Al-A'raaf • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ أَوَعَجِبْتُمْ أَن جَآءَكُمْ ذِكْرٌۭ مِّن رَّبِّكُمْ عَلَىٰ رَجُلٍۢ مِّنكُمْ لِيُنذِرَكُمْ ۚ وَٱذْكُرُوٓا۟ إِذْ جَعَلَكُمْ خُلَفَآءَ مِنۢ بَعْدِ قَوْمِ نُوحٍۢ وَزَادَكُمْ فِى ٱلْخَلْقِ بَصْۜطَةًۭ ۖ فَٱذْكُرُوٓا۟ ءَالَآءَ ٱللَّهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ﴾
“Why, do you deem it strange that a tiding from your Sustainer should have come unto you through a man from among yourselves, so that he might warn you? Do but remember how He made you heirs to Noah's people, and endowed you abundantly with power: remember, then, God's blessings, so that you might attain to a happy state!"”
৬৫-৬৯ নং আয়াতের তাফসীর: আল্লাহ তাআলা বলেনঃ যেমনভাবে আমি নূহ (আঃ)-এর কওমের কাছে। রাসূল পাঠিয়েছিলাম তেমনিভাবে হূদ (আঃ)-কে আ’দ সম্প্রদায়ের নিকট রাসূলরূপে প্রেরণ করেছিলাম। তারা আ’দ ইবনে ইরামের বংশধর ছিল। তারা বড় বড় অট্টালিকায় বসবাস করতো। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “(হে নবী সঃ)! তোমার প্রতিপালক আ’দ সম্প্রদায়ের সাথে কি ব্যবহার করেছিলেন তা তোমার জানা নেই? অর্থাৎ ইরামদের সাথে, যারা সুউচ্চ ও বড় বড় প্রাসাদের মালিক ছিল? যার তুল্য (প্রাসাদ) কোন নগরে তৈরী হয়নি। এটা ছিল তাদের ভীষণ দৈহিক শক্তির প্রকৃষ্ট প্রমাণ। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “কিন্তু আ’দ সম্প্রদায় ভূ-পৃষ্ঠে অন্যায়ভাবে অহংকারে ফেটে পড়লো এবং বললো-আমাদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী আর কে আছে? তারা কি চিন্তা করেনি যে, যে আল্লাহ তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তিনি তাদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী? তারা আমার আয়াতসমূহ ও মু'জিযাসমূহকে অস্বীকার করতো। তাদের বাসভূমি ছিল ইয়ামান দেশের আহকাফ নামক জায়গায়। তারা ছিল মরুচারী ও পাহাড়ীয় লোক। হযরত আলী (রাঃ) হারামাউতের একজন অধিবাসীকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তুমি কি হারা মাউতের সরযমীনে এমন কোন রঙ্গীন পাহাড় দেখেছো যার মাটি লাল বর্ণের? সেই পাহাড়ের অমুক অমুক ধারে কুল (বরই) ও পীলুর বহু গাছ রয়েছে লোকটি উত্তরে বললোঃ “হ্যা। হে আমীরুল মুমিনীন! আল্লাহর শপথ! আপনি এমনভাবে বললেন যে, যেন আপনি স্বচক্ষে দেখেছেন। তিনি বললেনঃ “আমি স্বচক্ষে দেখিনি বটে, কিন্তু এরূপ হাদীস আমার কাছে। পৌঁছেছে।” লোকটি বললোঃ “হে আমীরুল মুমিনীন! এই ব্যাপারে আপনি কি বলতে চাচ্ছেন? তিনি উত্তরে বললেনঃ “সেখানে হূদ (আঃ)-এর সমাধি রয়েছে। এ হাদীস দ্বারা এটা জানা গেল যে, আ’দ সম্প্রদায়ের বাসস্থান ইয়ামানেই ছিল। হযরত হূদ (আঃ) সেখানেই সমাধিস্থ হয়েছিলেন। হযরত হূদ (আঃ) তাঁর কওমের মধ্যে সম্ভ্রান্ত বংশোদ্ভূত ছিলেন। সমস্ত রাসূলই মর্যাদা সম্পন্ন ও সম্ভ্রান্ত বংশোদ্ভূত ছিলেন। হযরত হূদ (আঃ)-এর কওম দৈহিক ও অবয়বের দিক দিয়ে যেমন ছিল কঠিন তেমনই তাদের অন্তরও ছিল অত্যন্ত কঠিন। সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার কাজে তারা অন্যান্য সমস্ত উম্মতের ঊর্ধ্বে ছিল। এ কারণেই হূদ (আঃ) তাদেরকে এক আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যের প্রতি আহ্বান জানান। কিন্তু তাঁর সেই কাফির দলটি তাকে বলে- “হে হূদ (আঃ)! আমরা তো তোমাকে বড়ই নির্বোধ ও পথভ্রষ্ট দেখছি, তুমি আমাদেরকে প্রতিমাপূজা ছেড়ে দিয়ে এক আল্লাহর ইবাদতের পরামর্শ দিচ্ছ!” যেমন কুরাইশরা নবী (সঃ) -এর এরূপ দাওয়াতের উপর বিস্ময় বোধ করে বলেছিলঃ “তিনি কি বহু মা'বুদকে একই মা'বুদ বানিয়ে দিয়েছেন?” মোটকথা, হযরত হূদ (আঃ) তাদেরকে সম্বোধন করে বলেনঃ “হে লোক সকল! আমার মধ্যে নির্বুদ্ধিতা নেই, বরং আমি সারা জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর রাসূল। আমি আল্লাহর নিকট হতে সত্য বাণী নিয়ে এসেছি। সমস্ত কিছু তিনিই সৃষ্টি করেছেন। আমি তাঁরই পয়গাম তোমাদের কাছে পৌঁছিয়ে দিচ্ছি। সঠিক অর্থে আমি তোমাদের হিতাকাক্ষী।” এটা হচ্ছে ঐ গুণ যে গুণে রাসূলগণ ভূষিত থাকেন। অর্থাৎ সদুপদেশদাতা ও আমানতদার। তিনি আরো বলেনঃ “তোমরা কি এতে বিস্ময়বোধ করছো যে, তোমাদের জাতিরই একটি লোকের মাধ্যমে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে তার বিধান ও উপদেশ তোমাদেরকে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে তোমাদের কাছে এসেছে?” অর্থাৎ তোমাদের তো এতে বিস্মিত হওয়া উচিত নয়, বরং তোমাদের তো এজন্যে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত যে, তিনি নূহ (আঃ)-এর কওমকে ধ্বংস করে দেয়ার পর তোমাদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করেছেন। তিনি সেই কওমকে ধ্বংস করে দিয়েছেন যারা তাদের রাসূলের অবাধ্য হয়েছিল। তাছাড়া তোমাদের এ জন্যেও আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত যে, তিনি তোমাদেরকে সবচেয়ে বেশী দৈহিক শক্তি প্রদান করেছেন। তোমরা অন্যান্য উম্মতের তুলনায় দৈহিক গঠনের দিক দিয়ে বেশী লম্বা ও চওড়া। এ ধরনের বর্ণনা তালুতের ঘটনায় বর্ণিত হয়েছে। সেখানে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন যে, ইলমী ও দৈহিক শক্তিতে তালূত (আঃ) বিশিষ্ট স্থান অধিকার করেছেন।ইরশাদ হচ্ছে-তোমরা আল্লাহর নিয়ামতের কথা স্মরণ কর। অর্থাৎ তোমাদের উপর আল্লাহর যে নিয়ামত ও অনুগ্রহরাশি রয়েছে সেগুলোর কথা স্মরণ করে তাঁর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। (আরবী) অর্থাৎ সম্ভবতঃ তোমরা সফলকাম হবে।