At-Tawba • BN-TAFSEER-IBN-E-KASEER
﴿ ٱلتَّٰٓئِبُونَ ٱلْعَٰبِدُونَ ٱلْحَٰمِدُونَ ٱلسَّٰٓئِحُونَ ٱلرَّٰكِعُونَ ٱلسَّٰجِدُونَ ٱلْءَامِرُونَ بِٱلْمَعْرُوفِ وَٱلنَّاهُونَ عَنِ ٱلْمُنكَرِ وَٱلْحَٰفِظُونَ لِحُدُودِ ٱللَّهِ ۗ وَبَشِّرِ ٱلْمُؤْمِنِينَ ﴾
“[It is a triumph of] those who turn [unto God] in repentance [whenever they have sinned], and who worship and praise [Him], and go on and on [seeking His goodly acceptance], and bow down [before Him] and prostrate themselves in adoration, and enjoin the doing of what is right and forbid the doing of what is wrong, and keep to the bounds set by God. And give thou [O Prophet] the glad tiding [of God's promise] to all believers.”
এই পবিত্র আয়াতটি ঐ মুমিনদের প্রশংসায় অবতীর্ণ হয়েছে যাদের জান ও মালকে আল্লাহ তা'আলা তাদের এই উত্তম গুণাবলীর বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন। তারা সমস্ত পাপ ও নির্লজ্জতাপূর্ণ কার্য থেকে বিরত থাকে, নিজেদের প্রতিপালকের ইবাদতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে এবং নিজেদের কথা ও কাজের উপর কড়া দৃষ্টি রাখে। কথার মধ্যে বিশিষ্ট বিষয় হচ্ছে আল্লাহর প্রশংসা। এ জন্যেই মহান আল্লাহ (আরবী) বলেছেন। আর আমল ও কাজের দিক দিয়ে উত্তম কাজ হচ্ছে সিয়াম। সিয়াম বা রোযা বলা হয় পানাহার, স্ত্রী-সহবাস হতে বিরত থাকাকে। আর (আরবী) দ্বারা এই সিয়ামকেই বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা (আরবী) বলেছেন। যেমন তিনি (আরবী) শব্দ দ্বারা নবী (সঃ)-এর সহধর্মিণীদের প্রশংসা করেছেন। এই (আরবী) দ্বারা (আরবী) ভাবার্থ নেয়া হয়েছে। অনুরূপভাবে (আরবী) ও (আরবী) দ্বারা সালাত বা নামায অর্থ নেয়া হয়েছে এবং (আরবী) ও (আরবী) বলা হয়েছে। তারা শুধু নিজেদের উপকারের প্রতি লক্ষ্য রেখেই ইবাদত করে না, বরং আল্লাহর অন্যান্য বান্দাদেরকেও সুপথ প্রদর্শন করতঃ “সৎ কাজের আদেশ ও মন্দ কাজ হতে নিষেধ”-এর উপর আমল করে উপকার পৌছিয়ে থাকে। কোন্ কাজ করা উচিত এবং কোন্ কাজ পরিত্যাগ করা ওয়াজিব এসব কথা বাতলিয়ে থাকে আর জ্ঞান ও আমল উভয় প্রকারে হালাল ও হারামের ব্যাপারে আল্লাহর সীমা সংরক্ষণের প্রতি তারা পূর্ণ দৃষ্টি রাখে। সুতরাং তারা আল্লাহর ইবাদত ও সৃষ্টজীবের মঙ্গল কামনা-এই উভয় প্রকারের ইবাদতে পতাকাধারী। এ জন্যেই মহান প্রতিপালক আল্লাহ বলেন-মুমিনদেরকে শুভ সংবাদ দিয়ে দাও, কেননা ও দুটোর সমষ্টির নামই হচ্ছে ঈমান এবং পূর্ণমাত্রায় সৌভাগ্য তো তারাই লাভ করেছে যারা এই দুটো গুণে গুণান্বিত।(আরবী) দ্বারা (আরবী) বা রোযাকে বুঝানো হয়েছে। সুফিয়ান সাওরী (রঃ) বলেন যে, (আরবী) -এর অর্থ হচ্ছে (আরবী) বা সিয়াম পালনকারীগণ। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, আল্লাহ পাক কুরআন কারীমের মধ্যে যেখানেই (আরবী) শব্দ ব্যবহার করেছেন সেখানেই উদ্দেশ্য হচ্ছে (আরবী) বা (আরবী) রোযা। যহহাকও (রঃ) এ কথাই বলেন। আয়েশা (রাঃ) বলেন যে, এই উম্মতের (আরবী) হচ্ছে রমযানের সিয়াম পালন করা। মুজাহিদ (রঃ), সাঈদ (রঃ), আতা (রঃ), আব্দুর রহমান (রঃ), যহ্হাক (রঃ) এবং সুফইয়ান ইবনে উয়াইনা (রঃ) সবাই এই খেয়ালই রাখেন যে, দ্বারা রোযাদারদেরকে বুঝানো হয়েছে। হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, (আরবী) দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে রমযানের রোযাদারগণ। আবূ আমর আল আবদীও (রঃ) এ কথাই বলেন। একটি মারফ হাদীসেও এটাই এসেছে। আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ সিয়ামকারী লোকদেরকে বলা হয়।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন । এটা মাওকুফ, অত্যধিক বিশুদ্ধ) উবাইদ ইবনে উমাইর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, নবী (সঃ)-কে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ “তারা হচ্ছে সিয়ামকারী।” (এ হাদীসটি ‘মুরসাল’ এবং খুবই উত্তম। আর এটা বিশুদ্ধ ও প্রসিদ্ধতম উক্তি) এই উক্তিও আছে যে, (আরবী) দ্বারা জিহাদকে বুঝানো হয়েছে। ইমাম আবু দাউদ (রঃ) স্বীয় কিতাব সুনানের মধ্যে আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, একটি লোক রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট আবেদন করেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমাকে ‘সিয়াহাত’-এর অনুমতি দিন!” তখন নবী (সঃ) বলেনঃ “আমার উম্মতের ‘সিয়াহাত’ হচ্ছে আল্লাহর পথে জিহাদ।”আম্মারা ইবনে গাযিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট (আরবী) সম্পর্কে আলোচনা করা হলে তিনি বলেনঃ “আল্লাহ তা'আলা আমাদের জন্যে আল্লাহর পথে জিহাদ করাকে ও প্রত্যেক উঁচু স্থানের উপর তাকবীর পাঠ করাকে (আরবী) বানিয়েছেন।” ইকরামা (রঃ)-এর খেয়াল এই যে, এর দ্বারা বিদ্যা অন্বেষণকারীদেরকে বুঝানো হয়েছে। আর আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদ ইবনে আসলাম (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা মুহাজিরদেরকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। এই উক্তি দু’টি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন। এখানে এটা মনে রাখার বিষয় যে, এই স্থালে ‘সিয়াহাত' দ্বারা ঐ অর্থ বুঝানো হয়নি যা কোন কোন দরবেশ ও বনবাসী প্রকৃতির লোক বুঝেছেন যে, এর অর্থ হচ্ছে ভূ-পৃষ্ঠে একাকী সফর করা এবং ঐ লোকগুলোর উদ্দেশ্য, যারা পাহাড়-পর্বতে, খাল-খন্দকে এবং বন-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায় ও জনপদ থেকে পলায়ন করে। কেননা এরূপ করা শরীয়ত সম্মত নয়। তবে হ্যাঁ, যদি ফিৎনার যুগ হয় এবং দ্বীনের মধ্যে অসঙ্গতিপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর অবস্থার সৃষ্টি হয় তাহলে সেটা অন্য কথা। যেমন সহীহ বুখারীতে আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “অচিরেই এমন এক যামানা আসবে যখন কোন ব্যক্তির সর্বোত্তম মাল হবে তার বকরীগুলো, যেগুলোকে সে পাহাড়-পর্বতে ও বৃষ্টিবর্ষণের স্থানে চরিয়ে নিয়ে বেড়াবে এবং ফিত্না হতে বাঁচার উদ্দেশ্যে নিজের দ্বীন নিয়ে পালাতে থাকবে।”(আরবী) দ্বারা আল্লাহর আনুগত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদেরকে বুঝানো হয়েছে। আর হাসান বসরী (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, এর দ্বারা ঐ সব। লোককে বুঝানো হয়েছে যারা আল্লাহর আদেশ ও নিষেধ যথাযথভাবে পালন করে এবং তার উপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকে।