Al-A'raaf • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ وَنَزَعْنَا مَا فِى صُدُورِهِم مِّنْ غِلٍّۢ تَجْرِى مِن تَحْتِهِمُ ٱلْأَنْهَٰرُ ۖ وَقَالُوا۟ ٱلْحَمْدُ لِلَّهِ ٱلَّذِى هَدَىٰنَا لِهَٰذَا وَمَا كُنَّا لِنَهْتَدِىَ لَوْلَآ أَنْ هَدَىٰنَا ٱللَّهُ ۖ لَقَدْ جَآءَتْ رُسُلُ رَبِّنَا بِٱلْحَقِّ ۖ وَنُودُوٓا۟ أَن تِلْكُمُ ٱلْجَنَّةُ أُورِثْتُمُوهَا بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ ﴾
“after We shall have removed whatever unworthy thoughts or feelings may have been [lingering] in their bosoms. Running waters will flow at their feet; and they will say: "All praise is due to God, who has guided us unto this; for we would certainly not have found the right path unless God had guided us! Indeed, our Sustainer's apostles have told us the truth!" And [a voice] will call out unto them: "This is the paradise which you have inherited by virtue of your past deeds!"”
৪২-৪৩ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ পাক হতভাগা ও পাপীদের অবস্থা বর্ণনার পর এখন ভাগ্যবান ও সৎ লোকদের অবস্থা বর্ণনা করছেন। তিনি বলেনঃ যারা ঈমান এনেছে এবং ভাল কাজ করেছে তারা ঐ লোকদের থেকে পৃথক যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে। এখানে এই বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করা হচ্ছে যে, ঈমান ও আমল কোন কঠিন ব্যাপার নয়; বরং খুবই সহজ ব্যাপার। তাই ইরশাদ হচ্ছে- আমি যে শরঈ বিধান জারি করেছি এবং ঈমান ও সৎ আমল ফরয করে দিয়েছি তা মানুষের সাধ্যের অতিরিক্ত নয়। আমি কখনও কাউকে সাধ্যের অতিরিক্ত কষ্ট দেই না। এই লোকগুলোই হচ্ছে জান্নাতের অধিবাসী। মুমিনদের অন্তরে পারস্পরিক যা কিছু হিংসা ও বিদ্বেষ থাকবে তা আমি বের করে দেবো। যেমন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “মুমিনরা যখন জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে তখন তাদেরকে জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী পুলের উপর আটক করা হবে। অতঃপর তাদের ঐসব অত্যাচার সম্পর্কে আলোচনা করা হবে যা দুনিয়ায় তাদের পরস্পরের মধ্যে করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ঐ অত্যাচার ও হিংসা বিদ্বেষ থেকে যখন তাদের অন্তরকে পাক সাফ করা হবে তখন তাদেরকে জান্নাতের পথ প্রদর্শন করা হবে। আল্লাহর শপথ! তাদের কাছে তাদের জান্নাতের ঘর তাদের পার্থিব ঘর থেকে বেশী পরিচিত হবে। জান্নাতবাসীকে যখন জান্নাতের দিকে প্রেরণ করা হবে তখন তারা জান্নাতের পার্শ্বে একটা গাছ পাবে যার নিম্নদেশ দিয়ে দু'টি নিঝরিণী প্রবাহিত হতে থাকবে। একটা থেকে যখন তারা পানি পান করবে তখন তাদের অন্তরে যা কিছু হিংসা বিদ্বেষ ছিল সব কিছু ধুয়ে মুছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। এটাই হচ্ছে শরাবে তহুর বা পবিত্র মদ। আর অন্য ঝরণায় তারা গোসল করবে। তখন জান্নাতের মতই সজীবতা ও প্রফুল্লতা তাদের চেহারায় ফুটে উঠবে। এর পর না তাদের মাথার চুল এলোমেলো হবে, না চোখে সুরমা দেয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে। অতঃপর এই লোকগুলো দলে দলে জান্নাতের দিকে রওয়ানা হয়ে যাবে।”হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ “আমি আশা করি যে, ইনশাআল্লাহ আমি, হযরত উসমান (রাঃ), হযরত তালহা (রাঃ) এবং হযরত যুবাইর (রাঃ) ঐ লোকদের অন্তর্ভুক্ত হবো যাদের অন্তরে হিংসা-বিদ্বেষ ছিল, কিন্তু সমস্ত পরিষ্কার করে দেয়া হবে।” হযরত আলী (রাঃ) বলতেনঃ “আল্লাহর কসম! আমাদের মধ্যে আহলে বদরও রয়েছেন এবং তাদের সম্পর্কেই এই আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে।” হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “প্রত্যেক জান্নাতীকে জাহান্নামের ঠিক আল্লাহ আমাকে সুপথ প্রদর্শন না করতেন তবে আমার ঠিকানা এটাই হতো। এ জন্যে আমি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। আর প্রত্যেক জাহান্নামীকে জান্নাতের ঠিকানা বলে দেয়া হবে। সে বলবে- হায়! যদি আল্লাহ আমাকেও সুপথ প্রদর্শন করতেন তবে এটাই আমার ঠিকানা হতো। এভাবে দুঃখ ও আফসোস তাকে ছেয়ে ফেলবে। ঐ মুমিনদেরকে যখন জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হবে তখন তাদেরকে বলা হবে- এই জান্নাত হচ্ছে তোমাদের সৎকর্মের ফল স্বরূপ তোমাদের পুরস্কার। তোমাদেরকে যে জান্নাতে প্রবিষ্ট করা হয়েছে এটা সত্যি আল্লাহর রহমতই বটে। নিজেদের আমল অনুযায়ী আপন আপন ঠিকানা বানিয়ে নাও। আর এ সবকিছুই হচ্ছে আল্লাহর রহমতেরই কারণ।” সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমাদের প্রত্যেকেই যেন এ কথা জেনে রাখে যে, তার আমল তাকে জান্নাতে পৌছায় না।” তখন জনগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনার আমলও কি নয়?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “হ্যা, আমার আমলও নয়, যদি না আল্লাহর রহমত আমার উপর বর্ষিত হয়।”