Al-A'raaf • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ قَالُوٓا۟ أُوذِينَا مِن قَبْلِ أَن تَأْتِيَنَا وَمِنۢ بَعْدِ مَا جِئْتَنَا ۚ قَالَ عَسَىٰ رَبُّكُمْ أَن يُهْلِكَ عَدُوَّكُمْ وَيَسْتَخْلِفَكُمْ فِى ٱلْأَرْضِ فَيَنظُرَ كَيْفَ تَعْمَلُونَ ﴾
“[But the children of Israel] said: "We have suffered hurt ere thou camest to us and since thou hast come to us!" [Moses] replied: "It may well be that your Sustainer will destroy your foe and make you inherit the earth: and thereupon he will behold how you act."”
১২৭-১২৯ নং আয়াতের তাফসীর: এখানে ফিরাউনও তার দলবলের পাস্পরিক পরামর্শের সংবাদ দেয়া হচ্ছে। ঐ লোকদের অন্তরে মূসা (আঃ)-এর প্রতি কত বেশী হিংসা ছিল তাদের এ পরামর্শের দ্বারা তা বুঝা যাচ্ছে। ফিরাউনকে তার পরিষদের লোকেরা বলছে-“আপনি কি মূসা (আঃ)-কে এমন মুক্ত অবস্থায় ছেড়ে দিবেন যে, সে পৃথিবীতে অশান্তি ও বিশৃংখলা সৃষ্টি করে বেড়াবে এবং দেশবাসীকে ফিত্না ফাসাদের মধ্যে নিক্ষেপ করবে, আর তাদের মধ্যে আল্লাহর কথা প্রচার করবে? কি বিস্ময়কর ব্যাপার যে, এ লোকগুলো অন্যদেরকে মূসা (আঃ) ও মুমিনদের ফাসাদ থেকে সাবধান করছে, অথচ তারা নিজেরাই ফাসাদ ও বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী! তাদের নিজেদেরই খবর নেই! কেউ কেউ বলেন যে, (আরবী)–এর (আরবী) অক্ষরটি এখানে ‘এবং’ -এর অর্থ প্রকাশক নয়, বরং (আরবী)-এর অর্থ প্রকাশ করছে। ভাবার্থ হচ্ছে - “হে ফিরাউন! আপনি কি মূসা (আঃ) -কে এই অনুমতি দিয়েছেন যে, সে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে বেড়াবে, অথচ সে আপনার আনুগত্য স্বীকার করে না এবং আপনার দেবতাদের উপাসনা পরিত্যাগ করেছে?” হযরত উবাই ইবনে কা'ব (রাঃ) এটাকে (আরবী) এভাবে পড়েছেন। এটা ইবনে জারীর (রাঃ)-এর বর্ণনা। কেউ কেউ আবার এই (আরবী) কে (আরবী) বলেছেন। তখন ভাবার্থ হবে- “হে ফিরাউন! আপনি কি মূসা (আঃ)-কে এমন মুক্তভাবে ছেড়ে দেবেন যে, সে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে বেড়াবে এবং আপনাকে ও আপনার দেবতাদেরকে পরিত্যাগ করবে?" কেউ কেউ এটাকে (আরবী) পড়েছেন। এর অর্থ নেয়া হয়েছে (আরবী) অর্থাৎ আপনার উপাসনা পরিত্যাগ করবে? (এটা ইবনে আব্বাস (রাঃ), মুজাহিদ (রঃ) এবং অন্যান্য হতে বর্ণিত হয়েছে) প্রথম কিরআতের উপর ভিত্তি করে কেউ কেউ এই ফলাফলে পৌছেছেন যে, ফিরাউনও। গোপনীয়ভাবে একটি মূর্তির পূজা করতো। অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে যে, তার গলায় একটি মূর্তি লটকানো থাকতো। ওকেই সে সিজদা করতো। এর উপর ভিত্তি করেই হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, ঐ লোকগুলো যখন কোন সুন্দর গাভী দেখতো তখন ফিরাউন তাদেরকে ওর পূজা করার নির্দেশ দিতো। এ জন্যেই সামেরী একটি গরু বানিয়েছিল যার মধ্য থেকে শব্দ বের হতো । মোটকথা, ফিরাউন তার দরবারের লোকদের কথা মেনে নিলো এবং বললোঃ “আমি তার বংশ কেটে ফেলার জন্যে তাদের পুত্র সন্তানদেরকে হত্যা করবো এবং মেয়েদেরকে জীবিত রাখবো।” এই প্রকারের এটা ছিল দ্বিতীয় অত্যাচার। ইতিপূর্বেও হযরত মূসা (আঃ)-এর জন্মের পূর্বে সে এরূপই করেছিল, যেন দুনিয়াতে তার অস্তিত্বই না আসে। কিন্তু ঘটলো তার বিপরীত যা ফিরাউন কামনা করেছিল। শেষ পর্যন্ত মূসা (আঃ) জন্মগ্রহণ করেন এবং বেঁচেও থাকেন। দ্বিতীয়বারও সে এরূপ করারই ইচ্ছা করলো । সে বানী ইসরাঈলকে লাঞ্ছিত করে তাদের উপর বিজয় লাভের ইচ্ছা করেছিল। কিন্তু এখানেও তার বাসনা পূর্ণ হয়নি। আল্লাহ তাআলা মূসা (আঃ)-কে সম্মান দেন এবং ফিরাউনকে লাঞ্ছিত করেন, আর তাকে ও তার দলবলকে নদীতে ডুবিয়ে দেন। ফিরাউন যখন বানী ইসরাঈলের ক্ষতিসাধন করার দৃঢ় সংকল্প করে বসে তখন মূসা (আঃ) স্বীয় সম্প্রদায়ের লোকদেরকে বলে- “তোমরা ধৈর্যধারণ কর এবং আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা কর।” হযরত মূসা (আঃ) তাদের সাথে শুভ পরিণামের ওয়াদা করলেন। তিনি বানী ইসরাঈলকে বললেনঃ “রাজ্য তোমাদেরই হয়ে যাবে। যমীন হচ্ছে আল্লাহর। তিনি যাকে চান তাকেই রাজ্যের শাসন ক্ষমতা অর্পণ করে থাকেন এবং ভাল পরিণাম মুত্তাকীদেরই বটে।” মূসা (আঃ)-এর সঙ্গী-সাথীগণ তাঁকে সম্বোধন করে বললোঃ “হে মূসা (আঃ)! আপনি আমাদের কাছে আগমনের পূর্বেও আমাদেরকে কঠিন দুঃখ দুর্দশার সম্মুখীন হতে হয়েছে এবং আপনি আসার পরেও স্বচক্ষে দেখছেন যে, আমাদেরকে কতইনা লাঞ্ছিত ও অপমানিত করা হচ্ছে!" বানী ইসরাঈল যে তাদের বর্তমান অবস্থার উপর ধৈর্যধারণ করছে সেই জন্যে হযরত মূসা (আঃ) তাদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলেনঃ “অতিসত্বরই আল্লাহ পাক তোমাদের শত্রুদেরকে ধ্বংস করে দিবেন। এই আয়াতের মাধ্যমে বানী ইসরাঈলকে আল্লাহর নিয়ামতের শাকরিয়া আদায় করার জন্যে উত্তেজিত ও উৎসাহিত করা হচ্ছে।