Al-An'aam • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ وَهُوَ ٱلَّذِىٓ أَنزَلَ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءًۭ فَأَخْرَجْنَا بِهِۦ نَبَاتَ كُلِّ شَىْءٍۢ فَأَخْرَجْنَا مِنْهُ خَضِرًۭا نُّخْرِجُ مِنْهُ حَبًّۭا مُّتَرَاكِبًۭا وَمِنَ ٱلنَّخْلِ مِن طَلْعِهَا قِنْوَانٌۭ دَانِيَةٌۭ وَجَنَّٰتٍۢ مِّنْ أَعْنَابٍۢ وَٱلزَّيْتُونَ وَٱلرُّمَّانَ مُشْتَبِهًۭا وَغَيْرَ مُتَشَٰبِهٍ ۗ ٱنظُرُوٓا۟ إِلَىٰ ثَمَرِهِۦٓ إِذَآ أَثْمَرَ وَيَنْعِهِۦٓ ۚ إِنَّ فِى ذَٰلِكُمْ لَءَايَٰتٍۢ لِّقَوْمٍۢ يُؤْمِنُونَ ﴾
“And He it is who has caused waters to come down from the sky; and by this means have We brought forth all living growth, and out of this have We brought forth verdure. Out of this do We bring forth close-growing grain; and out of the spathe of the palm tree, dates in thick clusters; and gardens of vines, and the olive tree, and the pomegranate: [all] so alike, and yet so different! Behold their fruit when it comes to fruition and ripens! Verily, in all this there are messages indeed for people who will believe!”
৯৮-৯৯ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ পাক বলেনঃ তিনিই তোমাদেরকে একটা আত্মা হযরত আদম (আঃ) থেকে সৃষ্টি করেছেন। যেমন তিনি বলেনঃ “হে মানবমণ্ডলী! তোমরা স্বীয় প্রতিপালক (এর বিরোধিতা)কে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে একই প্রাণী (আদম আঃ) হতে সৃষ্টি করেছেন এবং ঐ প্রাণী হতে তার জোড়া (বিবি হাওয়াকে) সৃষ্টি করেছেন, আর এতদুভয় হতে বহু নর ও নারী বিস্তার করেছেন।(আরবী) -এ দুটি শব্দের ব্যাপারে মুফাসসিরদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ), হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) প্রমুখ মনীষীগণ বলেন যে, (আরবী) শব্দ দ্বারা মায়ের গর্ভকে বুঝানো হয়েছে। আর (আরবী) শব্দ দ্বারা পিতার পিঠকে বুঝানো হয়েছে। আবার কারো মতে (আরবী) হচ্ছে দুনিয়ার অবস্থান এবং (আরবী) হচ্ছে মৃত্যুর পর পরকালের অবস্থান।হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর (রঃ) বলেন যে, এ দু'টো হচ্ছে দুনিয়ার মাতৃগর্ভে ও ভূ-পৃষ্ঠে অবস্থান এবং মৃত্যুর পরের অবস্থান। হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, মৃত্যুর পর আমল বন্ধ হয়ে যাওয়া হচ্ছে (আরবী) এবং দারে আখিরাত হচ্ছে (আরবী)। কিন্তু প্রথম উক্তিটিই সঠিকতম।(আরবী) আমি নিদর্শনসমূহ ঐসব লোকের জন্যে সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করে দিয়েছি যারা বুঝে অর্থাৎ আল্লাহর কালাম ও ওর অর্থ সম্পর্কে যারা সম্যক জ্ঞান রাখে।মহান আল্লাহ বলেনঃ তিনিই সেই আল্লাহ যিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, ওর সাহায্যে তিনি সব রকমের উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছেন। তারপর তা থেকে সবুজ শাখা বের করেছেন অর্থাৎ চারাগাছ পয়দা করেছেন। অতঃপর তাতে তিনি দানা ও ফল সৃষ্টি করেছেন। যেমন তিনি বলেনঃ পানি দ্বারাই সমস্ত জিনিস জীবন লাভ করে থাকে। এর ফলেই ভূমির শস্য ও সবুজ উদ্ভিদ উৎপন্ন হয়ে থাকে। ঐসব গাছে আবার দানা ও ফল পয়দা হয়। ওগুলোর মধ্য থেকে আমি এমন দানা বের করে থাকি যা একে অপরের সাথে জড়িয়ে থাকে। একে গুচ্ছ লা হয়। খুরমা গাছে গুচ্ছযুক্ত শাখা হয়। (আরবী) শব্দটি (আরবী) শব্দের বহু বচন। এর অর্থ হচ্ছে তাজা খেজুরের গুচ্ছ যা কাছাকাছি একে অপরের সাথে জড়িত থাকে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, (আরবী) দ্বারা ঐ ছোট ছোট খেজুর গাছ বুঝানো হয়েছে যেগুলোর গুচ্ছ মাটির সাথে লেগে থাকে। হেজাযবাসী তো একে (আরবী) পড়ে থাকে, কিন্তু বানু তামীম গোত্র একে (আরবী) অর্থাৎ (আরবী) -এর সঙ্গে পড়ে। এটা (আরবী) -এর বহু বচন। যেমন (আরবী) শব্দটি (আরবী)-এর বহু বচন।এরপর আল্লাহ পাক বলেনঃ ‘আঙ্গুরের বাগানসমূহ' অর্থাৎ আমি যমীনে আঙ্গুরের বাগান পয়দা করেছি। মহান আল্লাহ খুরমা ও আঙ্গুরের বর্ণনা দিয়েছেন। কেননা, হেজযবাসীদের কাছে এ দু'টো ফলই সর্বোত্তম ফল বলে গণ্য হয়। শুধু হেজাযবাসী নয়, বরং সারা দুনিয়ার লোক এ দু'টো ফলকে সর্বোত্তম ফল মনে করে থাকে। আল্লাহ তা'আলা স্বীয় ইহসানের বর্ণনা দিচ্ছেন যে, এই সব খুরমা ও আঙ্গুর ফল দ্বারা তোমরা মদ তৈরী করে থাক এবং নিজেদের জন্যে উত্তম খাদ্য প্রস্তুত কর। এটা হচ্ছে মদ হারাম হওয়ার পূর্বেকার আয়াত। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ যমীনে আমি খুরমা ও আঙ্গুরের বাগান বানিয়েছি। তিনি আরও বলেনঃ আমি যায়তুন ও আনারেরও বাগান করে দিয়েছি যা পাতা ও আকৃতির দিক দিয়ে একে অপরের সাথে সাদৃশ্যযুক্ত বটে, কিন্তু ফল, গঠন, স্বাদ এবং স্বভাব ও প্রকৃতির দিক দিয়ে সম্পূর্ণ পৃথক! আল্লাহ পাক বলেনঃ যখন ফল পেকে যায় তখন ঐগুলোর প্রতি লক্ষ্য করে দেখো! অর্থাৎ হে মানুষ! তোমরা আল্লাহর ক্ষমতা সম্পর্কে চিন্তা করে দেখো যে, তিনি কিভাবে ওগুলোকে অস্তিত্বহীনতা থেকে অস্তিত্বে আনয়ন করেছেন। ফল ধরার পূর্বে গাছগুলো তো জ্বালানী কাষ্ঠ ছাড়া আর কিছুই ছিল না। এই কাঠের মধ্য থেকেই মহান আল্লাহ এসব সুমিষ্ট খুরমা, আঙ্গুর এবং অন্যান্য ফল বের করেছেন! যেমন তিনি বলেনঃ যমীনে ঘন বৃক্ষ, আঙ্গুর এবং শস্যের বাগানসমূহ রয়েছে, ওগুলোর মধ্যে কিছু কিছু গুচ্ছ বিশিষ্ট এবং কিছু কিছু গুচ্ছবিহীন। সবগুলো একই পানি পেয়ে থাকে অথচ খেতে একটি অপরটি হতে বহুগুণে উত্তম। এ জন্যেই আল্লাহ পাক এখানে বলেনঃ “হে লোকেরা! এগুলো আল্লাহর ব্যাপক ক্ষমতা ও পূর্ণ নৈপুণ্যের পরিচয় বহন করছে। ঈমানদার লোকেরাই এগুলো বুঝতে পারে এবং তারাই আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর সত্যতা স্বীকার করে থাকে!”