Al-Jumu'a • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ قُلْ إِنَّ ٱلْمَوْتَ ٱلَّذِى تَفِرُّونَ مِنْهُ فَإِنَّهُۥ مُلَٰقِيكُمْ ۖ ثُمَّ تُرَدُّونَ إِلَىٰ عَٰلِمِ ٱلْغَيْبِ وَٱلشَّهَٰدَةِ فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ ﴾
“Say: "Behold, the death from which you are fleeing is bound to overtake you - and then you will be brought back unto Him who knows all that is beyond the reach of a created being's perception as well as all that can be witnessed by a creature's senses or mind, whereupon He will make you truly understand all that you were doing [in life].”
৫-৮ নং আয়াতের তাফসীর: এই আয়াতগুলোতে ইয়াহূদীদেরকে নিন্দে করা হচ্ছে যে, তাদেরকে তাওরাত। প্রদান করা হয় এবং আমল করার জন্যে তারা তা গ্রহণ করে, কিন্তু আমল করেনি। ঘোষিত হচ্ছে যে, তাদের দৃষ্টান্ত হচ্ছে পুস্তক বহনকারী গর্দভ। যদি গর্দভের উপর কিতাবের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয় তবে সে তো এটা বুঝতে পারবে যে, তার উপর বোঝা রয়েছে, কিন্তু কি বোঝা রয়েছে তা সে মোটেই বুঝতে পারবে না। অনুরূপভাবে এই ইয়াহূদীরা বাহ্যিকভাবে তো তাওরাতের শব্দগুলো মুখে উচ্চারণ করছে, কিন্তু মতলব কিছুই বুঝে না। এর উপর তারা আমল তো করেই না, এমন কি একে পরিবর্তন পরিবর্ধন করে ফেলছে। সুতরাং প্রকতপক্ষে তারা এ নির্বোধ ও অবুঝ জন্তুর চেয়েও নিকৃষ্ট। কেননা, মহান আল্লাহ এদেরকে বোধশক্তিই দান করেননি। কিন্তু এ লোকগুলোকে তো তিনি বোধশক্তি দিয়েছেন, অথচ তারা তা ব্যবহার করে না ও কাজে লাগায় না। এ জন্যেই অন্য আয়াতে বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত, বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্ট! তারাই গাফিল।” (৭:১৭৯)এখানে বলা হচ্ছে যে, যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অবিশ্বাস করে ও মিথ্যা প্রতিপন্ন করে তাদের দৃষ্টান্ত কতই না নিকৃষ্ট। তারা অত্যাচারী এবং আল্লাহ তা'আলা অত্যাচারী সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি জুমআর দিন ইমামের খুৎবাহ দান অবস্থায় কথা বলে সে পুস্তক বহনকারী গর্দভের মত এবং যে ব্যক্তি তাকে বলেঃ চুপ কর তার জুমআ'হ্ হয় না।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ “হে ইয়াহুদীগণ! যদি তোমরা মনে কর যে, তোমরাই আল্লাহর বন্ধু, অন্য কোন মানব গোষ্ঠী নয়, তবে তোমরা মৃত্যু কামনা কর যদি তোমরা সত্যবাদী হও।' অর্থাৎ হে ইয়াহূদীদের দল! যদি তোমাদের দাবী এই হয় যে, তোমরা সত্যের উপর রয়েছে আর হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এবং তাঁর সহচরবৃন্দ অসত্যের উপর রয়েছেন তবে তোমর প্রার্থনা করঃ আমাদের দুই দলের মধ্যে যারা অসত্যের উপর রয়েছে তাকে যেন আল্লাহ মৃত্যু দান করেন।মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “কিন্তু তাদের হস্ত যা অগ্রে প্রেরণ করেছে তার কারণে কখনো মত্য কামনা করবে না। অর্থাৎ যারা যে কুফরী, যুলম ও পাপের কাজ করেছে সেই কারণে তারা কখনো মৃত্যু কামনা করবে না।আল্লাহ তা'আলা যালিমদের সম্পর্কে সম্যক অবগত।সূরায়ে বাকারার নিম্নের আয়াতগুলোর তাফসীরে ইয়াহুদীদের সাথে। মুবাহালার পূর্ণ বর্ণনা গত হয়েছেঃ “বলঃ যদি আল্লাহর নিকট পরকালের বাসস্থান অন্য লোকে ব্যতীত বিশেষভাবে শুধু তোমাদের জন্যেই হয় তবে তোমরা মুত্যু কামনা কর- যদি সত্যবাদী হও। কিন্তু তাদের কৃতকর্মের জন্যে তারা কখনো ওটা কামনা করবে না এবং আল্লাহ যালিমদের সম্বন্ধে অবহিত। তুমি অবশ্যই তাদেরকে জীবনের প্রতি সমস্ত মানুষ, এমনকি মুশরিকদের অপেক্ষা অধিক লোভী দেখতে পাবে। তাদের প্রত্যেকে সহস্র বছর বাঁচার আকাঙ্ক্ষা করে। কিন্তু দীর্ঘায়ু তাদেরকে শাস্তি হতে দূরে রাখতে পারবে না। তারা যা করে আল্লাহ ওর দ্রষ্টা।” সূরায়ে আলে ইমরানের নিম্নের আয়াতে খৃষ্টানদের সাথে মুবাহালার বর্ণনা রয়েছেঃ“তোমার নিকট জ্ঞান আসার পর যে কেউ এ বিষয়ে তোমার সাথে তর্ক করে তাকে বলঃ এসো, আমরা আহ্বান করি আমাদের পুত্রদেরকে ও তোমাদের পুত্রদেরকে, আমাদের নারীদেরকে ও তোমাদের নারীদেরকে, আমাদের নিজেদেরকে ও তোমাদের নিজেদেরকে; অতঃপর আমরা বিনীত আবেদন করি এবং মিথ্যাবাদীদের উপর দিই আল্লাহর লানত।” আর মুশরিকদের সাথে মুবাহালার বর্ণনা রয়েছে সূরায়ে মারইয়ামের নিম্নের আয়াতে “বলঃ যারা বিভ্রান্তিতে রয়েছে, দয়াময় তাদেরকে প্রচুর ঢিল দিবেন।” হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, আবু জেহেল (আল্লাহ তা'আলা তার প্রতি লা'নত বর্ষণ করুন!) বলেঃ “আমি যদি মুহাম্মাদ (সঃ)-কে কা’বার নিকট দেখতে পাই তবে অবশ্যই তার গর্দান পরিমাপ করবে।” রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট এ খবর পৌঁছলে তিনি বলেনঃ “যদি সে এরূপ করতো তবে অবশ্যই ফেরেশতাগণ জনগণের চোখের সামনে তাকে পাকড়াও করতেন। আর যদি ইয়াহূদীরা মৃত্যু কামনা করতো তবে অবশ্যই তারা মরে যেতো এবং জাহান্নামে তাদের জায়গা দেখে নিতো। আর আল্লাহর সাথে যারা মুবাহালা করতে চেয়েছিল তারা যদি মুবাহালার জন্যে বের হতো তবে অবশ্যই তারা এমন অবস্থায় ফিরে আসতো যে, তাদের পরিবারবর্গ এবং মাল-ধন তারা। পেতো না।” (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম বুখারী (রঃ), ইমাম তিরমিযী (রঃ) এবং ইমাম নাসাঈও (রঃ) বর্ণনা করেছেন)আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলার উক্তিঃ বলঃ (হে মুহাম্মাদ সঃ)! তোমরা যে মৃত্যু হতে পলায়ন কর সেই মৃত্যুর সাথে তোমাদের সাক্ষাৎ হবেই। অতঃপর তোমরা প্রত্যানীত হবে অদৃশ্য ও দৃশ্যের পরিজ্ঞাতা আল্লাহর নিকট এবং তোমাদেরকে জানিয়ে দেয়া হবে যা তোমরা করতে। যেমন সূরায়ে নিসার মধ্যে আল্লাহ তা'আলার উক্তি রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমরা যেখানেই থাকো না কেন মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই, সুউচ্চ ও সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান করলেও।”তিবরানী (রঃ)-এর মু’জাম গ্রন্থে হযরত সমরা' (রাঃ) হতে একটি মারফ হাদীস বর্ণিত আছে যে, যে ব্যক্তি মৃত্যু হতে পলায়ন করে তার দৃষ্টান্ত হলো ঐ খেকশিয়াল যার কাছে ভূমি তার প্রদত্ত ঋণ চায়। তখন সে দ্রুত বেগে পালাতে শুরু করে। শেষে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন তার গর্তে ঢুকে পড়ে। তখন ভূমি তাকে বলেঃ “হে খেকশিয়াল! আমাকে আমার ঋণ দিয়ে দাও।” একথা শুনে সে পুনরায় লেজগুটিয়ে ভীষণ বেগে দৌড়াতে শুরু করে। অবশেষে তার গর্দান ভেঙ্গে যায় এবং সে মৃত্যুমুখে পতিত হয়।”