Al-A'raaf • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ أَوَلَمْ يَهْدِ لِلَّذِينَ يَرِثُونَ ٱلْأَرْضَ مِنۢ بَعْدِ أَهْلِهَآ أَن لَّوْ نَشَآءُ أَصَبْنَٰهُم بِذُنُوبِهِمْ ۚ وَنَطْبَعُ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ فَهُمْ لَا يَسْمَعُونَ ﴾
“Has it, then, not become obvious unto those who have inherited the earth in the wake of former generations that, if We so willed, We could smite them [too] by means of their sins, sealing their hearts so that they cannot hear [the truth]?”
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এর অর্থ হচ্ছে-তাদের কাছে কি এটা প্রতীয়মান হয় না যে, আমি (আল্লাহ) ইচ্ছা করলে তাদের পাপের কারণে তাদেরকে শাস্তি দিতে পারি? ইবনে জারীর (রঃ) এর তাফসীরে বলেনঃ কোন এলাকার অধিবাসীকে ধ্বংস করে দেয়ার পর ভূ-পৃষ্ঠে যাদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে, যারা তাদেরই স্বভাব গ্রহণ করেছে, তাদেরই মত আমল করেছে এবং তাদেরই মত আল্লাহর অবাধ্য হয়েছে, তাদের কাছে কি এটা প্রতীয়মান হয় না যে, আমি ইচ্ছা করলে তাদেরকেও তাদের পাপের কারণে শাস্তি প্রদান করতে পারি? তাদের এই অবাধ্যতার শাস্তি স্বরূপ আমি তাদের অন্তরে মোহর লাগিয়ে দেবো। সুতরাং তারা কোন ভাল কথা শুনতেও পাবে না এবং বুঝতেও সক্ষম হবে না। অনুরূপভাবে অন্য জায়গায় আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “এ ঘটনা থেকে কি তারা শিক্ষা গ্রহণ করে না যে, তাদের পূর্বে আমি এমন বহু কওমকে ধ্বংস করে দিয়েছি যারা তাদের ঘরবাড়ীতে বসবাস ও চলাফেরা করত? এটা কি বিবেকবানদের জন্যে নিদর্শন নয়?” আর এক জায়গায় আল্লাহ পাক বলেনঃ “ইতিপূর্বে কি তোমরা দৃঢ় শপথ করে বলেছিলে না যে, তোমরা ধ্বংস হবেই না? অথচ তারা ধ্বংস হয়েই গেছে। আজ তোমরা ঐসব অত্যাচারীর জায়গা গ্রহণ করছো!” তিনি আরো বলেনঃ “এদের পূর্বে কতই না কওম ধ্বংস হয়ে গেছে, আজ তাদের কোন নাম-নিশানাও নেই, না তাদের কোন শব্দ আজ শোনা যাচ্ছে!” অন্য এক জায়গায় আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “এরা কি দেখছে না যে, এদের পূর্বে বহু কওম এখানে রাজত্ব করেছে, যে রাজত্ব করার সৌভাগ্য তোমাদের হয়নি, অতঃপর আকাশ থেকে বৃষ্টির শাস্তি নেমে আসলো এবং ভূমির নিম্নদেশ থেকে প্লাবন এসে গেল এবং এর মাধ্যমে তাদের সকলকেই ধ্বংস করে দেয়া হলো। এর পর অন্য কওমকে আমি তাদের জায়গায় বসালাম। আদ সম্প্রদায়ের ধ্বংসের কথা উল্লেখ করে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “এখন শুধুমাত্র তাদের ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া যায়। পাপী ও অপরাধীদের পরিণাম এরূপই হয়ে থাকে। আজ আমি তোমাদেরকে যেখানে বসিয়েছি, একদিন তাদেরকে সেখানে বসিয়েছিলাম। তাদেরকে আমি শ্রবণকারী কান, দর্শনকারী চক্ষু এবং অনুধাবনকারী অন্তর দিয়েছিলাম। কিন্তু তাদের কান, তাদের চক্ষু এবং তাদের অন্তঃকরণ তাদের কোনই উপকার করেনি। কেননা, তারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে বসে এবং যে উপহাস তারা করে তার শাস্তি তারা পেয়ে যায়। তোমাদের সরযমীনের চতুষ্পর্শ্বের কতইনা বসতি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং কতইনা নিদর্শনের হেরফের হয়েছে! তোমরা চিন্তা করে দেখো, হয়তো কিছু শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে।” আল্লাহ পাক আরো বলেনঃ “এদের পূর্ববর্তী লোকেরা রাসূলদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল, সুতরাং তাদেরকে কেমন পরিণতি দেখতে হয়েছিল! তোমরা তো তাদের দশ ভাগের এক ভাগ শক্তিরও অধিকারী নও।” অন্য জায়গায় তিনি বলেনঃ “কতইনা লোকালয়কে আমি ধ্বংস করে দিয়েছি, ওগুলোর অধিবাসীরা ছিল অত্যাচারী, তাদের ঘরের ছাদগুলো পড়ে গিয়েছিলো, কূপগুলো অকেজো হয়ে পড়েছিল, বড় বড় অট্টালিকাগুলো বিরান হয়ে গিয়েছিল।” আরো বলেনঃ “তারা ভূ-পৃষ্ঠে ঘুরেফিরে দেখে না কেন? তাহলে তারা অনুধাবনকারী অন্তর এবং শ্রবণকারী কান লাভ করতো, কেননা, তাদের চক্ষুগুলো অন্ধ নয়। বরং তাদের সেই অন্তর অন্ধ যা বক্ষের মধ্যে রয়েছে। আর এক জায়গায় আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “রাসূলদের সাথে উপহাস করা হয়েছিল, তখন তাদের সেই উপহাসের শাস্তি তাদের প্রতি নাযিল হয়েছিল। মোটকথা, এই ধরনের বহু আয়াত রয়েছে যেগুলো আল্লাহর শত্রুদের প্রতি প্রতিশোধ গ্রহণ এবং তাঁর বন্ধুদের প্রতি অনুগ্রহ করার উপর আলোকপাত করে।