Al-Munaafiqoon • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ ۞ وَإِذَا رَأَيْتَهُمْ تُعْجِبُكَ أَجْسَامُهُمْ ۖ وَإِن يَقُولُوا۟ تَسْمَعْ لِقَوْلِهِمْ ۖ كَأَنَّهُمْ خُشُبٌۭ مُّسَنَّدَةٌۭ ۖ يَحْسَبُونَ كُلَّ صَيْحَةٍ عَلَيْهِمْ ۚ هُمُ ٱلْعَدُوُّ فَٱحْذَرْهُمْ ۚ قَٰتَلَهُمُ ٱللَّهُ ۖ أَنَّىٰ يُؤْفَكُونَ ﴾
“Now when thou seest them, their outward appearance may please thee; and when they speak, thou art inclined to lend ear to what they say. [But though they may seem as sure of themselves] as if they were timbers [firmly] propped up, they think that every shout is [directed] against them. They are the [real] enemies [of all faith], so beware of them. [They deserve the imprecation,] "May God destroy them!" How perverted are their minds!”
১-৪ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তা’আলা মুনাফিকদের সম্পর্কে খবর দিতে গিয়ে বলেন যে, যখন তারা নবী (সঃ)-এর নিকট আসে তখন শপথ করে করে ইসলাম প্রকাশ করে এবং তাঁর রিসালাত স্বীকার করে। কিন্তু প্রকতপক্ষে তাদের অন্তর ইসলাম হতে বহু দূরে রয়েছে। নিঃসন্দেহে মুহাম্মাদ (সঃ) আল্লাহর নবী এবং মুনাফিকদের উক্তিও এটাই। কিন্তু তাদের অন্তরে এর কোন ক্রিয়া নেই। সুতরাং তারা মিথ্যাবাদী।মহান আল্লাহ স্বীয় নবী (সঃ)-কে সম্বোধন করে বলেনঃ এই মুনাফিকরা তোমার কাছে এসে কসম খেয়ে খেয়ে তোমার রিসালাতের স্বীকারোক্তি করে। কিন্তু তুমি বিশ্বাস রেখো যে, তাদের এই কসমের কোনই মূল্য নেই। এটা তাদের মিথ্যাকে সত্য বানাবার একটা মাধ্যম মাত্র।এর দ্বারা মহান আল্লাহর উদ্দেশ্য হলো এই যে, মুমিনগণ যেন তাদের হতে সতর্ক থাকে। তারা যেন এই মুনাফিকদেরকে খাঁটি মুমিন মনে করে তাদের কোন কাজে তাদের অনুসরণ না করে। কেননা, তারা ইসলামের নামে কুফরী করিয়ে ফেলবে। তারা আল্লাহর পথ হতে বহু দূরে রয়েছে এবং তাদের আমল অতি জঘন্য।যহহাক (রাঃ)-এর কিরআতে (আরবি) অর্থাৎ (আরবি) তে যের দিয়ে রয়েছে। তখন ভাবার্থ হবেঃ তারা তাদের বাহ্যিক স্বীকারোক্তিকে নিজেদের জীবন রক্ষার মাধ্যম বানিয়ে নিয়েছে যে, তারা হত্যা ও কুফরীর হুকুম হতে দুনিয়ায় বেঁচে যাবে। তাদের অন্তরে নিফাক স্থান করে নিয়েছে। তাই তারা ঈমান হতে ফিরে গিয়ে কুফরীর দিকে এবং হিদায়াত হতে সরে গিয়ে গুমরাহীর দিকে চলে এসেছে। এখন তাদের হৃদয় মোহর করে দেয়া হয়েছে। ফলে তাদের মধ্যে যে বোধশক্তি ছিল তা নষ্ট হয়ে গেছে। বাহ্যতঃ তো তারা মুখে মিষ্টি কথা বলে এবং তারা বেশ বাকপটু। কিন্তু তাদের অন্তর কালিমাময়।আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “তারা যে কোন শোরগোলকে মনে করে তাদেরই বিরুদ্ধে।' অর্থাৎ যখনই কোন ভয়াবহ ঘটনা ঘটে তখন তারা ধারণা করে নেয় যে, তাদের উপর হয়তো তা আপতিত হচ্ছে। তাই তারা মৃত্যুর ভয়ে হা-হুতাশ করে। যেমন আল্লাহ তা’আলা অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “তোমাদের ব্যাপারে কৃপণতা বশতঃ (যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীকে সাহায্য করার ব্যাপারে মুনাফিকরা কৃপণতা প্রকাশ করেছিল), যখন বিপদ আসে তখন তুমি দেখবে, মৃত্যু ভয়ে মূৰ্ছাতুর ব্যক্তির মত চক্ষু উলটিয়ে তারা তোমার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু যখন বিপদ চলে যায় তখন তারা ধনের লালসায় তোমাদেরকে তীক্ষ্ণ ভাষায় বিদ্ধ করে। তারা ঈমান আনেনি, এই জন্যে আল্লাহ তাদের কার্যাবলী নিষ্ফল করেছেন, আর আল্লাহর পক্ষে এটা সহজ।” (৩৩:১৯) এ জন্যেই আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ তারাই শত্রু, অতএব তাদের সম্পর্কে তোমরা সতর্ক হও, আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করুন! বিভ্রান্ত হয়ে তারা কোথায় চলেছে?হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “মুনাফিকদের বহু নিদর্শন রয়েছে যেগুলো দ্বারা তাদেরকে চেনা যায়। তাদের সালাম হলো লা’নত, তাদের খাদ্য হলো লুঠতরাজ, তাদের গানীমাত হলো হারাম ও খিয়ানত, তারা মসজিদের নিকটবর্তী হওয়াকে অপছন্দ করে, নামাযের জন্যে তারা শেষ সময়ে এসে থাকে, তারা অহংকারী ও আত্মগর্বী হয় এবং তারা নম্রতা ও বিনয় প্রকাশ হতে বঞ্চিত থাকে। তারা নিজেরাও ভাল কাজ করে না এবং অন্যদেরকেও ভাল কাজের প্রতি উৎসাহ প্রদান করে না। তারা রাত্রে খড়ি এবং দিনে শোরগোলকারী।” (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমদে বর্ণিত রয়েছে) অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, তারা দিনে খুবই পানাহারকারী হয় এবং রাত্রে শুষ্ক কাঠের মত তারা পড়ে থাকে।