Al-Maaida • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ لَا يُؤَاخِذُكُمُ ٱللَّهُ بِٱللَّغْوِ فِىٓ أَيْمَٰنِكُمْ وَلَٰكِن يُؤَاخِذُكُم بِمَا عَقَّدتُّمُ ٱلْأَيْمَٰنَ ۖ فَكَفَّٰرَتُهُۥٓ إِطْعَامُ عَشَرَةِ مَسَٰكِينَ مِنْ أَوْسَطِ مَا تُطْعِمُونَ أَهْلِيكُمْ أَوْ كِسْوَتُهُمْ أَوْ تَحْرِيرُ رَقَبَةٍۢ ۖ فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلَٰثَةِ أَيَّامٍۢ ۚ ذَٰلِكَ كَفَّٰرَةُ أَيْمَٰنِكُمْ إِذَا حَلَفْتُمْ ۚ وَٱحْفَظُوٓا۟ أَيْمَٰنَكُمْ ۚ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ ٱللَّهُ لَكُمْ ءَايَٰتِهِۦ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ ﴾
“GOD will not take you to task for oaths which you may have uttered without thought, but He will take you to task for oaths which you have sworn in earnest. Thus, the breaking of an oath must be atoned for by feeding ten needy persons with more or less the same food as you are wont to give to your own families, or by clothing them, or by freeing a human being from bondage; and he who has not the wherewithal shall fast for three days [instead]. This shall be the atonement for your oaths whenever you have sworn [and broken them]. But be mindful of your oaths!' Thus God makes clear unto you His messages, so that you might have cause to be grateful.”
অর্থহীন কসমের বর্ণনা সূরায়ে বাকারায় দেয়া হয়েছে, সুতরাং এখানে তার পুনরাবৃত্তি নিষ্প্রয়োজন। এ ধরনের কসম মানুষ তার কথা বার্তার মধ্যে অনিচ্ছা সত্ত্বেও করে থাকে। যেমন সে বলে, আল্লাহর কসম ইত্যাদি। এটা ইমাম শাফিঈ (রঃ)-এর উক্তি। অন্যান্যদের উক্তি এই যে, এরূপ কসম উপহাস ও অবাধ্যতার স্থলেও হতে পারে। ইমাম আবু হানীফা (রঃ) ও ইমাম আহমাদ (রঃ)-এর উক্তি এই যে, দৃঢ় বিশ্বাসের সময় এরূপ করা হলেও তা অর্থহীন কসমের সংজ্ঞার মধ্যেই পড়ে যাবে। কেউ কেউ এ কথাও বলেছেন যে, এটা হচ্ছে ক্রোধের সময় বা ভুল বশতঃ কসম। আবার এটাও বলা হয়েছে যে, কেউ যদি কোন খাদ্য, পানীয় বা পোষাক পরিত্যাগ করা সম্পর্কে কসম খায় তবে এ দলীল অনুযায়ী তাকে পাকড়াও করা হবে না। কিন্তু সঠিক কথা এই যে, অনিচ্ছাকৃতভাবে যে কসম মুখ দিয়ে বেরিয়ে পড়ে ওটাই হচ্ছে অর্থহীন বা বাজে কসম। (আরবী) অর্থাৎ তোমরা যদি কসমকে দৃঢ় করে নাও তবে সেই কসমের জন্যে আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করবেন।(আরবী) অর্থাৎ দৃঢ় কসম ভেঙ্গে দেয়ার কাফফারা হচ্ছে দশজন অভাবগ্রস্ত লোককে খেতে দেয়া। তাদেরকে তোমরা এমন মধ্যম ধরনের খাবার খেতে দেবে যা তোমরা তোমাদের পরিবারের লোকদেরকে খাওয়াইয়ে থাক। এ মধ্যম ধরনের খাদ্য হচ্ছে রুটি ও দুধ কিংবা রুটি ও তেল। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, কোন কোন লোক নিজের পরিবারকে তার ক্ষমতার তুলনায় খারাপ খাদ্য ভক্ষণ করিয়ে থাকে। আবার কেউ কেউ নিজের ক্ষমতার তুলনায় ভাল খাবার খাওয়াইয়ে থাকে। এ জন্যেই আল্লাহ পাক বলেছেন যে, সেই খাদ্য মধ্যম ধরনের হওয়া উচিত। না খুবই ভাল, না খুবই মন্দ। হযরত ইবনে উমার (রাঃ) বলেন যে, (আরবী) ওটা হচ্ছে রুটি ও গোশত, রুটি ও দুধ, রাওগান’ তেল বা সিরকাহ ইত্যাদি। (এটা ইবনে সীরীন, হাসান ও যহাকের উক্তি) ইবনে জারীর (রাঃ) বলেন যে, দ্বারা খাদ্যের স্বল্পতা ও আধিক্য বুঝানো হয়েছে। খাদ্যের পরিমাণের ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। হযরত আলী (রাঃ) বলেন যে, সকাল ও সন্ধ্যা এ দু’সময়ে দশজন মিসকীনকে খানা খাওয়াতে হবে। মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন (রঃ) বলেন যে, একবারই যথেষ্ট। অর্থাৎ রুটি ও গোশত। আর গোস্ত দিতে না পারলে রুটি ও রাওগান তেল বা সিরকাই যথেষ্ট হবে এবং তা পেট পুরে খাওয়াতে হবে। অন্যান্যগণ বলেন যে, দশজনের প্রত্যেককে অর্ধ সা’ (প্রায় সোয়া সের) গম বা খেজুর অথবা এ ধরনের কোন খাবার দিতে হবে। (এটা হযরত আয়েশা (রাঃ), মুজাহিদ (রঃ), সাঈদ ইবনে জুবাইর (রাঃ), নাখঈ (রঃ) এবং যহহাকেরও (রঃ) উক্তি) ইমাম আবূ হানীফা (রঃ) বলেন যে, গম হলে অর্ধ সা’ আর অন্য কিছু হলে এক সা' দেয়া উচিত। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এক সা' খেজুর কাফফারা হিসেবে আদায় করেছিলেন এবং লোকদেরকে তিনি এরই নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর খেজুর না হলে অর্ধ সা’ গম দিতে হবে।ইমাম শাফিঈ (রঃ) বলেন যে, কসমের কাফফারায় নবী (সঃ)-এর সেই মুদ পরিমাণ ওয়াজিব, যে মুদ তিনি মিসকীনের জন্যে ধার্য করেছিলেন, আর তা হচ্ছে ৫৬ তোলা গম। কিন্তু তিনি তরকারীর কথা বলেননি। এখানে ইমাম শাফিঈ (রঃ) দলীল হিসেবে নবী (সঃ)-এর ঐ হুকুমকে গ্রহণ করেছেন, যে হুকুম তিনি ঐ ব্যক্তিকে দিয়েছিলেন যে রমযানের রোযার অবস্থায় স্ত্রীর সাথে সহবাস করে ফেলেছিল। সে হুকুম এই ছিল যে, সে যেন ৭০জন মিসকীনকে এমন পরিমাণ যন্ত্রে গম মেপে দেয় যাতে ১৫ সা’ গম ধরে, যেন প্রত্যেকে এক মুদ করে গম পেতে পারে। ইমাম আহমাদ (রঃ) বলেন যে, গম দেবে এক মুদ অথবা অন্য জিনিস দেবে দু’ মুদ। (৩. এটা ইবনে মিরদুওয়াই (রঃ) বর্ণনা করেছেন। আর ইবনে মাজা (রঃ) এটা তাখরীজ করেছেন এবং তাঁর সনদে দুর্বলতা রয়েছে) আল্লাহই সবচেয়ে বেশী জানেন।(আরবী) ইমাম শাফিঈ (রঃ) বলেন যে, যদি ঐ দশজনের প্রত্যেককেই একই পরিমাণ কাপড় দেয় যার উপর পোশাকের প্রয়োগ হতে পারে তবে তা যথেষ্ট হবে। যেমন একটা জামা বা পায়জামা অথবা পাগড়ী কিংবা চাদর। ইমাম মালিক (রঃ) ও ইমাম আহমাদ (রঃ) বলেন যে, প্রত্যেককে এ পরিমাণ কাপড় দেয়া উচিত, যে পরিমাণ কাপড় নামাযে পরিধান করা জরুরী। পুরুষ ও স্ত্রীকে শরঈ প্রয়োজন হিসেবে দিতে হবে। আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।হাসান (রঃ) বলেন যে, দু’টি কাপড় দিতে হবে। সাওরী (রঃ) বলেন যে, একটি পাগড়ী দেবে যা মাথাকে ঢেকে নেয় এবং একটি চাদর দেবে যা দেহকে ঢেকে দেয়।(আরবী) ইমাম আবু হানাফী (রঃ) এর দ্বারা সাধারণ গোলাম অর্থ নিয়েছেন। সুতরাং তাঁর মতে কাফির গোলাম আযাদ করতে পারে এবং মুমিন গোলাম আযাদ করতে পারে। ইমাম শাফিঈ (রঃ) ও অন্যান্য ফকীহগণ বলেন। যে, হত্যার কাফফারায় যেমন মুমিন গোলামের শর্ত রয়েছে দ্রুপ কসমের কাফফারাতেও মুমিন গোলাম হওয়া জরুরী। কেননা, কারণ পৃথক হলেও ওয়াজিব তো একই। মুআবিয়া ইবনে হাকাম আস-সালমী (রাঃ)-এর হাদীস দ্বারা জানা যায় যে, তার উপর একবার একটা গোলাম আযাদ করার দায়িত্ব পড়েছিল। তখন তিনি একটি হাবশি ক্রীতদাসী নিয়ে আসেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) ক্রীতদাসীটিকে জিজ্ঞেস করেনঃ “আল্লাহ কোথায়? সে উত্তরে বলে তিনি আকাশে রয়েছেন। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করেনঃ ‘আমি কে?' উত্তরে দেয়, আপনি আল্লাহর রাসূল (সঃ)। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) মুআবিয়া ইবনে হাকাম আস-সালমী (রাঃ)-কে বললেনঃ “এ মুমিনা, সুতরাং তুমি তাকে আযাদ করতে পার। (এটা ইমাম মুসলিম (রঃ) তাঁর সহীহ গ্রন্থে, ইমাম মালিক (রঃ) তাঁর মুআত্তা গ্রন্থে এবং ইমাম শাফিঈ (রঃ) তার মুসনাদ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)এখন এ তিন প্রকারের কাফফারার মধ্য হতে যে প্রকারের কাফফারা আদায় করা হবে তাই আদায় হয়ে যাবে। কুরআন কারীমে সর্বপ্রথম সহজটার কথা বলা হয়েছে। তারপর শ্রেণীগতভাবে বর্ণনা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ পোশাক দেয়ার তুলনায় খানা খাওয়ানো সহজ। অতঃপর গোলাম আযাদ করার তুলনায় পোশাক দেয়া সহজ। মোটকথা, নিম্নতম হতে উচ্চতমের দিকে পা বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষে বলা হয়েছে (আরবী) অর্থাৎ যে ব্যক্তি এ তিনটির মধ্যে একটির উপরেও সক্ষম হবে না, তাকে তিনটি রোযা রাখতে হবে। ইবনে জারীর (রঃ) সাঈদ ইবনে জুবাইর (রঃ) এবং হাসান বসরী (রঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, তাঁরা বলেছেনঃ যার নিকট তিনটি দিরহাম বা রৌপ্যমুদ্রাও থাকবে তাকে অবশ্যই খানা খাওয়াতে হবে, নচেৎ রোযা রাখতে হবে।' এখন এ তিনটি রোযা পর্যায়ক্রমে রাখা ওয়াজিব কি মুস্তাহাব বা বিচ্ছিন্নভাবে রাখাই যথেষ্ট কি-না এ ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। ইমাম শাফিঈ (রঃ)-এর মতে পর্যায়ক্রমে রাখা ওয়াজিব নয়। ইমাম মালিকও (রঃ) এ কথাই বলেছেন। কেননা, (আরবী) কথাটি সাধারণ, পর্যায়ক্রমে তিনদিন রোযা রাখতে হবে- এভাবে একে বেঁধে দেয়া হয়নি। যেমন কারও যদি পর্যায়ক্রমে কয়েকটি রোযা কাযা হয় তবে পর্যায়ক্রমে ওগুলোও আদায় করা জরুরী নয়। কেননা (আরবী) (২:১৮৪) কথাটি সাধারণ। এক জায়গায় ইমাম শাফিঈ (রঃ) পর্যায়ক্রমে তিনটি রোযা ওয়াজিব হওয়ার কথা স্পষ্টভাবে বলেছেন। হানাফী ও হানাবেল সম্প্রদায়েরও এটাই উক্তি। তাদের দলীল এই যে, হযরত উবাই ইবনে কা'ব (রাঃ)-এর একটি কিরআতে (আরবী)-এরূপও রয়েছে। (হযরত মুজাহিদ (রঃ) ও শাবী (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) -এর কিরআত এটাই ছিল) এ কিরআতটি মুতাওয়াতিরভাবে বর্ণিত না থাকলেও কমপক্ষে খবরে ওয়াহিদ তো বটে। তাছাড়া সাহাবীদের তাফসীর দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় এবং এটা হাদীসে মারফু'র হুকুমেই পড়ে।(আরবী) এটা হচ্ছে কসমের শরঈ কাফফারা ।(আরবী) ইবনে জারীর (রঃ) বলেন যে, এর অর্থ হচ্ছে তোমরা কাফফারা আদায় না করে ছেড়ে দিয়ো না। এভাবেই আল্লাহ তাআলা স্বীয় নিদর্শনাবলী বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করে থাকেন, যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।