slot qris slot gacor terbaru slot gacor terbaik slot dana link slot gacor slot deposit qris slot pulsa slot gacor situs slot gacor slot deposit qris slot qris bokep indo
| uswah-academy
WhatsApp Book A Free Trial
القائمة

🕋 تفسير سورة الأحقاف

(Al-Ahqaf) • المصدر: BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ حم

📘 Please check ayah 46:6 for complete tafsir.

قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ كَانَ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ وَكَفَرْتُمْ بِهِ وَشَهِدَ شَاهِدٌ مِنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ عَلَىٰ مِثْلِهِ فَآمَنَ وَاسْتَكْبَرْتُمْ ۖ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ

📘 Please check ayah 46:14 for complete tafsir.

وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا لِلَّذِينَ آمَنُوا لَوْ كَانَ خَيْرًا مَا سَبَقُونَا إِلَيْهِ ۚ وَإِذْ لَمْ يَهْتَدُوا بِهِ فَسَيَقُولُونَ هَٰذَا إِفْكٌ قَدِيمٌ

📘 Please check ayah 46:14 for complete tafsir.

وَمِنْ قَبْلِهِ كِتَابُ مُوسَىٰ إِمَامًا وَرَحْمَةً ۚ وَهَٰذَا كِتَابٌ مُصَدِّقٌ لِسَانًا عَرَبِيًّا لِيُنْذِرَ الَّذِينَ ظَلَمُوا وَبُشْرَىٰ لِلْمُحْسِنِينَ

📘 Please check ayah 46:14 for complete tafsir.

إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ

📘 Please check ayah 46:14 for complete tafsir.

أُولَٰئِكَ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ خَالِدِينَ فِيهَا جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

📘 ১০-১৪ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তাআলা স্বীয় রাসূল (সঃ)-কে বলেনঃ হে মুহাম্মাদ (সঃ)! তুমি এই মুশরিক ও কাফিরদেরকে বল- সত্যিই যদি এই কুরআন আল্লাহর নিকট হতে এসে থাকে এবং এর পরও যদি তোমরা এটাকে অস্বীকার করতেই থাকে। তবে তোমাদের অবস্থা কি হতে পারে তা চিন্তা করেছো কি? যে আল্লাহ তাবারাকা, ওয়া তা'আলা আমাকে সত্যসহ তোমাদের নিকট এই পবিত্র কিতাব দিয়ে পাঠিয়েছেন, তিনি তোমাদেরকে কি শাস্তি প্রদান করবেন তা কি ভেবে দেখেছো? তোমরা এই কিতাবকে অস্বীকার করছে এবং মিথ্যা জানছো, অথচ এর সত্যতার সাক্ষ্য প্রদান করছে ঐ সব কিতাব যেগুলো ইতিপূর্বে সময়ে সময়ে পূর্ববর্তী নবীদের উপর নাযিল হতে থেকেছে এবং বানী ইসরাঈলের একজন এর সত্যতার সাক্ষ্য দিয়েছে এবং এর হাকীকতকে চিনেছে ও মেনেছে এবং এর উপর ঈমান এনেছে। কিন্তু তোমরা এর অনুসরণ হতে গর্বভরে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ভাবার্থ এও বর্ণনা করা হয়েছে যে, ঐ সাক্ষী তার নবীর উপর এবং তার কিতাবের উপর বিশ্বাস করেছে, কিন্তু তোমরা তোমাদের নবীর সাথে ও তোমাদের কিতাবের সাথে কুফরী করেছো।আল্লাহ তা'আলা যালিমদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না।(আরবী) শব্দটি (আরবী) এবং এটা স্বীয় সাধারণ অর্থের দিক দিয়ে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) প্রমুখ সকলকেই অন্তর্ভুক্ত করে। এটা স্মরণ রাখার বিষয় যে, এ আয়াতটি মাক্কী এবং এটা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ)-এর ইসলাম গ্রহণের পূর্বে অবতীর্ণ হয়। নিম্নের আয়াতটিও এ আয়াতের অনুরূপঃ (আরবী) অর্থাৎ “যখন তাদের কাছে পাঠ করা হয় তখন তারা বলে- আমরা এর উপর ঈমান আনলাম, নিশ্চয়ই এটা আমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে সত্য, আমরা তো এর পূর্বেই মুসলমান ছিলাম।”(২৮:৫৩) অন্য জায়গায় আছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “নিশ্চয়ই যাদেরকে এর পূর্বে জ্ঞান দেয়া হয়েছে তাদের নিকট যখন এটা পাঠ করা হয় তখনই তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং বলেঃ আমাদের প্রতিপালক পবিত্র, মহান। আমাদের প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি কার্যকরী হয়েই থাকে।”(১৭:১০৭-১০৮) হযরত মাসরূক (রঃ) এবং হযরত শা'বী (রঃ) বলেন যে, এখানে এই আয়াত দ্বারা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ)-কে বুঝানো হয়নি। কেননা, এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় মক্কায়, আর হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করেন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মদীনায় হিজরতের পর।” (এটা ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) এবং ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত সা'দ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে শুনিনি যে, ভূ-পৃষ্ঠে চলাফেরাকারী কোন মানুষকে তিনি জান্নাতবাসী বলেছেন, একমাত্র হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) ছাড়া। তাঁর ব্যাপারেই (আরবী)-এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ), ইমাম মুসলিম (রঃ) এবং ইমাম নাসাঈ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ), হযরত মুজাহিদ (রঃ), হযরত যহহাক (রঃ), হযরত কাতাদা (রঃ), হযরত ইকরামা (রঃ), হযরত ইউসুফ ইবনে আবদিল্লাহ ইবনে সালাম (রঃ), হযরত হিলাল ইবনে ইয়াসাফ (রঃ), হযরত সাওরী (রঃ) হযরত মালিক ইবনে আনাস (রঃ) এবং হযরত ইবনে যায়েদ (রঃ) বলেন যে, এ আয়াত দ্বারা হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে সালামকেই (রাঃ) বুঝানো হয়েছে।ইরশাদ হচ্ছেঃ এই কাফিররা বলে- “এই কুরআন যদি ভাল জিনিসই হতো তবে আমাদের ন্যায় সম্ভ্রান্ত বংশীয় এবং আল্লাহর গৃহীত বান্দাদের উপর বিলাল (রাঃ), আম্মার (রাঃ), সুহায়েব (রাঃ), খাব্বাব (রাঃ) প্রমুখ নিম্ন শ্রেণীর লোকেরা অগ্রগামী হতো না। বরং সর্বপ্রথম আমরাই এটা কবুল করতাম। কিন্তু এটা তাদের সম্পূর্ণ বাজে ও ভিত্তিহীন কথা। মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “এভাবেই আমি তাদের কাউকেও কারো উপর ফিত্নায় ফেলে থাকি, যেন তারা বলেঃ এরাই কি তারা, আমাদের মধ্য হতে যাদের উপর আল্লাহ তা'আলা অনুগ্রহ করেছেন?”(৬:৫৩) অর্থাৎ তারা বিস্মিত হয়েছে যে, কি করে এ লোকগুলো হিদায়াত প্রাপ্ত হয়েছে! যদি এটাই হতো তবে তো তারাই অগ্রগামী হতো। কিন্তু ওটা ছিল তাদের সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। এটা নিশ্চিত কথা যে, যাদের সুবুদ্ধি রয়েছে এবং যারা শান্তিকামী লোক তারা সদা কল্যাণের পথে অগ্রগামীই হয়। এ জন্যেই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বিশ্বাস এই যে, যে কথা ও কাজ আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর সাহাবীগণ (রাঃ) হতে প্রমাণিত না হয় ওটা বিদআত। কেননা, যদি তাতে কল্যাণ নিহিত থাকতো তবে ঐ পবিত্র দলটি, যারা কোন কাজেই পিছনে থাকতেন না, তাঁরা ওটাকে কখনো ছেড়ে দিতেন না। মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেন যে, এই কাফিররা কুরআন দ্বারা পরিচালিত নয় বলে তারা বলেঃ ‘এটা তো এক পুরাতন মিথ্যা।' একথা বলে তারা কুরআন এবং কুরআনের ধারক ও বাহকদেরকে ভর্ৎসনা করে থাকে। এটাই ঐ অহংকার যার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “অহংকার হলো সত্যকে সরিয়ে ফেলা এবং লোকদেরকে তুচ্ছ জ্ঞান করা।”এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ এর পূর্বে ছিল মূসা (আঃ)-এর কিতাব আদর্শ ও অনুগ্রহ স্বরূপ। ওটা হলো তাওরাত। এই কিতাব অর্থাৎ কুরআন পূর্ববর্তী কিতাবগুলোর সমর্থক। এই কুরআন আরবী ভাষায় অবতারিত। এর ভাষা অলংকার ও বাকচাতুর্যপূর্ণ এবং ভাবার্থ অতি স্পষ্ট ও প্রকাশমান। এটা যালিম ও কাফিরদেরকে সতর্ক করে এবং মুমিনদেরকে সুসংবাদ দেয়। এরপরবর্তী আয়াতের তাফসীর সূরায়ে হা-মীম আসসাজদাহর মধ্যে গত হয়েছে। তাদের কোন ভয় নেই অর্থাৎ আগামীতে তাদের ভয়ের কোন কারণ নেই এবং তারা চিন্তিত ও দুঃখিত হবে না, অর্থাৎ তারা তাদের ছেড়ে যাওয়া জিনিসগুলোর জন্যে মোটেই দুঃখিত হবে না।তারাই জান্নাতের অধিবাসী, সেথায় তারা স্থায়ী হবে। এটাই তাদের ভাল কর্মের ফল।

وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ إِحْسَانًا ۖ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ كُرْهًا وَوَضَعَتْهُ كُرْهًا ۖ وَحَمْلُهُ وَفِصَالُهُ ثَلَاثُونَ شَهْرًا ۚ حَتَّىٰ إِذَا بَلَغَ أَشُدَّهُ وَبَلَغَ أَرْبَعِينَ سَنَةً قَالَ رَبِّ أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِي أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَىٰ وَالِدَيَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَأَصْلِحْ لِي فِي ذُرِّيَّتِي ۖ إِنِّي تُبْتُ إِلَيْكَ وَإِنِّي مِنَ الْمُسْلِمِينَ

📘 Please check ayah 46:16 for complete tafsir.

أُولَٰئِكَ الَّذِينَ نَتَقَبَّلُ عَنْهُمْ أَحْسَنَ مَا عَمِلُوا وَنَتَجَاوَزُ عَنْ سَيِّئَاتِهِمْ فِي أَصْحَابِ الْجَنَّةِ ۖ وَعْدَ الصِّدْقِ الَّذِي كَانُوا يُوعَدُونَ

📘 ১৫-১৬ নং আয়াতের তাফসীর: এর পূর্বে আল্লাহ তা'আলার একত্ববাদ, আন্তরিকতার সাথে তাঁর ইবাদত এবং ওর প্রতি অটলতার হুকুম ছিল বলে এখানে পিতা-মাতার হক আদায় করার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। এই বিষয়েরই আরো বহু আয়াত কুরআন পাকের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন তিনি ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত না করতে ও পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে।”(১৭:২৩) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “সুতরাং আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। প্রত্যাবর্তন তো আমারই নিকট।" (৩১:১৪) এই বিষয়ের আরো অনেক আয়াত আছে। এখানে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “আমি মানুষকে তার মাতা-পিতার প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি।'হযরত সা'দ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তাঁর মাতা তাঁকে বলেঃ “আল্লাহ তা'আলা পিতা-মাতার আনুগত্য করার কি নির্দেশ দেননি? জেনে রেখো যে, আমি পানাহার করবো না যে পর্যন্ত না তুমি আল্লাহর সাথে কুফরী করবে।” হযরত সা'দ (রাঃ) এতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁর মাতা তাই করে অর্থাৎ পানাহার সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করে। শেষ পর্যন্ত লাঠি দ্বারা তার মুখ ফেড়ে জোরপূর্বক তার মুখে খাদ্য ও পানীয় ঢুকিয়ে দেয়া হয়। তখন (আরবী) এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়।” (এ হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ তায়ালেসী (রঃ) বর্ণনা করেছেন। ইমাম মুসলিম (রঃ) এবং ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ) ছাড়া অন্যান্য আহলুস সুনানও এটা বর্ণনা করেছেন) আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “তার জননী তাকে গর্ভে ধারণ করে কষ্টের সাথে এবং প্রসব করে কষ্টের সাথে। হযরত আলী (রাঃ) এ আয়াত দ্বারা এবং এর সাথে সূরায়ে লোকমানের (তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে) এবং আল্লাহ তাআলার নির্দেশঃ (আরবী) অর্থাৎ “মাতারা যেন তাদের সন্তানদেরকে পূর্ণ দুই বছর দুধ পান করায় তাদের জন্যে যারা দুধ পান করানোর সময়কাল পূর্ণ করতে চায়।”(২:২৩৩) এর দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছেন যে, গর্ভধারণের সময়কাল হলো কমপক্ষে ছয় মাস। তাঁর এই দলীল গ্রহণ খুবই দৃঢ় এবং সঠিক। হযরত উসমান (রাঃ) এবং অন্যান্য সাহাবায়ে কিরামও এর পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। হযরত মুআম্মার ইবনে আবদিল্লাহ জুহনী (রাঃ) বলেন যে, তাঁর গোত্রের একটি লোক জুহনিয়্যাহ গোত্রের একটি মহিলাকে বিয়ে করে। ছয় মাস পূর্ণ হওয়া মাত্রই মহিলাটি সন্তান প্রসব করে। তখন তার স্বামী হযরত উসমান (রাঃ)-এর নিকট তার ঐ স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। হযরত উসমান (রাঃ) তখন লোক পাঠিয়ে মহিলাটিকে ধরে আনতে বলেন। মহিলাটি প্রস্তুত হয়ে আসতে উদ্যতা হলে তার বোন কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। মহিলাটি তখন তার বোনকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেঃ “তুমি কাঁদছো কেন? আল্লাহর কসম! আমার স্বামী ছাড়া দুনিয়ার কোন একটি লোকের সাথেও আমি কখনো মিলিত হইনি। আমার দ্বারা কখনো কোন দুষ্কর্ম হয়নি। সুতরাং আমার ব্যাপারে মহান আল্লাহর কি ফায়সালা হচ্ছে তা তুমি সত্বরই দেখে নিবে।” মহিলাটি হযরত উসমান (রাঃ)-এর নিকট হাযির হলে তিনি তাকে রজম (পাথর মেরে হত্যা) করার নির্দেশ দেন। এ খবর হযরত আলী (রাঃ)-এর কর্ণগোচর হলে তিনি খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত উসমান (রাঃ)-কে প্রশ্ন করেনঃ “আপনি এটা কি করতে যাচ্ছেন?” জবাবে তিনি বলেনঃ “এই মহিলাটি তার বিয়ের ছয় মাস পরেই সন্তান প্রসব করেছে, যা অসম্ভব (সুতরাং আমি তাকে ব্যভিচারের অপরাধে রজম করার নির্দেশ দিয়েছি)। হযরত আলী (রাঃ) তখন তাকে বলেনঃ “আপনি কি কুরআন পড়েননি?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “হঁ্যা, অবশ্যই পড়েছি।” হযরত আলী (রাঃ) তখন বলেনঃ “তাহলে কুরআন কারীমের (আরবী) (অর্থাৎ তার গর্ভধারণ ও দুধ ছাড়ানোর সময়কাল হলো ত্রিশমাস) এ আয়াতটি এবং (আরবী) (অর্থাৎ দুধ ছাড়ানোর সময়কাল হলো পূর্ণ দুই বছর) এ আয়াতটি পড়েননি? সুতরাং গর্ভধারণ ও দুধ পান করানোর মোট সময়কাল হলো ত্রিশ মাস। এর মধ্যে দুধ পান করানোর সময়কাল দুই বছর বা চব্বিশ মাস বাদ গেলে বাকী থাকে ছয় মাস। তাহলে কুরআন কারীম দ্বারা জানা গেল যে, গর্ভধারণের সময়কাল হলো কমপক্ষে ছয় মাস। এ মহিলাটি এ সময়কালের মধ্যেই সন্তান প্রসব করেছে। সুতরাং তার উপর কি করে ব্যভিচারের অভিযোগ দেয়া যেতে পারে?”এ কথা শুনে হযরত উসমান (রাঃ) বলেনঃ “আল্লাহর কসম! এ কথা সম্পূর্ণরূপে সঠিক! বড়ই দুঃখের বিষয় যে, এটা আমি চিন্তাই করিনি। যাও, মহিলাটিকে ফিরিয়ে নিয়ে এসো।” অতঃপর জনগণ মহিলাটিকে এমন অবস্থায় পেলো যে, সে যে দোষমুক্ত তা প্রমাণিত হয়ে গিয়েছিল। হযরত মুআম্মার (রঃ) বলেনঃ “আল্লাহর শপথ! একটি কাকের সাথে অন্য কাকের এবং একটি ডিমের সাথে অন্য ডিমের যেমন সাদৃশ্য থাকে, মহিলাটির শিশুর সাথে তার পিতার সাদৃশ্য এর চেয়েও বেশী ছিল। স্বয়ং তার পিতাও তাকে দেখে বলেঃ “আল্লাহর কসম! এটা যে আমারই সন্তান এ ব্যাপারে এখন আমার কোনই সন্দেহ নেই। আল্লাহ তাআলা মহিলাটির স্বামীকে একটা ক্ষত দ্বারা আক্রান্ত করেন যা তার চেহারায় দেখা দিয়েছিল। অবশেষে তাতেই সে মৃত্যুবরণ করে। (এটা ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন) এ রিওয়াইয়াতটি আমরা অন্য সনদে (আরবী)-এ আয়াতের তাফসীরে আনয়ন করেছি। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, যদি কোন নারী নয় মাসে সন্তান প্রসব করে তবে তার দুধ পান করানোর সময়কাল একুশ মাসই যথেষ্ট। আর যদি সাত মাসে সন্তান ভূমিষ্ট হয় তবে দুধ পানের সময়কাল হবে তেইশ মাস। আর যদি ছয় মাসে সন্তান প্রসব করে তবে দুধ পান করানোর সময়কাল হবে পূর্ণ দুই বছর। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেছেন যে, গর্ভধারণ ও দুধ ছাড়ানোর সময়কাল হলো ত্রিশ মাস।মহান আল্লাহ বলেনঃ ক্রমে সে পূর্ণ শক্তিপ্রাপ্ত হয় এবং চল্লিশ বছরে উপনীত হয় অর্থাৎ সে শক্তিশালী হয়, যৌবন বয়সে পৌছে, পুরুষদের গণনাভুক্ত হয়, জ্ঞান পূর্ণ হয়, বোধশক্তি পূর্ণতায় পৌঁছে এবং সহিষ্ণুতা লাভ করে। এটা বলা হয়ে থাকে যে, চল্লিশ বছর বয়সে মানুষের যে অবস্থা হয়, বাকী জীবন তার প্রায় ঐ অবস্থাই থাকে।হযরত মাসরূক (রঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়ঃ ‘মানুষকে কখন তার গুনাহর জন্যে পাকড়াও করা হয়? উত্তরে তিনি বলেনঃ “যখন তোমার বয়স চল্লিশ বছর হবে তখন তুমি নিজের মুক্তির জন্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করবে।”হযরত উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “বান্দার বয়স যখন চল্লিশ বছরে পৌঁছে তখন আল্লাহ তার হিসাব হালকা করে দেন। যখন তার বয়স ষাট বছর হয় তখন আকাশবাসীরা তাকে ভালবাসতে থাকেন। তার বয়স যখন আশি বছরে পৌঁছে তখন আল্লাহ তা'আলা পুণ্যগুলো ঠিক রাখেন এবং পাপগুলো মিটিয়ে দেন। যখন তার বয়স নব্বই বছর হয় তখন আল্লাহ তা'আলা তার পূর্বের ও পরের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন এবং তাকে তার পরিবার পরিজনদের জন্যে শাফাআতকারী বানিয়ে দেন এবং আকাশে লিখে দেন যে, সে আল্লাহর যমীনে তাঁর বন্দী।” (এ হাদীসটি হাফিয আবূ ইয়ালা (রঃ) বর্ণনা করেছেন। অন্য সনদে এটা মুসনাদে আহমাদেও বর্ণিত হয়েছে)দামেস্কের উমাইয়া শাসনকর্তা হাজ্জাজ ইবনে আবদিল্লাহ হাকামী বলেনঃ “চল্লিশ বছর বয়স পর্যন্ত তো আমি লোক লজ্জার খাতিরে অবাধ্যাচরণ ও পাপসমূহ বর্জন করেছি, এরপরে আল্লাহকে বলে লজ্জা করে আমি এগুলো পরিত্যাগ করেছি।” কবির নিম্নের উক্তিটি কতই না চমৎকারঃ (আরবী) অর্থাৎ “বাল্যকালে অবুঝ অবস্থায় যা কিছু হওয়ার হয়ে গেছে, কিন্তু বার্ধক্য যখন তার মুখ দেখালো তখন মাথার (চুলের) শুভ্রতা নিজেই মিথ্যা ও বাজে জিনিসকে বলে দিলোঃ এখন তুমি দূর হয়ে যাও।” এরপর মহান আল্লাহ বান্দার দু'আর বর্ণনা দিচ্ছেন যে, সে বলেঃ হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে সামর্থ্য দিন, যাতে আমি আপনার নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, আমার প্রতি ও আমার মাতা-পিতার প্রতি যে নিয়ামত ও অনুগ্রহ আপনি দান করেছেন তার জন্যে। আর যাতে আমি সন্ধার্য করতে পারি যা আপনি পছন্দ করেন। আমার জন্যে আমার সন্তান-সন্ততিদেরকে সঙ্কর্মপরায়ণ করে দিন। আমি আপনারই অভিমুখী হলাম এবং আত্মসমর্পণ করলাম। এতে ইরশাদ হয়েছে যে, চল্লিশ বছর বয়সে উপনীত হলে মানুষের উচিত পূর্ণভাবে আল্লাহ তা'আলার নিকট তাওবা করা এবং নব উদ্যমে এমন কাজ করে যাওয়া যাতে তিনি সন্তুষ্ট হন।হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তাশাহহুদে পড়ার জন্যে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে নিম্নলিখিত দু'আটি শিক্ষা দিতেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমাদের অন্তরে আপনি ভালবাসা সৃষ্টি করে দিন, আমাদের পরস্পরের মাঝে সন্ধি স্থাপন করুন, আমাদেরকে শান্তির পথ দেখিয়ে দিন, আমাদেরকে (অজ্ঞতার) অন্ধকার হতে রক্ষা করে (জ্ঞানের) আলোকের দিকে নিয়ে যান, আমাদেরকে প্রকাশ্য ও গোপনীয় নির্লজ্জতাপূর্ণ কাজ হতে বাঁচিয়ে নিন, আমাদের কানে, আমাদের চোখে, আমাদের অন্তরে, আমাদের স্ত্রীদের মধ্যে এবং আমাদের সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে বরকত দান করুন এবং আমাদের তাওবা কবুল করুন, নিশ্চয়ই আপনি তাওবা কবুলকারী ও দয়ালু। আমাদেরকে আপনার নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী বানিয়ে দিন এবং ঐ নিয়ামতরাশির কারণে আমাদেরকে আপনার প্রশংসাকারী করুন ও আপনার এই নিয়ামতরাজিকে স্বীকারকারী আমাদেরকে বানিয়ে দিন। আর আমাদের উপর আপনার নিয়ামত পরিপূর্ণ করুন।” (এ হাদীসটি সুনানে আবি দাউদে বর্ণিত আছে)যে লোকদের বর্ণনা উপরে দেয়া হলো অর্থাৎ আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে এবং তার কাছে আত্মসমর্পণ করে ও নিজেদের পাপের জন্যে তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থী হয় তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ আমি তাদের সুকৃতিগুলো গ্রহণ করে থাকি এবং মন্দকর্মগুলো ক্ষমা করি। তাদের অল্প আমলের বিনিময়েই আমি তাদেরকে জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করে থাকি। তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা সত্য প্রমাণিত হবে।হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, রূহুল আমীন (হযরত জিবরাঈল আঃ) বলেন:“বান্দার পুণ্য ও পাপগুলো আনয়ন করা হবে এবং একটিকে অপরটির বিনিময় করা হবে। অতঃপর যদি একটি পুণ্যও বাকী থাকে তবে ওরই বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তাকে জানাতে পৌঁছিয়ে দিবেন।” হাদীসটির বর্ণনাকারী তার উস্তাদকে জিজ্ঞেস করেনঃ “যদি পাপরাশির বিনিময়ে সমস্ত পুণ্য শেষ হয়ে যায়?” উত্তরে তিনি আল্লাহ পাকের এ উক্তিটি উদ্ধৃত করেনঃ “আমি তাদের সুকৃতিগুলো গ্রহণ করে থাকি এবং মন্দ কর্মগুলো ক্ষমা করি, তারা জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত। তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা সত্য প্রমাণিত হবে।” অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, হযরত রূহুল আমীন (আঃ) এ উক্তিটি মহামহিমান্বিত আল্লাহ হতে উদ্ধৃত করেছেন।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) ও ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন। এ হাদীসটি গারীব বা দুর্বল, কিন্তু এর ইসনাদ খুবই উত্তম)হযরত সা'দ (রঃ) বলেনঃ যখন হযরত আলী (রাঃ) বসরার উপর বিজয় লাভ করেন ঐ সময় হযরত মুহাম্মাদ ইবনে হাতিব (রঃ) আমার নিকট আগমন করেন। একদা তিনি আমাকে বলেনঃ আমি একদা আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (রাঃ)-এর নিকট হাযির ছিলাম। ঐ সময় তথায় হযরত আম্মার (রঃ), হযরত সা’সা’ (রাঃ), হযরত আশতার (রাঃ) এবং হযরত মুহাম্মাদ ইবনে আবি বকর (রাঃ) বিদ্যমান ছিলেন। কতকগুলো লোক হযরত উসমান (রাঃ) সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে কিছু বিরূপ মন্তব্য করেন। ঐ সময় হযরত আলী (রাঃ) মসনদে উপবিষ্ট ছিলেন। তাঁর হাতে একটি ছড়ি ছিল। তখন তাদের মধ্যে কে একজন বলেনঃ “আপনাদের মাঝে তো এই বিতর্কের সঠিকভাবে ফায়সালাকারী বিদ্যমান রয়েছেন?” সুতরাং সবাই হযরত আলী (রাঃ)-কে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তরে বলেন, হযরত উসমান (রাঃ) নিশ্চিতরূপে ঐ লোকদের মধ্যে একজন ছিলেন যাঁদের সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “আমি এদেরই সুকৃতিগুলো গ্রহণ করে থাকি এবং মন্দকর্মগুলো ক্ষমা করি। তারা জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত। এদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা সত্য প্রমাণিত হবে।” আল্লাহর কসম! এই আয়াতে যাদের কথা বলা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন হযরত উসমান (রাঃ) এবং তাঁর সঙ্গীগণ।” একথা তিনি তিনবার বলেন। বর্ণনাকারী ইউসুফ (রঃ) বলেনঃ আমি হযরত মুহাম্মাদ ইবনে হাতিব (রঃ)-কে জিজ্ঞেস করলামঃ আপনাকে আমি আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, বলুন তো, আপনি কি এটা স্বয়ং হযরত আলী (রাঃ)-এর মুখে শুনেছেন? উত্তরে তিনি বলেনঃ “হ্যা, আল্লাহর কসম! আমি স্বয়ং এটা হযরত আলী (রাঃ)-এর মুখে শুনেছি।” (এটা ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

وَالَّذِي قَالَ لِوَالِدَيْهِ أُفٍّ لَكُمَا أَتَعِدَانِنِي أَنْ أُخْرَجَ وَقَدْ خَلَتِ الْقُرُونُ مِنْ قَبْلِي وَهُمَا يَسْتَغِيثَانِ اللَّهَ وَيْلَكَ آمِنْ إِنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ فَيَقُولُ مَا هَٰذَا إِلَّا أَسَاطِيرُ الْأَوَّلِينَ

📘 Please check ayah 46:20 for complete tafsir.

أُولَٰئِكَ الَّذِينَ حَقَّ عَلَيْهِمُ الْقَوْلُ فِي أُمَمٍ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِمْ مِنَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ ۖ إِنَّهُمْ كَانُوا خَاسِرِينَ

📘 Please check ayah 46:20 for complete tafsir.

وَلِكُلٍّ دَرَجَاتٌ مِمَّا عَمِلُوا ۖ وَلِيُوَفِّيَهُمْ أَعْمَالَهُمْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ

📘 Please check ayah 46:20 for complete tafsir.

تَنْزِيلُ الْكِتَابِ مِنَ اللَّهِ الْعَزِيزِ الْحَكِيمِ

📘 Please check ayah 46:6 for complete tafsir.

وَيَوْمَ يُعْرَضُ الَّذِينَ كَفَرُوا عَلَى النَّارِ أَذْهَبْتُمْ طَيِّبَاتِكُمْ فِي حَيَاتِكُمُ الدُّنْيَا وَاسْتَمْتَعْتُمْ بِهَا فَالْيَوْمَ تُجْزَوْنَ عَذَابَ الْهُونِ بِمَا كُنْتُمْ تَسْتَكْبِرُونَ فِي الْأَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَبِمَا كُنْتُمْ تَفْسُقُونَ

📘 ১৭-২০ নং আয়াতের তাফসীর: যেহেতু উপরে ঐ লোকদের অবস্থা বর্ণিত হয়েছিল যারা তাদের মাতা-পিতার জন্যে দু'আ করে এবং তাদের খিদমতে লেগে থাকে, আর সাথে সাথে তাদের পারলৌকিক মর্যাদা লাভ ও তথায় তাদের মুক্তি পাওয়া এবং তাদের প্রতিপালকের প্রচুর নিয়ামত প্রাপ্ত হওয়ার বর্ণনা দেয়া হয়েছিল, সেহেতু এর পরে ঐ হতভাগ্যদের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যারা তাদের পিতা-মাতার অবাধ্য হয় এবং তাদেরকে বহু অন্যায় কথা শুনিয়ে দেয়। কেউ কেউ বলেন যে, এ আয়াতটি হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর পুত্র হযরত আবদুর রহমান (রাঃ)-এর ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়, যেমন হযরত আওফী (রঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে এটা বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এর সঠিকতার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ রয়েছে। এটা খুবই দুর্বল উক্তি। কেননা, হযরত আবদুর রহমান ইবনে আবু বকর (রাঃ) তো মুসলমান হয়েছিলেন এবং উত্তমরূপে ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে তিনি অন্যতম ছিলেন। এমন কি তাঁর যুগের উত্তম লোকদের মধ্যে তিনি একজন ছিলেন। কোন কোন তাফসীরকারেরও এ উক্তি রয়েছে। কিন্তু সঠিক কথা এটাই যে, এ আয়াতটি আম বা সাধারণ। যে কেউই মাতা-পিতার অবাধ্য হবে তারই ব্যাপারে এটা প্রযোজ্য হবে।বর্ণিত আছে যে, মারওয়ান একদা স্বীয় ভাষণে বলেনঃ “আল্লাহ তা'আলা আমীরুল মুমিনীনকে (হযরত মুআবিয়া রাঃ-কে) ইয়াযীদের ব্যাপারে এক সুন্দর মত পোষণ করিয়েছিলেন। যদি তিনি তাঁকে নিজের স্থলাভিষিক্ত করে গিয়ে থাকেন তবে তো হযরত আবূ বকর (রাঃ) হযরত উমার (রাঃ)-কে তাঁর পরবর্তী খলীফা মনোনীত করে গিয়েছিলেন। তাঁর এ কথা শুনে হযরত আবদুর রহমান ইবনে আবি বকর (রাঃ) তাঁকে বলেনঃ “আপনি কি তাহলে সম্রাট হিরাক্লিয়াস ও খৃষ্টানদের নিয়মনীতির উপর আমল করতে চান? আল্লাহর কসম!প্রথম খলীফা (হযরত আবু বকর রাঃ) না তো নিজের সন্তানদের কাউকেও খলীফা হিসেবে মনোনীত করেছিলেন, না নিজের আত্মীয় স্বজনের মধ্যে কাউকে মনোনীত করেছিলেন। আর হ্যরত মুআবিয়া (রাঃ) যে এটা করেছিলেন তা শুধু নিজের মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং নিজের সন্তানের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে।” তখন মারওয়ান তাকে বলেনঃ “তুমি কি ঐ ব্যক্তি নও যে, তুমি মাতা-পিতাকে (আরবী) বলেছিলে?” উত্তরে আবদুর রহমান (রাঃ) তাঁকে বলেনঃ “আপনি কি একজন অভিশপ্ত ব্যক্তির পুত্র নন? আপনার পিতার উপর তো রাসূলুল্লাহ (সঃ) অভিশাপ দিয়েছিলেন। হযরত আয়েশা (রাঃ) এসব কথা শুনে মারওয়ানকে বলেনঃ “হে মারওয়ান! আপনি আবদুর রহমান (রাঃ) সম্পর্কে যে কথা বললেন তা সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা কথা। এ আয়াতটি আবদুর রহমান (রাঃ) সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়নি, বরং অমুকের পুত্র অমুকের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে।” অতঃপর মারওয়ান তাড়াতাড়ি মিম্বর হতে নেমে হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর বাড়ীর দরযায় এসে কিছুক্ষণ তাঁর সাথে কথা-বার্তা বলে ফিরে আসেন।” (এটা ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)সহীহ বুখারীতেও এ হাদীসটি অন্য সনদে ও অন্য শব্দে এসেছে। তাতে এও রয়েছে যে, হযরত মুআবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান (রাঃ)-এর পক্ষ হতে মারওয়ান হিজাযের শাসনকর্তা ছিলেন। তাতে এও আছে যে, মারওয়ান তাঁর সৈন্যদেরকে হযরত আবদুর রহমান (রাঃ)-কে গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি দৌড়ে গিয়ে তার বোন হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর গৃহে প্রবেশ করেছিলেন। ফলে, তারা তাকে ধরতে পারেনি। ঐ রিওয়াইয়াতে একথাও রয়েছে যে, হযরত আয়েশা (রাঃ) পর্দার আড়াল হতে বলেনঃ “আমার পবিত্রতা ঘোষণা সম্বলিত আয়াত ছাড়া আল্লাহ তা'আলা আমাদের সম্পর্কে কুরআন কারিমে আর কিছুই অবতীর্ণ করেননি।”সুনানে নাসাঈর রিওয়াইয়াতে রয়েছে যে, মারওয়ানের এই ভাষণের উদ্দেশ্য ছিল ইয়াযীদের পক্ষ হতে বায়আত গ্রহণ করা। হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর উক্তিতে এটাও রয়েছেঃ “মারওয়ান তার উক্তিতে মিথ্যাবাদী। যার ব্যাপারে এ আয়াত অবতীর্ণ হয় তার নাম আমার খুব জানা আছে, কিন্তু এখন আমি তার নাম প্রকাশ করতে চাই না। হ্যা, তবে মারওয়ানের পিতাকে রাসূলুল্লাহ (সঃ) মালউন বা অভিশপ্ত বলেছেন। আর মারওয়ান হলো তার ঔরষজাত সন্তান। সুতরাং তার উপরও লানত বাকী রয়েছে।”আল্লাহ তা'আলা ঐ লোকটির উক্তি উদ্ধৃত করে বলেন যে, সে তার মাতা-পিতাকে বলেঃ আফসোস তোমাদের জন্যে! তোমরা কি আমাকে এই ভয় দেখাতে চাও যে, আমি পুনরুত্থিত হবো যদিও আমার পূর্বে বহু পুরুষ গত হয়েছে? অর্থাৎ আমার পূর্বে তো লাখ লাখ, কোটি কোটি মানুষ মারা গেছে, তাদের একজনকেও তো পুনর্জীবিত হতে দেখিনি? তাদের একজনও তো ফিরে এসে কোন খবর দেয়নি?' পিতা-মাতা নিরুপায় হয়ে তখন আল্লাহ তাআলার নিকট ফরিয়াদ করে বলেঃ ‘দুর্ভোগ তোমার জন্যে! এখনো সময় আছে, তুমি আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন কর, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি অবশ্যই সত্য। কিন্তু ঐ অহংকারী তখনও বলেঃ ‘এটা তো অতীতকালের উপকথা ছাড়া কিছুই নয়।'আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “এদের পূর্বে যে জ্বিন ও মানুষ সম্প্রদায় গত হয়েছে তাদের মত এদের প্রতিও আল্লাহর উক্তি সত্য হয়েছে। যারা নিজেদেরও ক্ষতি সাধন করেছে এবং পরিবার পরিজনকেও ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে।” আল্লাহ তা'আলার এ উক্তিতে (আরবী) রয়েছে, অথচ এর পূর্বে (আরবী) শব্দ আছে। অর্থাৎ পূর্বে এক বচন এবং পরে বহু বচন এনেছেন। এর দ্বারাও আমাদের তাফসীরেরই পূর্ণ সহায়তা লাভ হয়। অর্থাৎ উদ্দেশ্য (আরবী) বা সাধারণ। যে কেউ পিতা-মাতার সাথে বেআদবী করবে এবং কিয়ামতকে অস্বীকার করবে তারই জন্যে এই হুকুম প্রযোজ্য হবে। যেমন হযরত হাসান (রঃ) একথাই বলেন যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কাফির, দুরাচার এবং মৃত্যুর পর পুনরুত্থানকে অস্বীকারকারী। হযরত আবু উমামা বাহিলী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা'আলা আরশের উপর হতে চার ব্যক্তির উপর লানত করেন এবং ফেরেশতামণ্ডলী আমীন বলে থাকেন। (প্রথম) যে ব্যক্তি কোন মিসকীনকে ফাকি দিয়ে বলে “তুমি এসো, আমি তোমাকে কিছু প্রদান করবো।” অতঃপর যখন সে তার কাছে আসে তখন সে বলেঃ আমার কাছে কিছুই নেই।' (দ্বিতীয়) যে মাউনকে বলে, অথচ তার সামনে কিছুই নেই। (তৃতীয়) ঐ ব্যক্তি, যাকে কোন লোক জিজ্ঞেস করেঃ ‘অমুকের বাড়ী কোনটি? সে তখন তাকে অন্য কারো বাড়ী দেখিয়ে দেয়। (চতুর্থ) ঐ ব্যক্তি, যে তার পিতা-মাতাকে প্রহার করে, শেষ পর্যন্ত তার পিতা-মাতা তার বিরুদ্ধে আল্লাহ তা'আলার নিকট ফরিয়াদ করতে থাকে।” (এ হাদীসটি হাফিয ইবনে আসাকির (রঃ) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু হাদীসটি খুবই গরীব বা দুর্বল)এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ প্রত্যেকের মর্যাদা তার কর্মানুযায়ী, এটা এই জন্যে যে, আল্লাহ প্রত্যেককে তার কর্মের পূর্ণ প্রতিফল দিবেন এবং তাদের প্রতি কোন অবিচার করা হবে না।হযরত আবদুর রহমান ইবনে যায়েদ ইবনে আসলাম (রঃ) বলেন যে, জাহান্নামের শ্রেণীগুলো নীচের দিকে গিয়েছে এবং জান্নাতের শ্রেণীগুলো গিয়েছে উপরের দিকে।আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ যেদিন কাফিরদেরকে জাহান্নামের সন্নিকটে উপস্থিত করা হবে সেদিন তাদেরকে ধমক হিসেবে বলা হবেঃ তোমরা তোমাদের পুণ্য ফল তো দুনিয়াতেই পেয়ে গেছে। সেখানেই তোমরা সুখ-সম্ভার ভোগ করে নিঃশেষ করেছে। আমীরুল মুমিনীন হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) এই আয়াতটিকে সামনে রেখেই বাঞ্ছিত ও সূক্ষ্ম খাদ্য ভক্ষণ হতে বিরত হয়েছিলেন। তিনি বলতেন, আমি ভয় করছি যে, আল্লাহ তা'আলা ধমক ও তিরস্কারের সুরে যেসব লোককে নিম্নের কথাগুলো বলবেন, না জানি আমিও হয়তো তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবোঃ “তোমরা তো পার্থিব জীবনে সুখ-সম্ভার ভোগ করে নিঃশেষ করেছো।”হযরত আবু জাফর (রঃ) বলেন যে, কতক লোক এমনও রয়েছে যে, যারা তাদের দুনিয়ায় কৃত পুণ্য কার্যগুলো কিয়ামতের দিন দেখতে পাবে না এবং তাদেরকে বলা হবেঃ তোমরা তো পার্থিব জীবনে সুখ-সম্ভার ভোগ করে নিঃশেষ করেছে।' অতঃপর মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ বলেনঃ “সুতরাং আজ তোমাদেরকে দেয়া হবে অবমাননাকর শাস্তি। কারণ তোমরা পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে ঔদ্ধ্যত প্রকাশ করেছিলে এবং তোমরা ছিলে সত্যদ্রোহী।' অর্থাৎ তাদের যেমন আমল ছিল তেমনই তারা ফল পেলো। দুনিয়ায় তারা সুখ-সম্ভার ভোগ করেছে, পরম সুখে জীবন অতিবাহিত করেছে এবং সত্যের অনুসরণ ছেড়ে অসত্য, অন্যায় ও আল্লাহর অবাধ্যাচরণে নিমগ্ন থেকেছে। সুতরাং আজ কিয়ামতের দিন তাদেরকে মহা লাঞ্ছনাজনক ও অবমাননাকর এবং কঠিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তিসহ জাহান্নামের নিম্নস্তরে পৌঁছিয়ে দেয়া হবে। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে এসব হতে রক্ষা করুন!

۞ وَاذْكُرْ أَخَا عَادٍ إِذْ أَنْذَرَ قَوْمَهُ بِالْأَحْقَافِ وَقَدْ خَلَتِ النُّذُرُ مِنْ بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا اللَّهَ إِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ

📘 Please check ayah 46:25 for complete tafsir.

قَالُوا أَجِئْتَنَا لِتَأْفِكَنَا عَنْ آلِهَتِنَا فَأْتِنَا بِمَا تَعِدُنَا إِنْ كُنْتَ مِنَ الصَّادِقِينَ

📘 Please check ayah 46:25 for complete tafsir.

قَالَ إِنَّمَا الْعِلْمُ عِنْدَ اللَّهِ وَأُبَلِّغُكُمْ مَا أُرْسِلْتُ بِهِ وَلَٰكِنِّي أَرَاكُمْ قَوْمًا تَجْهَلُونَ

📘 Please check ayah 46:25 for complete tafsir.

فَلَمَّا رَأَوْهُ عَارِضًا مُسْتَقْبِلَ أَوْدِيَتِهِمْ قَالُوا هَٰذَا عَارِضٌ مُمْطِرُنَا ۚ بَلْ هُوَ مَا اسْتَعْجَلْتُمْ بِهِ ۖ رِيحٌ فِيهَا عَذَابٌ أَلِيمٌ

📘 Please check ayah 46:25 for complete tafsir.

تُدَمِّرُ كُلَّ شَيْءٍ بِأَمْرِ رَبِّهَا فَأَصْبَحُوا لَا يُرَىٰ إِلَّا مَسَاكِنُهُمْ ۚ كَذَٰلِكَ نَجْزِي الْقَوْمَ الْمُجْرِمِينَ

📘 ২১-২৫ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে বলেনঃ হে নবী (সঃ)! তোমার সম্প্রদায় যদি তোমাকে অবিশ্বাস ও মিথ্যা প্রতিপন্ন করে তবে তুমি তোমার পূর্ববর্তী নবীদের (আঃ) ঘটনাবলী স্মরণ কর যে, তাদের সম্প্রদায়ও তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল।আ’দ সম্প্রদায়ের ভাই দ্বারা হযরত হূদ (আঃ)-কে বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা তাঁকে আ’দে উলার (প্রথম আ’দের) নিকট পাঠিয়েছিলেন, যারা আহকাফ নামক স্থানে বসবাস করতো। (আরবী) শব্দটি (আরবী) শব্দের বহু বচন। ইবনে যায়েদ (রঃ) বলেন যে, (আরবী) হলো বালুকার পাহাড়। ইকরামা (রঃ) বলেন যে, আহকাফ হচ্ছে পাহাড় ও গুহা। হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (রাঃ) বলেন যে, আহকাফ হলো হাযরে মাউতের একটি উপত্যকা, যাকে বারহূত বলা হয় এবং যাতে কাফিরদের রূহগুলো নিক্ষেপ করা হয়। হযরত কাতাদা (রঃ) বলেন যে, ইয়ামনে সমুদ্রের তীরে বালুকার টিলায় একটি জায়গা রয়েছে, যার নাম শাহার, সেখানেই এ লোকগুলো বসতি স্থাপন করেছিল।ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ) একটি বাব বা অনুচ্ছেদ,বেঁধেছেন যে, যখন কেউ দু'আ করবে তখন যেন সে নিজ হতেই শুরু করে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ আমাদের প্রতি ও আ’দ সম্প্রদায়ের ভাই এর প্রতি দয়া করুন।”এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ আল্লাহ তাদের চতুষ্পর্শ্বের শহরগুলোতেও স্বীয় রাসূল প্রেরণ করেছিলেন। যেমন আল্লাহ পাক অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তবুও তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে বলঃ আমি তো তোমাদেরকে সতর্ক করছি এক ধ্বংসকর শাস্তির, আ’দ ও সামূদের অনুরূপ শাস্তির। যখন তাদের নিকট রাসূলগণ এসেছিল তাদের সম্মুখ ও পশ্চাৎ হতে এবং বলেছিলঃ তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদত করো না।” (৪১:১৩-১৪)হযরত হূদ (আঃ)-এর এ কথার জবাবে তার সম্প্রদায় তাকে বললোঃ “তুমি আমাদেরকে আমাদের দেব-দেবীগুলোর পূজা হতে নিবৃত্ত করতে এসেছো? তুমি সত্যবাদী হলে আমাদেরকে যে শাস্তির ভয় দেখাচ্ছ তা আনয়ন কর। তারা মহান আল্লাহর শাস্তিকে অসম্ভব মনে করতো বলেই বাহাদুরী দেখিয়ে শাস্তি চেয়ে বসেছিল। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যারা ঈমান আনেনি তারা আল্লাহর শাস্তি তাড়াতাড়ি আসার কামনা করেছিল।”(৪২:১৮)হযরত হুদ (আঃ) তার কওমের কথার উত্তরে বলেনঃ এর জ্ঞান তো শুধু। আল্লাহরই নিকট আছে। যদি তিনি তোমাদের এ শাস্তিরই যোগ্য মনে করেন। তবে অবশ্যই তিনি তোমাদের উপর শাস্তি আপতিত করবেন। আমার দায়িত্ব ততা শুধু এটুকুই যে, আমি আমার প্রতিপালকের রিসালাত তোমাদের নিকট পৌঁছিয়ে থাকি। কিন্তু আমি জানি যে, তোমরা সম্পূর্ণরূপে জ্ঞান-বিবেকহীন লোক।অতঃপর আল্লাহর আযাব তাদের উপর এসেই গেল। তারা লক্ষ্য করলো যে, একখণ্ড কালো মেঘ তাদের উপত্যকার দিকে চলে আসছে। ওটা ছিল অনাবৃষ্টির বছর। কঠিন গরম ছিল। তাই মেঘ দেখে তারা খুবই খুশী হলো যে, মেঘ তাদেরকে বৃষ্টি দান করবে। কিন্তু আসলে মেঘের আকারে ওটা ছিল আল্লাহর গযব যা তারা তাড়াতাড়ি কামনা করছিল। তাতে ছিল ঐ শাস্তি যা তাদের বস্তীগুলোর ঐ সব জিনিসকে তচনচ করে চলে আসছিল যেগুলো ধ্বংস হওয়ার ছিল। আল্লাহ ওকে এরই হুকুম দিয়েছিলেন। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “যে জিনিসের উপর দিয়ে ওটা যেতো, ক্ষয়প্রাপ্ত জিনিসের মত ওটাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিতো।”(৫১:৪২) এজন্যেই আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ তাদের পরিণাম এই হলো যে, তাদের বসতিগুলো ছাড়া আর কিছুই রইলো না। এই ভাবে আমি অপরাধী সম্প্রদায়কে প্রতিফল দিয়ে থাকি।হযরত আবূ ওয়ায়েল (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত হারিস বিকরী (রাঃ) বলেনঃ “একদা আমি আলা ইবনে হারামীর (রাঃ) অভিযোগ নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর দরবারে হাযির হবার জন্যে যাত্রা শুরু করি। রাবজাহর পার্শ্ব দিয়ে গমনকালে বানী তামীম গোত্রের একটি বৃদ্ধা মহিলার সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়। তার কাছে সওয়ারী ছিল না। তাই সে আমাকে বলেঃ “হে আল্লাহর বান্দা! আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর সাথে আমার সাক্ষাতের প্রয়োজন আছে। তুমি কি আমাকে দয়া করে তাঁর কাছে পৌঁছিয়ে দিবে?” আমি স্বীকার করলাম এবং তাকে আমার সওয়ারীর উপর বসিয়ে নিলাম। এভাবে আমরা উভয়েই মদীনায় পৌঁছলাম। আমি দেখলাম যে, মসজিদে নববীতে (সঃ) বহু লোকের সমাবেশ হয়েছে। তথায় কালো রঙ এর পতাকা আন্দোলিত হচ্ছে। হযরত বিলাল (রাঃ) তরবারী ঝুলিয়ে দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সামনে দণ্ডায়মান রয়েছেন। আমি জনগণকে জিজ্ঞেস করলামঃ ব্যাপার কি? উত্তরে তারা বললেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত আমর ইবনুল আস (রাঃ)-কে কোন দিকে প্রেরণ করতে চাচ্ছেন।” আমি তখন একদিকে বসে পড়লাম। রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় মনজিলে অথবা তাঁবুতে প্রবেশ করলেন। আমিও তখন তাঁর কাছে প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করলাম। অনুমতি পেয়ে আমি তার কাছে হাযির হলাম এবং সালাম করলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “তোমাদের মধ্যে ও বানু তামীম গোত্রের মধ্যে কোন বিবাদ ছিল কি?” আমি উত্তরে বললামঃ জ্বী, হ্যাঁ, ছিল এবং আমরাই তাদের উপর জয়যুক্ত হয়েছিলাম। আমার এই সফরে বানু তামীম গোত্রের এক বৃদ্ধা মহিলার সাথে পথে আমার সাক্ষাৎ হয়। তার কাছে কোন সওয়ারী ছিল না। সে আমার কাছে আবেদন করলো যে, আমি যেন তাকে আমার সওয়ারীতে উঠিয়ে নিয়ে আপনার দরবারে পৌঁছিয়ে দিই। সুতরাং আমি তাকে আমার সাথে নিয়ে এসেছি এবং সে দরযায় দাড়িয়ে অপেক্ষা করছে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন তাকেও ডেকে নিলেন। সে আসলে আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! যদি আপনি আমাদের মধ্যে ও বানী তামীমের মধ্যে কোন প্রতিবন্ধকতার ব্যবস্থা করতে পারেন তবে এর দ্বারাই করুন! আমার একথা শুনে বৃদ্ধা মহিলাটি রাগান্বিতা হয়ে বললোঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! তাহলে এই নিঃসহায় ব্যক্তি আশ্রয় নিবে কোথায়?” আমি তখন বললামঃ সুবহানাল্লাহ! আমার দৃষ্টান্ত তো ঐ ব্যক্তির মতই হলো যে ব্যক্তি নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরেছে। এই বৃদ্ধা আমার সাথেই শত্রুতা করবে এটা পূর্বে জানলে কি আর আমি একে সঙ্গে করে নিয়ে আসি? আল্লাহ না করুন যে, আমিও আ’দ সম্প্রদায়ের দুতের মত হয়ে যাই! রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “আ’দ সম্প্রদায়ের দূতের ঘটনাটি কি?” যদিও এ ঘটনা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমার চেয়ে বেশী ওয়াকিফহাল ছিলেন তথাপি আমাকে তিনি এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করায় আমি বলতে শুরু করলামঃ আ’দ সম্প্রদায়ের বসতিগুলোতে যখন কঠিন দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় এবং বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যায় তখন তারা তাদের একজন দূতকে প্রেরণ করে, যার নাম ছিল কাবল। এ লোকটি পথে মুআবিয়া ইবনে বিকরের বাড়ীতে এসে অবস্থান করে এবং তার বাড়ীতে মধ্যপানে ও তার ‘জারাদাতান’ নামক দু'জন দাসীর গান শুনতে এমনভাবে মগ্ন হয়ে পড়ে যে, সেখানেই তার একমাস কেটে যায়। অতঃপর সে জিবালে মুহরায় গিয়ে দু'আ করেঃ “হে আল্লাহ! আপনি তো খুব ভাল জানেন যে, আমি কোন রোগীর ওষুধের জন্যে অথবা কোন বন্দীর মুক্তিপণ আদায়ের জন্যে আসিনি। হে আল্লাহ! আ’দ সম্প্রদায়কে ওটা পান করান যা আপনি পান করিয়ে থাকেন।” অতঃপর কালো রঙ এর কয়েক খণ্ড মেঘ উঠলো। ওগুলো হতে শব্দ আসলোঃ “তুমি যেটা চাও পছন্দ করে নাও।” তখন সে কঠিন কালো মেঘখণ্ডটি পছন্দ করলো। তৎক্ষণাৎ ওর মধ্য হতে শব্দ আসলোঃ “ওকে ছাই ও মাটিতে পরিণতকারী করে দাও, যাতে আ’দ সম্প্রদায়ের একজনও বাকী না থাকে।” আমি যতটুকু জানতে পেরেছি তা এই যে, তাদের উপর শুধু আমার এই অঙ্গুরীর বৃত্ত পরিমাণ জায়গা দিয়ে বায়ু প্রবাহিত হয়েছিল এবং তাতেই তারা সবাই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।” হযরত আবু ওয়ায়েল (রঃ) বলেন যে, এটা সম্পূর্ণ সঠিক বর্ণনা। আরবে এই প্রথা ছিল যে, যখন তারা কোন দূত পাঠাতো তখন তাকে বলতোঃ “তুমি আ’দ সম্প্রদায়ের দূতের মত হয়ো না।” (এটা ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম তিরমিযী (রঃ), ইমাম নাসাঈ (রঃ) এবং ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এটা খুবই দুর্বল বর্ণনা। যেমন সূরায়ে আ'রাফের তাফসীরে গত হয়েছে)হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে কখনো এমনভাবে খিলখিল করে হাসতে দেখিনি যে, তাঁর দাঁতের মাড়ি দেখা যায়। তিনি মুচকি হাসতেন। যখন আকাশে মেঘ উঠতো এবং ঝড় বইতে শুরু করতো তখন তার চেহারায় চিন্তার চিহ্ন প্রকাশিত হতো। একদিন আমি তাকে বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! মেঘ ও বাতাস দেখে তো মানুষ খুশী হয় যে, মেঘ হতে বৃষ্টি বর্ষিত হবে। কিন্তু আপনার অবস্থা সম্পূর্ণ বিপরীত হয় কেন? উত্তরে তিনি বললেনঃ “হে আয়েশা (রাঃ)! ঐ মেঘের মধ্যে যে শাস্তি নেই এ ব্যাপারে আমি কি করে নিশ্চিন্ত হতে পারি? একটি সম্প্রদায়কে বাতাস দ্বারাই ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। একটি সম্প্রদায় শাস্তির মেঘ দেখে বলেছিলঃ এটা মেঘ, যা আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করবে।” হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন আকাশের কোন প্রান্তে মেঘ উঠতে দেখতেন তখন তিনি তাঁর সমস্ত কাজ ছেড়ে দিতেন, যদিও নামাযের মধ্যে থাকতেন। আর ঐ সময় তিনি নিম্নের দু'আটি পড়তেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! এর মধ্যে যে অকল্যাণ রয়েছে তা হতে আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমেও এ হাদীসটি অন্য সনদে বর্ণিত হয়েছে) আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেলে তিনি মহামহিমান্বিত আল্লাহর প্রশংসা করতেন। আর ঐ মেঘ হতে বৃষ্টি বর্ষিত হলে তিনি নিম্ন লিখিত দুআটি পাঠ করতেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট এর কল্যাণ, এর মধ্যে যা আছে তার কল্যাণ এবং এর সাথে যা পাঠানো হয়েছে তার কল্যাণ প্রার্থনা করছি। আর আপনার নিকট এর অমঙ্গল, এর মধ্যে যা আছে তার অমঙ্গল এবং এর সাথে যা পাঠানো হয়েছে তার অমঙ্গল ও অনিষ্ট হতে আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি।” যখন আকাশে মেঘ উঠতো তখন রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর রঙ পরিবর্তন হয়ে যেতো। কখনো তিনি ঘর হতে বাইরে যেতেন এবং কখনো বাহির হতে ভিতরে আসতেন। যখন বৃষ্টি বর্ষিত হয়ে যেতো তখন তার এই বিচলিত ভাব ও উদ্বেগ দূর হতো। হযরত আয়েশা (রাঃ) এটা বুঝতে পারতেন। একবার তিনি তাঁকে এ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তরে বললেনঃ “হে আয়েশা (রাঃ)! আমি এই ভয় করি যে, না জানি হয়তো এটা ঐ মেঘই হয় না কি যে সম্পর্কে আ’দ সম্প্রদায় বলেছিলঃ এটা তো মেঘ, আমাদেরকে বৃষ্টি দান করবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন) সূরায়ে আ'রাফে আ’দ সম্প্রদায়ের ধ্বংসলীলার এবং হযরত হূদ (আঃ)-এর পূর্ণ ঘটনা অতীত হয়েছে। সুতরাং আমরা এখানে ওটার আর পুনরাবৃত্তি করছি না। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আ’দ সম্প্রদায়ের উপর অঙ্গুরীর বৃত্ত পরিমাণ জায়গা দিয়ে বাতাস প্রবাহিত হয়েছিল। এই বাতাস প্রথমে গ্রামবাসীর উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। অতঃপর তা প্রবাহিত হয় শহরবাসীর উপর। এদেখে তারা বলেঃ ‘এটা অবশ্যই আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করবে। কিন্তু ওর মধ্যে আসলে ছিল জংলী লোকেরা। তাদেরকে ঐ শহরবাসীদের উপর নিক্ষেপ করা হয়। ফলে তারা সবাই ধ্বংস হয়ে যায়। ঐ সময় বাতাসের খাজাঞ্চীর উপর ওর ঔদ্ধত্য এতো তীব্র ছিল যে, ওটা দরযার ছিদ্র দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিল। এসব ব্যাপারে মহান আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।” (এ হাদীসটি ইমাম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

وَلَقَدْ مَكَّنَّاهُمْ فِيمَا إِنْ مَكَّنَّاكُمْ فِيهِ وَجَعَلْنَا لَهُمْ سَمْعًا وَأَبْصَارًا وَأَفْئِدَةً فَمَا أَغْنَىٰ عَنْهُمْ سَمْعُهُمْ وَلَا أَبْصَارُهُمْ وَلَا أَفْئِدَتُهُمْ مِنْ شَيْءٍ إِذْ كَانُوا يَجْحَدُونَ بِآيَاتِ اللَّهِ وَحَاقَ بِهِمْ مَا كَانُوا بِهِ يَسْتَهْزِئُونَ

📘 Please check ayah 46:28 for complete tafsir.

وَلَقَدْ أَهْلَكْنَا مَا حَوْلَكُمْ مِنَ الْقُرَىٰ وَصَرَّفْنَا الْآيَاتِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ

📘 Please check ayah 46:28 for complete tafsir.

فَلَوْلَا نَصَرَهُمُ الَّذِينَ اتَّخَذُوا مِنْ دُونِ اللَّهِ قُرْبَانًا آلِهَةً ۖ بَلْ ضَلُّوا عَنْهُمْ ۚ وَذَٰلِكَ إِفْكُهُمْ وَمَا كَانُوا يَفْتَرُونَ

📘 ২৬-২৮ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা উম্মতে মুহাম্মাদ (সঃ)-কে লক্ষ্য করে বলেনঃ আমি তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদেরকে সুখ-ভোগের উপকরণ হিসেবে যে ধন-মাল, সন্তান-সন্ততি ইত্যাদি দিয়েছিলাম, সেই পরিমাণ তো তোমাদেরকে এখনো দেয়া হয়নি। তাদেরও কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয় ছিল। কিন্তু যখন তারা আমার নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করে বসলো এবং আমার আযাবের ব্যাপারে সন্ধিহান হয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করলো, অবশেষে যখন তাদের উপর আমার আযাব এসেই পড়লো, তখন তাদের এই বাহ্যিক উপকরণ তাদের কোনই কাজে আসলো না। ঐ আযাব তাদের উপর এসেই পড়লো যা নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করতো। সুতরাং তোমাদের তাদের মত হওয়া উচিত নয়। এমন যেন না হয় যে, তাদের মত শাস্তি তোমাদের উপরও এসে পড়ে এবং তাদের মত তোমাদেরও মূলোৎপাটন করে দেয়া হয়। এরপর ইরশাদ হচ্ছেঃ হে মক্কাবাসী! তোমরা তোমাদের আশে-পাশে একটু চেয়ে দেখো যে, তাদেরকে কিভাবে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। কিভাবে তারা তাদের কৃতকর্মের ফল পেয়ে গেছে। আহকাফ যা ইয়ামনের পাশেই হাযরা মাউতের অঞ্চলে অবস্থিত, তথাকার অধিবাসী আ’দ সম্প্রদায়ের পরিণামের দিকেই দৃষ্টি নিক্ষেপ কর! আর তোমাদের ও সিরিয়ার মধ্যবর্তী অঞ্চলে বসবাসকারী সামদ সম্প্রদায়ের পরিণামের কথাই একটু চিন্তা কর। ইয়ামনবাসী ও মাদইয়ানবাসী সম্প্রদায়ের পরিণামের প্রতি একটু লক্ষ্য কর। তোমরা তো যুদ্ধ-বিগ্রহ ও ব্যবসা-বাণিজ্য উপলক্ষে সেখান দিয়ে প্রায়ই গমনাগমন করে থাকো। হযরত লূত (আঃ)-এর বাহীরা সম্প্রদায় হতে তোমাদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। তাদের বাসভূমিও তোমাদের যাতায়াতের পথেই পড়ে। এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি আমার নিদর্শনাবলী বিশদভাবে বিবৃত করেছি যাতে তারা সৎপথে ফিরে আসে।ইরশাদ হচ্ছেঃ তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে মা’ব্দরূপে গ্রহণ করেছিল, যদিও এতে তাদের ধারণা এই ছিল যে, তাদের মাধ্যমে তারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবে, কিন্তু যখন তাদের উপর আল্লাহর আযাব এসে পড়লো এবং তারা তাদের ঐ মিথ্যা মা’ৰূদদের সাহায্যের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলো তখন তারা তাদের কোন সাহায্য করলো কি? কখনোই না। বরং তাদের প্রয়োজন ও বিপদের সময় তাদের ঐসব বাতিল মা'বূদ অন্তর্হিত হয়ে পড়লো। তাদেরকে খুঁজেও পাওয়া গেল না। মোটকথা, তাদেরকে পূজনীয় হিসেবে গ্রহণ করে তারা চরম ভুল করেছিল। তাদের মিথ্যা ও অলীক উদ্ভাবনের পরিণাম এই রূপই।

وَإِذْ صَرَفْنَا إِلَيْكَ نَفَرًا مِنَ الْجِنِّ يَسْتَمِعُونَ الْقُرْآنَ فَلَمَّا حَضَرُوهُ قَالُوا أَنْصِتُوا ۖ فَلَمَّا قُضِيَ وَلَّوْا إِلَىٰ قَوْمِهِمْ مُنْذِرِينَ

📘 Please check ayah 46:32 for complete tafsir.

مَا خَلَقْنَا السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا إِلَّا بِالْحَقِّ وَأَجَلٍ مُسَمًّى ۚ وَالَّذِينَ كَفَرُوا عَمَّا أُنْذِرُوا مُعْرِضُونَ

📘 Please check ayah 46:6 for complete tafsir.

قَالُوا يَا قَوْمَنَا إِنَّا سَمِعْنَا كِتَابًا أُنْزِلَ مِنْ بَعْدِ مُوسَىٰ مُصَدِّقًا لِمَا بَيْنَ يَدَيْهِ يَهْدِي إِلَى الْحَقِّ وَإِلَىٰ طَرِيقٍ مُسْتَقِيمٍ

📘 Please check ayah 46:32 for complete tafsir.

يَا قَوْمَنَا أَجِيبُوا دَاعِيَ اللَّهِ وَآمِنُوا بِهِ يَغْفِرْ لَكُمْ مِنْ ذُنُوبِكُمْ وَيُجِرْكُمْ مِنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ

📘 Please check ayah 46:32 for complete tafsir.

وَمَنْ لَا يُجِبْ دَاعِيَ اللَّهِ فَلَيْسَ بِمُعْجِزٍ فِي الْأَرْضِ وَلَيْسَ لَهُ مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءُ ۚ أُولَٰئِكَ فِي ضَلَالٍ مُبِينٍ

📘 ২৯-৩২ নং আয়াতের তাফসীর: মুসনাদে আহমাদে হযরত যুবায়ের (রাঃ) হতে এই আয়াতের তাফসীরে বর্ণিত আছে যে, এটা নাখলা নামক স্থানের ঘটনা। রাসূলুল্লাহ (সঃ) ঐ সময় ইশার নামায আদায় করছিলেন। এসব জ্বিন তার আশে-পাশে একত্রিতভাবে দাড়িয়ে যায়। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, ওগুলো নাসীবাইনের জ্বিন ছিল। তারা সাতজন ছিল।প্রসিদ্ধ ইমাম হাফিয আবু বকর বায়হাকী (রঃ) তাঁর দালাইলুন নবুওয়াত নামক গ্রন্থে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে একটি রিওয়াইয়াত লিপিবদ্ধ করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) জ্বিনদেরকে শুনাবার উদ্দেশ্যেও কুরআন পাঠ করেননি এবং তাদেরকে তিনি দেখেননি। তিনি তো স্বীয় সাহাবীদের সাথে উকাযের বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। এদিকে ব্যাপার এই ঘটেছিল যে, শয়তানদেরও আকাশের খবরের মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল এবং তাদের উপর উল্কাপিণ্ড নিক্ষিপ্ত হওয়া শুরু হয়েছিল। শয়তানরা এসে তাদের কওমকে এ খবর দিলে তারা বলেঃ “অবশ্যই নতুন কিছু একটা ঘটেছে। সুতরাং তোমরা অনুসন্ধান করে দেখো।” একথা শুনে তারা বেরিয়ে পড়লো। তাদের বিভিন্ন দল বিভিন্ন দিকে গেল। যে দলটি আরব অভিমুখে গেল, তারা যখন তথায় পৌঁছলো তখন রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) উকাযের দিকে যাওয়ার পথে, নাখলায় স্বীয় সাহাবীদেরকে (রাঃ) ফজরের নামায পড়াচ্ছিলেন। ঐ জ্বিনদের কানে যখন তাঁর তিলাওয়াতের শব্দ পৌঁছলো তখন তারা তথায় থেমে গেল এবং কান লাগিয়ে মনোযোগের সাথে কুরআন পাঠ শুনতে লাগলো। এরপরে তারা পরস্পর বলাবলি করলোঃ এটাই ঐ জিনিস, যার কারণে আমাদের আকাশ পর্যন্ত পৌঁছার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এখান হতে ফিরে তারা সরাসরি তাদের কওমের নিকট পৌঁছে যায় এবং তাদেরকে বলেঃ “আমরা তো এক বিস্ময়কর কিতাব শ্রবণ করেছি, যা সঠিক পথ-নির্দেশ করে, ফলে আমরা এতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমরা কখনো আমাদের প্রতিপালকের কোন শরীক স্থির করবো না।” এই ঘটনারই সংবাদ আল্লাহ তা'আলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে সূরায়ে জ্বিনে দিয়েছেন।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ), ইমাম মুসলিম (রঃ), ইমাম তিরমিযী (রঃ) এবং ইমাম নাসাঈ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেনঃ জ্বিনেরা অহী শুনতে থাকতো। একটা কথা যখন তাদের কানে যেতো তখন তারা ওর সাথে আরো দশটি কথা মিলিয়ে দিতো। সুতরাং একটি সত্য হতো এবং বাকী সবই মিথ্যা হয়ে যেতো। ইতিপূর্বে তাদের উপর তারকা নিক্ষেপ করা হতো না। অতঃপর যখন রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) প্রেরিত হলেন তখন তাদের উপর উল্কাপিণ্ড নিক্ষিপ্ত হতে লাগলো। তারা তাদের বসার জায়গায় যখন পৌছতো তখন তাদের উপর উল্কাপিণ্ড নিক্ষিপ্ত হতো। ফলে তারা সেখানে আর থাকতে পারতো না। তারা তখন এসে ইবলীসের নিকট এর অভিযোগ করলো। ইবলীস তখন বললো, অবশ্যই নতুন ব্যাপার কিছু ঘটেছে। তাই সে তার সেনাবাহিনীকে এই তথ্য উদঘাটনের জন্যে চতুর্দিকে ছড়িয়ে দিলো। একটি দল রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-কে নালার দুটি পাহাড়ের মাঝে নামায রত অবস্থায় পেলো। অতঃপর তারা গিয়ে ইবলীসকে এ খবর দিয়ে দিলো। ইবলীস তখন বললোঃ “এ কারণেই আকাশ রক্ষিত হয়েছে এবং তোমাদের তথায় যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।” (এটা ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) ও ইমাম নাসাঈ (রঃ)-ও এ রিওয়াইয়াতটি এনেছেন)হযরত হাসান বসরী (রঃ)-ও এ কথাই বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) এ ঘটনার খবর রাখতেন না। যখন তার উপর অহী অবতীর্ণ হয় তখন তিনি তা জানতে পারেন। সীরাতে ইবনে ইসহাকে মুহাম্মাদ ইবনে কা'ব (রঃ)-এর একটি দীর্ঘ রিওয়াইয়াত বর্ণিত আছে, যাতে রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর তায়েফ গমন, তায়েফবাসীকে ইসলামের দাওয়াত প্রদান এবং তাদের তা প্রত্যাখ্যান করণ ইত্যাদি পূর্ণ ঘটনা বর্ণিত আছে। ঐ শোচনীয় অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সঃ) যে দুআটি করেছিলেন সেটাও হযরত হাসান বসরী (রঃ) বর্ণনা করেছেন। দু'আটি নিম্নরূপঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমি মানুষের উপর আমার শক্তির দুর্বলতা, আমার কৌশলের স্বল্পতা এবং আমার অসহায়তার অভিযোগ আপনার নিকট করছি। হে দয়ালুদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় দয়ালু! আপনিই দয়ালুদের মধ্যে পরম দয়ালু। যাদেরকে দুর্বল মনে করা হয় আপনি তাদের প্রতিপালক। আপনি আমারও প্রতিপালক। আপনি আমাকে কার কাছে সমর্পণ করছেন? কোন দূরবর্তী শত্রুর কাছে কি, যে আমাকে অপারগ করবে? না কোন নিকটবর্তী বন্ধুর কাছে, যার কাছে আপনি আমার ব্যাপারে অধিকার দিয়ে রেখেছেন? যদি আমার প্রতি আপনার অসন্তোষ না থাকে তবে আমি আমার এ দুঃখ ও বেদনার জন্যে কোন পরোয়া করি না, তবে যদি আপনি আমাকে নিরাপদে রাখেন তাহলে এটা হবে আমার জন্যে সুখ-শান্তির ব্যাপার। আমি আপনার চেহারার ঔজ্জ্বল্যের মাধ্যমে, যার কারণে সমস্ত অন্ধকার আলোকিত হয়ে উঠেছে এবং যার উপর দুনিয়া ও আখিরাতের সমস্ত কাজের কল্যাণ নির্ভরশীল, আমার উপর আপনার ক্রোধ ও অসন্তুষ্টি নাযিল হোক এর থেকে আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আপনার সন্তুষ্টিই কামনা করি এবং পুণ্য কাজ করা ও পাপ কাজ হতে বিরত থাকার ক্ষমতা একমাত্র আপনার সাহায্যের মাধ্যমেই লাভ করা সম্ভব।” এই সফর হতে প্রত্যাবর্তনের পথেই তিনি নাখলায় রাত্রি যাপন করেন এবং ঐ রাত্রেই নাসীবাইনের জ্বিনেরা তাঁর কুরআন-তিলাওয়াত শ্রবণ করে। এটা সঠিক তো বটে, কিন্তু এতে এই উক্তিটির ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ রয়েছে। কেননা, জ্বিনদের আল্লাহর কালাম শ্রবণ করা হচ্ছে অহী শুরু হওয়ার সময়ের ঘটনা। যেমন হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর উপরে বর্ণিত হাদীস হতে এটা প্রমাণিত হয়। আর তার তায়েফে গমন হচ্ছে তাঁর চাচা আবূ তালিবের মৃত্যুর পরের ঘটনা, যা হিজরতের এক বছর অথবা খুব বেশী হলে দু’বছর পূর্বের ঘটনা। যেমন এটা সীরাতে ইবনে ইসহাক প্রভৃতি গ্রন্থে রয়েছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ্ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। আবু বকর ইবনে শায়বা (রঃ)-এর বর্ণনামতে ঐ জ্বিনদের সংখ্যা ছিল নয়। তাদের একজনের নাম ছিল যাভীআহ্। তাদের ব্যাপারেই (আরবী) পর্যন্ত আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়। সুতরাং এই রিওয়াইয়াত এবং এর পূর্ববর্তী হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর রিওয়াইয়াতের চাহিদা এটাই যে, ঐ সময় যে জ্বিনগুলো এসেছিল তাদের উপস্থিতির খবর রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর জানা ছিল না। তারা তো তার অজান্তে তার মুখে আল্লাহর বাণী শুনে ফিরে গিয়েছিল। এরপরে প্রতিনিধি হিসেবে জ্বিনেরা দলে দলে তাঁর খিদমতে উপস্থিত হয়েছিল। যেমন এই অলোচনা সম্বলিত হাদীস ও আসারগুলো নিজ নিজ স্থানে আসছে ইনশা আল্লাহ। হযরত আব্দুর রহমান (রঃ) হযরত মাসরূক (রঃ)-কে জিজ্ঞেস করেনঃ “যেই। রাত্রে জ্বিনেরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হতে কুরআন শুনেছিল ঐ রাত্রে কে তাঁকে এ খবর অবহিত করে?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “আমাকে তোমার পিতা হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) জানিয়েছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-কে জ্বিনদের আগমনের খবর একটি গাছ অবহিত করেছিল। তাহলে খুব সম্ভব এটা প্রথমবারের খবর হবে এবং হাঁ বাচককে আমরা না বাচকের উপর অগ্রগণ্য মনে করবো। এও হতে পারে যে, যখন জুিনেরা তাঁর কুরআন পাঠ শুনছিল তখন তো তিনি এ খবর জানতেন না, কিন্তু ঐ গাছটি তাঁকে তাদের উপস্থিতির খবর প্রদান করে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ্ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। আবার এও হওয়া সম্ভব যে, এ ঘটনাটি এর পরবর্তী ঘটনাবলীর একটি হবে। এসব ব্যাপারে সঠিক জ্ঞানের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ্।ইমাম হাফিয বায়হাকী (রঃ) বলেন যে, প্রথমবারে তো রাসূলুল্লাহ (সঃ) জ্বিনদেরকে দেখেননি এবং বিশেষভাবে তাদেরকে শুনাবার জন্যে কুরআন পাঠও করেননি। হ্যা, তবে এর পরে জ্বিনেরা তাঁর কাছে আসে এবং তিনি তাদেরকে কুরআন পাঠ করে শুনিয়ে দেন এবং তাদেরকে তিনি মহামহিমান্বিত আল্লাহর দিকে আহ্বান জানান। এ সম্পর্কে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীস সমূহঃ হযরত আলকামা (রঃ) হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেনঃ “জ্বিনদের আগমনের রাত্রিতে আপনাদের মধ্যে কেউ কি রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর সাথে ছিলেন?” উত্তরে তিনি বলেন, তাঁর সাথে কেউই ছিলেন না। তিনি সারা রাত আমাদের হতে অনুপস্থিত থাকেন এবং আমরা থেকে থেকে বারবার এই ধারণাই করি যে, সম্ভবতঃ কোন শত্রু তার সাথে প্রতারণা করেছে। ঐ রাত্রি আমাদের খুব খারাপভাবে কাটে। সুবহে সাদেকের কিছু পূর্বে আমরা দেখি যে, তিনি হেরা পর্বতের গুহা হতে প্রত্যাবর্তন করছেন। আমরা তখন তার কাছে আমাদের সারা রাত্রির অবস্থা বর্ণনা করি। তখন তিনি বলেনঃ “আমার কাছে জ্বিনদের প্রতিনিধি এসেছিল, যাদের সঙ্গে গিয়ে আমি তাদেরকে কুরআন শুনিয়েছি।” অতঃপর তিনি আমাদেরকে সাথে করে নিয়ে যান এবং তাদের নিদর্শনাবলী ও তাদের আগুনের নিদর্শনাবলী আমাদেরকে প্রদর্শন করেন।” শা'বী (রঃ) বলেন যে, জ্বিনেরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট খাদ্যের আবেদন জানায়। আমির (রঃ) বলেন যে, তারা তাঁর নিকট মক্কায় এ আবেদন জানিয়েছিল। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে বলেনঃ “প্রত্যেক হাড়, যার উপর আল্লাহর নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তা তোমাদের হাতে পূর্বের চেয়ে গোশত বিশিষ্ট হয়ে পতিত হবে। আর জন্তুর মল ও গোবর তোমাদের জন্তুগুলোর খাদ্য হবে। সুতরাং হে মুসলিমবৃন্দ! তোমরা এ দুটো জিনিস দ্বারা ইতিনজা করো না। এগুলো তোমাদের জ্বিন ভাইদের খাদ্য।” | অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ “ঐ রাত্রে আমরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে না পেয়ে খুবই বিচলিত হয়ে পড়ি এবং তাঁকে আমরা সমস্ত উপত্যকা ও ঘাঁটিতে অনুসন্ধান করি।” অন্য একটি হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আজ রাত্রে আমি জ্বিনদেরকে কুরআন শুনিয়েছি এবং তাদেরই মধ্যে এ কাজে রাত্রি কাটিয়েছি।”হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আজ রাত্রে তোমাদের মধ্যে কেউ ইচ্ছা করলে জ্বিনদের কাজে আমার সাথে থাকতে পারে।” তখন আমি ছাড়া আর কেউই এ কাজে তার কাছে হাযির হলো না। তিনি আমাকে সাথে নিয়ে চললেন। মক্কা শরীফের উঁচু অংশে পৌঁছে তিনি স্বীয় পা মুবারক দ্বারা একটি রেখা টানলেন এবং আমাকে বললেনঃ “তুমি এখানেই বসে থাকো।” অতঃপর তিনি সামনে অগ্রসর হন এবং এক জায়গায় দাঁড়িয়ে তিনি কিরআত পাঠ শুরু করেন। তারপর তার চতুর্দিকে এমন সব দল জমায়েত হয় যে, তাঁর মধ্যে ও আমার মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়ে যায় এবং তার কিরআত আর আমার কানে আসেনি। এরপর আমি দেখি যে, মেঘখণ্ড যেভাবে ভেঙ্গে যায় সেই ভাবে তারা এদিক ওদিক যেতে লাগলো এবং খুব অল্প সংখ্যকই অবশিষ্ট থাকলো। তারপর ফজরের সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) অবসর লাভ করলেন এবং সেখান হতে দূরে চলে গেলেন। প্রাকৃতিক প্রয়োজন পুরো করে তিনি আমার নিকট আসলেন এবং আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “বাকীগুলো কোথায়?” আমি জবাবে বললামঃ এই যে তারা। অতঃপর তিনি তাদেরকে হাড় ও জন্তুর মল বা গোবর দিলেন। তারপর তিনি মুসলমানদেরকে এ দুটি জিনিস দ্বারা ইসতিনজা করতে নিষেধ করলেন। (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)এই রিওয়াইয়াতের দ্বিতীয় সনদে আছে যে, যেখানে রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)-কে বসিয়েছিলেন, বসাবার পর তিনি তাঁকে বলেছিলেনঃ “সাবধান! এখান হতে সরবে না, অন্যথায় তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে।” অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, ফজরের সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর নিকট এসে তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তুমি কি ঘুমিয়ে পড়েছিলে?” উত্তরে তিনি বললেনঃ না; না। আল্লাহর কসম! আমি জনগণের কাছে ফরিয়াদ করার ইচ্ছা করেছিলাম। কিন্তু আমি শুনতে পাই যে, আপনি লাঠি দ্বারা তাদেরকে ধমকাচ্ছেন এবং বলছেনঃ “তোমরা বসে পড়।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে বললেনঃ “তুমি যদি এখান হতে বের হতে তবে ভয় ছিল যে, তাদের কেউ হয়তো তোমাকে ছোঁ মেরে নিয়ে চলে যেতো।” তারপর তিনি তাঁকে বললেনঃ “আচ্ছা, তুমি কিছু দেখেছিলে কি?” জবাবে তিনি বলেনঃ “হ্যা, লোকগুলো ছিল কালো, অপরিচিত, ভয়াবহ এবং সাদা কাপড় পরিহিত।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “এগুলো ছিল নাসীবাইনের জ্বিন। তারা আমার কাছে খাদ্য চেয়েছিল।আমি তাদেরকে হাড় ও গোবর দিয়েছিলাম।” হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এগুলোতে তাদের উপকার কি?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “প্রত্যেক হাড় তাদের হাতে আসামাত্রই ঐরূপ হয়ে যাবে ওটা খাওয়ার সময় যেরূপ ছিল অর্থাৎ গোশত বিশিষ্ট হয়ে যাবে। গোবরেও তারা ঐ দানা পাবে যা ঐদিনে ছিল যেই দিন ওটা খাওয়া হয়েছিল। সুতরাং তোমাদের মধ্যে কেউ যেন পায়খানা হতে বের হয়ে হাড় অথবা গোবর দ্বারা। ইসতিনজা না করে।”এই রিওয়াইয়াতের অন্য সনদে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আজ রাত্রে পনেরোজন জ্বিন, যারা পরস্পর চাচাতো ও ফুফাতো ভাই, কুরআন শুনার জন্যে আমার নিকট আসবে।" তাতে হাড় ও গোবরের সাথে কয়লার কথাও রয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ “সকাল হলে আমি ঐ জায়গায় গমন করে দেখি যে, ওটা ষাটটি উটের বসার সমান জায়গা।"অন্য একটি বর্ণনায় আছে যে, যখন জ্বিনদের ভিড় হয়ে গেল তখন তাদের সরদার ওয়াযদান বললোঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি এদেরকে এদিক ওদিক করে দিয়ে আপনাকে এই কষ্ট হতে রক্ষা করছি।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “আমার আল্লাহ তা'আলা হতে বড় রক্ষক আর কেউই নেই।” নবী (সঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ “তোমার নিকট পানি আছে কি?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “আমার নিকট পানি নেই বটে, তবে একটি পাত্রে খেজুর ভিজানো পানি (নবীয়) রয়েছে।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “উত্তম খেজুর ও পবিত্র পানি।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম আবু দাউদ (রঃ), ইমাম তিরমিযী (রঃ) এবং ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন) মুসনাদে আহমাদের এ হাদীসে এও আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ)-কে বলেনঃ “আমাকে তুমি এই পানি দ্বারা অযু করিয়ে দাও।” অতঃপর তিনি অযু করেন এবং বলেনঃ “হে আল্লাহর বান্দা! এটা তো পবিত্র পানীয়।”মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) জ্বিনদের নিকট হতে ফিরে আসেন তখন তিনি ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছিলেন। সুতরাং হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! ব্যাপার কি?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “আমার কাছে আমার মৃত্যুর খবর পৌঁছে গেছে।” এই হাদীসটিই কিছুটা বৃদ্ধির সাথে হাফিয আবু নঈম (রঃ)-এর কিতাবু দালাইলিন নবুওয়াতের মধ্যে বর্ণিত হয়েছে। তাতে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মুখে এ কথা শুনে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) তাঁকে বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনার পরে খলীফা হবেন এমন ব্যক্তির নাম করুন।” তিনি বললেনঃ ‘কার নাম করবো?” হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) জবাবে বললেনঃ “হযরত আবু বকর (রাঃ)-কে মনোনীত করুন।” একথা শুনে তিনি নীরব থাকলেন। কিছু দূর চলার পর পুনরায় রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর ঐ অবস্থা হলো। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) পূর্বের ন্যায় প্রশ্ন করলেন এবং তিনি পূর্বের মতই উত্তর দিলেন। হযরত ইবনে মাসউদ খলীফা নির্বাচনের কথা বললে তিনি প্রশ্ন করেনঃ “কাকে?” হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) উমার (রাঃ)-এর নাম প্রস্তাব করেন। কিন্তু এবারও রাসূলুল্লাহ (সঃ) নীরব থাকেন। আবার কিছু দূর যাওয়ার পর তার ঐ একই অবস্থা দেখা দিলে ঐ একই প্রশ্ন ও উত্তরের আদান প্রদান হয়। এবার হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হযরত আলী ইবনে আবি তালিব। (রাঃ)-এর নাম প্রস্তাব করেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তার সত্তার শপথ! যদি মানুষ তার আনুগত্য স্বীকার করে তবে তারা জান্নাতে চলে যাবে। কিন্তু এটা খুবই গারীব হাদীস এবং খুব সম্ভব এটা রক্ষিত নয়। আর যদি এর বিশুদ্ধতা মেনে নেয়া হয় তবে এ ঘটনাকে মদীনার ঘটনা স্বীকার করতে হবে। সেখানেও রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে জ্বিনদের প্রতিনিধি দল এসেছিল, যেমন সত্বরই আমরা বর্ণনা করছি ইনশাআল্লাহ। কেননা, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর জীবনের শেষ সময় ছিল মক্কা বিজয়ের পরবর্তী সময়। যখন মানব ও দানব দলে দলে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিল এবং অবতীর্ণ হয়েছিল নিম্নের সূরাটিঃ (আরবী) অর্থাৎ “যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এবং তুমি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবে। তখন তুমি তোমার প্রতিপালকের প্রশংসাসহ তার প্রবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো এবং তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো, তিনি তো তাওবা কবুলকারী।”(১১১:১-৩) এতে তাঁকে তাঁর মৃত্যুর সংবাদ দেয়া হয়, যেমন এটা হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর উক্তি এবং আমীরুল মুমিনীন হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) এর আনুকূল্য করেছেন।এই হাদীসগুলো আমরা ইনশাআল্লাহ এই সূরার তাফসীরে আনয়ন করবো। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।উপরোক্ত হাদীসটি অন্য সনদেও বর্ণিত আছে। কিন্তু এর ইসনাদও গারীব বা দুর্বল এবং পূর্বাপর সম্পর্কও বিস্ময়কর।হযরত ইকরামা (রাঃ) বলেন যে, এই জ্বিনগুলো জাযীরায়ে মুসিলের ছিল। তাদের সংখ্যা ছিল বারো হাজার। হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) ঐ রেখা অংকিত জায়গায় বসেছিলেন। কিন্তু জ্বিনদের খেজুর বৃক্ষ বরাবর দেহ ইত্যাদি দেখে তিনি ভয় পান এবং পালিয়ে যাবার ইচ্ছা করেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিষেধাজ্ঞার কথা তার স্মরণ হয় যে, তিনি যেন ঐ অংকিত জায়গার বাইরে না। যান। যখন তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সামনে এটা বর্ণনা করেন তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বলেনঃ “তুমি যদি এর সীমা অতিক্রম করতে তবে কিয়ামত পর্যন্ত তোমার ও আমার মধ্যে সাক্ষাৎ লাভ সম্ভব হতো না। অন্য এক রিওয়াইয়াতে আছে যে, .. (আরবী)-এই আয়াতে যে জ্বিনদের বর্ণনা রয়েছে তারা ছিল নীনওয়ার জ্বিন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাহাবীদেরকে বলেনঃ “আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, আমি যেন তাদেরকে কুরআন শুনিয়ে দিই তোমাদের মধ্যে কে আমার সাথে গমন করবে? এতে সবাই নিরুত্তর থাকে। তিনি দ্বিতীয়বার এই প্রশ্ন করেন। এবারও সবাই নীরব থাকে। তার তৃতীয়বারের প্রশ্নের জবাবে হুযায়েল গোত্রের লোক হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনার সাথে আমিই যাবো।” সুতরাং তাকে সাথে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ) হাজুন ঘাঁটিতে গেলেন। একটি রেখা অংকন করে হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ)-কে তথায় বসিয়ে দিলেন এবং তিনি সামনে অগ্রসর হলেন। হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) দেখতে পেলেন যে, গৃধিনীর মত কতকগুলো জীব মাটির খুবই নিকট দিয়ে উড়ে আসছে। কিছুক্ষণ পর খুবই গোলমাল শুনা গেল। শেষ পর্যন্ত হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর জীবনের ব্যাপারে আশংকা করলেন। অতঃপর যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর কাছে আসলেন তখন তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! গোলমাল কিসের ছিল?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বললেনঃ “তাদের একজন নিহতকে নিয়ে গণ্ডগোল ছিল। তার ব্যাপারে তাদের মধ্যে মতানৈক্য ছিল। তাদের মধ্যে সঠিক ফায়সালা করে দেয়া হলো। এ ঘটনাগুলো পরিষ্কার যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) ইচ্ছাপূর্বক গিয়ে জ্বিনদেরকে কুরআন শুনিয়েছিলেন এবং তাদেরকে ইসলামের দিকে আহ্বান করেছিলেন। আর ঐ সময় তাদের যে মাসআলাগুলোর দরকার ছিল সেগুলো তাদেরকে বলে দেন। হ্যা, তবে প্রথমবার যখন জ্বিনেরা তার মুখে কুরআন শ্রবণ করে ঐ সময় না তিনি তাদেরকে শুনাবার উদ্দেশ্যে কুরআন পাঠ করেন, না তাদের আগমন ও উপস্থিতি তিনি অবগত ছিলেন। যেমন হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এ কথা বলেন। এর পরে তারা প্রতিনিধিরূপে আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর নিকট আগমন করে এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ) ইচ্ছা করে তাদের কাছে আসেন এবং তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেন তখন হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) তাঁর সাথে ছিলেন না। তবে অবশ্যই তিনি কিছু দূরে বসেছিলেন। এই ঘটনায় রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। যে রিওয়াইয়াতগুলোতে আছে যে, হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে ছিলেন এবং যেগুলোতে তার না থাকার কথা রয়েছে, এ দু' এর মধ্যে সামঞ্জস্য এভাবেও হতে পারে যে, প্রথমবার তিনি সঙ্গে ছিলেন না এবং দ্বিতীয়বার ছিলেন। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।এটাও বর্ণিত আছে যে, নাখলাতে যে জ্বিনগুলো রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করেছিল ওগুলো ছিল নীনওয়ার জ্বিন। আর মক্কা শরীফে যেসব জ্বিন তার খিদমতে হাযির হয়েছিল ওগুলো নাসীবাইনের জ্বিন ছিল। যে। রিওয়াইয়াতগুলোতে রয়েছেঃ “আমরা ঐ রাত্রি মন্দভাবে অতিবাহিত করেছি’ এর দ্বারা হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) ছাড়া অন্যান্য সাহাবীদেরকে বুঝানো হয়েছে যেগুলোতে এটা জানা ছিল না যে, তিনি জ্বিনদেরকে কুরআন শুনাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু এটা খুব দূরের ব্যাখ্যা। এসব ব্যাপারে সঠিক জ্ঞানের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ।ইমাম হাফিয আবু বকর বায়হাকী (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর প্রয়োজন ও অযুর জন্যে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) একটি পাত্রে পানি নিয়ে তার সাথে যেতেন। একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর পিছনে পিছনে গিয়ে তিনি পৌছেন, তখন তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ “কে?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “আমি আবু হুরাইরা (রাঃ)।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন তাঁকে বললেনঃ “আমার ইসতিনজার জন্যে পাথর নিয়ে এসো, কিন্তু হাড় ও গোবর আনবে না।” হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেনঃ “আমি আমার ঝুলিতে পাথর ভরে নিয়ে আসলাম এবং তাঁর সামনে রেখেদিলাম। এর থেকে ফারেগ হয়ে যখন তিনি চলতে শুরু করলেন তখন আমিও তার পিছনে পিছনে চলতে লাগলাম। তাকে আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! হাড় ও গোবর আনতে নিষেধ করার কারণ কি? জবাবে তিনি বললেনঃ “আমার কাছে নাসীবাইনের জ্বিন প্রতিনিধিরা এসেছিল এবং তারা আমার কাছে খাদ্য চেয়েছিল। আমি আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা জানিয়েছিলাম যে, তারা যে হাড় ও গোবরের উপর দিয়ে যাবে তা যেন তারা তাদের খাদ্য হিসেবে পায়।” (এ হাদীসটি সহীহ বুখারীতে প্রায় এভাবেই বর্ণিত আছে)সুতরাং এ হাদীসটি এবং এর পূর্ববর্তী হাদীসগুলো এ ইঙ্গিতই বহন করে যে, জ্বিনদের প্রতিনিধিরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট এর পরেও এসেছিল। এখন আমরা ঐ হাদীসগুলো বর্ণনা করছি যেগুলো দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় যে, জ্বিনেরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট কয়েকবার এসেছিল। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে যে রিওয়াইয়াত ইতিপূর্বে বর্ণিত হয়েছে ওটা ছাড়াও অন্য সনদে তার হতে আরো রিওয়াইয়াত বর্ণিত আছে। তাফসীরে ইবনে জারীরে হযরত ইবনে। আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি ... (আরবী) আয়াতের তাফসীরে বলেনঃ “তারা ছিল সাতজন জ্বিন। তারা নাসীবাইনে বসবাস করতো। তাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সঃ) নিজের পক্ষ হতে দূত হিসেবে জ্বিনদের নিকট পাঠিয়েছিলেন।”হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, ঐ জ্বিনদের সংখ্যা ছিল সাত। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদের তিনজনকে হিরানের অধিবাসী ও চারজনকে নাসীবাইনের অধিবাসী বলেছেন। তাদের নামগুলো হলো হিসসী, হিসসা, মিনসী, সা’সির, নাসির, আরদূবিয়া, আখতাম। আবূ হামযা শিমালী (রঃ) বলেন যে, জ্বিনদের এই গোত্রটিকে বানু শীসবান বলা হতো। এ গোত্রটি জ্বিনদের অন্যান্য গোত্রগুলো হতে সংখ্যায় বেশী ছিল এবং তাদেরকে সম্ভান্ত বংশীয় হিসেবে মান্য করা হতো। সাধারণতঃ এরা। ইবলীসের সেনাবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত ছিল। হযরত সুফিয়ান সাওরী (রঃ) হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, এরা ছিল নয়জন, যাদের মধ্যে একজনের নাম ছিল যাভীআহ। তারা আসলে নাখলা হতে এসেছিল। কোন কোন গুরুজন হতে বর্ণিত আছে যে, তারা ছিল পনেরোজন, যেমন এ বর্ণনা পূর্বে গত হয়েছে। একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, তারা ষাটটি সওয়ারীর উপর সওয়ার হয়ে এসেছিল। তাদের নেতার নাম ছিল ওয়ারদান। এটাও বর্ণিত আছে যে, তারা ছিল তিনশজন এবং এক রিওয়াইয়াতে তাদের সংখ্যা বারো হাজারও রয়েছে। এসবের মধ্যে সামঞ্জস্য এভাবে হতে পারে যে, প্রতিনিধিরা যেহেতু কয়েকবার এসেছিল, সেহেতু হতে পারে যে, কোনবার ছিল ছয়, সাত বা নয় জন, কোনবার এর চেয়ে বেশী ছিল এবং কোনবার এর চেয়েও বেশী ছিল। এর দলীল হিসেবে সহীহ বুখারীর এ রিওয়াইয়াতটিও গ্রহণ করা যেতে পারে যে, হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) যখন কোন বিষয় সম্পর্কে বলতেনঃ ‘আমার ধারণায় এটা এইরূপ হবে তখন তা প্রায় ঐরূপই হতো। একদা তিনি বসেছিলেন, এমন সময় একজন সুশ্রী লোক তার পার্শ্ব দিয়ে গমন করে। তাকে দেখে তিনি মন্তব্য করেনঃ “যদি আমার ধারণা ভুল না হয় তবে আমি বলতে পারি যে, এ লোকটি অজ্ঞতার যুগে লোকদের গণক বা যাদুকর ছিল। যাও, তাকে এখানে নিয়ে এসো।” লোকটি তার কাছে আসলে তিনি তার নিকট নিজের ধারণা প্রকাশ করলেন। সে তখন বললোঃ “আমি মুসলমানদের মধ্যে এমন বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান লোক আর দেখিনি।” হযরত উমার (রাঃ) তখন তাকে বললেনঃ “এখন আমার কথা এই যে, তুমি তোমার জানা কোন সঠিক ও সত্য খবর আমাদেরকে শুনিয়ে দাও।” সে বললোঃ “আচ্ছা, তাহলে শুনুন। আমি জাহিলিয়াতের যুগে লোকদের গণক ছিলাম। আমার কাছে আমার সাথী এক জ্বিন, যে সর্বাপেক্ষা বিস্ময়কর খবর আমার নিকট এনেছিল তা হচ্ছে এই যে, একদা আমি বাজারে ছিলাম, এমন সময় সে অত্যন্ত ভীত-বিহ্বল অবস্থায় আমার কাছে এসে বললোঃ (আরবী) অর্থাৎ “তুমি কি জ্বিনদের ধ্বংস, নৈরাশ্য এবং তাদের ছড়িয়ে পড়ার পর সংকুচিত হয়ে যাওয়া লক্ষ্য করনি এবং তাদের দুর্গতি দেখোনি?” এ কথা শুনে হযরত উমার (রাঃ) বলেনঃ “সে সত্য কথা বলেছে। একদা আমি তাদের মা’ৰূদদের (মূর্তিগুলোর) পার্শ্বে ঘুমিয়েছিলাম, এমন সময় একটি লোক এসে তথায় একটি গোবৎস (বাছুর) যবেহ করলো। অকস্মাৎ এমন একটি ভীষণ শব্দ হলো এরূপ উচ্চ ও বিকট শব্দ আমি ইতিপূর্বে কখনো শুনিনি। সে বললোঃ “হে জালীজ! পরিত্রাণকারী বিষয় এসে গেছে। একজন বাকপটু ব্যক্তি বাক চাতুর্যের সাথে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ' বলছেন।” শব্দ শুনে সবাই তো ভয়ে পালিয়ে গেল। কিন্তু আমি ওখানেই বসে থাকলাম যে, দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কি ঘটে? দ্বিতীয়বার ওভাবেই ঐ শব্দই শুনা গেল এবং সে ঐ কথাই বললো। অতঃপর কিছুদিন পরেই নবী (সঃ)-এর নবুওয়াতের আওয়ায় আমাদের কানে আসতে শুরু হলো। এই রিওয়াইয়াতের বাহ্যিক শব্দ দ্বারা তো এটাই জানা যাচ্ছে যে, হযরত উমার ফারূক (রাঃ) স্বয়ং যবেহকৃত বাছুর হতে এই শব্দ শুনেছিলেন। আর একটি দুর্বল রিওয়াইয়াতে স্পষ্টভাবে এটা এসেও গেছে। কিন্তু বাকী অন্যান্য রিওয়াইয়াতগুলো এটা বলে দেয় যে, ঐ যাদুকরই নিজের দেখা-শুনার একটি ঘটনা এটাও বর্ণনা করেছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। ইমাম বায়হাকী (রঃ) এটাই বলেছেন এবং এটাই ভাল বলে মনে হচ্ছে। ঐ ব্যক্তির নাম ছিল সাওয়াদ ইবনে কারিব। যে ব্যক্তি এই ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ জানতে চায় তিনি যেন আমার ‘সীরাতে উমার' নামক কিতাবটি দেখে নেন। সমস্ত প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা আল্লাহর জন্যে।ইমাম বায়হাকী (রঃ) বলেনঃ খুব সম্ভব এটা ঐ যাদুকর বা গণক যার বর্ণনা নাম ছাড়াই সহীহ হাদীসে রয়েছে। হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মিম্বরে উঠে ভাষণ দিচ্ছিলেন। ঐ অবস্থাতেই তিনি জনগণকে জিজ্ঞেস করেনঃ “সাওয়াদ ইবনে কারিব এখানে আছে কি?” কিন্তু ঐ পূর্ণ এক বছরের মধ্যে কেউ হ্যা’ বললো না। পরের বছর আবার তিনি এটা জিজ্ঞেস করলেন। তখন হযরত বারা’ (রাঃ) উত্তরে বললেনঃ “সাওয়াদ ইবনে কারিব কে? এর দ্বারা উদ্দেশ্য কি?” জবাবে হযরত উমার (রাঃ) বললেনঃ “তার ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারটা খুবই বিস্ময়কর।” এভাবে তাদের মধ্যে আলোচনা চলছিল এমতাবস্থায় হযরত সাওয়াদ ইবনে কারিব (রাঃ) তথায় অকস্মাৎ হাযির হয়ে যান। হযরত উমার (রাঃ) তখন তাকে বলেনঃ “হে সাওয়াদ (রাঃ)! তোমার ইসলাম গ্রহণের প্রাথমিক ঘটনাটি বর্ণনা কর ।” তিনি তখন বললেনঃ “হ্যা, তাহলে শুনুন। আমি ভারতবর্ষে গমন করেছিলাম এবং তথায় অবস্থান করছিলাম। একদা রাত্রে আমার সাথী জ্বিনটি আমার কাছে আসে। ঐ সময় আমি ঘুমিয়েছিলাম। সে আমাকে জাগ্রত করে এবং বলেঃ “উঠো এবং জ্ঞান-বিবেক থাকলে শুনে ও বুঝে নাও যে, লুওয়াই ইবনে গালিব গোত্রের মধ্য হতে আল্লাহর রাসূল (সঃ) প্রেরিত হয়েছেন।” অতঃপর সে কবিতায় বললোঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি জ্বিনদের অনুভূতি এবং তাদের বস্তা ও বিছানা-পত্র বাঁধা দেখে বিস্ময়বোধ করছি। তুমি যদি হিদায়াত লাভ করতে চাও তবে এখনই মক্কার পথে যাত্রা শুরু কর। তুমি বুঝে নাও যে, ভাল ও মন্দ জ্বিন সমান নয়। অতি সত্বর গমন কর এবং বানু হাশিমের ঐ প্রিয় ব্যক্তির সুন্দর চেহারা দর্শনের মাধ্যমে স্বীয় চক্ষুদ্বয় ঠাণ্ডা কর।”আমাকে পুনরায় তন্ত্রায় চেপে ধরে এবং সে আবার আমাকে জাগিয়ে তোলে। অতঃপর বলেঃ “হে সাওয়াদ ইবনে কারিব (রাঃ)! মহামহিমান্বিত আল্লাহ নবী (সঃ)-কে পাঠিয়েছেন, সুতরাং তুমি তাড়াতাড়ি তাঁর নিকট গিয়ে হিদায়াত লাভে ধন্য হও।” দ্বিতীয় রাত্রে আবার সে আমার নিকট আসে এবং আমাকে জাগিয়ে দিয়ে কবিতার মাধ্যমে বলেঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি জ্বিনদের অনুসন্ধান এবং তাদের বস্তা ও থলে কষা দেখে বিস্মিত হচ্ছি, তুমিও যদি সুপথ পেতে চাও তবে মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে যাও। জেনে রেখো যে, ওদের দুই পা ওদের লেজের মত নয়। তুমি তাড়াতাড়ি উঠো এবং বানু হাশিমের ঐ পছন্দনীয় ব্যক্তির নিকট পৌঁছে যাও এবং তাঁকে দর্শন করে স্বীয় চক্ষুদ্বয়কে জ্যোতির্ময় কর।”তৃতীয় রাত্রে সে আবার আসলো এবং আমাকে জাগ্রত করে কবিতার ভাষায় বললোঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি জ্বিনদের খবর জেনে নেয়া এবং তাদের যাত্রীদের যাত্রার প্রস্তুতি গ্রহণ দেখে আশ্চর্যান্বিত হচ্ছি। তারা সব হিদায়াত লাভের উদ্দেশ্যে তাড়াতাড়ি মক্কার পথে যাত্রা শুরু করে দিয়েছে। তাদের মন্দরা ভালোদের মত নয়। তুমিও উঠো এবং বানু হাশিমের এই মহান ব্যক্তির খিদমতে হাযির হয়ে যাও। জেনে রেখো যে, মুমিন জ্বিনেরা কাফির জ্বিনদের মত নয়।”পর্যায়ক্রমে তিন রাত্রি ধরে তার এসব কথা শুনে আমার হৃদয়ে ইসলামের প্রেম জেগে ওঠে এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর প্রতি সম্মান ও ভালবাসায় আমার অন্তর পূর্ণ হয়ে যায়। সুতরাং আমি আমার স্ত্রীর পিঠে হাওদা কষে অন্য কোন জায়গায় অবস্থান না করে সরাসরি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর খিদমতে হাযির হয়ে গেলাম। ঐ সময় তিনি মক্কা শহরে ছিলেন এবং জনগণ তার চতুম্পার্শ্বে এমনভাবে বসেছিলেন যেমন ঘোড়ার উপর কেশর থাকে। নবী (সঃ) আমাকে দেখেই বলে উঠলেনঃ “হে সাওয়াদ ইবনে কারিব (রাঃ)! তোমার আগমন শুভ হোক! তুমি আমার কাছে কি করে, কি উদ্দেশ্যে এবং কার কথায় এসেছে তা আমি জানি।” আমি তখন বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি কিছু কবিতা বলতে চাই, অনুমতি দিলে বলি। তিনি বললেনঃ “হে সাওয়াদ (রাঃ)! ঠিক আছে, তুমি বল।” তখন আমি বলতে শুরু করলামঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমার নিকট আমার জ্বিন রাত্রে আমার ঘুমিয়ে পড়ার পর আসলো এবং আমাকে একটি সঠিক ও সত্য খবর দিলো। পর্যায়ক্রমে তিন রাত্রি সে আমার কাছে আসতে থাকলো এবং প্রতি রাত্রে আমাকে বলতে তাকলোঃ লুওয়াই ইবনে গালিবের মধ্যে আল্লাহর রাসূল (সঃ) প্রেরিত হয়েছেন। আমিও। তখন সফরের প্রস্তুতি গ্রহণ করলাম এবং তাড়াতাড়ি পথ অতিক্রম করে এখানে পৌঁছলাম। এখন আমি সাক্ষ্য দান করছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন প্রতিপালক নেই এবং আপনি আল্লাহর বিশ্বস্ত রাসূল। আপনার শাফাআতের উপর আমার আস্থা রয়েছে। হে সর্বাপেক্ষা মহান ও পবিত্র লোকদের সন্তান! হে সমস্ত রাসূলের চেয়ে উত্তম রাসূল (সঃ)! আপনি যে আসমানী হুকুম আমাদের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন তা যতই কঠিন ও স্বভাব বিরুদ্ধ হোক না কেন, এটা সম্ভব নয় যে, আমরা তা। পরিহার করি। আপনি অবশ্যই কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশকারী হবেন। কেননা, সেই দিন সেখানে আপনি ছাড়া সাওয়াদ ইবনে কারিব (রাঃ)-এর সুপারিশকারী আর কে হবে?” একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) খুব হাসলেন এবং বললেনঃ “হে সাওয়াদ (রাঃ)! তুমি মুক্তি পেয়ে গেছো।” হযরত উমার (রাঃ) এ ঘটনাটি শুনে হযরত সাওয়াদ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ “এখনো কি ঐ জ্বিন তোমার কাছে এসে থাকে?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “যখন হতে আমি কুরআন পাঠ করতে শুরু করি তখন হতে আর সে আমার কাছে আসে না। আমি মহান আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞ যে, তিনি আমাকে জ্বিনের পরিবর্তে তার পবিত্র কিতাব দান করেছেন।”হাফিয আবু নাঈম (রঃ) স্বীয় ‘দালাইলুন নবুওয়াত’ নামক কিতাবে বর্ণনা করেছেন যে, মদীনা শরীফেও জ্বিন-প্রতিনিধিরা রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর খিদমতে হাযির হয়েছিল। হযরত আমর ইবনে গাইলান সাকাফী (রঃ) হযরত আবদুল্লাহ। ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর নিকট হাযির হয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করেনঃ “আমি অবগত হয়েছি যে, যেই রাত্রে জ্বিন-প্রতিনিধিরা রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর নিকট হাযির হয়েছিল সেদিন নাকি আপনিও তাঁর সাথে ছিলেন?” জবাবে হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ “হ্যা, এটা ঠিকই বটে।” হযরত আমর ইবনে গাইলান (রঃ) তখন তাঁকে বলেনঃ “আমাকে ঘটনাটি একটু শুনান তো?” হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) তখন বলতে শুরু করলেনঃ “দরিদ্র আসহাবে সুফফাকে লোকেরা রাত্রির খাবার খাওয়াবার জন্যে এক একজন এক একজনকে নিয়ে গেলেন। কিন্তু আমাকে কেউই নিয়ে গেলেন না। আমি একাই রয়ে গেলাম। রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) আমার পার্শ্ব দিয়ে গমনকালে আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “কে তুমি?” আমি উত্তরে বললামঃ আমি ইবনে মাসউদ (রাঃ)। তিনি প্রশ্ন করলেনঃ “তোমাকে কেউ নিয়ে যায়নি?” অতঃপর তিনি আমাকে বললেনঃ “আচ্ছা, তুমি আমার সাথেই চল, হয়তো কিছু মিলে যেতে পারে।” আমি তার সাথে চললাম। তিনি হযরত উম্মে সালমা (রাঃ)-এর কক্ষে প্রবেশ করলেন। আমি বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকলাম। কিছুক্ষণ পর বাড়ীর ভিতর হতে একজন দাসী এসে আমাকে বললো:“বাড়ীতে কোন খাবার নেই, আপনি আপনার শয়নস্থলে চলে যান। এটা রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাকে জানাতে বললেন। আমি তখন। মসজিদে ফিরে আসলাম এবং কিছু কংকর জমা করে ছোট একটি ঢেরি করলাম এবং তাতে মাথা রেখে স্বীয় কাপড় জড়িয়ে নিয়ে শুয়ে পড়লাম। অল্পক্ষণ পরেই ঐ দাসী আবার আমার কাছে এসে বললোঃ “আল্লাহর রাসূল (সঃ) আপনাকে ডাকছেন।” আমি তখন তার সাথে চললাম এবং আমি মনে মনে এই আশা পোষণ করলাম যে, এবার অবশ্যই কিছু খাবার আমি পাবো। আমি গন্তব্যস্থলে পৌছলে দেখি যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বাইরে বেরিয়ে এসেছেন। তাঁর হাতে খেজুর গাছের একটি সিক্ত ছড়ি, যেটাকে তিনি আমার বক্ষের উপর রেখে বললেনঃ “আমি যেখানে যাচ্ছি সেখানে তুমি আমার সাথে যাবে তো?” আমি জবাবে বললাম:আল্লাহ যা চান। তিনবার এই প্রশ্ন ও উত্তরের আদান-প্রদান হলো। অতঃপর তিনি চলতে শুরু করলেন এবং আমিও তার সাথে চলতে লাগলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি বাকী গারকাদে পৌছলেন। এরপর প্রায় ঐ বর্ণনাই রয়েছে যা উপরোল্লিখিত রিওয়াইয়াতগুলোতে গত হয়েছে। (এর ইসনাদ গারীব বা দুর্বল। এর সনদে একজন অস্পষ্ট বর্ণনাকারী রয়েছেন, যার নাম উল্লিখিত হয়নি)হাফিয আবু নাঈম (রঃ) তাঁর দালাইলুন নবুওয়াত গ্রন্থে এনেছেন যে, মদীনার মসজিদে রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) ফজরের নামায আদায় করেন এবং ফিরে গিয়ে জনগণকে বলেনঃ “আজ রাত্রে জ্বিন প্রতিনিধিদের কাছে তোমাদের মধ্যে কে আমার সাথে যাবে?” কেউই তার এ প্রশ্নের উত্তর দিলেন না। তিনবারের প্রশ্নের পরেও কারো পক্ষ হতে কোন সাড়া এলো না। হযরত যুবায়ের ইবনে আওয়াম (রাঃ) বলেনঃ “রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) আমার পার্শ্ব দিয়ে গমন করার সময় আমার ডান হাতখানা ধরে আমাকে সঙ্গে নিয়ে চলতে শুরু করেন। মদীনার পাহাড়গুলো হতে বহু দূর এগিয়ে গিয়ে একেবারে সমতল ভূমিতে পৌছে গেলেন। অতঃপর বর্শার সমান লম্বা লম্বা দেহ বিশিষ্ট মানুষ নীচে নীচে কাপড় পরিহিত অবস্থায় আগমন করতে শুরু করলো। আমি তো তাদেরকে দেখে ভয়ে কাঁপতে লাগলাম।” তারপর তিনি হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর হাদীসের অনুরূপ ঘটনা বর্ণনা করেন। (এ হাদীসটিও গারীব। এসব ব্যাপারে আল্লাহ্ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন)এই কিতাবেই একটি গারীব হাদীসে আছে, ইবরাহীম (রঃ) বলেনঃ “হযরত আব্দুল্লাহ্ (রাঃ)-এর সঙ্গীরা হজ্বপৰ্ব পালন উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছিলেন। আমিও তাঁদের মধ্যে একজন ছিলাম। পথে আমরা দেখি যে, একটি সাদা রঙ-এর সর্প পথে গড়াগড়ি খাচ্ছে এবং ওটা হতে মেশকের সুগন্ধ আসছে। আমি আমার সঙ্গীদেরকে বললাম:আপনারা চলে যান। আমি এখানে অবস্থান করবো এবং শেষ পর্যন্ত সর্পটির অবস্থা কি হয় তা দেখবো। সুতরাং তারা সবাই চলে গেলেন। আর আমি ওখানেই রয়ে গেলাম। অল্পক্ষণ পরেই সাপটি মারা গেল। আমি তখন একটি সাদা কাপড়ে ওকে জড়িয়ে দিয়ে পথের এক পার্শ্বে দাফন করে দিলাম। অতঃপর রাত্রের আহারের সময় আমি আমার সাথীদের সাথে মিলিত হলাম। আল্লাহর কসম! আমি বসে আছি এমন সময় পশ্চিম দিক হতে চারজন স্ত্রী লোক আসলো। তাদের মধ্যে একজন আমাকে জিজ্ঞেস করলোঃ “আমরকে কে দাফন করেছে?” আমি প্রশ্ন করলাম:কোন্ আমর? সে বললোঃ “তোমাদের কেউ কি একটি সাপকে দাফন করেছে?” আমি উত্তরে বললামঃ হ্যাঁ, আমি দাফন করেছি। সে তখন বললোঃ “আল্লাহর কসম! তুমি একজন বড় বীর পুরুষকে দাফন করেছে, যে তোমাদের নবী (সঃ)-কে মানতো এবং যে তাঁর নবী হওয়ার চারশ’ বছর পূর্ব হতেই তাঁর গুণাবলী সম্পর্কে ওয়াকিফহাল ছিল।” আমি তখন আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা'আলার প্রশংসা করলাম। হজ্ব পৰ্ব পালন করে যখন আমরা হযরত উমার ফারুক (রাঃ)-এর খিদমতে হাযির হয়ে পথের ঘটনাটি বর্ণনা করলাম তখন তিনি বললেনঃ “স্ত্রী লোকটি সত্য কথাই বলেছে। আমি রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, সে তার উপর তার নবুওয়াত লাভের চারশ’ বছর পূর্বে ঈমান এনেছিল।” (এ হাদীসটি খুবই গরীব। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন)একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, সাপটিকে দাফনকারী লোকটি ছিলেন হযরত সাফওয়ান ইবনে মুআত্তাল (রাঃ)। কথিত আছে যে, তথায় দাফনকৃত সাপটি ছিল ঐ নয়জন জ্বিনের মধ্যে একজন যারা কুরআন শুনার জন্যে প্রতিনিধি হিসেবে নবী (সঃ)-এর নিকট আগমন করেছিলেন। তার মৃত্যু এসব জ্বিনের মধ্যে সর্বশেষে হয়েছিল।আবু নাঈম (রঃ)-এর একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, একটি লোক হযরত উসমান ইবনে আফফান (রাঃ)-এর খিদমতে হাযির হয়ে বলেনঃ “হে আমীরুল মুমিনীন! আমি একটি জংগলে ছিলাম। দেখি যে, দু'টি সাপ পরস্পর লড়াই করছে। শেষ পর্যন্ত একটি অপরটিকে মেরে ফেললো। অতঃপর আমি ওগুলোকে ঐ অবস্থায় রেখে যুদ্ধক্ষেত্রে গমন করলাম। সেখানে দেখলাম যে, বহু সাপ নিহত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। আর কতকগুলো সাপ হতে ইসলামের সুগন্ধ আসছে। আমি তখন ওগুলোকে এক এক করে শুকতে শুরু করলাম। শেষ পর্যন্ত একটি হলদে রঙ-এর ক্ষীণ সাপ হতে আমি ইসলামের সুগন্ধ পেলাম। আমি তখন ওকে আমার পাগড়ীতে জড়িয়ে দাফন করে দিলাম। অতঃপর আমি পথ চলতে শুরু করলাম, এমন সময় হঠাৎ একটি শব্দ শুনলামঃ “হে আল্লাহর বান্দা! তোমাকে আল্লাহ্ তা'আলার পক্ষ হতে হিদায়াত দান করা হয়েছে। ঐ সাপ দুটি জ্বিনদের গোত্র বানু শায়বান ও বানু কয়েসের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই দুই গোত্রের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধে এবং তাদের মধ্যে যতগুলো নিহত হয়েছে তা তো তুমি স্বচক্ষে দেখেছো। তাদের মধ্যে একজন শহীদকে তুমি দাফন করেছে, যে স্বয়ং আল্লাহর রাসূল (সাঃ)-এর মুখে তার অহী শুনেছেন।” এ কথা শুনে হযরত উসমান (রাঃ) লোকটিকে বললেনঃ “হে লোক! তুমি যদি তোমার বর্ণনায় সত্যবাদী হও তবে তো তুমি এক বিস্ময়কর ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে। আর যদি মিথ্যাবাদী হও তবে মিথ্যার প্রতিফল তুমিই পাবে।”মহান আল্লাহ্ বলেনঃ (হে নবী সঃ!) তুমি স্মরণ কর, আমি তোমার প্রতি আকৃষ্ট করেছিলাম একদল জ্বিনকে, যারা কুরআন পাঠ শুনছিল, যখন তারা তার নিকট উপস্থিত হলো তখন তারা একে অপরকে বলতে লাগলো:চুপ করে শ্রবণ কর। এটা তাদের একটা আদব বা শিষ্টাচার।হযরত জাবির ইবনে আবদিল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) সূরায়ে আর-রাহমান শেষ পর্যন্ত পাঠ করেন। অতঃপর তিনি স্বীয় সাহাবীদেরকে বলেনঃ “কি ব্যাপার, তোমরা যে সবাই নীরব থেকেছো? জ্বিনেরা তো তোমাদের চেয়ে উত্তম জবাবদাতা রূপে প্রমাণিত হলো”? যখনই আমি (আরবী) অর্থাৎ “সুতরাং তোমরা উভয়ে (দানব ও মানব) তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?"(৫৫:১৩) এ আয়াতটি পাঠ করেছি তখনই তারা উত্তরে বলেছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার এমন কোন নিয়ামত নেই যা আমরা অস্বীকার করতে পারি। সুতরাং সমস্ত প্রশংসা আপনারই প্রাপা।” (এ হাদীসটি ইমাম হাফিয বায়হাকী (রঃ) ও ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে গারীব বলেছেন)এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ্ বলেনঃ “যখন কুরআন পাঠ সমাপ্ত হলো, (আরবী) শব্দটির অর্থ কুরআন কারীমের নিম্নের আয়াতগুলোতেও একই রূপঃ (আরবী) অর্থাৎ “যখন নামায সমাপ্ত হবে।”(৬২:১০) (আরবী) অর্থাৎ “তিনি ওগুলোকে সপ্ত আকাশে সমাপ্ত করলেন।”(২:২৯) (আরবী) অর্থাৎ “যখন তোমরা তোমাদের হজ্বের কার্যাবলী সমাপ্ত করবে।”(২:২০০) ঐ জ্বিনগুলো তাদের কওমকে সতর্ক করার জন্যে তাদের কাছে ফিরে যাবে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যেমন তারা দ্বীনের বোধশক্তি লাভ করে। আর যখন তারা তাদের কওমের কাছে পৌছবে তখন যেন তাদেরকেও সতর্ক করে দেয়, হয়তো তারাও তাদের পরিত্রাণ লাভের আশায় সতর্কতা অবলম্বন করবে।”(৯:১২২) এই আয়াত দ্বারা দলীল গ্রহণ করা হয়েছে যে, জ্বিনদের মধ্যেও আল্লাহর বাণী প্রচারকারী ও ভয় প্রদর্শনকারী রয়েছে। কিন্তু তাদের মধ্যে কাউকেও রাসূল করা হয়নি। এটা নিঃসন্দেহভাবে প্রমাণিত যে, জ্বিনদের মধ্যে রাসূল নেই। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি তোমার (নবী সঃ-এর) পূর্বে যতগুলো রাসূল পাঠিয়েছিলাম সবাই তারা জনপদের অধিবাসী মানুষই ছিল, যাদের কাছে আমি অহী পাঠাতাম।"(১২:১০৯) অন্য এক আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী)অর্থাৎ “(হে নবী সঃ)! তোমার পূর্বে আমি যতগুলো রাসূল পাঠিয়েছিলাম তারা সবাই খাদ্য খেতো এবং বাজারে চলাফেরা করতো।”(২৫:২০) হযরত ইবরাহীম খলীল (আঃ) সম্পর্কে কুরআন কারীমে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি তার সন্তানদের মধ্যে নবুওয়াত ও কিতাব রেখে দিয়েছি।”(২৯:২৭) সুতরাং তার পরে যতগুলো নবী এসেছিলেন তাঁরা সবাই তারই বংশোদ্ভূত ছিলেন। কিন্তু সূরায়ে আনআমের (আরবী) অর্থাৎ “হে জ্বিন ও মানব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্য হতে কি রাসূলগণ তোমাদের নিকট আসেনি?”(৬:১৩০) এই আয়াতে এই দুই শ্রেণী বা জাতির সমষ্টি উদ্দেশ্য। সুতরাং এর প্রয়োগ শুধু একটি জাতির উপরই হতে পারে। যেমন আল্লাহ পাকের উক্তিঃ (আরবী) অর্থাৎ “উভয় সমুদ্র হতে উৎপন্ন মুক্তা ও প্রবাল।”(৫৫:২২) অথচ প্রকৃতপক্ষে এগুলো উৎপন্ন হয় একটি সমুদ্র হতেই।এরপর জ্বিনদের আরো উক্তি উদ্ধৃত করা হচ্ছেঃ হে আমাদের সম্প্রদায়! আমরা এমন এক কিতাবের পাঠ শ্রবণ করেছি যা অবতীর্ণ হয়েছে হযরত মূসা (আঃ)-এর পরে।' হযরত ঈসা (আঃ)-এর কিতাব ইনজীলের বর্ণনা ছেড়ে দেয়ার কারণ এই যে, প্রকৃতপক্ষে এটা তাওরাতকে পূর্ণকারী। এতে বেশীর ভাগ উপদেশ অন্তরকে নরমকারী বর্ণনাসমূহ ছিল। হারাম ও হালালের মাসআলাগুলো খুবই কম ছিল। সুতরাং প্রকৃত জিনিস তাওরাতই থাকে। এ জন্যেই বিদ্বান জ্বিনগুলো এরই কথা উল্লেখ করেছে। এটাকেই সামনে রেখে হযরত অরাকা ইবনে নওফল যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মুখে হযরত জিবরাঈল (আঃ)-এর প্রথমবারে আগমনের অবস্থা শুনেন তখন তিনি বলেছিলেনঃ “ইনি হলেন আল্লাহ তা'আলার ঐ পবিত্র রহস্যবিদ যিনি হযরত মূসা (আঃ)-এর কাছে আসতেন। যদি আমি আরো কিছুদিন জীবিত থাকতাম, (শেষ পর্যন্ত)। অতঃপর কুরআন কারীমের অন্য একটি বিশেষণের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যে, এটা এর পূর্ববর্তী সমস্ত আসমানী কিতাবের সত্যতা স্বীকার করে এবং সত্য ও সরল পথের দিকে পরিচালিত করে। সুতরাং কুরআন কারীম দুটি জিনিসকে অন্তর্ভুক্ত করে। একটি হলো খবর এবং অপরটি হলো দাবী বা যাজ্ঞা। অতএব, এর খবর হলো সত্য এবং দাবী বা যাচ্ছা হলো ন্যায় সঙ্গত। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমার প্রতিপালকের কথা সত্য ও ন্যায়ের দিক দিয়ে পরিপূর্ণ।”(৬:১১৫) আল্লাহ তা'আলা অন্য আয়াতে বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তিনি তাঁর রাসূল (সঃ)-কে পথ-নির্দেশ ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন।”(৯:৩৩) সুতরাং হিদায়াত হলো উপকার দানকারী ইলম এবং দ্বীন হলো সৎ আমল। জ্বিনদের উদ্দেশ্য এটাই ছিল।জ্বিনেরা আরো বললোঃ “হে আমাদের সম্প্রদায়! আল্লাহর দিকে আহ্বানকারীর প্রতি সাড়া দাও।' এতে এরই প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) দানব ও মানব এই দুই দলের নিকটই রাসূল রূপে প্রেরিত হয়েছেন। কেননা, তিনি জ্বিনদেরকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করেন। আর তাদের সামনে তিনি কুরআন কারীমের ঐ সূরা পাঠ করেন যাতে এই দুটি দলকে সম্বোধন করা হয়েছে এবং তাদের নাম বরাবর আহকাম জারী করা হয়েছে এবং অঙ্গীকার ও ভয় প্রদর্শনের বর্ণনা রয়েছে। অর্থাৎ সূরায়ে আর-রহমান। মহান আল্লাহ জ্বিনদের আরো কথা উদ্ধৃত করেনঃ (এরূপ করলে) তিনি (আল্লাহ) তোমাদের পাপ ক্ষমা করবেন।' কিন্তু এটা ঐ অবস্থায় হতে পারে যখন (আরবী) কে অতিরিক্ত মেনে না নেয়া হবে, যেহেতু তাফসীরকারদের একটি উক্তি এটাও রয়েছে। আর আরবী ব্যাকরণ অনুযায়ী (আরবী)-এর স্থলে (আরবী) খুব কমই অতিরিক্ত হিসেবে এসে থাকে। আর যদি অতিরিক্ত মেনে নেয়া হয় তবে ভাবার্থ হবেঃ ‘আল্লাহ তা'আলা তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন এবং তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হতে পরিত্রাণ দিবেন। এই আয়াত দ্বারা কোন কোন আলেম এই দলীল গ্রহণ করেছেন যে, মুমিন জুিনেরাও জান্নাত লাভ করবে না। হ্যা, তবে তারা শাস্তি হতে পরিত্রাণ লাভ করবে। এটাই হবে তাদের সৎকর্মের প্রতিদান। যদি এর চেয়েও বেশী মর্যাদা তারা লাভ করতো তবে এ স্থলে ঐ মুমিন জ্বিনেরা ওটাকে অবশ্যই বর্ণনা করতো। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর উক্তি এই যে, মুমিন জ্বিন জান্নাতে যাবে না। কেননা, তারা ইবলীসের বংশধর। আর ইবলীসের বংশধররা জান্নাতে যাবে না। কিন্তু সঠিক ও সত্য কথা এই যে, মুমিন জ্বিন। মুমিন মানুষের মতই এবং তারা জান্নাত লাভ করবে। যেমন এটা পূর্বযুগীয় মনীষীদের একটি দলের মাযহাব। জ্বিনেরা যে জান্নাত পাবে এর উপর কতকগুলো লোক নিম্নের আয়াতটিকে দলীল হিসেবে পেশ করেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তাদেরকে (হুরদেরকে) পূর্বে কোন মানুষ অথবা জ্বিন স্পর্শ করেনি।”(৫৫:৫৬) কিন্তু এই আয়াতকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ রয়েছে। এর চেয়ে তো বড় উত্তম দলীল হলো মহান আল্লাহর নিম্নের উক্তিটিঃ (আরবী) অর্থাৎ “আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্যে রয়েছে দুটি উদ্যান (দুটি জান্নাত)। সুতরাং তোমরা উভয়ে (জ্বিন ও মানুষ) তোমাদের প্রতিপালকের কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে।?”(৫৫:৪৬-৪৭) এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানুষ ও জ্বিনের উপর নিজের অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করছেন যে, তাদের মধ্যে যারা পুণ্যবান তাদের প্রতিদান হলো জান্নাত। আর মুমিন মানুষ অপেক্ষা মুমিন জিনেরাই এই আয়াতের বেশী শুকরিয়া আদায় করেছিল এবং এটা শোনামাত্রই বলেছিলঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার এমন কোন নিয়ামত নেই যা আমরা অস্বীকার করতে পারি।” এটা তো হতে পারে না যে, তাদের সামনে তাদের উপর এমন অনুগ্রহ করার কথা প্রকাশ করা হবে যা তারা লাভ করতেই পারবে না। মুমিন জ্বিনেরা যে জান্নাতে যাবে তার আর একটি দলীল এই যে, কাফির জ্বিন যখন জাহান্নামে যাবে যা ন্যায়ের স্থল, তখন মুমিন জ্বিন কেন জান্নাতে যাবে না যা অনুগ্রহের স্থল? বরং এটা তো আরো বেশী সঙ্গত। তাছাড়া এর উপর ঐ আয়াতগুলোকে দলীল হিসেবে পেশ করা যেতে পারে যেগুলোতে সাধারণভাবে মুমিনদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ এক জায়গায় বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ ‘যারা ঈমান আনে ও সঙ্কর্ম করে তাদের আপ্যায়নের জন্যে আছে ফিরদাউসের উদ্যান।”(১৮:১০৭) অনুরূপ আরো বহু আয়াত রয়েছে। এই মাসআলাটিকে আমি একটি পৃথক রচনায় বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছি। সুতরাং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই প্রাপ্য এবং আমি তারই নিকট কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। জান্নাতের তো অবস্থা এই যে, সমস্ত মুমিন তাতে প্রবেশ করার পরেও ওর মধ্যে সীমাহীন জায়গা শূন্য থাকবে। তাহলে ঈমানদার ও সৎকর্মশীল জ্বিনদেরকে জান্নাতে প্রবেশ না করানোর কি কারণ থাকতে পারে? এখানে দুটি বিষয়ের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। (এক) পাপরাশি ক্ষমা করে দেয়া এবং (দুই) যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হতে পরিত্রাণ দান করা। এ দু'টো থাকলেই তো জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়। কেননা, পরকালে নির্ধারিত রয়েছে জান্নাত, না হয় জাহান্নাম। সুতরাং যাকে জাহান্নাম হতে বাঁচিয়ে নেয়া হবে তার জন্যে জান্নাত অবধারিত হওয়া উচিত। আর এ ব্যাপারে কোন স্পষ্ট দলীল নেই যে, মুমিন জ্বিন জাহান্নাম হতে পরিত্রাণ লাভ করা সত্তেও জানাতে যাবে না। যদি এই ধরনের কোন স্পষ্ট দলীল থেকে থাকে তবে আমরা তা মেনে নিতে প্রস্তুত আছি। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। হযরত নূহ (আঃ)-এর ব্যাপারটাই দেখা যাক। তিনি তাঁর কওমকে বলেছিলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “(তোমরা ঈমান আনয়ন করলে) আল্লাহ তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দিবেন এবং তোমাদেরকে নির্ধারিত কাল পর্যন্ত অবকাশ দিবেন।” (৭১:৪) সুতরাং এখানেও তাদের জানাতে প্রবেশ করার কথা উল্লেখ করা না হলেও এটা প্রমাণিত হয় না যে, তাদের মধ্যে যারা ঈমান আনবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। বরং এটা সর্বসম্মত বিষয় যে, তারা জান্নাতে অবশ্যই প্রবেশ করবে। সুতরাং এখানে জ্বিনদের ব্যাপারেও এটাই বুঝে নিতে হবে। জিনদের ব্যাপারে কতকগুলো গারীব উক্তি বর্ণনা করা হয়েছেঃ হযরত উমার ইবনে আবদিল আযীয (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, জ্বিনেরা জান্নাতে তো প্রবেশ করবে না, তবে তারা জান্নাতের ধারে ধারে এবং এদিকে ওদিকে থাকবে।কতক লোক বলেন যে, তারা জান্নাতে যাবে বটে, কিন্তু তথায় দুনিয়ার সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থা হবে। অর্থাৎ মানুষ জ্বিনকে দেখতে পাবে, কিন্তু জ্বিন মানুষকে দেখতে পাবে না। কেউ কেউ বলেন যে, তারা জান্নাতে পানাহার করবে না। শুধু আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা ও তাঁর মহিমা কীর্তনই হবে তাদের খাদ্য, যেমন ফেরেশতাগণ। কেননা, তারা ফেরেশতাদেরই শ্রেণীভুক্ত। কিন্তু এ সমুদয় উক্তির ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ আছে এবং এগুলো সবই দলীলবিহীন উক্তি। এরপর উপদেশদানকারী জ্বিনেরা তাদের কওমকে বললোঃ “কেউ যদি আল্লাহর দিকে আহ্বানকারীর প্রতি সাড়া না দেয় তবে সে পৃথিবীতে আল্লাহর অভিপ্রায় ব্যর্থ করতে পারবে না এবং আল্লাহ ব্যতীত তাদের কোন সাহায্যকারী থাকবে না। তারাই সুস্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছে।এই বক্তৃতার পন্থা কতই না পছন্দনীয় এবং এটা কতই না আকর্ষণীয়! উৎসাহও প্রদান করা হয়েছে এবং ভীতিও প্রদর্শন করা হয়েছে। এ কারণেই তাদের অধিকাংশই সঠিক পথে চলে আসে এবং তারা দলে দলে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর খিদমতে হাযির হয়ে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করে। যেমন আমরা পূর্বে এটা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছি এবং যার জন্যে আমরা মহান আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।

أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّ اللَّهَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَلَمْ يَعْيَ بِخَلْقِهِنَّ بِقَادِرٍ عَلَىٰ أَنْ يُحْيِيَ الْمَوْتَىٰ ۚ بَلَىٰ إِنَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

📘 Please check ayah 46:35 for complete tafsir.

وَيَوْمَ يُعْرَضُ الَّذِينَ كَفَرُوا عَلَى النَّارِ أَلَيْسَ هَٰذَا بِالْحَقِّ ۖ قَالُوا بَلَىٰ وَرَبِّنَا ۚ قَالَ فَذُوقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنْتُمْ تَكْفُرُونَ

📘 Please check ayah 46:35 for complete tafsir.

فَاصْبِرْ كَمَا صَبَرَ أُولُو الْعَزْمِ مِنَ الرُّسُلِ وَلَا تَسْتَعْجِلْ لَهُمْ ۚ كَأَنَّهُمْ يَوْمَ يَرَوْنَ مَا يُوعَدُونَ لَمْ يَلْبَثُوا إِلَّا سَاعَةً مِنْ نَهَارٍ ۚ بَلَاغٌ ۚ فَهَلْ يُهْلَكُ إِلَّا الْقَوْمُ الْفَاسِقُونَ

📘 ৩৩-৩৫ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ যারা মৃত্যুর পর পুনর্জীবনকে অস্বীকারকারী এবং কিয়ামতের দিন দেহসহ পুনরুত্থানকে যারা অসম্ভব মনে করে তারা কি দেখে না যে, মহামহিমান্বিত ও প্রবল পরাক্রান্ত আল্লাহ সমুদয় আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন এবং এতে তিনি মোটেই ক্লান্ত হননি, বরং শুধু ‘হও’ বলতেই সব হয়ে গেছে? তিনি কি মৃতের জীবন দানে সক্ষম নন? অবশ্যই তিনি এতে পূর্ণ ক্ষমতাবান। যেমন অন্য আয়াতে তিনি বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “মানুষ সৃষ্টি অপেক্ষা আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিই বেশী কঠিন, কিন্তু অধিকাংশ লোকই জানে না।”(৪০:৫৭) আল্লাহ তা'আলা আকাশ ও পৃথিবী যখন সৃষ্টি করতে পেরেছেন তখন মানুষকে সৃষ্টি করা তাঁর পক্ষে মোটেই কঠিন নয়, প্রথমবারই হোক অথবা দ্বিতীয়বারই হোক। এ জন্যেই তিনি এখানে বলেন। যে, তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। আর ওগুলোর মধ্যেই একটি হচ্ছে মৃত্যুর পরে পুনর্জীবিত করা এবং এটার উপরও তিনি পূর্ণ ক্ষমতাবান।এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ ধমকের সূরে বলছেন যে, কিয়ামতের দিন কাফিরদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার পূর্বে জাহান্নামের ধারে দাঁড় করানো হবে এবং তাদেরকে নিরুত্তর করে দেয়া হবে। তারা কোন যুক্তি খুঁজে পাবে না। তাদেরকে বলা হবে:“এখন কি আল্লাহর ওয়াদা ও তার শাস্তিকে সত্য বলে বিশ্বাস করছো, না এখনো সন্দেহের মধ্যেই রয়েছে? এটা যাদু তো নয় এবং তোমাদের চক্ষু অন্ধতো হয়ে যায়নি? যা তোমরা দেখছো তা ঠিকই দেখছো, না প্রকৃতপক্ষে ঠিক নয়?” তখন তারা স্বীকার করে নেয়া ছাড়া আর কোন উপায় খুঁজে পাবে না। তাই তারা উত্তরে বলবেঃ “হ্যা, আমাদের প্রতিপালকের শপথ! সবই সত্য। যা বলা হয়েছিল তা সবই সঠিক হয়ে গেছে। এখন আমাদের মনে আর তিল বরাবরও সন্দেহ নেই।” তখন আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ “তাহলে এখন তোমরা শাস্তি আস্বাদন কর। কারণ তোমরা ছিলে সত্য প্রত্যাখ্যানকারী।অতঃপর মহান আল্লাহ স্বীয় রাসূল (সঃ)-কে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে বলেনঃ “হে নবী (সঃ)! তোমার সম্প্রদায় যদি তোমাকে অবিশ্বাস করে এবং তোমার মর্যাদা না দেয় তবে এতে মনঃক্ষুন্ন হওয়ার কোনই কারণ নেই। এটা কোন নতুন ব্যাপার নয়। তোমর পূর্ববর্তী দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রাসূলদেরকেও তাদের সম্প্রদায় অবিশ্বাস করেছিল। কিন্তু তারা যেমন ধৈর্যধারণ করেছিল তেমনই তোমাকেও ধৈর্যধারণ করতে হবে। ঐ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রাসূলদের নাম হচ্ছেঃ হযরত নূহ (আঃ), হযরত ইবরাহীম (আঃ), হযরত মূসা (আঃ), হযরত ঈসা (আঃ) এবং শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)। নবীদের (আঃ) বর্ণনায় তাঁদের নাম বিশিষ্টভাবে সূরায়ে আহযাবে। ও সূরায়ে শূরায় উল্লিখিত আছে। আবার এও হতে পারে যে, (আরবী) দ্বারা সমস্ত নবীকেই বুঝানো হয়েছে, তখন (আরবী)-এর (আরবী) টি (আরবী)-এর জন্যে হবে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।হযরত মাসরূক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত আয়েশা (রাঃ) তাঁকে বলেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ) রোযাদার থাকতেন, অতঃপর ক্ষুধার্তই থাকতেন, আবার রোযা রাখতেন, অতপর ক্ষুধার্তই থাকতেন, পুনরায় রোযা রাখতেন এবং আবারও ক্ষুধার্ত রইতেন। অতঃপর বলতেনঃ “হে আয়েশা (রাঃ)! নিশ্চয়ই দুনিয়া মুহাম্মাদ (সঃ) ও তাঁর পরিবারবর্গের জন্যে মোটেই শোভনীয় নয়! হে আয়েশা (রাঃ)! নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'আলা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রাসূলদের ধৈর্যের উপরই সন্তুষ্ট হন। (অর্থাৎ কষ্টে ও বিপদে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রাসূলগণ ধৈর্যধারণ করলেও তিনি সন্তুষ্ট থাকেন)। ধৈর্য আল্লাহ তাআলার নিকট পছন্দনীয় এবং তিনি তাদের (আমার পূর্ববর্তী দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রাসূলদের) উপর যে বিপদ-আপদ ও কষ্ট পৌছিয়েছিলেন তা আমার উপরও না পৌঁছানো পর্যন্ত তিনি আমার প্রতি সন্তুষ্ট হবেন না। যেমন তিনি বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে নবী (সঃ)! তুমি ধৈর্যধারণ কর যেমন ধৈর্যধারণ করেছিল দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রাসূলগণ।” সুতরাং (আমি যে কষ্টে পতিত হয়েছি এর উপর) আমি আমার সাধ্যমত ধৈর্যধারণ করবো যেমন তাঁরা ধৈর্যধারণ করেছিলেন এবং (আমি আল্লাহ তাআলার নিকট হতে শক্তি পাবো এ আশাতে একথা বলছি, কেননা) আল্লাহর সাহায্য ছাড়া (ধৈর্যধারণের কোন শক্তি আমার নেই।” (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)প্রবল পরাক্রান্ত আল্লাহ বলেনঃ হে নবী (সঃ)! এদেরকে অবশ্যই শাস্তিতে জড়িয়ে ফেলা হবে, তুমি এজন্যে তাড়াতাড়ি করো না। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “তুমি মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদেরকে এবং সম্পদের অধিকারীদেরকে ছেড়ে দাও এবং তাদেরকে অল্প দিনের জন্যে অবকাশ দাও।”(৭৩:১১)অন্য এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “অতএব কাফিরদেরকে অবকাশ দাও, তাদেরকে অবকাশ দাও কিছুকালের জন্যে।”(৮৬:১৭) এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “যে বিষয়ে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে তা যেদিন তারা প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন তাদের মনে হবে যে, তারা যেন দিবসের এক দণ্ডের বেশী পৃথিবীতে অবস্থান করেনি।' যেমন অন্য এক আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “যেই দিন তারা এটা প্রত্যক্ষ করবে সেই দিন তাদের মনে হবে যে, যেন তারা পৃথিবীতে মাত্র এক সন্ধ্যা অথবা এক প্রভাত অবস্থান করেছে।”(৭৯:৪৬) আর এক জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “যেই দিন তাদেরকে একত্রিত করা হবে সেই দিন তাদের মনে হবে যে, তারা যেন দিবসের এক দণ্ডের বেশী পৃথিবীতে অবস্থান করেনি।”(১০:৪৫)মহান আল্লাহর উক্তিঃ (আরবী) (পৌঁছিয়ে দেয়া), এর দু’টি অর্থ হতে পারে। (এক) দুনিয়ায় অবস্থান শুধু আমার পক্ষ হতে আমার বাণী পৌঁছিয়ে দেয়ার জন্যে ছিল। (দুই) এই কুরআন শুধু পৌছিয়ে দেয়ার জন্যে। এটা এক স্পষ্ট ঘোষণা।প্রবল প্রতাপান্বিত আল্লাহর বাণীঃ ‘সত্যত্যাগী সম্প্রদায় ব্যতীত কাউকেও ধ্বংস করা হবে না। এটা মহামহিমান্বিত আল্লাহর ওয়াদা যে, যে ব্যক্তি নিজেকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিবে, তিনি তাকেই শুধু ধ্বংস করবেন। তাকেই তিনি শাস্তি প্রদান করবেন, যে নিজেকে শাস্তির উপযুক্ত করে ফেলবে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।

قُلْ أَرَأَيْتُمْ مَا تَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَرُونِي مَاذَا خَلَقُوا مِنَ الْأَرْضِ أَمْ لَهُمْ شِرْكٌ فِي السَّمَاوَاتِ ۖ ائْتُونِي بِكِتَابٍ مِنْ قَبْلِ هَٰذَا أَوْ أَثَارَةٍ مِنْ عِلْمٍ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ

📘 Please check ayah 46:6 for complete tafsir.

وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنْ يَدْعُو مِنْ دُونِ اللَّهِ مَنْ لَا يَسْتَجِيبُ لَهُ إِلَىٰ يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَهُمْ عَنْ دُعَائِهِمْ غَافِلُونَ

📘 Please check ayah 46:6 for complete tafsir.

وَإِذَا حُشِرَ النَّاسُ كَانُوا لَهُمْ أَعْدَاءً وَكَانُوا بِعِبَادَتِهِمْ كَافِرِينَ

📘 ১-৬ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তা'আলা খবর দিচ্ছেন যে, তিনি এই কুরআন কারীম স্বীয় বান্দা ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-এর উপর অবতীর্ণ করেছেন। তিনি এমনই সম্মানের অধিকারী যে, তা কখনো নষ্ট হবার নয় এবং তিনি এমনই প্রজ্ঞাময় যে, তাঁর কোন কথা ও কাজ প্রজ্ঞাশূন্য নয়। এরপর ইরশাদ হচ্ছে যে, আল্লাহ তা'আলা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী এবং এতোদুভয়ের সব জিনিসই যথাযথভাবে নির্দিষ্ট কালের জন্যে সৃষ্টি করেছেন। কোনটাই তিনি অযথা ও বৃথা সৃষ্টি করেননি।(আরবী) -এর অর্থ হচ্ছে নির্দিষ্ট কাল, যা বৃদ্ধিও পাবে না এবং কমেও যাবে। এই রাসূল (সঃ), এই কিতাব (কুরআন) এবং সতর্ককারী অন্যান্য নিদর্শনাবলী হতে যে দুষ্টমতি লোকেরা মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বেপরোয়া হয় তারা নিজেদের কি পরিমাণ ক্ষতি করেছে তা তারা সত্বরই জানতে পারবে। মহান আল্লাহ স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলেনঃ এই মুশরীকদেরকে তুমি জিজ্ঞেস কর- তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাকো এবং যাদের ইবাদত কর, তাদের কথা কিছু ভেবে দেখেছো কি? তারা পৃথিবীতে কি সৃষ্টি করেছে আমাকে দেখাও তো? অথবা আকাশমণ্ডলীতে তাদের কোন অংশীদারিত্ব আছে কি? প্রকৃত ব্যাপার তো এই যে, আকাশ হোক, পৃথিবী হোক, যে কোন জিনিসই হোক না কেন সবকিছুরই সৃষ্টিকর্তা একমাত্র আল্লাহ। তিনি ছাড়া কারো এক অণুপরিমাণ জিনিসেরও অধিকার নেই। সমগ্র রাজ্যের মালিক তিনিই। প্রত্যেক জিনিসের উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান একমাত্র তিনি। তিনিই সবকিছুর ব্যবস্থাপক। সবকিছুরই উপর পূর্ণ অধিকার একমাত্র তিনিই রাখেন। সুতরাং মানুষ তাঁর ছাড়া অন্যদের ইবাদত কেন করে? কেন তারা তাদের বিপদ-আপদের সময় অল্লাহ ছাড়া অন্যকে ডাকে? কে তাদেরকে এ শিক্ষা দিয়েছে? কে তাদেরকে এ শিরক করতে | শিখিয়েছে? প্রকতপক্ষে কোন সৎ ও জ্ঞানী মানুষের এ শিক্ষা হতে পারে না ।মহান আল্লাহ তাদেরকে এ শিক্ষা দেননি। তাই তো তিনি বলেনঃ “পূর্ববর্তী কোন কিতাব অথবা পরম্পরাগত কোন জ্ঞান থাকলে তা আমার নিকট উপস্থিত কর, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।' কিন্তু আসলে তো এটা তোমাদের বাজে ও বাতিল কাজ। সুতরাং তোমরা এর স্বপক্ষে না পারবে কোন শরীয়ত সম্মত দলীল পেশ করতে এবং না পারবে কোন জ্ঞান সম্মত দলীল পেশ করতে। এক কিরআতে (আরবী) রয়েছে। অর্থাৎ তোমাদের পূর্ববর্তীদের হতে কোন সঠিক জ্ঞানের বর্ণনা পেশ কর। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ এমন কাউকেও উপস্থিত কর যে সঠিক ইলমের বর্ণনা দিতে পারে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, ভাবার্থ হচ্ছেঃ এই বিষয়ের কোন দলীল আনয়ন কর।মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো জ্ঞান-লিপি। বর্ণনাকারী বলেন যে, তাঁর ধারণামতে এ হাদীসটি মার'। হযরত আবু বকর ইবনে আইয়াশ (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা বাকী ইলমকে বুঝানো হয়েছে। হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ ‘কোন গোপন দলীলও পেশ কর?' এই সব গুরুজন হতে এটাও বর্ণিত আছে যে, এর দ্বারা পূর্ববতী লিপি উদ্দেশ্য। হযরত কাতাদা (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা কোন বিশেষ জ্ঞানকে বুঝানো হয়েছে। এসব উক্তি প্রায় একই অর্থবোধক। ভাবার্থ ওটাই যা আমরা প্রথমে বর্ণনা করেছি। ইমাম ইবনে জারীরও (রঃ) এটাকেই পছন্দ করেছেন। এরপর ইরশাদ হচ্ছেঃ “ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক বিভ্রান্ত কে যে আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুকে ডাকে যা কিয়ামত দিবস পর্যন্তও তার ডাকে সাড়া দিবে না? এবং এগুলো তাদের প্রার্থনা সম্বন্ধে অবহিতও নয়। কেননা এগুলো তো পাথর এবং জড় পদার্থ। এরা না শুনতে পায়, না দেখতে পায়।কিয়ামতের দিন যখন সব মানুষকে একত্রিত করা হবে তখন এসব বাতিল মা'বুদ বা উপাস্য তাদের উপাসকদের শত্রু হয়ে যাবে এবং তারা এদের ইবাদত অস্বীকার করবে। যেমন আল্লাহ তা'আলা অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য মাবুদ গ্রহণ করে এ জন্যে যে, যাতে তারা তাদের সহায় হয়। কখনই নয়; তারা তাদের ইবাদত অস্বীকার করবে এবং তাদের বিরোধী হয়ে যাবে।”(১৯:৮১-৮২) অর্থাৎ যখন এরা তাদের পূর্ণ মুখাপেক্ষী হবে তখন তারা মুখ ফিরিয়ে নিবে।হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ (সঃ) তাঁর উম্মতকে বলেছিলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমরা আল্লাহ ব্যতীত প্রতিমাগুলোর সাথে যে পার্থিব সম্পর্ক স্থাপন করেছো এর ফলাফল তোমরা কিয়ামতের দিন দেখে নিবে, যখন তোমরা একে অপরকে অস্বীকার করবে এবং একে অপরকে লা'নত করবে, আর তোমাদের আশ্রয়স্থল হবে জাহান্নাম এবং তোমাদের জন্যে কোন সাহায্যকারী হবে না।”

وَإِذَا تُتْلَىٰ عَلَيْهِمْ آيَاتُنَا بَيِّنَاتٍ قَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا لِلْحَقِّ لَمَّا جَاءَهُمْ هَٰذَا سِحْرٌ مُبِينٌ

📘 Please check ayah 46:9 for complete tafsir.

أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ ۖ قُلْ إِنِ افْتَرَيْتُهُ فَلَا تَمْلِكُونَ لِي مِنَ اللَّهِ شَيْئًا ۖ هُوَ أَعْلَمُ بِمَا تُفِيضُونَ فِيهِ ۖ كَفَىٰ بِهِ شَهِيدًا بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ ۖ وَهُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ

📘 Please check ayah 46:9 for complete tafsir.

قُلْ مَا كُنْتُ بِدْعًا مِنَ الرُّسُلِ وَمَا أَدْرِي مَا يُفْعَلُ بِي وَلَا بِكُمْ ۖ إِنْ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَىٰ إِلَيَّ وَمَا أَنَا إِلَّا نَذِيرٌ مُبِينٌ

📘 ৭-৯ নং আয়াতের তাফসীর: মুশরিকদের হঠকারিতা, ঔদ্ধত্য এবং কুফরীর বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যে, যখন তাদেরকে আল্লাহ তা'আলার প্রকাশ্য, স্পষ্ট এবং পরিষ্কার আয়াতসমূহ শুনানো হয় তখন তারা বলে থাকেঃ এটা তো যাদু ছাড়া কিছুই নয়। মিথ্যা প্রতিপন্ন করা, অপবাদ দেয়া, পথভ্রষ্ট হওয়া এবং কুফরী করাই যেন তাদের নীতি। তারা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে শুধু যাদুকর বলেই ক্ষান্ত হয় না, বরং একথাও বলে যে, তিনি কুরআনকে নিজেই রচনা করেছেন। তাই মহান আল্লাহ স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলেনঃ তুমি তাদেরকে বল- আমি যদি নিজেই কুরআনকে রচনা করে থাকি এবং আমি আল্লাহ তাআলার সত্য নবী না হই তবে অবশ্যই তিনি আমাকে আমার এ মিথ্যা অপবাদের কারণে কঠিন শাস্তি প্রদান করবেন, তখন তোমরা কেন, সারা দুনিয়ায় এমন কেউ নেই যে আমাকে তাঁর এ আযাব হতে রক্ষা করতে পারে। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “(হে নবী সঃ)! তুমি বলঃ আল্লাহ হতে কেউ আমাকে বাঁচাতে পারে না এবং তিনি ছাড়া আমি কোন আশ্রয়স্থল ও পলায়নের জায়গা পাবো না। কিন্তু আমি তার পক্ষ হতে প্রচার ও রিসালাতের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।"(৭২:২২) অন্য এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “সে যদি আমার নামে কিছু রচনা করে চালাতে চেষ্টা করতো, তবে অবশ্যই আমি তার দক্ষিণ হস্ত ধরে ফেলতাম, এবং কেটে দিতাম তার জীবন ধমনী, অতঃপর তোমাদের মধ্যে এমন কেউই নেই, যে তাকে রক্ষা করতে পারে।"(৬৯:৪৪-৪৭)।এরপর কাফিরদেরকে ধমকানো হচ্ছে যে, তারা যে বিষয়ে আলোচনায় লিপ্ত আছে, সে সম্বন্ধে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত। তিনি সবারই মধ্যে ফায়সালা করবেন।'এই ধমকের পর তাদেরকে তাওবা করার প্রতি উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। মহান আল্লাহ বলেনঃ তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। যদি তোমরা তার দিকে ফিরে আসো এবং তোমাদের কৃতকর্ম হতে বিরত থাকো তবে তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন এবং তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। সূরায়ে ফুরকানে এ বিষয়েরই আয়াত রয়েছে। সেখানে আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তারা বলেঃ এগুলো তো সেকালের উপকথা, যা সে লিখিয়ে নিয়ে এগুলো সকাল-সন্ধ্যায় তার নিকট পাঠ করা হয়। বলঃ এটা তিনিই অবতীর্ণ করেছেন যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সমুদয় রহস্য অবগত আছেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”(২৫:৫-৬)মহান আল্লাহ স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলছেন, তুমি বলঃ আমি তো প্রথম রাসূল নই। আমার পূর্বে তো দুনিয়ায় মানুষের নিকট রাসূল আসতেই থেকেছেন। সুতরাং আমার আগমনে তোমাদের এতো বিস্মিত হবার কারণ কি? আমার এবং তোমাদের ব্যাপারে কি করা হবে তাও তো আমি জানি না।হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর উক্তি হিসেবে এই আয়াতের পরে (আরবী) (যেন আল্লাহ তোমার অতীত ও ভবিষ্যৎ ক্রটিসমূহ মার্জনা করেন ৪৮:২)-এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। অনুরূপভাবে হযরত ইকরামা (রঃ), হযরত হাসান (রঃ) এবং হযরত কাতাদাও (রঃ) .. (আরবী) আয়াতটি দ্বারা (আরবী)-এ আয়াতটি রহিত বলেছেন। যখন (আরবী)-এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় তখন একজন সাহাবী রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলেনঃ “এ আয়াত দ্বারা তো আল্লাহ তা'আলা আপনার সাথে যা করবেন তা বর্ণনা করলেন, এখন আমাদের সাথে তিনি কি করবেন?” তখন আল্লাহ তা'আলা নিম্নের আয়াতটি অবতীর্ণ করেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যেন আল্লাহ মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে প্রবিষ্ট করেন এমন জান্নাতে যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত।”(৪৮:৫)সহীহ হাদীস দ্বারাও এটা প্রমাণিত যে, মুমিনরা বলেছিলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনাকে মুবারকবাদ! বলুন, আমাদের জন্যে কি আছে?” তখন আল্লাহ তা'আলা ... (আরবী)-এ আয়াতটি অবতীর্ণ করেন। হযরত যহহাক (রঃ) (আরবী)-এ আয়াতের তাফসীরে বলেন যে, ভাবার্থ হচ্ছেঃ ‘আমাকে কি হুকুম দেয়া হবে এবং কোন জিনিস হতে নিষেধ করা হবে তা আমি জানি না।'হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, এ আয়াতের ভাবার্থ হলোঃ ‘পরকালের পরিণাম তো আমার জানা আছে যে, আমি জান্নাতে যাবো, কিন্তু দুনিয়ার অবস্থা আমার জানা নেই যে, পূর্ববর্তী কোন কোন নবী (আঃ)-এর মত আমাকে হত্যা করা হবে, না আমি আমার আয়ু পূর্ণ করে আল্লাহ তা'আলার নিকট হাযির হবো? অনুরূপভাবে আমি এটাও জানি না যে, তোমাদেরকে যমীনে ধ্বসিয়ে দেয়া হবে, না তোমাদের উপর পাথর বর্ষিত হবে?' ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) এটাকেই বিশ্বাসযোগ্য বলেছেন। আর প্রকৃতপক্ষেও এটা ঠিকই বটে যে, তিনি এবং তাঁর অনুসারীরা যে জান্নাতে যাবেন এটা তার নিশ্চিত রূপে জানা ছিল এবং দুনিয়ার অবস্থার পরিণাম সম্পর্কে তিনি ছিলেন বে-খবর যে, তার এবং তার বিরোধী কুরায়েশদের অবস্থা কি হতে পারে? তারা কি ঈমান আনবে, না কুফরীর উপরই থাকবে ও শাস্তিপ্রাপ্ত হবে, না কি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যাবে?উম্মুল আলা (রাঃ) হতে বর্ণিত, যিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর হাতে বায়আত গ্রহণ করেছিলেন, তিনি বলেনঃ “লটারীর মাধ্যমে মুহাজিরদেরকে যখন আনসারদের মধ্যে বন্টন করা হচ্ছিল তখন আমাদের ভাগে আসেন হযরত উসমান ইবনে মাযউন (রাঃ)। আমাদের এখানেই তিনি রুগ্ন হয়ে পড়েন এবং অবশেষে মৃত্যুমুখে পতিত হন। আমরা যখন তাকে কাফন পরিয়ে দিই এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ)-ও আগমন করেন তখন আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে পড়েঃ হে আবূ সায়েব (রাঃ)! আল্লাহ আপনার প্রতি দয়া করুন! আপনার ব্যাপারে আমার সাক্ষ্য এই যে, আল্লাহ অবশ্যই আপনাকে সম্মান দান করবেন! আমার একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাকে বললেনঃ “তুমি কি করে জানতে পারলে যে, আল্লাহ তাকে সম্মান প্রদান করবেন?" তখন আমি বললামঃ আপনার উপর আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক! আমি কিছুই জানি না। তিনি তখন বললেনঃ “তাহলে জেনে রেখো যে, তার কাছে তার প্রতিপালকের পক্ষ হতে নিশ্চিত বিষয় (মৃত্যু) এসে গেছে। তার সম্পর্কে আমি কল্যাণেরই আশা রাখি। আল্লাহর শপথ! আমি আল্লাহর রাসূল হওয়া সত্ত্বেও আমার সাথে কি করা হবে তা আমি জানি না।” আমি তখন বললামঃ “আল্লাহর কসম! আজকের পরে আর কখনো আমি কাউকেও পবিত্র ও নিস্পাপ বলে নিশ্চয়তা প্রদান করবো না। আর এতে আমি বড়ই দুঃখিত হই। কিন্তু আমি স্বপ্নে দেখি যে, হযরত উসমান ইবনে মাউন (রাঃ)-এর একটি নদী বয়ে যাচ্ছে। আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর দরবারে হাযির হয়ে এটা বর্ণনা করি। তখন তিনি বলেনঃ “এটা তার আমল।” এর অন্য একটি সনদে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আমি আল্লাহর রাসূল হওয়া সত্ত্বেও তার সাথে কি করা হবে তা জানি না। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং শুধু ইমাম বুখারী (রঃ) এটা তাখরীজ করেছেন, ইমাম মুসলিম (রঃ) করেননি) অবস্থা হিসেবে এ শব্দগুলোই সঠিক বলে মনে ধরছে। কেননা, এর পরেই হযরত উম্মুল আ’লা (রাঃ)-এর উক্তি রয়েছেঃ এতে আমি বড়ই দুঃখ পাই।' মোটকথা, এই হাদীস এবং এর অর্থেরই আরো অন্যান্য হাদীসসমূহ এটাই প্রমাণ করে যে, কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির জান্নাতী হওয়ার নিশ্চিত জ্ঞান কারো নেই এবং কারো এ ধরনের মন্তব্য করা উচিতও নয় যে, অমুক ব্যক্তি জান্নাতী। তবে ঐ মহান ব্যক্তিবর্গ এর ব্যতিক্রম যাদেরকে শরীয়ত প্রবর্তক (সঃ) জান্নাতী বলে ঘোষণা করেছেন। যেমন সুসংবাদ প্রদত্ত দশজন ব্যক্তি (আশারায়ে মুবাশশারাহ রাঃ), হযরত ইবনে সালাম (রাঃ), হযরত আমীসা (রাঃ), হযরত বিলাল (রাঃ), হযরত জাবির (রাঃ)-এর পিতা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে হারাম (রাঃ), বি’রে মাউনায় শাহাদাত প্রাপ্ত সত্তরজন কারী (রাঃ), হযরত যায়েদ ইবনে হারেসাহ (রাঃ), হযরত জাফর (রাঃ), হযরত ইবনে রাওয়াহা (রাঃ) এবং এঁদের মত আরো যারা বুযুর্গ ব্যক্তি রয়েছেন। আল্লাহ তা'আলা তাদের সবারই প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন।এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেন, হে নবী (সঃ)! তুমি তাদেরকে বলঃ আমি আমার প্রতি অবতারিত অহীরই শুধু অনুসরণ করি এবং আমি এক স্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র। আমার কাজ প্রত্যেক জ্ঞানী ও বিবেকবান ব্যক্তির নিকট স্পষ্টভাবে প্রকাশমান। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।