Al-A'laa • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ صُحُفِ إِبْرَٰهِيمَ وَمُوسَىٰ ﴾
“the revelations of Abraham and Moses.”
১৪-১৯ নং আয়াতের তাফসীর আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ যে ব্যক্তি চরিত্রহীনতা হতে নিজেকে পবিত্র করে নিয়েছে, ইসলামের হুকুম আহকামের পুরোপুরি তাবেদারী করেছে এবং নামায প্রতিষ্ঠিত করেছে শুধুমাত্র আল্লাহর আদেশ পালন ও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে, সে মুক্তি ও সাফল্য লাভ করেছে।হযরত জাবির ইবনে আবদিল্লাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম (সঃ) (আরবি) এ আয়াতের তাফসীরে বলেনঃ “যে ব্যক্তি সাক্ষ্য প্রদান করেছে, সে মুক্তি ও সাফল্য লাভ করেছে। আর (আরবি) এ আয়াতের তাফসীরে বলেনঃ “এটা হলো পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়া এবং এর উপর পুরোপুরি যত্নবান থাকা।”হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এখানে দৈনন্দিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাযকে বুঝানো হয়েছে।হযরত আবুল আলিয়া (রঃ) একবার ঈদের পূর্বের দিন আবূ খালদা (রঃ)-কে বলেনঃ “কাল ঈদগাহে যাওয়ার সময় আমার সাথে সাক্ষাৎ করে যেয়ো।” আবূ খালদা' (রঃ) বলেনঃ আমি তার কথামত তাঁর কাছে গেলে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “তুমি কি কিছু খেয়েছো?” আমি উত্তরে বললামঃ হ্যা (খেয়েছি)। তিনি প্রশ্ন করলেনঃ “গোসল করেছো?” আমি জবাব দিলামঃ হ্যা (করেছি)। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ “ফিত্রা’ আদায় করেছো?” আমি জবাবে বললামঃ হ্যা (করেছি)। তিনি তখন বললেনঃ “আমি তোমাকে এ কথা বলার জন্যেই ডেকেছিলাম। এ আয়াতের অর্থও এটাই বটে।" মদীনাবাসী ফিত্রা’ আদায় করা এবং পানিপান করানোর চেয়ে উত্তম কোন সাদকার কথা জানতেন হযরত উমার ইবনে আবদিল আযীযও (রঃ) লোকদেরকে ফিত্রা’ আদায়ের আদেশ করতেন এবং এ আয়াত পাঠ করে শুনাতেন।হযরত আবুল আহওয়াস (রঃ) বলতেনঃ “যদি তোমাদের মধ্যে কেউ নামায পড়ার ইচ্ছা করে এবং এই অবস্থায় কোন ভিক্ষুক এসে পড়ে তবে যেন সে তাকে কিছু দান করে।” অতঃপর তিনি (আরবি) আয়াত দু’টি পাঠ করতেন। হযরত কাতাদা (রঃ) বলেন যে, এ আয়াতদ্বয়ের ভাবার্থ হলোঃ যে নিজের মালকে পবিত্র করেছে এবং স্বীয় সৃষ্টিকর্তাকে সন্তুষ্ট করেছে (সে সফলকাম হয়েছে)।এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ কিন্তু তোমরা পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দিয়ে থাকো। অর্থাৎ তোমরা আখেরাতের উপর পার্থিব জীবনকেই প্রাধান্য দিচ্ছ, অথচ প্রকৃতপক্ষে আখেরাতের জীবনকে দুনিয়ার জীবনের উপর প্রাধান্য দেয়ার মধ্যেই তোমাদের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। দুনিয়া তো হলো ক্ষণস্থায়ী, ভঙ্গুর অমর্যাদাকর। পক্ষান্তরে, আখেরাতের জীবন হলো চিরস্থায়ী ও মর্যাদাকর। কোন বুদ্ধিমান লোক অস্থায়ীকে স্থায়ীর উপর এবং মর্যাদাহীনকে মর্যাদাসম্পন্নের উপর প্রাধান্য দিতে পারে না। দুনিয়ার জীবনের জন্যে আখেরাতের জীবনের প্রস্তুতি পরিত্যাগ করতে পারে না।মুসনাদে আহমদে হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “দুনিয়া ঐ ব্যক্তির ঘর যার (আখেরাতে কেনি) ঘর নেই, দুনিয়া ঐ ব্যক্তির সম্পদ যার (আখেরাতে কোন) সম্পদ নেই এবং দুনিয়ার জন্যে ঐ ব্যক্তি (মালধন) জমা করে যার বিবেক বুদ্ধি নেই।”হযরত আ’রফাজা’ সাকাফী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) কাছে (আরবি) এই সূরাটির পাঠ শুনতে শুনতে চাচ্ছিলাম। যখন তিনি (আরবি) পর্যন্ত পৌঁছলেন তখন তিনি এর পাঠ ছেড়ে দিয়ে স্বীয় সঙ্গীদেরকে বললেনঃ “আমরা পার্থিব জীবনকে আখেরাতের জীবনের উপর প্রাধান্য দিয়েছি। তার এ কথায় জনগণ নীরব থাকলে তিনি বলেনঃ আমরা দুনিয়ার মোহে পড়ে গেছি। দুনিয়ার সৌন্দর্য নারী, খাদ্য ও পানীয় ইত্যাদি আমরা দেখতে পাচ্ছি। আর আখেরাত আমাদের দৃষ্টির অন্তরালে রয়েছে। তাই আমরা আমাদের সামনের জিনিসের প্রতি মনোযোগ দিয়েছি এবং দূরের জিনিস হতে চক্ষু ফিরিয়ে নিয়েছি।” (এটা ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন) হযরত আবদুল্লাহ (ইবনে মাসউদ (রাঃ) এ কথাগুলো বিনয় প্রকাশের জন্যে বলেছেন, না মানুষের স্বভাব হিসেবে বলেছেন তা আল্লাহ পাকই ভাল জানেন।মুসনাদে আহমদে হযরত আবু মূসা আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি দুনিয়াকে ভালবেসেছে সে তার আখেরাতের ক্ষতি করেছে, আর যে ব্যক্তি আখেরাতকে ভালবেসেছে, সে তার দুনিয়ার ক্ষতি করেছে। হে জনমণ্ডলী! যা বাকী থাকবে তাকে যা বাকী থাকবে না তার উপর প্রাধান্য দাও।” এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “এটা তো পূর্ববর্তী সহীফাসমূহে ইবরাহীম (আঃ) এবং মূসা (আঃ)-এর সহীফাসমূহে রয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, যখন (আরবি) এই আয়াত অবতীর্ণ হয় তখন নবী করীম (সঃ) বলেনঃ “এর প্রত্যেকটাই হযরত ইবরাহীম (আঃ)ও হযরত মূসা (আঃ)-এর সহীফাসমূহে বিদ্যমান ছিল।” (এ হাদীসটি হাফিয আবু বকর আল বাযযার (রঃ) বর্ণনা করেছেন)সুনানে নাসাঈতে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, যখন(আরবি) অবতীর্ণ হয় তখন বলেন “এর প্রত্যেকটাই হযরত ইবরাহীম (আঃ) ও হযরত মূসা (আঃ)-এর সহীফাসমূহে রয়েছে। আর যখন (আরবি) (৫৩:৩৭) অবতীর্ণ হয় তখন বলেনঃ হযরত ইবরাহীম (আঃ) তাঁর দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করেছিলেন। (আরবি) (কোন বহনকারী অপরের বোঝা বহন করবে না। (১৭:১৫) অর্থাৎ এই আয়াত সুরা নাজমের নিম্নের আয়াতগুলোর মতঃ (আরবি)অর্থাৎ “তাকে কি অবগত করা হয়নি যা আছে মূসা (আঃ) এর কিতাবে? এবং ইব্রাহীম (আঃ) এর কিতাবে, যে পালন করেছিল তার দায়ীত্ব? তা এই যে, কোন বহনকারী অপরের বোঝা বহন করবে না। আর এই যে, মানুষ তাই পায় যা সে করে। আর এই যে, তার কর্ম অচিরেই দেখানো হবে। অতঃপর তাকে দেয়া হবে পূর্ণ প্রতিদান। আর এই যে, সবকিছুর সমাপ্তি তো তোমার প্রতিপালকের নিকট [শেষ পর্যন্ত আয়াতগুলো]।” (৫৩ ৪ ৩৬-৪২) অর্থাৎ সমস্ত হুকুম-আহকাম পূর্ববর্তী আয়াতসমূহেও লিপিবদ্ধ ছিল। একইভাবে (আরবি) সূরার আয়াতগুলোতেও ঐ সব হুকুম আহকামের কথা বুঝানো হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন যে, সমগ্র সূরাটিতেই এগুলোর বর্ণনা রয়েছে। আবার কারো কারো মতে(আরবি) হতে (আরবি) পর্যন্ত আয়াতগুলোতে এর বর্ণনা রয়েছে। প্রথম উক্তিটিই বেশী সবল। এটাকেই হাসান (রঃ) পছন্দ করেছেন। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।