Al-An'aam • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ وَهُوَ ٱلَّذِى جَعَلَكُمْ خَلَٰٓئِفَ ٱلْأَرْضِ وَرَفَعَ بَعْضَكُمْ فَوْقَ بَعْضٍۢ دَرَجَٰتٍۢ لِّيَبْلُوَكُمْ فِى مَآ ءَاتَىٰكُمْ ۗ إِنَّ رَبَّكَ سَرِيعُ ٱلْعِقَابِ وَإِنَّهُۥ لَغَفُورٌۭ رَّحِيمٌۢ ﴾
“For, He it is who has made you inherit the earth, and has raised some of you by degrees above others, so that He might try you by means of what He has bestowed upon you. Verily, thy Sustainer is swift in retribution: yet, behold, He is indeed much-forgiving, a dispenser of grace.”
ইরশাদ হচ্ছে- তোমরা একের পর এক ভূ-পৃষ্ঠে বসতি স্থাপন করে আসছিলে এবং পূর্ববর্তীদের পর পরবর্তীদের যুগ আসতে রয়েছিল। আর একে অপরের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছিল। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ “যদি আমি ইচ্ছা করতাম তবে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত তোমাদের সন্তানদেরকে বা অন্য কাউকেও না বানিয়ে ফেরেশতাদেরকে বানাতাম এবং তারা তোমাদের পর তোমাদের স্থান দখল করে নিত।” আর এক জায়গায় তিনি বলেনঃ “এ যমীনকে তিনি তোমাদেরকে পর্যায়ক্রমে একের পর অপরকে প্রদান করেছেন।” অন্যত্র তিনি বলেছেনঃ “ভূ-পৃষ্ঠে আমি নিজের প্রতিনিধি বানাতে চাই।” আর এক জায়গায় বলেনঃ “এ সম্ভাবনা রয়েছে যে, সত্বরই তোমাদের প্রভু তোমাদের শক্রকে ধ্বংস করে দিবেন। এবং তোমাদেরকে তাদের স্থানে বসাবেন, অতঃপর তিনি দেখবেন যে, তাদের স্থানে তোমরা এসে কিরূপ আমল পেশ করছে।”আল্লাহ পাক বলেনঃ তিনি কতককে কতকের উপর মর্যাদায় উন্নত করেছেন, অর্থাৎ জীবিকা, চরিত্র, সৌন্দর্য, সমতা, দৃশ্য, দৈহিক গঠন, রং ইত্যাদিতে একে অপরের অপেক্ষা কম-বেশী রয়েছে। যেমন তিনি বলেছেনঃ “আমি তাদের পার্থিব জীবনে তাদের পারস্পরিক জীবিকা বন্টন করে দিয়েছি এবং একের মর্যাদা অপরের চেয়ে উচ্চ করেছি।” কেউ আমীর, কেউ গরীব, কেউ মনিব এবং কেউ তার চাকর । মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেনঃ “লক্ষ্য কর, আমি কিভাবে একের উপরে অপরকে প্রাধান্য ও মর্যাদা দান করেছি, তবে পার্থিব জীবনের মর্যাদার তুলনায় পারলৌকিক মর্যাদা ও প্রাধান্য বহু গুণে গুরুত্বপূর্ণ।” আর এক জায়গায় তিনি বলেনঃ “এই মর্যাদার বিভিন্নতার উদ্দেশ্য হচ্ছে, আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে চাই, ধনীকে ধন দিয়ে জিজ্ঞেস করা হবে যে, সে ধন-সম্পদের শাকরিয়া কিভাবে আদায় করেছে এবং গরীবকে জিজ্ঞেস করা হবে যে, সে স্বীয় দারিদ্রের উপর ধৈর্যধারণ করেছে কি করেনি।”সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “দুনিয়া হচ্ছে সুমিষ্ট, শ্যামল ও সবুজ। আল্লাহ তোমাদেরকে অন্যান্যদের পরে দুনিয়া ভোগ করার সুযোগ দিয়েছেন এবং তোমাদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত বানিয়েছেন। এখন তিনি দেখতে চান তোমরা কিরূপ আমল করছো। তোমরা দুনিয়াকে ভয় কর এবং নারীদেরকেও ভয় করে চল। বানী ইসরাঈলের মধ্যে প্রথম যে ফিত্না সৃষ্টি হয়েছিল তা ছিল নারী সম্পৰ্কীয়ই।” (এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ) আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে মারফু’রূপে বর্ণনা করেছেন)আল্লাহ তা'আলার উক্তি- (আরবী) হে মুহাম্মাদ (সঃ)! নিঃসন্দেহে তোমার প্রতিপালক ত্বড়িত শাস্তিদাতা এবং অবশ্যই তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালুও বটে। অর্থাৎ তোমাদের পার্থিব জীবন সত্বরই শেষ হয়ে যাবে ও তোমাদেরকে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। তবে তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল এবং দয়ালুও বটে। এখানে ভয়ও প্রদর্শন করা হচ্ছে এবং উৎসাহও প্রদান করা হচ্ছে যে, তাঁর হিসাব ও শাস্তি সত্বরই এসে যাবে এবং তার অবাধ্যরা ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর বিরোধিতাকারীরা পাকড়াও হয়ে যাবে। আর যারা তাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছে, আল্লাহ তাদের অলী এবং তাদের প্রতি তিনি ক্ষমাশীল ও কৃপানিধান । কুরআন কারীমের অধিকাংশ স্থানে এ দুটি বিশেষণ অর্থাৎ ক্ষমাশীল ও দয়ালু এক সাথে এসেছে। যেমন তিনি বলেনঃ “তেমাদের প্রভু স্বীয় বান্দাদের পাপরাশি ক্ষমা করার ব্যাপারে বড় ক্ষমাশীল, কিন্তু এর সাথে সাথে তাঁর পাকড়াও খুবই কঠিন।” আর এক জায়গায় তিনি বলেনঃ “হে নবী (সঃ)! আমার বান্দাদেরকে তুমি বলে দাও-আমি ক্ষমাশীল ও দয়ালু এবং আমার শাস্তিও বড়ই কঠিন।” উৎসাহ ও আশা প্রদান এবং ভয় প্রদর্শনের আয়াত অনেক রয়েছে। কখনও তো আল্লাহ পাক জান্নাতের গুণাবলী বর্ণনা করে বান্দাদেরকে উৎসাহ ও আশা প্রদান করেন, আবার কখনও জাহান্নামের বর্ণনা দিয়ে ওর শাস্তি এবং কিয়ামতের ভয়াবহ দৃশ্য থেকে ভয় প্রদর্শন করে থাকেন। মাঝে মাঝে আবার দু’টোর বর্ণনা একই সাথে দিয়েছেন। আল্লাহ যেন আমাদেরকে তাঁর বিধানসমূহ মেনে চলার তাওফীক প্রদান করেন এবং পাপীদের দল থেকে যেন আমাদেরকে দূরে রাখেন।আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহর শাস্তি যে কত কঠিন তা যদি মুমিন জানতো তবে কেউ জান্নাতের লালসা করতো না (সে বলতো--যদি জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাই তবে এটাই যথেষ্ট)। পক্ষান্তরে আল্লাহর দয়া ও রহমত যে কত ব্যাপক তা যদি কাফির জানতো তবে কেউ জান্নাত থেকে নিরাশ হতো না (অথচ জান্নাত তো কাফিরের প্রাপ্যই নয়)। আল্লাহ একশ’ ভাগ রহমত রেখেছেন। এর মধ্য থেকে একটি মাত্র অংশ সারা মাখলুকাতের মধ্যে বণ্টন করে দিয়েছেন। এই এক ভাগ রহমতের কারণেই মানুষ ও জীবজন্তু একে অপরের উপর দয়া করে থাকে। আর নিরানব্বই ভাগ রহমত আল্লাহর কাছেই রয়েছে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে মারফু’রূপে তাখরীজ করেছেন) তাঁর রহমত যে কত বেশী তা এটা থেকেই অনুমান করা যেতে পারে!আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকেই বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ “আল্লাহ একশ’ ভাগ রহমত রেখেছেন। এর মধ্য থেকে নিরানব্বই ভাগ তিনি নিজের কাছে রেখেছেন এবং এক ভাগ যমীনে অবতীর্ণ করেছেন। এই এক ভাগ রহমতের বরকতেই সৃষ্টজীবগুলো একে অপরের উপর দয়া করে থাকে, এমন কি চতুষ্পদ জন্তুও ওর বাচ্চাকে খুরের আঘাত থেকে রক্ষা করে থাকে এই ভয়ে যে, সে কষ্ট পাবে।” (এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ) তাঁর সহীহ গ্রন্থে আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে মারফু’রূপে তাখরীজ করেছেন) রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, যখন আল্লাহ মাখলুকাতকে সৃষ্টি করেন তখন আরশের উপর অবস্থিত লাওহে মাহফুযে তিনি লিপিবদ্ধ করেনঃ “আমার রহমত আমার গযবের উপর জয়যুক্ত থাকবে।”