Al-An'aam • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ وَلَوْ تَرَىٰٓ إِذْ وُقِفُوا۟ عَلَىٰ رَبِّهِمْ ۚ قَالَ أَلَيْسَ هَٰذَا بِٱلْحَقِّ ۚ قَالُوا۟ بَلَىٰ وَرَبِّنَا ۚ قَالَ فَذُوقُوا۟ ٱلْعَذَابَ بِمَا كُنتُمْ تَكْفُرُونَ ﴾
“If thou couldst but see [them] when they shall be made to stand before their Sustainer [and] He will say, "Is not this the truth?" They will answer: "Yea, indeed, by our Sustainer!" [Whereupon] He will say: "Taste, then, the suffering that comes from your having refused to acknowledge the truth!"”
২৭-৩০ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ পাক এখানে কাফিরদের অবস্থা বর্ণনা করছেন যে, কিয়ামতের দিন যখন তাদেরকে আগুনের সামনে দাঁড় করানো হবে, তারা ওর কড়া ও শৃংখল দেখতে পাবে, তখন অফিসোস করে বলবেঃ হায়! পুনরায় যদি আমাদেরকে দুনিয়ায় ফিরিয়ে দেয়া হতো তবে আমরা ভাল কাজ করতাম এবং আমাদের প্রতিপালকের আয়াতসমূহ অবিশ্বাস করতাম না। বরং ঐগুলোর উপর ঈমান আনয়ন করতাম। আল্লাহ পাক বলেনঃ না, না, বরং কথা এই যে, কুফর, অবিশ্বাস ও বিরোধিতার যে ব্যাপারগুলো তারা অন্তরে গোপন রেখেছিল সেগুলো আজ প্রকাশ হয়ে গেল। যদিও দুনিয়া বা আখিরাতে তারা তা অস্বীকার করেছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ “তাদের যুক্তি শুধুমাত্র এটাই যে, তারা বলে-আমরা মুশরিক ছিলাম না। লক্ষ্য কর, তারা কিরূপ মিথ্যা কথা বানিয়ে নিয়েছে। এর অর্থ এও হতে পারে দুনিয়ায় তারা যে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সত্যতা জানা সত্ত্বেও তাঁর উপর ঈমান আনেনি সেটা কিয়ামতের দিন তাদের কাছে প্রকাশ পেয়ে যাবে এবং তখন তারা আফসোস করতে থাকবে। দুনিয়ায় কিন্তু সেটা প্রকাশ পায়নি। যেমন হযরত মূসা (আঃ) ফিরাউনকে বলেছিলেনঃ “হে ফিরাউন! তুমি তো ভালরূপেই জান যে, এটা আল্লাহই অবতীর্ণ করেছেন!” আর আল্লাহ পাকও ফিরাউন ও তার কওম সম্পর্কে বলেছেনঃ “তারা অস্বীকার করেছে বটে, কিন্তু তাদের অন্তরে এই বিশ্বাস রয়েছে যে, ওটা তাদের পক্ষ থেকে অত্যাচার ও বাড়াবাড়ি।” এর ভাবার্থ এটা হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে যে, এর দ্বারা ঐ মুনাফিকদেরকে বুঝানো হয়েছে, যারা লোকদের সামনে মুমিন বলে পরিচিত ছিল বটে, কিন্তু ভিতরে ছিল কাফির। এর মাধ্যমে এই কাফিরদের ঐ কথার সংবাদ দেয়া হচ্ছে যেই কথা তারা কিয়ামতের দিন বলবে। যদিও এই সূরাটি মক্কী এবং নিফাক তো ছিল মদীনাবাসী বা ওর আশে পাশের লোকদের মধ্যে, তবুও এতে কোন ক্ষতি নেই। কেননা, আল্লাহ তাআলা তো মক্কী সূরার মধ্যেও নিফাকের বর্ণনা দিয়েছেন এবং সেটা হচ্ছে সূরায়ে আনকাবূত। এই সূরায় আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ যারা মুমিন তাদেরকেও আল্লাহ জানেন এবং যারা মুনাফিক তাদেরকেও জানেন।' (২৯:১১) এর উপর ভিত্তি করেই বলা হয়েছে যে, পরকালে মুনাফিকরা যখন শাস্তি অবলোকন করবে তখন কুফর ও নিফাক গোপন করার পর তাদের কাছে এটা সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে যে, তাদের ঈমান ছিল বাহ্যিক ঈমান। সুতরাং এখানে আল্লাহ পাক যে বলেছেন, তারা যা গোপন করতো এখন তা প্রকাশ পেয়েছে’ এর ভাবার্থ এই যে, তারা পুনরায় দুনিয়ায় ফিরে যেতে চাচ্ছে তা যে ঈমানের প্রতি ভালবাসা ও আগ্রহের কারণে তা নয়। বরং কিয়ামতের দিনের শাস্তি দেখে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়েই তারা এ কথা বলছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে এ কথা বলে সাময়িকভাবে জাহান্নামের শাস্তি হতে মুক্তি লাভ। আর যদি তাদেরকে। পুনরায় দুনিয়ায় পাঠানোও হয় তবে আবারও তারা কুফরী করতেই থাকবে। তারা যে বলছে, “আমরা আর অবিশ্বাস করবো না, বরং ঈমানদার হয়ে যাবো এ সব মিথ্যা কথা। তারা তো বলে-এই পার্থিব জীবনই প্রকৃত জীবন, এরপর আর কোন জীবন নেই, আর আমাদেরকে পুনরুথিতও করা হবে না। আল্লাহ পাক মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সঃ)-কে সম্বোধন করে বলেনঃ হায়! তুমি যদি সেই দৃশ্যটি দেখতে, যখন তাদেরকে তাদের প্রতিপালকের সামনে দণ্ডায়মান করা হবে, তখন আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন- এটা (অর্থাৎ কিয়ামত) কি সত্য নয়? তারা উত্তরে বলবেঃ হ্যা, আপনার কসম! এটা সত্য। তখন তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হবে। তাহলে তোমরা শাস্তির স্বাদ গ্রহণ কর, এটা কি যাদু? তোমাদেরকে কি অন্তদৃষ্টি দেয়া হয়নি?