Al-Muzzammil • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ ۞ إِنَّ رَبَّكَ يَعْلَمُ أَنَّكَ تَقُومُ أَدْنَىٰ مِن ثُلُثَىِ ٱلَّيْلِ وَنِصْفَهُۥ وَثُلُثَهُۥ وَطَآئِفَةٌۭ مِّنَ ٱلَّذِينَ مَعَكَ ۚ وَٱللَّهُ يُقَدِّرُ ٱلَّيْلَ وَٱلنَّهَارَ ۚ عَلِمَ أَن لَّن تُحْصُوهُ فَتَابَ عَلَيْكُمْ ۖ فَٱقْرَءُوا۟ مَا تَيَسَّرَ مِنَ ٱلْقُرْءَانِ ۚ عَلِمَ أَن سَيَكُونُ مِنكُم مَّرْضَىٰ ۙ وَءَاخَرُونَ يَضْرِبُونَ فِى ٱلْأَرْضِ يَبْتَغُونَ مِن فَضْلِ ٱللَّهِ ۙ وَءَاخَرُونَ يُقَٰتِلُونَ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ ۖ فَٱقْرَءُوا۟ مَا تَيَسَّرَ مِنْهُ ۚ وَأَقِيمُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُوا۟ ٱلزَّكَوٰةَ وَأَقْرِضُوا۟ ٱللَّهَ قَرْضًا حَسَنًۭا ۚ وَمَا تُقَدِّمُوا۟ لِأَنفُسِكُم مِّنْ خَيْرٍۢ تَجِدُوهُ عِندَ ٱللَّهِ هُوَ خَيْرًۭا وَأَعْظَمَ أَجْرًۭا ۚ وَٱسْتَغْفِرُوا۟ ٱللَّهَ ۖ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٌۭ رَّحِيمٌۢ ﴾
“BEHOLD, [O Prophet,] thy Sustainer knows that thou keepest awake [in prayer] nearly two-thirds of the night, or one-half of it, or a third of it, together with some of those who follow thee. And God who determines the measure of night and day, is aware that you would never grudge it: and therefore He turns towards you in His grace. Recite, then, as much of the Qur’an as you may do with ease. He knows that in time there will be among you sick people, and others who will go about the land in search of God's bounty, and others who will fight in God’s cause. Recite, then, [only] as much of it as you may do with ease, and be constant in prayer, and spend in charity, and [thus] lend unto God a goodly loan: for whatever good deed you may offer up in your own behalf, you shall truly find it with God - yea, better, and richer in reward. And [always] seek God's forgiveness: behold, God is much-forgiving, a dispenser of grace!”
১৯-২০ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ তা'আলা বলেন যে, এই সূরাটি জ্ঞানীদের জন্যে সরাসরি উপদেশ ও শিক্ষণীয় বিষয়। যে কেউ হিদায়াত প্রার্থী হবে সেই প্রতিপালকের মর্জি হিসেবে হিদায়াতের পথ পেয়ে যাবে এবং তাঁর কাছে পৌঁছে যাওয়ার ওয়াসীলা লাভ করবে। যেমন অন্য সূরায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তোমরা ইচ্ছা করবে না যদি না আল্লাহ ইচ্ছা করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।” (৭৬:৩০)।এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ হে নবী (সঃ)! তুমি এবং তোমার সাহাবীদের একটি দল যে কখনো কখনো দুই তৃতীয়াংশ রাত্রি পর্যন্ত কিয়াম কর, কখনো কখনো অর্ধেক রাত্রি পর্যন্ত এবং কখনো কখনো এক তৃতীয়াংশ রাত্রি পর্যন্ত কিয়াম করে থাকে এবং তাহাজ্জুদের নামাযে কাটিয়ে দাও তা আল্লাহ খুব ভালই জানেন। অবশ্য তোমরা এর সঠিক হিসাব রাখতে পার না। কেননা এটা খুবই কঠিন কাজ। দিবস ও রজনীর সঠিক পরিমাণ একমাত্র আল্লাহই নির্ধারণ করে থাকেন। কারণ কখনো দিন ও রাত উভয়ই সমান সমান হয়ে থাকে, কখনো রাত ছোট হয় ও দিন বড় হয় এবং কখনো দিন ছোট হয় ও রাত বড় হয়। আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা জানেন যে, এটা পালন করার শক্তি তোমাদের নেই। সুতরাং এখন থেকে তোমরা রাত্রির নামায ততটাই পড় যতটা তোমাদের জন্যে সহজ। কোন সময় নির্দিষ্ট থাকলো না যে, এতোটা সময় কাটানো ফরয। এখানে কিরআত দ্বারা নামায অর্থ নেয়া হয়েছে। যেমন সূরা বানী ইসরাইল রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “তুমি তোমার কিরআত খুব উচ্চ স্বরেও পড়ো না এবং খুব নিম্ন স্বরেও না।” এখানে (আরবি) দ্বারা কিরআতকে বুঝানো হয়েছে। ইমাম আবূ হানীফা (রঃ)-এর সাথীগণ এ আয়াত দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছেন যে, নামাযে সূরা ফাতিহা পড়া বাধ্যতামূলক নয়। সূরা ফাতিহাকে পড়া যাবে এবং অন্য কোন জায়গা হতেও পড়া চলবে। একটি আয়াত পড়াও যথেষ্ট হবে। আবার এই মাসআলার দৃঢ়তা ঐ হাদীস দ্বারা করেছেন যাতে রয়েছে যে, তাড়াতাড়ি করে নামায আদায়কারীকে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছিলেনঃ “কুরআনের যে অংশ তোমার নিকট সহজ তা দ্বারা নামায পড়।” (এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে) এ মাযহাব জমহূরের বিপরীত। জমহূর তাদেরকে এ জবাব দেন যে, সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে হযরত উবাদাহ ইবনে সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি নামাযে সূরা ফাতিহা পাঠ করলো না তার নামায হলো না।”সহীহ মুসলিমে হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “ঐ নামায, যাতে উম্মুল কুরআন (অর্থাৎ সূরা ফাতিহা) পাঠ করা হয় না তা অকেজো, তা অকেজো, তা অকেজো ও অসম্পূর্ণ।”ইবনে খুযাইমার (রঃ) সহীহ গ্রন্থে হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে মারফূ’রূপে বর্ণিত আছেঃ “ঐ ব্যক্তির নামায হয় না যে নামাযে উম্মুল কুরআন পাঠ করে না।”মহান আল্লাহ বলেনঃ আল্লাহ জানেন যে, তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে, কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে দেশ ভ্রমণ করবে এবং কেউ কেউ আল্লাহর পথে সংগ্রামে লিপ্ত হবে। এ আয়াতটি, বরং পুরো সূরাটি মাক্কী। এটা মক্কা শরীফে অবতীর্ণ হয়েছে। ঐ সময় জিহাদ ছিল না, বরং মুসলমানরা অত্যন্ত শোচনীয় অবস্থায় ছিলেন। এরপরও গায়েবের এ খবর দেয়া এবং কার্যতঃ ওটা প্রকাশ পাওয়া যে, মুসলমানরা পরবর্তীকালে পুরোপুরিভাবে জিহাদে লিপ্ত হয়েছেন, সুতরাং এটা হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-এর নবুওয়াতের একটা বড় ও স্পষ্ট নির্দশন। উপরোক্ত ওযরগুলোর কারণে মুসলমানরা রাত্রির কিয়ামের দায়িত্ব হতে মুক্ত হয়ে যায়।হযরত আবূ রাজা’ মুহাম্মাদ (রঃ) হযরত হাসান (রঃ)-কে প্রশ্ন করেনঃ “হে আবূ সাঈদ (রঃ)! যে ব্যক্তি পূর্ণ কুরআনের হাফিয হয়েও তাহাজ্জুদের নামায পড়ে না, শুধু ফরয নামায আদায় করে, ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে আপনার অভিমত কি?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “সে তো কুরআনকে বালিশ বানিয়ে নিয়েছে। তার উপর আল্লাহর অভিশাপ! আল্লাহ তা'আলা তাঁর বান্দাকে বলেনঃ সে ঐ শিক্ষায় শিক্ষিত ছিল যে, আমি তাকে শিখিয়ে ছিলাম। আরো বলেনঃ তোমাদেরকে ওটা শিখানো হয়েছে যা তোমরা নিজেরা জানতে না এবং তোমাদের বাপ দাদারাও জানতো না।” তখন আবূ রাজা' (রঃ) তাঁকে আবার বলেনঃ “হে আবূ সাঈদ (রঃ)! আল্লাহ তা’আলা তো বলেছেনঃ কুরআন হতে তোমরা যা সহজভাবে পড়তে পার পড়।” হযরত হাসান (রঃ) উত্তরে বলেনঃ “হ্যাঁ, তা ঠিক বটে। পাঁচটি আয়াত হলেও পড়।” সুতরাং বাহ্যতঃ জানা যাচ্ছে যে, কুরআনের হাফিযের রাত্রের নামাযে কিছু না কিছু কিয়াম করা হযরত ইমাম হাসান বসরী (রঃ)-এর মাযহাবে ওয়াজিব ছিল। একটি হাদীসও এর প্রমাণ দিচ্ছে, যাতে রয়েছে যে, সকাল পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকে এমন একটি লোক সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উত্তরে বলেনঃ “এটা হলো ঐ ব্যক্তি যার কারণে শয়তান প্রস্রাব করে থাকে। এর এক ভাবার্থ এও বর্ণনা করা হয়েছে যে, এর দ্বারা ঐ ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে যে এশার ফরয নামাযও পড়ে না। এটাও বলা হয়েছে যে, রাত্রে নফল হিসেবে কিয়াম করে না।সুনানে রয়েছেঃ “হে কুরআন ওয়ালাগণ! তোমরা বিতর পড়তে থাকো।” অন্য এক হাদীসে আছেঃ “যে ব্যক্তি বিতর পড়ে না সে আমার অন্তর্ভুক্ত নয়।” হাসান বসরী (রঃ)-এর উক্তি হতেও বেশী গরীব হলো আবূ বকর ইবনে আবদিল আযীয হাম্বেলীর (রঃ) উক্তি, যিনি বলেন যে, রমযান মাসের কিয়াম ফরয। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।মু’জামে তিবরানীতে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) (আরবি) এ আয়াতের তাফসীরে বলেছেনঃ “ওটা একশটি আয়াত। (এটা অত্যন্ত গারীব হাদীস। ইমাম ইবনে কাসীর (রঃ) বলেনঃ আমি শুধু এটা মুজামে তিবরানীতেই পেয়েছি)আল্লাহ পাকের উক্তিঃ তোমরা নামায কায়েম কর ও যাকাত প্রদান কর। অর্থাৎ তোমরা ফরয নামাযের হিফাজত কর এবং ফরয যাকাত আদায় কর। এ আয়াতটি ঐ গুরুজনদের দলীল যারা বলেন যে, মক্কা শরীফেই যাকাত ফরয হওয়ার হুকুম নাযিল হয়েছে। তবে কি পরিমাণ বের করা হবে, নেসাব কি ইত্যাদির বর্ণনা মদীনা শরীফে দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তা’আলাই এসব ব্যাপারে সবচেয়ে ভাল জানেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ), হযরত ইকরামা (রঃ), হযরত মুজাহিদ (রঃ), হযরত হাসান (রঃ), হযরত কাতাদাহ (রঃ) প্রমুখ পূর্বযুগীয় মনীষীদের উক্তি এই যে, এই আয়াত পূর্ববর্তী রাত্রির কিয়ামের হুকুম সম্বলিত আয়াতকে মানসূখ বা রহিত করে দিয়েছে। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একটি লোককে বলেনঃ "দিন-রাত্রে পাচঁ ওয়াক্ত নামায ফরয।” লোকটি প্রশ্ন করেঃ “এ ছাড়া কি অন্য কোন নামায আমার উপর ফরয আছে?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “না, তবে তুমি নফল হিসেবে পড়তে পার।”মহান আল্লাহর উক্তিঃ তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ প্রদান কর। অর্থাৎ তোমরা আল্লাহর পথে দান-খয়রাত করতে থাকো, যার উপর আল্লাহ তোমাদেরকে খুবই উত্তম ও পুরোপুরি বিনিময় প্রদান করবেন। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “কে সে, যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ প্রদান করবে? তিনি তার জন্যে এটা বহুগুণে বৃদ্ধি করবেন।”(২:২৪৫) আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “তোমরা তোমাদের আত্মার মঙ্গলের জন্যে ভাল কাজ যা কিছু অগ্রীম প্রেরণ করবে তোমরা তা পাবে আল্লাহর নিকট। ওটা উৎকৃষ্টতর এবং পুরস্কার হিসেবে মহত্তর।হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একদা সাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমাদের মধ্যে কে নিজের সম্পদের চেয়ে (নিজের) উত্তরাধিকারীর সম্পদকে বেশী ভালবাসে?” সাহাবীগণ উত্তরে বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে নিজের সম্পদের চেয়ে উত্তরাধিকারীদের সম্পদকে বেশী ভালবাসে।” তিনি বললেনঃ “যা বলছো চিন্তা করে বল।” তাঁরা বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমরা তো এটা ছাড়া অন্য কিছু জানি না।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “যে ব্যক্তি যা (আল্লাহর পথে) খরচ করবে তাই শুধু তার নিজের সম্পদ, আর যা সে রেখে যাবে তাই তার উত্তরাধিকারীদের সম্পদ।” (এ হাদীসটি হাফিয আকূল ইয়ালা মুসিলী (রঃ) বর্ণনা করেছেন। সহীহ বুখারী ও সুনানে নাসাঈতেও হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে)এরপর ইরশাদ হচ্ছেঃ তোমরা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। অর্থাৎ খুব বেশী বেশী আল্লাহকে স্মরণ কর এবং তোমাদের সমস্ত কার্যে তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। কেননা, তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু ঐ ব্যক্তির উপর যে তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে।