At-Talaaq • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ ٱللَّهُ ٱلَّذِى خَلَقَ سَبْعَ سَمَٰوَٰتٍۢ وَمِنَ ٱلْأَرْضِ مِثْلَهُنَّ يَتَنَزَّلُ ٱلْأَمْرُ بَيْنَهُنَّ لِتَعْلَمُوٓا۟ أَنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍۢ قَدِيرٌۭ وَأَنَّ ٱللَّهَ قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَىْءٍ عِلْمًۢا ﴾
“GOD is He who has created seven heavens, and, like them, [the many aspects] of the earth. Through all of them flows down from on high, unceasingly, His [creative] will, so that you might come to know that God has the power to will anything, and that God encompasses all things with His knowledge.”
আল্লাহ তা'আলা স্বীয় পূর্ণ ক্ষমতা ও বিরাট সাম্রাজ্যের বর্ণনা দিচ্ছেন, যেন মাখলূক তাঁর মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের প্রতি লক্ষ্য রেখে তাঁর ফরমানকে মর্যাদার দৃষ্টিতে দেখে এবং তার উপর আমল করতঃ তাঁকে খুশী করে। তাই তিনি বলেনঃ আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন সপ্ত আকাশ যেমন হযরত নূহ (আঃ) তার কওমকে বলেছিলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “তোমরা কি লক্ষ্য করনি? আল্লাহ কিভাবে সৃষ্টি করেছেন সপ্তস্তরে বিন্যস্ত আকাশমণ্ডলী?” (৭১:১৫) মহান আল্লাহ অন্য এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “সপ্ত আকাশ ও যমীন এবং এগুলোর যতকিছু রয়েছে সবাই তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে।” (১৭:৪৪)মহান আল্লাহর উক্তিঃ ‘ওগুলোরই অনুরূপ যমীনও (অর্থাৎ যমীনও সাতটি)। সহীহ্ বুখারী ও সহীহ্ মুসলিমের সহীহ্ হাদীসে রয়েছেঃ “যে ব্যক্তি যুলুম করে কারো কনিষ্ঠাঙ্গুলী পরিমিত ভূমি দখল করে নিবে, তাকে সপ্ত আকাশের গলাবদ্ধ পরানো হবে।” সহীহ বুখারীতে রয়েছে যে, তাকে সপ্ত যমীন পর্যন্ত ধ্বসিয়ে দেয়া হবে। আমি এর সমস্ত সনদ ও শব্দ বিদায়াহ্ ওয়ান্ নিহায়াহ্ এর শুরুতে যমীন। সৃষ্টির আলোচনায় বর্ণনা করে দিয়েছি। সুতরাং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই জন্যে।যেসব লোক বলেছেন যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সাতটি অঞ্চল বা ভূ-খণ্ড, তাঁরা অযথা এ কথা বলেছেন এবং বিনা দলীলে কুরআন ও হাদীসের স্পষ্ট বিরোধিতা করেছেন। সূরায়ে হাদীদে (আরবি)-এই আয়াতের তাফসীরে সপ্ত আকাশ ও যমীনের এবং ওগুলোর মধ্যবর্তী দূরত্বের এবং ওগুলোর পুরুত্ব, যা পাঁচশ বছরের পথ, পূর্ণ বর্ণনা দেয়া হয়েছে। হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) প্রমুখ গুরুজনও এ কথাই বলেছেন। অন্য একটি হাদীসেও সপ্ত আকাশ এবং যা কিছু ওগুলোর মধ্যে রয়েছে এবং সপ্ত যমীন ও যা কিছু ওগুলোর মধ্যে রয়েছে, কুরসীর তুলনায় এমনই যেমন কোন এক বিরাট ও প্রশস্ত মাঠে একটি আংটি পড়ে থাকে।তাফসীরে ইবনে জারীরে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেনঃ “যদি আমি এ আয়াতের তাফসীর তোমাদের সামনে বর্ণনা করি তবে তোমরা তা স্বীকার করবে না এবং তোমাদের স্বীকার না করা হবে তোমাদের ওটাকে মিথ্যা মনে করা।” অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, কোন একজন লোক হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে এ আয়াতের ভাবার্থ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ “আমি কিরূপে বিশ্বাস করতে পারি যে, আমি যা কিছু তোমাকে বলবো তা তুমি অস্বীকার করবে না?” আর একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, প্রত্যেক যমীনে হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর মত এবং এই যমীনের মাখলূকের মত মাখলূক রয়েছে। হযরত ইবনে মুসান্না (রঃ) বর্ণিত রিওয়াইয়াতে এসেছে যে, প্রত্যেক আসমানে (হযরত ইবরাহীম আঃ -এর মত) হযরত ইবরাহীম (আঃ) রয়েছেন।ইমাম বায়হাকী (রঃ)-এর ‘কিতাবুল আসমা ওয়াসসিফাত' নামক গ্রন্থে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেনঃ “সপ্ত যমীনের প্রত্যেকটিতে তোমাদের নবীর মত নবী রয়েছেন, আদম (আঃ)-এর মত আদম রয়েছেন, নূহ (আঃ)-এর মত নূহ রয়েছেন, ইবরাহীম (আঃ)-এর মত ইবরাহীম রয়েছেন এবং ঈসা (আঃ)-এর মত ঈসা রয়েছেন।" অতঃপর ইমাম বায়হাকী (রঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর আর একটি রিওয়াইয়াত আনয়ন করে বলেন যে, এর ইসনাদ বিশুদ্ধ, কিন্তু এটা অতি বিরল। এর একজন বর্ণনাকারী রয়েছেন আবূয যুহা। ইমাম বায়হাকী (রঃ)-এর জানা মতে ঐ বর্ণনাকারীর অনুসরণ কেউই করেন না। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। একটি মুরসাল এবং অত্যন্ত মুনকার হাদীস ইবনে আবিদ দুনিয়া (রঃ) বর্ণনা করেছেন। তাতে রয়েছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাহাবীদের সমাবেশে আগমন করেন। তিনি দেখেন যে, তারা কোন এক বিষয়ের চিন্তায় চুপচাপ বসে রয়েছেন। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেনঃ “ব্যাপার কি?" উত্তরে তারা বলেনঃ “আমরা আল্লাহর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করছি। তিনি তখন বলেনঃ “বেশ বেশ! খুব ভাল কথা। আল্লাহর মাখলূক সম্পর্কে চিন্তা গবেষণা করবে। কিন্তু আল্লাহ সম্পর্কে চিন্তা করবে না। জেনে রেখো যে, এই পশ্চিম দিকে একটি সাদা যমীন রয়েছে। ওর শুভ্রতা ওর নূর বা জ্যোতি অথবা বলেনঃ ওর নূর বা জ্যোতি হলো ওর শুভ্রতা। সূর্যের রাস্তা হলো চল্লিশ দিনের। সেখানে আল্লাহর এক মাখলূক রয়েছে যারা চোখের পলক ফেলার সমান সময়টুকুতেও কখনো আল্লাহর নাফরমানী করেনি।” তখন সাহাবীগণ প্রশ্ন করেনঃ “তাহলে শয়তান তাদের হতে কোথায় রয়েছে?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “শয়তানকে যে সৃষ্টি করা হয়েছে কি না এটাও তাদের জানা নেই। তারা আবার জিজ্ঞেস করেনঃ “তারাও কি মানুষ?” জবাবে তিনি বলেনঃ “না। হযরত আদম (আঃ)-এর সৃষ্টি সম্বন্ধেও তাদের কিছুই জানা নেই।”