয়। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আবু আবদিল্লাহ! তুমি কি চাও?” আমি উত্তরে বললামঃ আমি এই চাই যে, সম্ভব হলে আপনি বানু আদ্দীর ভাইএর মত হয়ে যান। তিনি প্রশ্ন করলেনঃ “তিনি কে?" আমি জবাব দিলামঃ তিনি হলেন আলা ইবনে যিয়াদ। তিনি তার এক বন্ধুকে একবার কোন এক কাজে নিযুক্ত করেন। অতঃপর তিনি তার কাছে এক পত্র লিখেনঃ “হামদ ও সানার পর, সমাচার এই যে, যদি সম্ভব হয় তবে তুমি তোমার কোমরকে (পাপের বোঝা হতে শূন্য রাখবে, পেটকে হারাম থেকে রক্ষা করবে এবং তোমার হাত যেন মুসলমানদের রক্ত ও মাল দ্বারা অপবিত্র না হয়। যখন তুমি এরূপ কাজ করবে তখন তোমার উপর কোন গুনাহ থাকবে না। কুরআন কারীমে আল্লাহ পাক বলেন- ‘শুধু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অবলম্বন করা হবে যারা মানুষের উপর অত্যাচার করে এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহাচরণ করে বেড়ায়। এ কথা শুনে মারওয়ান বলেনঃ “আল্লাহ জানেন যে, তিনি সত্য বলেছেন এবং কল্যাণের কথাই জানিয়েছেন। আচ্ছা, এখন আপনি কি কামনা করেন?” আমি উত্তরে বললামঃ আমি চাই যে, আমাকে আমার বাড়ীতে পৌঁছিয়ে দেয়া হোক। তিনি তখন বললেনঃ “আচ্ছা, ঠিক আছে।” (এটা ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)যুলুম ও যালিম যে নিন্দনীয় এটা বর্ণনা করে এবং যুলুমের প্রতিশোধ গ্রহণের অনুমতি দিয়ে এখন ক্ষমা করে দেয়ার ফযীলত বর্ণনা করতে গিয়ে মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘অবশ্য যে ধৈর্য ধারণ করে এবং ক্ষমা করে দেয়, ওটা তো হবে দৃঢ় সংকল্পেরই কাজ।' এর ফলে সে বড় পুরস্কার এবং পূর্ণ প্রতিদান লাভের যোগ্য হযরত ফুযায়েল ইবনে আইয়ায (রঃ) বলেনঃ তোমার কাছে কোন লোক এসে যদি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তবে তুমি তাকে উপদেশ দিবেঃ ভাই! তাকে তুমি ক্ষমা করে দাও। ক্ষমা করার মধ্যেই বড় মঙ্গল নিহিত রয়েছে। আর এটাই তাকওয়া প্রমাণ করে। যদি সে এটা অস্বীকার করে এবং স্বীয় অন্তরের দুর্বলতা প্রকাশ করে তবে তাকে বলে দাও- যাও, প্রতিশোধ নিয়ে নাও। কিন্তু দেখো, এতে যেন সীমালংঘন না হয়, আর আমি এখনো বলছি যে, তুমি বরং ক্ষমা করেই দাও। এই দরযা খুব প্রশস্ত, আর প্রতিশোধ গ্রহণের রাস্তা খুবই সংকীর্ণ। জেনে রেখো যে, ক্ষমাকারী আরামে মিষ্টি ঘুমে ঘুমিয়ে পড়ে। পক্ষান্তরে প্রতিশোধ গ্রহণকারী প্রতিশোধ গ্রহণের নেশায় সদা মেতে থাকে। এর চিন্তায় তার ঘুম হয় না।হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক হযরত আবু বকর (রাঃ)-কে গালমন্দ দিতে শুরু করে। রাসূলুল্লাহ (সঃ)-ও তথায় বিদ্যমান ছিলেন। তিনি বিস্মিতভাবে মুচকি হাসছিলেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) নীরব ছিলেন। কিন্তু লোকটি যখন গালি দিতেই থাকলো তখন তিনিও কোন কোনটির জবাব দিতে লাগলেন। এতে রাসূলুল্লাহ (সঃ) অসন্তুষ্ট হলেন এবং সেখান হতে চলে গেলেন। তখন হযরত আবু বকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর খিদমতে হাযির হয়ে আরয করলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! লোকটি আমাকে মন্দ বলতেই ছিল এবং আপনি বসে বসে শুনছিলেন। আর আমি যখন তার দু' একটি কথার জবাব দিলাম তখন আপনি অসন্তুষ্ট হয়ে চলে আসলেন (কারণ কি?)।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে উত্তরে বললেনঃ “জেনে রেখো যে, তুমি যতক্ষণ পর্যন্ত নীরব ছিলে ততক্ষণ পর্যন্ত ফেরেশতা তোমার পক্ষ থেকে তার কথার জবাব দিচ্ছিলেন। অতঃপর যখন তুমি নিজেই জবাব দিতে শুরু করলে তখন ফেরেশতা সরে পড়লেন এবং মাঝখানে শয়তান এসে পড়লো। তাহলে বলতো আমি শয়তানের বিদ্যমানতায় কিভাবে বসে থাকতে পারি?” অতঃপর তিনি বললেনঃ “হে আবু বকর (রাঃ)! জেনে রেখো যে, তিনটি জিনিস সম্পূর্ণরূপে সত্য। প্রথমঃ যার উপর কেউ জুলুম করে এবং সে তা সহ্য করে নেয়, আল্লাহ তাআলা তার মর্যাদা অবশ্যই বাড়িয়ে দেন এবং তাকে সাহায্য করেন। দ্বিতীয়তঃ যে ব্যক্তি সদ্ব্যবহার ও অনুগ্রহের দরযা খুলে দিবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক যুক্ত রাখার। উদ্দেশ্যে মানুষকে দান করতে থাকবে, আল্লাহ তার ধন-মালে বরকত দান করবেন এবং আরো বেশী প্রদান করবেন। তৃতীয়তঃ যে ব্যক্তি মাল-ধন বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে ভিক্ষার দরযা খুলে দিবে, এর কাছে, ওর কাছে চেয়ে বেড়াবে, আল্লাহ তার বরকত কমিয়ে দিবেন এবং তার মাল-ধন কমেই থাকবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। সুনানে আবি দাউদের মধ্যেও এ রিওয়াইয়াতটি রয়েছে। বিষয়ের দিক দিয়ে এটি বড়ই প্রিয় হাদীস)

وَمَنْ يُضْلِلِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ وَلِيٍّ مِنْ بَعْدِهِ ۗ وَتَرَى الظَّالِمِينَ لَمَّا رَأَوُا الْعَذَابَ يَقُولُونَ هَلْ إِلَىٰ مَرَدٍّ مِنْ سَبِيلٍ

📘 Please check ayah 42:46 for complete tafsir.

وَتَرَاهُمْ يُعْرَضُونَ عَلَيْهَا خَاشِعِينَ مِنَ الذُّلِّ يَنْظُرُونَ مِنْ طَرْفٍ خَفِيٍّ ۗ وَقَالَ الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّ الْخَاسِرِينَ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنْفُسَهُمْ وَأَهْلِيهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۗ أَلَا إِنَّ الظَّالِمِينَ فِي عَذَابٍ مُقِيمٍ

📘 Please check ayah 42:46 for complete tafsir.

وَمَا كَانَ لَهُمْ مِنْ أَوْلِيَاءَ يَنْصُرُونَهُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ ۗ وَمَنْ يُضْلِلِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ سَبِيلٍ

📘 ৪৪-৪৬ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা বর্ণনা করছেন যে, তিনি যা চান তাই হয়। তাঁর ইচ্ছার উপর কেউ বাধা দিতে পারে না এবং যা তিনি চান না তা হয় না। কেউ তাকে তা করাতে পারে না। যাকে তিনি সুপথে পরিচালিত করেন তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না এবং যাকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন তাকে কেউ সুপথে পরিচালিত করতে পারে না। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তুমি কখনই তার কোন পথ প্রদর্শনকারী। অভিভাবক পাবে না ।”(১৮১৭) মহান আল্লাহ বলেনঃ যালিমরা যখন শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে তখন তুমি তাদেরকে বলতে শুনবেঃ প্রত্যাবর্তনের কোন উপায় আছে কি? অর্থাৎ মুশরিকরা কিয়ামতের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে দ্বিতীয়বার দুনিয়ায় প্রত্যাবর্তনের আকাঙ্ক্ষা করবে। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তুমি যদি দেখতে! যখন তাদেরকে জাহান্নামের উপর দাঁড় করানো হবে তখন তারা বলবেঃ হায়! যদি আমাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হতো, আমরা আমাদের প্রতিপালকের আয়াতসমূহকে অবিশ্বাস করতাম না এবং আমরা মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত হতাম! বরং পূর্বে যা তারা গোপন করতো আজ তা প্রকাশ হয়ে গেছে, যদি তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়াও হয় তবে আবার তাই করবে যা করতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে, নিশ্চয়ই তারা মিথ্যাবাদী।”(৬:২৭-২৮)ইরশাদ হচ্ছেঃ তুমি তাদেরকে দেখতে পাবে যে, তাদেরকে জাহান্নামের সামনে উপস্থিত করা হচ্ছে। অবাধ্যাচরণের কারণে তারা অপমানে অবনত। অবস্থায় অর্ধনিমীলিত নেত্রে তাকাতে থাকবে। কিন্তু যেটাকে তারা ভয় করবে ওটা থেকে তারা বাঁচতে পারবে না। শুধু এটুকু নয় বরং তাদের ধারণা ও কল্পনারও অধিক তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে এটা হতে রক্ষা করুন। ঐ সময় মুমিনরা বলবেঃ ক্ষতিগ্রস্ত তারাই যারা নিজেদের ও নিজেদের পরিজনবর্গের ক্ষতি সাধন করেছে। এখানে তারা নিজেরাও চিরস্থায়ী নিয়ামত হতে বঞ্চিত হয়েছে এবং নিজেদের পরিজনবর্গকেও বঞ্চিত করেছে। আজ তারা পৃথক পৃথকভাবে চিরস্থায়ী শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। তারা সেই দিন আল্লাহর রহমত হতে সম্পূর্ণরূপে নিরাশ হয়ে যাবে। এমন কেউ হবে না যে তাদেরকে এই আযাব হতে রক্ষা করতে পারে। কেউ তাদের শাস্তি হালকা করতেও পারবেনা। ঐ পথভ্রষ্টদেরকে সেই দিন পরিত্রাণ দানকারী কেউই থাকবে না।

اسْتَجِيبُوا لِرَبِّكُمْ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَ يَوْمٌ لَا مَرَدَّ لَهُ مِنَ اللَّهِ ۚ مَا لَكُمْ مِنْ مَلْجَإٍ يَوْمَئِذٍ وَمَا لَكُمْ مِنْ نَكِيرٍ

📘 Please check ayah 42:48 for complete tafsir.

فَإِنْ أَعْرَضُوا فَمَا أَرْسَلْنَاكَ عَلَيْهِمْ حَفِيظًا ۖ إِنْ عَلَيْكَ إِلَّا الْبَلَاغُ ۗ وَإِنَّا إِذَا أَذَقْنَا الْإِنْسَانَ مِنَّا رَحْمَةً فَرِحَ بِهَا ۖ وَإِنْ تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيهِمْ فَإِنَّ الْإِنْسَانَ كَفُورٌ

📘 ৪৭-৪৮ নং আয়াতের তাফসীর: উপরে আল্লাহ তা'আলা বর্ণনা দিয়েছিলেন যে, কিয়ামতের দিন ভীষণ বিপজ্জনক ও ভয়াবহ ঘটনা ঘটবে। ওটা হবে কঠিন বিপদের দিন। এখানে আল্লাহ তা'আলা ঐ দিনের ভয় প্রদর্শন করছেন এবং ওর জন্যে প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিচ্ছেন। তিনি বলছেনঃ আকস্মিকভাবে ঐ দিন এসে যাওয়ার পূর্বেই। আল্লাহর ফরমানের উপর পুরোপুরি আমল কর। যখন ঐদিন এসে পড়বে তখন তোমাদের কোন আশ্রয়স্থল মিলবে না এবং তোমরা এমন জায়গাও পাবে না যেখানে অপরিচিত ভাবে লুকিয়ে থাকবে, কেউ তোমাদেরকে চিনতে পারবে না।এরপর পরাক্রমশালী আল্লাহ স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলেনঃ এই কাফির ও মুশরিকরা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তোমাকে তো আমি তাদের রক্ষক করে পাঠাইনি। তাদেরকে হিদায়াত দান করা তোমার দায়িত্ব নয়। তোমার কাজ শুধু তাদের কাছে আমার বাণী পৌঁছিয়ে দেয়া। আমিই তাদের হিসাব গ্রহণ করবো। এ দায়িত্ব আমার। মানুষের অবস্থা এই যে, আমি যখন তাদেরকে অনুগ্রহ আস্বাদন করাই তখন সে এতে উৎফুল্ল হয় এবং যখন তাদের কৃতকর্মের জন্যে তাদের বিপদ-আপদ ঘটে তখন মানুষ হয়ে যায় অকৃতজ্ঞ। ঐ সময় তারা পূর্বের নিয়ামতকেও অস্বীকার করে বসে। যেমন রাসূলুল্লাহ (সঃ) নারীদেরকে বলেছিলেনঃ “হে নারীর দল! তোমরা (খুব বেশী বেশী) দান-খয়রাত কর, কেননা, আমি তোমাদের অধিক সংখ্যককে জাহান্নামে দেখেছি। তখন একজন মহিলা বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এটা কেন?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “কারণ এই যে, তোমরা খুব বেশী অভিযোগ কর এবং স্বামীদের প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকো। তোমাদের কারো প্রতি তার স্বামী যদি যুগ যুগ ধরে অনুগ্রহ করতে থাকে, অতঃপর একদিন যদি তা ছেড়ে দেয় তবে অবশ্যই সে তার স্বামীকে বলবে- ‘তুমি কখনো আমার প্রতি অনুগ্রহ করনি।” অধিকাংশ নারীদেরই অবস্থা এটাই, তবে আল্লাহ যার প্রতি দয়া করেন এবং সৎকাজের তাওফীক প্রদান করেন এবং প্রকৃত ঈমানের অধিকারিণী বানিয়ে দেন তার কথা স্বতন্ত্র।যে প্রকৃত মুমিন হয় সেই শুধু সুখের সময় কৃতজ্ঞ ও দুঃখের সময় ধৈর্যধারণকারী হয়। যেমন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “যদি সে সুখ ও আনন্দ লাভ করে তবে সে কৃতজ্ঞ হয়, আর এটাই হয় তার জন্যে কল্যাণকর। আর যদি তার উপর কষ্ট ও বিপদ-আপদ আপতিত হয় তখন সে ধৈর্যধারণ করে এবং ওটা হয় তার জন্যে কল্যাণকর। আর এই বিশেষণ মুমিন ছাড়া আর কারো মধ্যে থাকে না।”

لِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ ۚ يَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ إِنَاثًا وَيَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ الذُّكُورَ

📘 Please check ayah 42:50 for complete tafsir.

تَكَادُ السَّمَاوَاتُ يَتَفَطَّرْنَ مِنْ فَوْقِهِنَّ ۚ وَالْمَلَائِكَةُ يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيَسْتَغْفِرُونَ لِمَنْ فِي الْأَرْضِ ۗ أَلَا إِنَّ اللَّهَ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ

📘 Please check ayah 42:6 for complete tafsir.

أَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَانًا وَإِنَاثًا ۖ وَيَجْعَلُ مَنْ يَشَاءُ عَقِيمًا ۚ إِنَّهُ عَلِيمٌ قَدِيرٌ

📘 ৪৯-৫০ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ্ তা'আলা খবর দিচ্ছেন যে, সৃষ্টিকর্তা, অধিকর্তা এবং আকাশ ও পৃথিবীর ব্যবস্থাপক একমাত্র আল্লাহ্। তিনি যা চান তা হয় এবং যা চান না তা হয় না। তিনি যাকে ইচ্ছা দেন, যাকে ইচ্ছা দেন না। তিনি যা ইচ্ছা করেন তাই সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা শুধু কন্যা সন্তানই দান করেন, যেমন হযরত নূত (আঃ)। আর যাকে চান তাকে শুধু পুত্র সন্তান দান করেন, যেমন হযরত ইবরাহীম (আঃ)। আবার যাকে ইচ্ছা তিনি পুত্র ও কন্যা উভয় সন্তানই দান করেন, যেমন হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা (সঃ)। আর তিনি যাকে ইচ্ছা সন্তানহীন করেন, যেমন হযরত ইয়াহ্ইয়া (আঃ) ও হযরত ঈসা (আঃ)। সুতরাং চারটি শ্ৰেণী হলোঃ শুধু কন্যা সন্তানের অধিকারী, শুধু পুত্র সন্তানের অধিকারী, উভয় সন্তানেরই অধিকারী এবং সন্তানহীন।তিনি সর্বজ্ঞ, প্রত্যেক হকদার সম্পর্কে তিনি পূর্ণ ওয়াকিফহাল। তিনি সর্বশক্তিমান, তিনি ইচ্ছামত বিভিন্নতা ও তারতম্য রাখেন।সুতরাং এটা আল্লাহ পাকের ঐ ফরমানের মতই যা হযরত ঈসা (আঃ)-এর ব্যাপারে রয়েছে। তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “এটাকে যেন আমি লোকদের জন্যে নিদর্শন করি।”(১৯:২১) অর্থাৎ এটাকে আমি আমার শক্তির প্রমাণ বানাতে চাই এবং দেখাতে চাই যে, আমি মানুষকে চার প্রকারে সৃষ্টি করেছি। হযরত আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করেছি শুধু মাটি দ্বারা, তার পিতাও ছিল। না, মাতাও ছিল না। হযরত হাওয়া (আঃ)-কে সৃষ্টি করেছি শুধু পুরুষের মাধ্যমে। আর হযরত ঈসা (আঃ) ছাড়া অন্যান্য সমস্ত মানুষকে আমি সৃষ্টি করেছি পুরুষ ও নারীর মাধ্যমে এবং ঈসা (আঃ)-কে সৃষ্টি করেছি পুরুষ ছাড়াই, শুধু নারীর মাধ্যমে। সুতরাং হযরত ঈসা (আঃ)-কে সৃষ্টির করে মহাপ্রতাপান্বিত ও মহান শক্তিশালী আল্লাহ তার সৃষ্টির এই চার প্রকার পূর্ণ করেছেন। ঐ স্থানটি ছিল মাতা-পিতা সম্পর্কে এবং এই স্থানটি হলো সন্তানদের সম্পর্কে। ওটাও চার প্রকার এবং এটাও চার প্রকার। সুবহানাল্লাহ! এটাই হলো আল্লাহ তা'আলার জ্ঞান ও ক্ষমতার নিদর্শন।

۞ وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ أَنْ يُكَلِّمَهُ اللَّهُ إِلَّا وَحْيًا أَوْ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ أَوْ يُرْسِلَ رَسُولًا فَيُوحِيَ بِإِذْنِهِ مَا يَشَاءُ ۚ إِنَّهُ عَلِيٌّ حَكِيمٌ

📘 Please check ayah 42:53 for complete tafsir.

وَكَذَٰلِكَ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ رُوحًا مِنْ أَمْرِنَا ۚ مَا كُنْتَ تَدْرِي مَا الْكِتَابُ وَلَا الْإِيمَانُ وَلَٰكِنْ جَعَلْنَاهُ نُورًا نَهْدِي بِهِ مَنْ نَشَاءُ مِنْ عِبَادِنَا ۚ وَإِنَّكَ لَتَهْدِي إِلَىٰ صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ

📘 Please check ayah 42:53 for complete tafsir.

صِرَاطِ اللَّهِ الَّذِي لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ أَلَا إِلَى اللَّهِ تَصِيرُ الْأُمُورُ

📘 ৫১-৫৩ নং আয়াতের তাফসীর: অহীর স্থান, স্তর ও অবস্থার বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যে, ওটা কখনো কখনো রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর অন্তরে ঢেলে দেয়া, যেটা আল্লাহর অহী হওয়া সম্পর্কে তাঁর মনে কোন সংশয় ও সন্দেহ থাকে না। যেমন ইবনে হিব্বানের (রঃ) সহীহ গ্রন্থে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “রূহুল কুদুস (আঃ) আমার অন্তরে এটা ফুকে দিয়েছেন যে, কোন ব্যক্তিই মৃত্যুবরণ করে না যে পর্যন্ত না তার রিযক ও সময় পূর্ণ হয়। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং উত্তমরূপে রুযী অনুসন্ধান কর।”মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘অথবা পর্দার অন্তরাল হতে তিনি কথা বলেন। যেমন তিনি হযরত মূসা (আঃ)-এর সাথে কথা বলেছিলেন। কেননা, তিনি কথা শুনার পর আল্লাহ তাআলাকে দেখতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আল্লাহ তাআলা ছিলেন পর্দার মধ্যে। সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত জাবির ইবনে আবদিল্লাহ (রাঃ)-কে বলেনঃ “আল্লাহ পর্দার অন্তরাল ছাড়া কারো সাথে কথা বলেননি, কিন্তু তোমার পিতার সাথে তিনি সামনা সামনি হয়ে কথা বলেছেন। তিনি উহুদের যুদ্ধে কাফিরদের হাতে শহীদ হয়েছিলেন। কিন্তু এটা স্মরণ রাখা দরকার যে, এটা ছিল আলমে বারযাখের কথা আর এই আয়াতে যে কালামের কথা বলা হয়েছে তা হলো ভূ-পৃষ্ঠের উপরের কালাম।মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ ‘অথবা এমন দূত প্রেরণ ব্যতিরেকে, যেই দূত তার অনুমতিক্রমে তিনি যা চান তা ব্যক্ত করে। যেমন হযরত জিবরাঈল (আঃ) প্রমুখ ফেরেশতা নবীদের (আঃ) নিকট আসতেন। তিনি সমুন্নত, প্রজ্ঞাময়।এখানে রূহ দ্বারা কুরআনকে বুঝানো হয়েছে। মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “আমি এই কুরআনকে অহীর মাধ্যমে তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি। তুমি তো জানতে না কিতাব কি ও ঈমান কি! কিন্তু আমি এই কুরআনকে করেছি আলো যা দ্বারা আমি আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা পথ-নির্দেশ করি।” যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “তুমি বলে দাও- এটা ঈমানদারদের জন্যে হিদায়াত ও আরোগ্য, আর যারা ঈমানদার নয় তাদের কানে আছে বধিরতা এবং চোখে আছে অন্ধত্ব।” (৪১:৪৪)এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ “হে নবী (সঃ)! তুমি তো প্রদর্শন কর শুধু সরল পথ- সেই আল্লাহর পথ যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তার মালিক। প্রতিপালক তিনিই। সবকিছুর মধ্যে ব্যবস্থাপক ও হুকুমদাতা তিনিই। কেউই তাঁর কোন হুকুম অমান্য করতে পারে না। সকল বিষয়ের পরিণাম আল্লাহরই দিকে প্রত্যাবর্তন করে। তিনিই সব কাজের ফায়সালা করে থাকেন। তিনি পবিত্র ও মুক্ত ঐ সব দোষ হতে যা যালিমরা তার উপর আরোপ করে থাকে। তিনি সমুচ্চ, সমুন্নত ও মহান।

وَالَّذِينَ اتَّخَذُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ اللَّهُ حَفِيظٌ عَلَيْهِمْ وَمَا أَنْتَ عَلَيْهِمْ بِوَكِيلٍ

📘 ১-৬ নং আয়াতের তাফসীর: হুরূফে মুকাত্তাআ'ত বা বিচ্ছিন্ন অক্ষরগুলোর আলোচনা পূর্বে গত হয়েছে। ইমাম ইবনে জারীর এখানে একটি বিস্ময়কর, অদ্ভুত ও অস্বীকার্য আসার আনয়ন করেছেন। তাতে রয়েছে যে, একটি লোক হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট আগমন করে। ঐ সময় তাঁর নিকট হযরত হুযাইফা ইবনে ইয়ামানও (রাঃ) ছিলেন। ঐ আগন্তুক হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে এই অক্ষরগুলোর তাফসীর জিজ্ঞেস করলো। তিনি তখন কিছুক্ষণ মাথা নীচু করে রইলেন। লোকটি দ্বিতীয়বার ঐ প্রশ্নই করলো। তিনি এবারও মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং তার প্রশ্নকে মন্দ মনে করলেন। লোকটি তৃতীয়বার ঐ একই প্রশ্ন করলো। তিনি এবারও কোন উত্তর দিলেন না। তখন হযরত হুযাইফা (রাঃ) লোকটিকে বললেনঃ “আমি তোমাকে এর তাফসীর বলে দিচ্ছি এবং হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এটাকে কেন অপছন্দ করছেন সেটাও আমার জানা আছে। তাঁর আহলে বায়েতের একটি লোকের ব্যাপারে এটা অবতীর্ণ হয়েছে, যাকে আবদুল ইলাহ এবং আবদুল্লাহ বলা হবে। সে প্রাচ্যের নদীসমূহের একটি নদীর পার্শ্বে অবতরণ করবে এবং তথায় দু'টি শহর বসাবে। নদী কেটে ঐ দু'টি শহরের মধ্যে নিয়ে যাবে। অতঃপর যখন আল্লাহ তা'আলা তাদের দেশের পতন ঘটাবার এবং তাদের ধন-দৌলত ধ্বংস করে দেয়ার ইচ্ছা করবেন তখন ঐ শহর দুটির একটির উপর রাত্রিকালে আগুন আসবে এবং ঐ শহরকে জ্বালিয়ে ভষ্ম করে দিবে। তথাকার লোক সকালে ঐ অবস্থা দেখে অত্যন্ত বিস্ময়বোধ করবে। মনে হবে যেন সেখানে কিছুই ছিল না। অতঃপর সকাল সকালই তথাকার সমস্ত বড় বড় উদ্ধত, অহংকারী এবং সত্য বিরোধী লোক তথায় একত্রিত হবে। তৎক্ষণাৎ আল্লাহ তাআলা তাদের সবকেই ঐ শহর সহ ধ্বংস করে দিবেন। (আরবী)-এর অর্থ এটাই। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে এটা সিদ্ধান্ত ও ফায়সালা হয়ে গেছে। (আরবী) দ্বারা আদল বা ন্যায়পরায়ণতা বুঝানো হয়েছে। (আরবী) দ্বারা বুঝানো হয়েছে (আরবী) অর্থাৎ সত্বরই হবে এবং (আরবী) দ্বারা অর্থ নেয়া হয়েছে, ঐ দুই শহরে যা সংঘটিত হবে।” এর চেয়ে বেশী বিস্ময়কর আর একটি রিওয়াইয়াত রয়েছে যা হাফিয আবু ইয়ালা মুসিলী (রঃ) মুসনাদে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর দ্বিতীয় জিলদ হতে বর্ণনা করেছেন। এটা হযরত আবূ যার (রাঃ) নবী (সঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এর ইসনাদ খুবই দুর্বল এবং ছেদ কাটা। এতে রয়েছে যে, হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) মিম্বরের উপর উঠে বলেনঃ “হে জনমণ্ডলী!তোমাদের মধ্যে কেউ কি (আরবী)-এর তাফসীর রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) হতে শুনেছে?” তখন হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) লাফিয়ে উঠে বলেন, হ্যা, আমি (শুনেছি)। তিনি (রাসূলুল্লাহ সঃ) বলেছেনঃ (আরবী) হলো আল্লাহ তা'আলার নামসমূহের মধ্যে একটি নাম। (আরবী) দ্বারা অর্থ নেয়া হয়েছেঃ (আরবী) (অর্থাৎ বদরের দিন পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পলায়নকারীরা শাস্তি আস্বাদন করেছে)। (আরবী) দ্বারা উদ্দেশ্য হলোঃ (আরবী) অর্থাৎ যালিমরা তাদের পরিণাম কি তা সত্বরই জানতে পারবে।”(২৬:২২৭) হযরত উমার (রাঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে (আরবী)-এর অর্থ জিজ্ঞেস করলে তিনি নীরব থাকেন। তখন হযরত আবু যার (রাঃ) দাড়িয়ে যান এবং হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর মতই তাফসীর করেন এবং বলেন যে, (আরবী)-এর অর্থ হলো (আরবী) অর্থাৎ (লোকদের উপর) আসমানী আযাব আসবে। এরপর মহান আল্লাহ বলেন, হে নবী (সঃ) ! তোমার উপর যেমন এই কুরআনের অহী অবতীর্ণ হচ্ছে, অনুরূপভাবে তোমার পূর্ববর্তী নবী-রাসূলদের প্রতিও কিতাব ও সহীফাসমূহ অবতীর্ণ হয়েছিল। এগুলো সবই অবতীর্ণ হয়েছিল আল্লাহ তাআলার নিকট হতে যিনি স্বীয় প্রতিশোধ গ্রহণের ব্যাপারে পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত হারিস ইবনে হিশাম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনার নিকট অহী কিভাবে আসে?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “কখনো ঘন্টার অবিরত শব্দের ন্যায়, যা আমার কাছে খুব কঠিন ও ভারী বোধ হয়। যখন ওটা শেষ হয়ে যায়। তখন আমাকে যা কিছু বলা হয় সবই আমার মুখস্থ হয়ে যায়। আর কখনো। ফেরেশতা মানুষের আকৃতিতে আমার নিকট আগমন করেন। আমার সাথে তিনি কথা বলেন এবং যা কিছু তিনি বলেন সবই আমি মনে করে নিই। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন যে, কঠিন শীতের সময় যখন তাঁর প্রতি অহী অবতীর্ণ হতো তখন তিনি অত্যন্ত ঘেমে যেতেন, এমনকি তাঁর কপাল মুবারক হতে টপ টপ করে ঘাম ঝরে পড়তো। (এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে)হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে অহীর অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে বলেনঃ “জিঞ্জিরের ঝন্ ঝন্ শব্দের মত একটা শব্দ শুনতে পাই। অতঃপর আমি ওর প্রতি কান। লাগিয়ে দিই। এরূপ অহী আমার কাছে খুবই কঠিন বোধ হয়। মনে হয় যেন আমার প্রাণবায়ু নির্গত হয়ে যাবে। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন) শরহে বুখারীর শুরুতে আমরা অহীর অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সুতরাং সমুদয় প্রশংসা আল্লাহরই প্রাপ্য। মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ যমীন ও আসমানের সমুদয় সৃষ্টজীব তাঁরই দাস এবং তাঁরই কর্তৃত্বাধীন। তার সামনে সবাই বিনীত ও বাধ্য। তিনি সমুন্নত, মহান। তার শ্রেষ্ঠত্ব, বড়ত্ব ও মাহাত্ম্যের অবস্থা এই যে, আকাশমণ্ডলী ঊর্ধ্বদেশ হতে ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয় এবং ফেরেশতারা তাঁদের প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করেন এবং মর্তবাসীদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আরশ বহনকারী ফেরেশতামণ্ডলী এবং ওর চতুষ্পর্শ্বের ফেরেশতারা তাদের প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং যারা তার প্রতি ঈমান রাখে তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে (এবং বলে), হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আপনার রহমত ও জ্ঞান দ্বারা প্রত্যেক জিনিসকে ঘিরে রেখেছেন। সুতরাং যারা তাওবা করেছে এবং আপনার পথের অনুসারী হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা করুন।”(৪০:৭) অতঃপর মহান আল্লাহ বলেনঃ যারা আল্লাহর পরিবর্তে অপরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে, আল্লাহ তাদের প্রতি কঠোর দৃষ্টি রাখেন। তিনি স্বয়ং তাদেরকে পুরোপুরি শাস্তি প্রদান করবেন। তোমার (নবীর সঃ) কাজ শুধু তাদেরকে সতর্ক করে দেয়া। তুমি তাদের কর্মবিধায়ক নও, বরং সবকিছুর কর্মবিধায়ক হলেন আল্লাহ।

وَكَذَٰلِكَ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لِتُنْذِرَ أُمَّ الْقُرَىٰ وَمَنْ حَوْلَهَا وَتُنْذِرَ يَوْمَ الْجَمْعِ لَا رَيْبَ فِيهِ ۚ فَرِيقٌ فِي الْجَنَّةِ وَفَرِيقٌ فِي السَّعِيرِ

📘 Please check ayah 42:8 for complete tafsir.

وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ لَجَعَلَهُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَلَٰكِنْ يُدْخِلُ مَنْ يَشَاءُ فِي رَحْمَتِهِ ۚ وَالظَّالِمُونَ مَا لَهُمْ مِنْ وَلِيٍّ وَلَا نَصِيرٍ

📘 ৭-৮ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ হে নবী (সঃ)! তোমার পূর্ববর্তী নবীদের উপর যেমন আল্লাহর অহী আসতো, অনুরূপভার তোমার উপরও এই কুরআন অহীর মাধ্যমে। অবতীর্ণ করা হয়েছে। এর ভাষা আরবী এবং এর বর্ণনা খুবই স্পষ্ট ও খোলাখুলি। যাতে তুমি মক্কাবাসী এবং ওর চতুর্দিকের জনগণকে সতর্ক করতে। পার। অর্থাৎ তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করতে পার আল্লাহর আযাব হতে। দ্বারা প্রাচ্যের ও পাশ্চাত্যের সমস্ত শহরকে ও জনপদকে বুঝানো হয়েছে। মক্কা শরীফকে ‘উম্মুল কুরা’ বলার কারণ এই যে, এটা সমস্ত শহর হতে ভাল ও উত্তম। এর বহু দলীল প্রমাণ রয়েছে যেগুলো নিজ নিজ জায়গায় বর্ণিত হবে। এখানে একটি দলীল বর্ণনা করা হচ্ছে যা সংক্ষিপ্ত এবং স্পষ্টও বটে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আদী হামরা যুহরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) মক্কার হাশূরাহ নামক বাজারে দাঁড়িয়েছিলেন এমতাবস্থায় তিনি তাঁকে বলতে শুনেনঃ “হে মক্কাভূমি! আল্লাহর কসম! তুমি আল্লাহর সবচেয়ে উত্তম ভূমি এবং আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় ভূমি। আল্লাহর কসম! যদি তোমার উপর হতে আমাকে বের করে দেয়া না হতো তবে আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে যেতাম না।” (এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ), ইমাম নাসাঈ (রঃ) এবং ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে হাসান সহীহ বলেছেন)মহান আল্লাহ বলেনঃ আর এই কুরআন আমি তোমার প্রতি এজন্যে অবতীর্ণ করেছি যে, যেন তুমি মানুষকে সতর্ক করতে পার কিয়ামত দিবস সম্পর্কে যাতে কোন সন্দেহ নেই। যেদিন কিছু লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং কিছু লোক জাহান্নামে যাবে। এটা এমন দিন হবে যে, জান্নাতীরা লাভবান হবে এবং জাহান্নামীরা হবে ক্ষতিগ্রস্ত। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “স্মরণ কর, যেদিন তিনি তোমাদেরকে সমবেত করবেন সমাবেশ দিবসে সেদিন হবে লাভ লোকসানের দিন।”(৬৪:৯) অন্য এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “এতে নিশ্চয়ই ঐ ব্যক্তির জন্যে নিদর্শন রয়েছে যে আখিরাতের আযাবকে ভয় করে। ওটা হলো ঐ দিন যেই দিন সমস্ত মানুষকে একত্রিত করা হবে এবং (সবারই) উপস্থিতির দিন। আমি এটাকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে বিলম্বিত করছি। ঐদিন কেউই আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কথা বলতে পারবে না। তাদের মধ্যে কেউ হবে হতভাগ্য এবং কেউ হবে ভাগ্যবান।”(১১:১০৩-১০৫)।হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদের নিকট আগমন করেন। ঐ সময় তার হাতে দু'টি কিতাব ছিল। তিনি আমাদেরকে জিজ্ঞেস করেনঃ “এ কিতাব দু’টি কি তা তোমরা জান কি?” আমরা উত্তরে বললামঃ আমাদের এটা জানা নেই। হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমাদেরকে এর খবর দিন। তখন তিনি তার ডান হাতের কিতাবটির দিকে ইঙ্গিত করে বলেনঃ “এটা রাব্বল আলামীন আল্লাহ তাআলার কিতাব। এতে জান্নাতীদের এবং তাদের পিতাদের ও গোত্রসমূহের নাম রয়েছে। শেষে হিসেব করে সর্বমোট করে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে আর কম বেশী হতে পারে না।” অতঃপর তিনি তার বাম হাতের কিতাবটির দিকে ইঙ্গিত করে বলেনঃ “এটা হলো জাহান্নামীদের নামের তালিকা বহি। এতেও তাদের নাম, তাদের পিতাদের নাম এবং তাদের গোত্রসমূহের নাম রয়েছে। শেষে হিসেব করে সর্বমোট করে দেয়া হয়েছে। সুতরাং এর মধ্যে আর কম বেশী হবে না।” তখন তার সাহাবীগণ বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! তাহলে আমাদের আমলের আর প্রয়োজন কি?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) জবাবে বললেনঃ “ঠিকভাবে থাকো। মঙ্গল ও কল্যাণের কাছে কাছে থাকো। জান্নাতীদের পরিসমাপ্তি ভাল কাজের উপরই হবে, তারা যে কাজই করতে থাকুক না কেন। আর জাহান্নামীদের পরিসমাপ্তি মন্দ আমলের উপরই হবে, তারা যে কাজই করতে থাকুক না কেন।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় হস্তদ্বয় মুষ্টিবদ্ধ করলেন এবং বললেনঃ “মহামহিমান্বিত আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের ফায়সালা শেষ করে ফেলেছেন। একদল যাবে জান্নাতে এবং একদল যাবে জাহান্নামে।” এর সাথে সাথেই রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় ডান ও বাম হাত দ্বারা ইশারা করেন যেন তিনি কোন জিনিস নিক্ষেপ করছেন। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম তিরমিযী (রঃ) এবং ইমাম নাসাঈ (রঃ) বর্ণনা।করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে হাসান গারীব বলেছেন)ইমাম বাগাভীর (রঃ) তাফসীরে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে এবং তাতে কিছু বেশী আছে। তাতে আছে যে, একদল যাবে জান্নাতে এবং একদল যাবে জাহান্নামে। আর মহামহিমান্বিত আল্লাহর পক্ষ হতে আদল আর আদল বা ন্যায় আর ন্যায়ই থাকবে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন যে, আল্লাহ তা'আলা যখন হযরত আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করেন এবং তার মধ্য হতে তাঁর সন্তানদেরকে বের করেন, আর তারা পিপড়ার মত হয়ে ময়দানে ছড়িয়ে পড়ে। তখন তাদেরকে তিনি স্বীয় দুই মুষ্টির মধ্যে নিয়ে নেন এবং বলেনঃ “এগুলোর একটি অংশ পুণ্যবান এবং অপর অংশ পাপী।” আবার তাদেরকে ছড়িয়ে দেন এবং পুনরায় একত্রিত করেন এবং আবার তিনি তাদেরকে মুষ্টির মধ্যে করে নেন। একটি অংশ জান্নাতী ও আর একটি অংশ জাহান্নামী। (এ রিওয়াইয়াতটি মাওকুফ হওয়াই সঠিক কথা। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন)হযরত আবু নাযরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আবু আবদিল্লাহ (রাঃ) নামক রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর একজন সাহাবী রুগ্ন ছিলেন। সাহাবীগণ (রাঃ) তাঁকে দেখতে যান। তারা দেখেন যে, তিনি ক্রন্দন করছেন। তাঁরা তাঁকে বলেন, আপনি কাঁদছেন কেন? অথচ রাসূলুল্লাহ (সঃ) তো আপনাকে শুনিয়েছেনঃ “গোঁফ ছোট করে রাখবে যে পর্যন্ত না তুমি আমার সাথে মিলিত হবে। ঐ সাহাবী (রাঃ) উত্তরে বললেন, এটা ঠিকই বটে। কিন্তু আমাকে তো ঐ হাদীসটি কাঁদাচ্ছে যে, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা'আলা স্বীয় ডান মুষ্টির মধ্যে কিছু মাখলুক রাখেন এবং অনুরূপভাবে বাম মুষ্টির মধ্যেও কিছু মাখলুক রাখেন, অতঃপর বলেনঃ “এ লোকগুলো এর জন্যে অর্থাৎ জান্নাতের জন্যে এবং এ লোকগুলো এর জন্যে অর্থাৎ জাহান্নামের জন্যে। আর এতে আমি কোন পরোয়া করি না। সুতরাং আমার জানা নেই যে, আমি তার কোন মুষ্টির মধ্যে ছিলাম। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন) তকদীর প্রমাণ করার আরো বহু হাদীস রয়েছে। এরপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ আল্লাহ ইচ্ছা করলে মানুষকে একই উম্মত করতে পারতেন, অর্থাৎ হয় সকলকেই হিদায়াত দান করতেন, না হয় সকলকেই পথভ্রষ্ট করতেন। কিন্তু আল্লাহ এদের মধ্যে পার্থক্য রেখে দিয়েছেন। কাউকেও তিনি হিদায়াতের উপর রেখেছেন এবং কাউকেও সুপথ হতে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তার হিকমত বা নিপুণতা তিনিই জানেন। তিনি যাকে ইচ্ছা স্বীয় অনুগ্রহের অধিকারী করেন। আর যালিমদের কোন অভিভাবক নেই, নেই কোন সাহায্যকারী। ইবনে হাজীরাহ (রঃ)-এর নিকট এ খবর পৌঁছেছে যে, হযরত মূসা (আঃ) আরয করেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! আপনি আপনার মাখলুককে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তাদের কতকগুলোকে নিয়ে যাবেন জান্নাতে এবং কতকগুলোকে নিয়ে যাবেন জাহান্নামে। যদি সবকেই জান্নাতে প্রবিষ্ট করতেন তবে কতই না ভাল হতো!” তখন আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ “হে মূসা (আঃ)! তোমার জামাটি উঁচু কর।” তিনি তখন তাঁর জামাটি উচু করলেন। মহান আল্লাহ আবার বললেনঃ “আরো উঁচু করে ধর। হযরত মূসা (আঃ) বললেনঃ “হে আল্লাহ! আমি আমার সারা দেহ হতে তো আমার জামাটি উঁচু করেছি, শুধু ঐ জায়গাটুকু বাকী রয়েছে যার উপর হতে সরানোর মধ্যে কোন কল্যাণ নেই।” তখন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “হে মূসা (আঃ)! এরূপভাবেই আমি আমার সমস্ত মাখলুককেই জান্নাতে প্রবিষ্ট করবো, শুধু তাদেরকে নয় যারা সম্পূর্ণরূপে কল্যাণ শূন্য হবে।” (এটা ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

أَمِ اتَّخَذُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ ۖ فَاللَّهُ هُوَ الْوَلِيُّ وَهُوَ يُحْيِي الْمَوْتَىٰ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

📘 Please check ayah 42:12 for complete tafsir.